সময় চোর
আপনি তাকে চেনেন? এই মূহুর্তে কিছু লেখা তিনি জমা দিয়েছেন, এবং তার লেখা গুলো অসাধারন। আর আপনি তারই বিরুদ্ধে এসেছেন এ রকম একটা অভিযোগ করতে ? আপনি এবার আসতে পারেন মি: শুদ্ধ।
সম্পাদক সাহেবের এ রকম কথার জন্য তৈরীই ছিলাম । কারন আমি জানতাম ব্যাপারটা মোটেই সহজ হবে না । কিন্তু সম্পাদককে বুঝাতেই হবে ঘটনাটি কি ঘটছে। তা না হলে বেশ বড় রকমের একটা জটিলতায় পড়ে যাবে অনেকেই। ব্যাপারটা আপনি বুঝতে পারছেন না ? তার কোন লেখাই তার নয় ।
আপনাকে আমি না জেনেই অনেক সময় দিয়ে ফেলেছি, এবার আপনাকে উঠতে হবে।
সম্পাদক সাহেবের শেষ কথায় আমি হাসলাম । আমার হাসিতে উনি আরো রেগে গেলেন।
"আমার ধারনা আপনি একজন ধুরন্ধর বদমাইশ" সম্পাদক সাহেবের উত্তর, "প্রথমে এসে আপনি পরিচয় দিলেন আপনার নাম শুদ্ধ শঙ্কর সিদ্ধার্থ , কাজেই আমি ধরে নিলাম আপনি সেই লেখক । কিন্তু এখন দেখছি আপনি সে নন। যদি আপনাদের উভয়ের চেহারার খানিকটা মিল আছে । সেই কারনে আপনার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু আপনি আমাকে ধারনা দিচ্ছেন শুদ্ধ একজন চোর । মানে তার যাবতীয় লেখা চুরি করা "। বলে সম্পাদক সাহেব একটু দম নিলেন।
হঠাৎ করেই যেন স্মরন করতে পারলেন , আপনাদের নামটাও তো এক? ব্যাপারটা কি বলুন তো ?
আমি আসলে শুদ্ধ শঙ্কর সিদ্ধার্থের উত্তর পূরুষ । আমি ভবিষ্যতের থেকে আসা মানব।
"এতন আপনাকে বদমাইশ মনে হচ্ছিল , এই মূহুর্তে আপনাকে আমার পাগল মনে হচ্ছে"?
আমি জানি , এর পর আপনি আমাকে একটু অন্য চোখে দেখবেন। আমার কথার জবাবে তার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হলো না। আপনার আজ ডাক্তারের কাছে যাবার কথা । ক্যান্সারের রিপোর্ট আনতে । সেটা নিয়ে আপনি টেনশনে আছেন । আমি একটা তথ্য আপনাকে দিতে পারি । আপনার কোন ক্যান্সার হয়নি ।
"কে আপনি"? এবার বিস্ময়ের সাথে ভীতি তার চোখে ঝলক দিয়ে গেল ।
আগেই বলেছি আমি আগামি প্রজন্মের একজন । আমার উত্তর তাকে আরো ভীত করে ফেলে । ভয় পাবেন না , আমি আপনার সাহায্য চাই । যদিও আপনার দারুন লেগেছে শুদ্ধ শঙ্করের লেখা , কিন্তু ও গুলো তার লেখা নয়। আমার উত্তর তার চেহারায় একটা বিভ্রান্তির ছাপ ফেলে দিয়েছ্ ।ে;
ও গুলো তার লেখা নয় , তাহলে কার লেখা সে চুরি করেছে, এই সমযের তার মতো এত নিখুত লেখা তো আমি পাচ্ছি না ।
ওগুলো এখনও লেখা হয় নি? আমার উত্তর
সম্পাদক মাহাশয় মনে হল এবার রেগে গেলেন, হেয়ালি করবেন না । আপনি বলছেন এই গল্পগুলো এখনও লেখা হয়নি । অথচ শুদ্ধ শঙ্কর নামে একজন এই গল্পলিখে আমার কাছে জমা দিয়েছ্।ে
এবার আমাকে পুরো বিষয়টি খুলে বলতে হয় ।
যে শুদ্ধ শঙ্কর এই গল্পগুলো লেখে জমা দিয়েছে, আমি তার দশম পুরুষ। কোন এক দূর্বল মূহুর্তে আমার ইচ্ছে জাগে তার সঙ্গে দেখা করার। আমি আমার টাইম ট্রাভেল যান নিয়ে তার কাছে এসেছিলাম। উভয়ের নাম এক তাই তাকে একটা চমক দেওয়া আর কি। সে সাহিত্যর প্রতি ভীষন দূর্বল এটা জেনেই তার জন্য বেশ কিছু ই--বুক নিয়ে এসেছিলাম। আমি ভবিষ্যতে ফিরে গিয়ে দেখি অনেক লেখাই তার নাম ছাপা হচ্ছে সেই ই-বুক থেকে। তার মানে সেই সমস্ত ই-- বুক থেকে কিছু লেখা সে তার স্মৃতিতে রেখে দিয়েছিল । সে গুলোই সে সে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছ্ ।ে; আমার পূর্ব পুরুেেষর এই অসততা আমার অসর্তকতায় ঘটেছে। কাজেই আমাকেই তা ঠিক করতে হবে। আমি যেহেতু ভবিষ্যত থেকে আসা মানুষ তাই অতীতের ডকুমেন্ট আমি ধ্বংস করতে পারবো না। সেটা একমাত্র করতে পারবেন আপনি। কারন গল্পগুলো এখন আপনার কাছ্ ।ে; তার কাছে এর কপিগুলো আছে কিন্তু একটা ভাইরাসে তার গল্পগুলো কালই কম্পিউটার থেকে মুছে হয়ে যাবে। আমার কাছে ডিলুইশন যন্ত্র আছে। তার স্মৃতি থেকে এই গল্পগুলো মুছে দেবে।
সম্পাদক সাহেব তার শেষ চালটা চাললেন:পুরো গল্পটি বেশ ভালো একটা সায়েন্স ফিকশন। যদি আপনি আমাকে বড় একটা আশার বাণী দিয়েছেন যে আজ আমি ক্যান্সার মুক্ত এই রেজাল্ট পাব । তবুও শুধু মাত্র এই কথার ভিত্তিতে তো আমি এতবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি না ।
পকেট থেকে একটা ছোট্ট বই বের করতেই হল। বইটা বেশ পুরোন । প্রচ্ছদে লেখা, যে এখনও দেখেনি ভবিষ্যত । কবিতার বই । কবি হুমায়ুন মীর ।
এতন কথপোকথন এর সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃশ্যটির অবতারনা হল এবার । তার দুচোখ বিস্ফরিত। "তাহলে একদিন আমার কবিতার বই ছাপা হবে"। আপন মনে বিড় বিড় করলেন সম্পাদক । "আমার নিজের কবিতার উপর নিজের কোনদিন আত্মবিশ্বাস ছিল না "।
"আমি জানি আপনি অসম্ভব সৎ মানুষ । কাজেই কেউ কোনদিন জানতে পারবে না । এই ঘটনার কথা" বের হাবার আগে এই ছিল আমার শেষ কথা ।
তিনি অবশ্য বইয়ের পাতা উল্টাতে ব্যাস্ত । সেই বইয়ে অবশ্য তিনি কিছু পাতা পাবেন সাদা । তিনি নিজেই অবশ্য তা ভরে নেবেন।
তবে আরেকটা ব্যাপার সাবার জন্য অপো করবে। সেই কবিতা উৎসর্গ করা হয়েছে শুদ্ধ শঙ্কর সিদ্ধার্থকে । কেউ তা কোনদিনই জানতে পারবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



