somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমনী না বাঘ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ ভোর ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেক দিন আগের কথা , এ দেশে বাস করতো এক রাজা । দেশটা যেহেতু ছিল বর্বর দেশ রাজও ছিলেন বর্বর । যদি ও দুরের সভ্য প্রতিবেশীর কারনে রাজার চিন্ত ভাবনায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছিল , তার প্রভাব দেখা গিয়েছিল তার রাজ্য শাসনে । তবে আধা বর্বর জীবনের প্রভাব ঠিকই পড়ে গিয়েছিল তার নিজের উপর এবং প্রজাদের উপর ।

তার কঠোর শাসনে রাজ্যে কোন ব্যাক্তি রাজার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারতো না । তরপরেও কেউ যদি রাজার বিরুদ্ধাচারন করতো তবে রাজা তাকে একটা শাস্তি দিতেন, বড় কঠিন সে শাস্তি। রাজার এই শাস্তি দেবার প্রকৃয়াটি ছিল অদ্ভুত। তার বর্বর চরিত্র এবং সভ্য হয়ে ওঠা উভয়ের মিশ্রন ছিল এই শাস্তিটি । অপরাধীকে শাস্তি দেবার আগে রাজা রাজ্য জুড়ে ঘোষনা দিতেন।

সারা দেশের প্রজারা শাস্তির দিন একটা নাটক দেখতে আসতো । সেই নাটক মঞ্চস্থ হত এমন একটা মঞ্চে , যার মাঝখানে পাশপাশি দুটি দরজা থাকতো । বিশাল সেই মঞ্চের নীচে থাকতো সেই দরজা দুটি ,আর দরজার সমানে থাকতেন অপরাধী । অপরাধী নিজেই বেছে নিতেন তার শাস্তি । সে নিজেই বেছে নিত একটা দরজা ।

এই দরজা দুটোর ওপারেই থাকতো রহস্য ।
এখানেই রাজা তার বর্বরতা ও সভ্যতার মিশ্রন ঘটাতেন । যেহেতু তিনি বর্বর, তিনি কঠিন শাস্তি দিবেন, সেহেতু তিনি একটা দরজার ওপারে রাখতেন মৃতু্য। আবার তার সভ্য ও মানবিক গুনটি তাকে সেই অপরাধীর প্রতি নরম করে ফেলতো । তার কারনে তিনি অপর দরজায় রাখতেন জীবন ।

পুরো দেশের জনতা অধীর আগ্রহে অপো করতো , কি ঘটে সেই অপরাধী ভাগ্যে ? জীবন নাকি মৃতু্য?

অপরাধী যদি ভুল দরজা খুলতো , সাথে সাথে সেই দরজা দিয়ে বের হয়ে আসতো এক ুক্ষুধার্থ রাঘ। সবার সামনেই বাঘের পেটে চলে যেতেন অপরাধী।

আর যদি তার ভাগ্য ভালো হত তাহলে , সে খুলতে ঠিক দরজা । সেই দরজার ওপাশে থাকতো এক রমনী। ( না না সেই রমনী কোন বাঘের গুণাবলি সম্পন্ন ছিল না ) সে হতো সুন্দরী এক । সেই অপরাধী সেই রমনীকে বিয়ে করে জীবন শুদ্ধি করার এক সুযোগ পেত ,কিংবা সেই রমনীকে নিয়ে চলে যেত দুর দেশে ।
এটা ছিল সেই দেশের এক মজার খেলা । জনগন জানাতো না কি ঘটতে যাচ্ছে ? হয় তারা একজন মানুষকে বাঘের পেটে চলে যেত দেখতো ,নয়তো একটা মজাদার বিবাহ অনুষ্টান দেখতে পেত।


সেই রাজার ছিল এক পরমা সুন্দরী কন্যা। সে ছিল বসন্তের গোলাপ , শরতের প্রস্ফুটিত পদ্ম, পূর্ণিমার আকাশের চাঁদও তাকে দেখে লজ্জা পায়, বসন্তের দখিনা হাওয়া তার একটু স্পর্শ পাবার জন্য তাকে ছুয়ে যায়, ভোরের শিশিরের চেয়েও সে ছিল শুভ্র। সেই বর্বর দেশের রাজার মেয়ে হলেও তার সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক দুর দেশেও। সে ছিল তার পিতার চোখের মনি। দেশের সকল প্রজার শ্রদ্ধার এবং আদরের। কিন্তু মেয়েটি পূর্ণতা পাবার সাথে সাথে ভাবতো , কেউ কি আমায় ভালোবাসবে না ? অনেকেই ভালোবাসতে চাইতো তাকে,কিন্তু রাজার কথা ভাবলেই সবার হৃদয় শুকিয়ে যেত। তার মনের কথা শুধু দখিন হাওয়াই শুনতে পেল না , শুনতে পেল সেই রাজ্যের সবচেয়ে সাহসী পুরুষ। সে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিল রাজকন্যরা দিকে আর রাজকন্যাও যেন তৈরী ছিল , লুফে নিল সেই ভালোবাসা। তারা কথা বলতো সারাক্ষন, কিন্তু সেই কথা শুনতে পেত না কেউ, কারন রাজার ভয়ে তারা চোখে চোখে কথা বলতো । দুজনের সেই চোখের ভাষা বুঝতে পারতো না আর কেউ ।

কিন্তু প্রবাদেই আছে প্রেম, উটের পিঠে সওয়ার, আর পাহাড় লুকাতে পারে না কোনদিন ! তাদের এই প্রেম ধরা পড়ে গেল , খোদ রাজার চোখে। সেই সাহসী প্রেমিকের শাস্তি হলো সেই মঞ্চে দাড়িয়ে দরজা খোলা ।



সেদিন দেশের সকল প্রজা চলে এলো মঞ্চে। সকল প্রজাদের চোখ এখন সেই সাহসী যুবার পানে। কি হবে?

সকল চোখ যখন তার পানে তাকিয়ে সেই যুবকটির চোখ কিন্তু খুজে ফিরছে জনতার মাঝে একজনকে। সে দেখতে পেল রাজকন্যাকে।

রাজা আধা বর্বর, রাজা আধা সভ্য। রাজা সেই যুবকটির জন্য একপাশে রেখে দিযেছে একটা বাঘ আরেক পাশে তার প্রসাদের সবচেয়ে সুন্দরী দাসীটিকে। সেই দাসী যে কখনও কখনও রাজকন্যার সৌন্দর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে।

যুবকটির চোখ তাকালো তার প্রেয়সির পানে? একটা ক্ষীন আশায় হয়তো রাজকুমারী জানতে পারে কোন দরজায় আছে বাঘ? আর কোন দরজায় আছে রমনী?

তার চোখ প্রশ্ন ছুড়ে দিল ।প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর না পেলেও যুবকটি বুঝে গেল , রাজকুমারী জানে এর উত্তর । জনতা তাকিয়ে আছে যুবকের চোখে আর যুবকটি রজাকুমারীর চোখে

কিন্তু রাজকুমারী
তার হৃদয়ে ভাসছিল তার প্রেম ।তার প্রিয়তমা , কত রাত সে তার প্রেমিকের কথা ভেবে কাটিযেছে , কত রাত তার প্রেমিকের ছবি সে মনে মনে একেছে। আজ এক কঠিন ক্ষনে এসে দাড়িয়েছে রাজকুমরী ? কি করবে সে?
যদি সে বলে দেয় কোনটি বাঘের দরজা তাহলে তাকে হারাতে হবে তার প্রেিমক?
আর যদি সে দেখিয়ে কোনটিতে আছে রমনী তাহলে হারাতে হবে তার প্রেম?

তার হাতেই সিদ্ধান্ত
রমনী
না
বাঘ

না --- রাজকুমারী আর সহ্য করতে পারছে না ? সে সিদ্ধান্ত নেবার ভার আপনাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
এখন সিদ্ধান্তআপনাদের হাতে
কোনটা

রমনী
নাকি
হালুম?

জলদি




ফ্রান্সিস রিচার্ড স্টকটন: আমেরিকান হাস্যরসের জনক বলে তাকে ডাকা হয় । আমেরিকার একটা পুরোন অভিবাসী পরিবারে তার জন্ম 1834 সালে । জন্মগত ভাবে তিনি ীন স্বাস্থ্যর অধিকারী ছিলেন, তার শরীরে আরেকটি ত্রুটি ছিল । তিনি ছিলেন খোড়া । কিন্তু এত অসুবিধা সত্বেও ছিলেন একজন হাসিখূশী মানুষ, কন্ধুবৎসল। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন খোদাইকার, এবং খোদাই করার সুবিধার জন্য তিনি একটা খোদাই যন্ত্র আবিস্কারও করেন। পরে তিনি আট বছর ধরে নিউইয়র্কে দি সেঞ্চুরী নামের পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।

তারই একটি গল্প
রমনী না বাঘ

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×