উপরের লেখার শিরোনাম উচিত ছিল এন আমেরিকন ট্রজিডি।
এই নামের সঙ্গে সের্গেই আইজেনষ্টাইন এর নাম জড়িত। সের্গেই আইজেনষ্টাইন হলিউডে একটা ছবি নিমর্ানে হাত দিয়েছিলেন । যার নাম এন আমেরিকান ট্রাজিডি। থিওডোর ডিরিইজার এর লেখা উপন্যাস। কাহিনী অনেকটা এ রকম ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় এক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় ।সে সময় গল্পের নায়ক কাজের সন্ধানে শহরে আসে । সেখানে সে কাজ পায় এক কারখানায় । কারখানার এক শ্রমিকের সঙ্গে নায়কের শারিরীক এবং মানসিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।কিন্তু যখন নায়ক আবিস্কার করে যে এক বড়লোকের সুন্দরী কন্যাকে তার বিয়ে করার সুযোগ আছে , তখন সে তার প্রেয়সিকে পানিতে ফেলে হত্যা করে(এখানে একটু জটিলতা আছে) । হত্যার অভিযোগে নায়কের ফাঁসি হয়।ছবি তৈরীতে হাত দিলেও সের্গেই আইজেনষ্টইন এই ছবি বানতে পারেন নি। এর কারন ছিল তিনি ছবির কাঠামোতে খানিকটা পরিবর্তন করছিল । তিনি ছবির শেষে নায়কের মুখে এক বক্তব্য জুড়ে দেন। যাতে তিনি বলান যে এটা নায়কের অপরাধ নয় । তার জায়গায় যে কেউ থাকলে এ্ কাজটি করতে। যাবতীয় দোষ সিস্টেমের তথা পুজিতন্ত্রের তথা পুজিবাদী মানসিকতার। কারন পুজিবাদই তাকে শিখিয়েছে যত টাকা তত সূখ। খোদ পুজিতন্ত্রের অন্যতম বিকাশ ভূমিতে বসে এ রকম নগ্নভাবে পুজির দূর্বলতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াকে পুজিবাদী সমাজ ভালোভাবে নেয় নি। কাজেই তাকে সে ছবি শেষ না করেই চলে আসতে হয়।
পুজিবাদের মূল বিষয়টিই তো তাই । আমার মুনাফাই আমার উন্নতির লক্ষন। আর এই পুজিবাদের দিকে ধাবিত হতে গিয়ে ( বিশ্বব্যাংক বা উন্নয়ন গোষ্টী প্রেসক্রিপশন মোতাবেক) এক টা্রজিডির মধ্যে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। জনসাধারনের জন্য এখন গনতন্ত্রই এক বোঝার নাম। এক ট্রাজিডির নাম। গনতন্ত্রকে অচল এবং ট্রজিক করার উদ্যোগটা নিচ্ছে আর কেউ না যারা, এর সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি বা সুিবধা ভোগী।তারা খুব সঙ্গত কারনেই গনতন্ত্র নামক প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করতে উদ্যত। সঙ্গত কারনটি হচ্ছে যদি সত্যিকারের গনতন্ত্র বজায় থাকে তাহলে আর তাদের কারো পক্ষেই পুনরায় নির্বাচিত হবার সম্ভবনা থাকে না( তাদের কর্মের কারনে) ।গনতান্ত্রিক সরকার গঠন করেই সবাই স্বৈরাচারী আচরন কায়েম করে। লক্ষনীয় কোন দলের ভেতর গনতান্ত্রিক নয় বাছাই পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন হয়। একেকটা এম পি মনোনয়ন এর জন্য আদান প্রদান হয় কোটি টাকা। ভোটের মাঠ পর্যায়ে খরচও কোটি টাকা। কাজেই কোটি কোটি টাকার বিনিযোগ তুলে আনার জন্য দূনর্ীতও হবে কোটি কোটি টাকার( এ কারনেই কি আমরা দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন!)। কাজেই পরাজয় নয় জয় অবশ্যই হত হবে( বিনিয়োগ তুলে আনার জন্য)।
ক্ষমতায় যারা যায় তাদের মানুষিকতা অনেকটা এ রকম। প্রতিটি সরকারের যাবতীয় কাজ বৈধ করার সবচেযে উত্তম হাতিয়ার গনতন্ত্র । গনতন্ত্রই আমাদের দেশে ক্ষমতা কাঠমো নির্মান করে । আর ক্ষমতা থাকলেই বাংলাদেশটি তার । বাংলাদশের যাবতীয় পুজির মালিকও তারা । কাজেই পুজির বৃদ্ধির জন্য ক্ষমতা চাই । ক্ষমতার জন্য গনতন্ত্র চাই । ভোট চাই , ভোট কিনতে যদি না পারি, তাহলে দুবৃত্তায়নের মাধ্যমে ভোট দখল করতে হবে । এই মূহুর্তে প্রতিটি গনতান্ত্রিক দলই আসলে একেকটি নিজ দলে গনতন্ত্র চর্চা না করা দল । সহজে কোটিপতি হবার জন্য এখন গনতন্ত্র সবচেয়ে উত্তম পন্থা। বাংলাদেশর ট্রজিডি, এখন সবার মানসিকতায় ঢুকে গেছে লোভ। কাজেই গনতন্ত্রের সুন্দর রুপটি গরিবের এবং সে কোনভাবেই সে লোভকে ধারন করে না । এতএব পরিবারতন্ত্রে ক্ষমতা বাজায় রাখার জন্য এবং কোটিপতি হবার জন্য সবাই গনতন্ত্রকে হত্যা করতে উদ্যত । আগে দল থেকে গনতন্ত্র নির্বাসিত হয়ে গেছে এবার হতে যাচ্ছে দেশ থেকে। কিন্তু গনতন্ত্রকে হত্যার এই প্রচেষ্টায় তাদের যদি বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয় তবে তারা কি বলবে? হয়তো পাল্টা প্রশ্ন ছুুড়ে দিতে পারে, এর জন্য জনতা তেমরাই দায়ী। তোমরাই আমাদের চিনিয়েছ আমরা ছাড়া আর কেউ তোমাদের ভরসার নেই ! দূনর্ীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবার পরও আমরা তোমাদের ভোটেই এসেছি । হাতে মারলেই তোমরা বিশ্বাস কর গড ফাদার এটা বিরোধী দলের সৃস্টি। ভাতে মারলেও তেমরা বিশা্বস কর এটা কিছু দুষ্ট লোকের প্ররোচনা। তোমরা কেন এ বাইরে যাবার সাহস রাখনো না? কাজেই আমরা যখন জানি আমরা ছাড়া আর কাউকে তোমার ভোট দিবে না? তখন আমাদের দাবী অগ্রগন্য। আমরা গনতন্ত্র রক্ষার জন্য মানুষ মারতে পারি, আমরা সংবিধান রক্ষার জন্য মানুষ মারতে পারি। এই তোমরা কখনই এই খুনের বিচার চাইবে না। কারন গনতন্ত্রের নামে আমাদের সবকিছু করার ক্ষমতা তোমরাই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছ। এখন আমাদের সময় এসেছে আমাদের নিজেদের কাছে নিজেদের আত্ম সামালোচনার । আমরা নিজেরাই নিজেদের কাছে জানতে চাইবো আমরা কি এক লোভী সমাজ গড়বো যেখানে আরো টাকা আরো সম্পদের জন্য যে কাউকে মেরে ফেলার মানসিকতা সত্য হয়ে দাড়াবে? এই ভাবনা পরিবর্তনের দায়িত্ব জনগণকেই নিতে হবে। আমরা কি হাসিনা খালেদা হতে চাই নাকি ড: জাফর ইকবাল হতে ইচ্ছা পোষন করি?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

