বাস্তবতা মাঝে মাঝে ফিকশনকে হার মানিয়ে দেয় । পিঠে টাকার ব্যাগ আর প্যারাসুট নিয়ে প্লেন থেকে লাফ দেয়াটাকে ফিকশন মনে হলেও , ১৯৭১ এর পর একটা ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেক্সট ৪ বছরে অন্তত ১৫ জন এই বিপদজনক কাজটা করেছিল । এই ১৫ জন ধরা পড়লেও , যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজটা করা হয়েছিল, সেই ড্যান কুপার ধরা পড়েন নি । FBI ৪৫ বছর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এই লোকটার কোন ট্রেস করতে পারেনি এবং এই কেসটা পরবর্তীতে ক্লোজ করে দেয়া হয় ।
ঘটনার শুরু ২৪ নভেম্বর, ১৯৭১ ।
সাদা শার্ট, কালো টাই আর বিজনেস স্যুট পরিহিত মধ্য ৪০ এর একজন লোক নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্সের পোর্টল্যান্ড কাউন্টার (ওরেগন স্টেট) থেকে একটা ওয়ান-ওয়ে টিকিট কাটেন ওয়াশিংটন যাবার জন্য ।
লোকটা তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন ড্যান কুপার নামে ।
প্লেন ছাড়ার পর ফ্লোরেন্স স্ক্যাফনার নামে এক কেবিন ক্রুর হাতে কুপার একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন । স্ক্যাফনার ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে কাগজটা নিজের পার্সের মধ্যে রেখে দেন । এমন সময় কুপার তাকে ফিসফিস করে বলেন , "Miss, you'd better look at that note. I have a bomb." । মিস স্ক্যাফনার কে বেশ অবাক করে দিয়ে কুপার তাঁর এটাচি কেস খুললেন এবং বোমা সদৃশ কিছু একটা দেখালেন ।
অতঃপর মিস্টার কুপার প্লেনের ক্যাপ্টেনের উদ্দেশ্যে কয়েকটা ডিমান্ড লিখে একটা নোট পাঠালেন । যেখানে তিনি ২০০,০০০ ইউএস ডলার এবং ৪টা প্যারাসুট ( প্রাইমারী ২ টা, রিজার্ভ ২ টা ) দাবী করলেন যাত্রীদের মুক্তির জন্য । একই সাথে তিনি সিয়াটেল এয়ারপোর্টে একটা ফুয়েল ট্রাক রাখতে বললেন যেন প্লেনটা রিফুয়েল করা যায় ।
পাইলট উইলিয়াম স্কট তখন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেন এবং হাইজাকিং এবং ডিমান্ডের ব্যাপারটা নিশ্চিত করেন । নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড নাইরুপ রাজী হলেন ২০০,০০০ ইউএস ডলার যাত্রীদের মুক্তিপন হিসাবে দিতে ।
উল্লেখ্য - এই ২০০,০০০ ইউএস ডলার ম্যানেজ করে দেয় FBI , সিয়াটেলের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে । কুপারের কথামত সেখানে ২০ ডলারের ১০,০০০ টা নোট থাকে । এবং সহজেই যেন ট্র্যাক করা যায় ব্যাপারটা মাথায় রেখে FBI যে নোট গুলো ম্যানেজ করে সেগুলার শুরু ছিল "L" দিয়ে । এবং বেশিরভাগই 1963A এবং 1969 সিরিজের নোট ছিল ।
প্লেন সিয়াটেলে ল্যান্ড করার পর , কুপার শুধুমাত্র ৩৬ জন যাত্রীকে মুক্তি দেন ২০০,০০০ ডলার এবং ৪ টা প্যারাসুটের বিনিময়ে ।
যাত্রীদের সিয়াটেল এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে কুপারের কথামত প্লেন উড়ে চললো ম্যাক্সিকো সিটির উদ্দেশ্যে ।
সিয়াটেল এবং রেনোর মাঝামাঝি কোন একটা প্লেসে রাত ৮ টার কয়েকমিনিট পরেই প্লেনের পেছন সাইড থেকে একটা প্যারাসুট এবং মুক্তিপনের টাকা নিয়ে লাফ দেন ড্যান কুপার । লাফ দেয়ার আগে তিনি তাঁর কালো টাই প্লেনে খুলে রাখেন ।
পরের দিন মিলিটারি হেলিকপটার ড্যান কুপারের সম্ভাব্য লাফ দেয়ার স্থানে এসে পৌছায় । সৈন্যরা একই সাথে হেলিকপ্টার এবং পায়ে হেটে আশেপাশের সব এলাকা সার্চ করে । কিন্তু ড্যান কুপার , প্যারাসুট কিংবা টাকা কোনটারই কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না আর । নেক্সট ৫ বছরে প্রায় ৪০০ জনকে আটক করা হয় ড্যান কুপার সন্দেহে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাইকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় FBI,কারণ তারা কেউই ড্যান কুপার ছিলেন না (প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননা অনুযায়ী ) ।
FBI পরবর্তীতে মুক্তিপনের ডলারের সিরিয়াল নাম্বার জনগনের কাছে উন্মুক্ত করে দেয় এবং এই সিরিয়ালের ডলার এবং তথ্যের বিনিময়ে বেশ বড়সড় পুরস্কারের অফার দেয় । ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্তই অনেকে এই সিরিয়ালের নোট পেয়েছে বলে দাবী করলেও , কেউই কোন দেখাতে পারেনি যেটা FBI এর সবগুলা শর্ত পূরণ করে ।
ঘটনার ৯ বছর পর, ১৯৮০ সালে ব্রায়ান ইনগ্রাম নামে একটা বাচ্চা ছেলে পোর্টল্যান্ডের উত্তরে কলম্বিয়া নদীর কাছে বালুতে গর্ত খুড়তে গিয়ে ২০ ডলারের তিনটা বান্ডেল খুঁজে পায় বালির ৩ ইঞ্চি নীচে । সেখানে টোটাল ৫৮০০ ডলার ছিল এবং সবগুলাই কুপারের সিরিয়ালের সাথে ম্যাচ করে । ১৯৭১ এর পর কুপার রহস্যের প্রথম পাওয়া এভিডেন্স ছিল এটা ।
৮ জুলাই, ২০১৬ FBI কুপার রহস্যের কোন সমাধান না দিয়ে ,কেসটা ক্লোজ করে দেয় । ৪৫ বছর ধরে ৬০ ভলিউমে লেখা কেস ফাইল ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে ওয়াশিংটনে FBI হেডকোয়াটার্সে রাখা আছে ।
# আমরা হইতো কখনই জানতে পারবো না, ১০০০ টা বান্ডেল থেকে কিভাবে ৩ টা আলাদা হলো এবং কেনই বা সেগুলা ঘটনাস্থলের ২০ মাইল দূরে একটা নদীর ধারে বালির নীচে চাপা দিয়ে রাখা হইছিল ।
# ড্যান কুপার কি বেঁচে থেকে এই ৪৫ বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন নাকি তিনি লাফ দেয়ার সময় মারা যান । FBI ধারণা করে , লাফ দেয়ার সময় কুপার সম্ভাবত মারা যান । যদিও কুপারের প্যারাসুট কিংবা লাশ পাওয়া যায় নি -_- ।
অভিজ্ঞদের মতে এট লিস্ট ৬/৭ বার ডাইভের অভিজ্ঞতা থাকলে মারা যাবার কথা না কুপারের ।
# লোকাল পেপার এবং মিডিয়ার কল্যাণে ড্যান কুপার নামটা কিভাবে যেন D.B Cooper হয়ে যায় -_- ।