বাসটা সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আসাদ গেটের সামনে দাড়িয়ে। মনে হল দৌড় দিয়ে উঠি । তরাপরেই মনে হল । সেই কবে মীর মোশাররফ হসেন হল ছেড়ে এসেছি । বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আমি এখন অতিথি। আচ্ছা যদি যাই তাহলে কেমন হবে? সেই পুরোন গোলক ধাধার হল । কেউ তো নেই ! কেউ নেই বললে তো ভূল হবে। শিক্ষকরা আছেন কিন্তু হলে থাকবেন না । ছাত্ররা জানবে না আমি একদিন তাদের জায়গায় ছিলাম। তাদের অবশ্য জানার কথা না । হয়তো সেই আট বছর ধরে ঝুলতে থাকা পর্দাটাকে তেমনই কেউ তেমনি রেখেছে। পর্দটার রঙটাও চটে গিয়ে একটা অন্য আকার ধরেছে। আমি যদি পর্দটার সামনে দাড়াই সে কি একটু দুলে উঠবে হাওয়ায়? পঞ্চপান্ডব দের দুষ্টামী , পিকুলূর আওয়াজ , এই খবরদার তুই আমার সোনা ধরবি না ? কিংবা তাদের গালাগালি ! ছাদের উপর থেকে পানি ফেলে দেওয়া । বৃষ্টিধুয়ে আসা সবুজ বৃ। পুকুরে লাল শপলার ফুটে থাকা। শীতের সময় অতিথি পাখীদের কলতান। আমি জানি এরা ঠিকই আগের মত আছে । আমি পাল্টে গেছি। পাল্টে গেছি সময়ের ব্যবধানে। একটা কষ্ট ছড়িয়ে গেলেও পরেই মনে হল যাই না । যেন আমার ভাবনাটা অনুভব করলো বাসটা । একটা ছোটখাট জ্যাম এক দৌড়ে বাসের কাছে , বাসটাও প্রায় ছেড়ে দেবে , বসাটার হাতল ধরে ঝুলে পড়লাম। একটা হাত পুরো শরীরটাকে জড়িয়ে ধরলো ,উপরে উঠ্যা আসেন, আমাদের মোটা মামু।মামু মানে বাসের হেলপার কাম ভাড়া আদায় কারি কাম কন্ডাকটার। অবশ্য আমাদের সকল মামুই মোটা। বাস থেকে নেমে সোজা হলের দিকে হাটা। যা ভেবেছিলাম মোটেও তা হল না । ডেইরি ফার্মে ধরলেন বাসার ভাই । চলেন চাই খাই দিয়ে শুরু , দুপুরের লাঞ্চের দাওয়াত তোলাই রইলো। সেখানেই শুনলাম মারা গেছেন শামসু ভাই। একজন হোটেলওয়ালার জন্য অনেকন মনটা খরাপ হয়ে রইলো । হলের গেটে মালেক মামার কঠিন স্বর , কই জান আমারে ট্যাক্স দিয়া ? হলে কম আসেন কেন , আমাগোরে বেশী বেশী দেখতে হইবো বইলা । পাগলা সাইদ ডাাইনিং এর গেটে, কেমন আছেন বলে হই হই করে উঠলো। যতটুকু আশা করেছিলাম তারচেয়েও বেশী পেয়েছি। এটা বুঝতে পেরেছি ছোট ছোট মানুষদের মধ্যেই টিকে থাকে ভালোবাসা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ২:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



