somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এপার ওপার্

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুভিতে শার্লক হোমসকে যত সহজে করতে দেখা যায় , পাইপে ধুমপান আসলে ততটাই কঠিন । বিশেষ ধরনের তামাক লাগে, হোল্ডারে সেই তামাক ভরার সুহ্ম নিয়ম মানতে হ​য় , আগুন দিতে হয় দুই ধাপে , তারপর ম্যাগগাইভারের ছুরির মতো একটা বস্তু দিয়ে সেই আগুন উস্কে দিতে হ​য় । ধোয়া টানতে হ​য় সাবধানে, ইনহেল না করতে বলা হ​য়ে থাকে । সর্বপরি আনাড়ির কাজ নয় ।

পাইপ স্মোকিংয়ে আমাকে আনাড়ির বললেও সম্মান দেখানো হ​য় । জীবনেও সিগারেট ফোকা হ​য়নি। তারপরও মাঝরাতে ছাদে উঠে গিফট পাওয়া পাইপটায় ধোয়া তোলার চেষ্টা করছি ম্যানুয়াল দেখে দেখে । কোথথেকে গিফট পেলাম সেটা আরেক ইতিহাস , যে ইতিহাস এখন আলোচনা করতে ইচ্ছে করছে না ।

ফুপির বাসার ছাদটাকে টব দিয়ে ছেয়ে বাগান বানানোর একটা কিম্ভুত চেষ্টা করা হ​য়েছে, লাভের মধ্যে লাভ হলো আরাম করে দাড়ানোর তিল ঠাই আর নাহি রে । রেলিংয়ে হেলান দিয়ে পাইপে আগুন দিতে যাবো, হাটুর কাছ থেকে কেউ বলে উঠলো,
- বাই , কি কাইতাছুইন ?
টবে পানি দেয়ার জন্য কলতলা তৈরী করা হ​য়েছে, সেখানে বসে আছে ছেলেটা । মনে প​ড়লো গেটে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি সম্প্রতি ।
- তুমি নতুন দারোয়ান ?
- হ বাইজান , আমার নাম পরান ।
আহা, রাবীন্দ্রিক নাম বটে । বললাম , কলতলায় এতো রাতে বসে গোছল করো? গরম বেশী লাগতেছে?
- এতোহন লাগতেছিলো, অহন হিত (শীত) লাগে । বেচারা কেপে উঠলো বুঝি শীতে, অন্ধকারে কালো ছেলেটার ধবধবে দাত ছাড়া কিছুতো দেখিও না ।
- বাই, একটা উফকার করবাইন ?
- কি উপকার ? আমি আনমনে বলি। কিছুতেই পাইপে আগুন লাগানোই যাচ্ছে না, এদিকে বাতাস মনে হ​য় বেশি ।

পানিতে এই ফডুডা বিজ্জা (ভিজে) গেছে গা ।আমার ছুডু বাই । এডা (একটা ) বাই ই আমার, গেরামো তাহে (থাকে) জেঠার লগে ।
- জেঠার সাথে ক্যান , বাপ মা কৈ তোমাদের ?

বাবা মা মারা গেছে ব্রিজের কাজ করতে গিয়ে, অর্ধেক কাজের পরে মাটি ধসে তাদের বাবা মা চাপা পরে । কন্স্ট্রাকশন থেকে জীবনের মুল্য হিসেবে দেয়া হ​য় পাচ হাজার টাকা, জ্যাঠা সেই টাকা নিয়ে ছোটজনকে আশ্র​য় দিয়েছে । বড় ভাই, ১৭-১৮ বছরের পরান ঢাকায় দারোয়ান ।

- ফডুডা হুগানোর ব্যাবস্তা করুন যায় নি বাইজান । নাইলে নষ্ট হৈয়া যাইবোগা ।
পরানের কন্ঠে আকুতি ।

দাও দেখি । আমি হাসলাম , ভাইয়ের জন্য অনেক মহব্বত না?
- আমাগো তো আমরা ছাড়া কেউ নাই বাই । জেডা পরাগরে হারাদিন কামলা খাটান খাটায় । মায়া মহব্বত দুনিয়ায় নাই গো বাই । মায় কইতো আমাগোরে জজ ব্যারিষ্টার বানাবো, কপাল দোষে হইলাম দারোয়ান আর কামলা ।

করুন সিনেমার কাহিনী শুনতে ভাল লাগছিলো না , বললাম, ছবিটা দাও, আমি ওভেনে দিয়ে দেখছি। তুমি ১০ মিনিট পরে এসে নিয়ে যেও ।

রান্নাঘরে ঢুকতেই দেখি মিনু ফুপি চা বসাচ্ছে । পাইপটা লুকিয়ে বললাম , এতো রাতে তুমি চা খাচ্ছো ? ঘুম আসবে না তো আর ।

- আর ঘুম , যে খবর শুনলাম ।
কি খবর শুনলে?
- আর বলিস না, রোজি একটা ছেলে জোগার করে দিয়েছিলো ওর পোস্টিংয়ের এলাকা থেকে । দারোয়ানের জন্য আর কি । ছুটিতে বাড়ী ছিলো ২দিন । রোজি ফোন করে বললো, ছেলেটা নাকি নাইট কোচে ঢাকা আসতে গিয়ে বাস এক্সিডেন্ট করে মরেই গেছে । বাস পরেছিলো রাস্তার পাশের বাধ ভেঙ্গে নদীতে, পানিতে ডুবেই মারা গেছে ছেলেটা ।

চা ঢালতে ঢালতে আমার দিকে ফিরলো ফুপি। ওকি , এমন চেহারা হলো ক্যানো তোর ? ভুত দেখেছিস নাকি ?

আমি পাথর হ​য়ে দাড়িয়ে য়াছি ।ফুপির কথায় ন​ড়ে উঠলাম । কিন্তু গলা দিয়ে চট করে শব্দ বেরুনো কি এতো সহজ?

- হাতে কি তোর ? কার ছবি ?

এবার সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো । আমার হাতে ভেজা একটা ছবিতে এক শ্যামলা শিশু কাদকাদো চোখে তাকিয়ে আছে ।

ফুপিকে কি বলবো আমি জানি না। আমতা আমতা করে বললাম , ছাদে কুড়িয়ে পেয়েছি। ফুপি আমি বরং ঘরে যাই , ঘুম পাচ্ছে ভিষন ।
ফুপি বললো, যা তাহলে , আমিও দেখি ঘুমাতে পারি কি না। আহারে জ্বলজ্যান্ত ছেলেটা ।

ঘরে এসে দরজা ভেজিয়ে বসে রইলাম চুপচাপ । ১০ মিনিট শেষ হয়েছে অনেক আগেই । কেউ দরজা নক করে নি । কিন্তু টেবিলের ওপরের ওই ছবিটা আমার কাছে থাকার কোনো যুক্তি নেই ।
হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমাকে আসলে কি করতে হবে । রোজি ফুপির পোস্টিং কোথায় আমি জানি, এও জানি কাল সবার আগে ওই রুটের কোন গাড়িটা পাওয়া যাবে ।
পরাগ নামের এই ছবির শিশুটিকে আমি চিনি না, কিন্তু কেউ একজন আমাকে বলতে চাচ্ছে আমি যেনো এই বাচ্চাটার পাশে গিয়ে দাড়াই । আচ্ছন্নের মতো আমি ব্যাগ গোছাতে থাকি । মধ্যরাতের বাতাস আমার জানালার বাইরে দিয়ে ঘুরপাক খেয়ে গেলো
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:৪৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×