এক
বাসার সমানে একটা বেশ ঝাকড়া আম গাছ ছিল। দশাসাই আম গাছ হলেও ওতে আম ধরতো না একটাও । কিন্তু গাছটার প্রতি আমার পিতা মাতার মায়া ছিল খুব। তাছাড়া গাছটা ছায়া দিত বেশ। তবে সেই গাছে ঝামেলা ছিল একটাই , কাকেরা ওটাকেই তাদের ডেরা বানিয়ে ফেলেছিল। কাজেই প্রতিদিনই কাকাদের কা কা লেগেই থাকতো। মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও একসময় সব সয়ে গেল। একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখি , সকল কাক সমস্বরে কাকা করছে। কাকদের কাকা রবে বাসা প্রায় মাথায় ওঠার জোগাড়। সব কাকই প্রায় টিনের চালে । কি ব্যাপার ? এখন টিনের চালে উঠাও দুস্কর । কারন ওঠার চেষ্টা করলে কাকের তেড়ে আসছে। কিছুক্ষন পর বের করতে সমক্ষ হলাম কাকদের বাসা থেকে একটা কাকের বাচ্চা পড়ে গছে । পড়ে সে এখন টিনের চালের উপর আটকে আছে। কিন্তু বাচ্চা কাকের ডানা শক্ত না তাই সে পুরোপুরি উড়তে পারছে না । এখন প্রায় সমস্ত কাক টিনের চালে নেমে এসেছে এই বাচ্চা কাকটিকে সাহায্য করার জন্য ।
দুই
কলেজে পড়ার সময় ব্যন্যাক্রান্ত হলাম আমরা। আমাদের বাসায় পানি ঢুকতে শুরু করলো । বাসার পিছনে একটা খাল জাতীয় নালা আছে। সেই নালা দিয়ে যখন পানির আসতে শুরু করলো তার সাথে পানির জীবগুলো এসে ঢুকতে লাগলো বাসায় । এই রকম সময়ে আমরা আবিস্কার করলাম একটা সাপ এসে বাগানে আশ্রয় নিয়েছে। সাবই তেড়ে তাকে মারতে গেলও কেন যেন আমার মা সাপটাকে মারতে মানা করলেন । আমার মায়ের বক্তব্য সাপটাও আমাদের মতো বানভাসি, ও সময়মতোই চলে যাবে। আমার মায়ের কথাই সত্য প্রমানিত হয়েছিল , কারো কোন ক্ষতি না করেই সে চলে যায়।
তিন
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় ছুটির দিনে চলে যেতাম চাচার বাসা । শাহাজানপুর রেল কলোনীর ভেতরে বেনজীর বাগান। ছয় নাম্বার বাস থমাতো পীরজঙ্গিমাজার । সেখান থেকে হেটে হেটে যেতাম কলোনীর ভেতর । কলোনীর ভেতরে একজায়গায় পাঁচিল ছিল ভাঙ্গা । সেই পথে সবাই শর্টকাট মেরে ঢুকতাম বেনজীর বাগানে। শর্টকাট মারার গলি পথে ছিল কতগুলো মুদি কাম সবজির দোকান। সেখানে এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়তো। দুই পায়ে চলা এক কুকুর। সে চলতে পারতো না । কারন তার সমানের দুপা ছিল কাটা। কোন একসময় ট্রেন লাইনে পড়ে তার সামনের পা দুখানা কাটা যায় । পিছনের পায়ে ভর করে সে কোন রকমে এখানে এসে হাজির হয় । স্থানীয় লোকজনের ভালোবাসায় সেই কুকুরটা খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। যেহেতু সে প্রায় চলৎশক্তিহীন তাকে দু এক টুকরা খাবার দিত স্থানীয় লোকজন। সেখানে আরো কুকুর থাকলেও তারা ঠিকই বুঝতে পারতো যে এই কুকুরটির পক্ষে কামড়া কামড়ি করে খাবার জোগাড় করা সম্ভব না । জানি না সবসময় এ রকমটি ঘটতো কিনা ? যে কয়বার এই প্রানীটিকে অতিক্রম করেছি , দেখিচি কুকুর গুলো তার খাবার কেড়ে খেত না , যেন তারা বুঝতে পারতো তারা একজন অসহায় কুকুরের খবার কেড়ে খাওয়াটা অনৈতিক।
কাল দেখলাম প্রচন্ড আক্রোশে মানুষ ঝাঁপিযে পড়েছে মানুষের উপর । মানুষ মারছে মানুষকে ? অথচ মানুষই দাবী করে তারাই সবচেযে সভ্য
কিসের গর্বে ?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



