somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষক যখন ভক্ষক!

০৮ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনো প্রচার বা প্রসার নয়, কোনো দায়িত্ববোধ বা সচেতনতা থেকে নয় শুধু, নিজের হতবিহব্বল বেদনার্ত মনের দীর্ঘশ্বাস এবং আমার নিরন্তর অবান্তর প্রশ্নোত্তরের নিরাশ আশায় তুলে ধরলাম অসহায়ের অসাধারন অস্ত্র –অসি! যে কলমের দৌরাত্বে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য স্কুল থেকে ছাত্রীজীবন কাটিয়ে এখন ব্যক্তিজ়ীবনে সাফল্যের পথে, সেই কলম হাতেই সেই একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ লিখছি- এ সত্যটা শুধু মর্মস্পশীই নয়, মর্মদায়কও বটে! বংশপরম্পারা রক্ষার মত ছোটবোনটিও একই স্কুলের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। তার মুখে যখন শুনি,”জানো আপু, আজকে ক্লাস হয়নি, স্কুলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ করছে। এক ছাত্রীকে নাকি স্কুলেরই এক টিচার রেপ করেছে।” যতনা অকস্মাৎ দুঃসংবাদের আকস্মিকতায়, তার চেয়েও বেশী অবাক হলাম এটা ভেবে যে, ওদের মত থাকতে তো এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিতও ছিলাম না! কি অবলীলায় কত জঘন্যভাবে নতুন প্রজন্ম এইসব ভয়ংকর শব্দের সাথে পরিচিত হচ্ছে।

ঘটনার বিবরন পুনরাবৃত্তি করার মনোবৃত্তি নেই। কিন্তু মনের অতল বৃত্তে জমিয়ে রাখা শত স্মৃতিগুলো হঠাৎ ভাসমান হয়ে মাথা কুটে আছড়ে পড়ছে। গত বছরের ঘটনা মনে পড়ল। চ্যানেল আই-তে কাজ করার সুবাদে নারীদিবসের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানাতে যাই আমার সারাজীবনের সবচাইতে প্রিয় স্মৃতিগুলো ঘিরে থাকা অভয়ারন্যে। গেইট দিয়ে ঢুকতেই দারোয়ান চাচা ঠিকই চিনলেন, “কেমন আছেন আম্মু? অনেকদিন পর?” কি স্পর্শকাতর শব্দগুলো! অজানা এক উছ্বাসে উচ্ছ্বল মন নিয়ে চললাম স্কুলের টিচার্স রুমের দিকে। থমকে দাড়ালাম ক্লাস ওয়ানের নিস্পাপ বাচ্চাগুলোর দুস্টকীর্তি দেখে। কেমন এক দলাপাকানো অনুভূতি রক্তের সাথে মিশে অশ্রু হয়ে ফেটে পড়তে চাইছে। ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অবাক দৃস্টির সামনে পড়ে ছলছল চোখ সামলে কোনমতে বললাম “আমি এই স্কুলের এক পুরাতন ছাত্রী” বলেই স্থানকালপাত্র ভুলে ভ্যা। তখন আমাকে বুকে জড়িয়ে আপা বললেন, “বোকা মেয়ে! কাঁদছ কেন? এটা তো তোমাদেরই স্কুল। তোমরা তো আজীবন আমাদেরই মেয়ে।” এরপর ক্যান্টিন, মাঠ পেরিয়ে যখন যাচ্ছি, শতশত নীল-সাদা চঞ্চ্বল মেঘগুলো ঘুড়ে বেরাচ্ছে কি নিশ্চিন্তে। মনে হল, ছুটে গিয়ে প্রত্যেককে বলি, আমিও ভিকি, আমিও তোমাদেরই একজন! কত স্মৃতি এখানে প্রিয় বান্ধবিদের সাথে। কলেজের টিচার্স রুমে চেনা অতিপ্রিয় মুখগুলো দেখে যন্ত্রচালিতের মত শুধু বলি, “ম্যাডাম, চিনতে পেরেছেন? আমি আপনাদের এক্স স্টুডেন্ট” ওমনি কি হইচই পড়ে গেল! লক্ষীদি, পিটি আপা যাদের ভয়ে একসময় তটস্থ থাকতাম তারাই স্নেহে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসজল চোখে বলল “আমাদের মেয়েরা এখন বড় হয়ে কতকিছু করছে! দেখো, মিডিয়া থেকে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রন!” কি শিশুসুলভ উত্তেজনা ওই কড়া মুখোশের ওপাশে। এ যে আনন্দাশ্রু! এ যে বর্ননাতীত! এ যে স্বর্গীয় ভালোবাসায় ভেজা!

আজ এমন নির্লজ্জ সত্য মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিছুতেই বিশ্বাস হয়না। বহু দুর্বৃত্তকারী এই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষকের আসনে বসে সেই একই কাতারের অন্য শিক্ষকদের-যারা আমাদের অত্যন্ত পুজনীয় তাদেরও অপমান করে গেলো, যাচ্ছে। অনেকেই হয়তো বলছেন, মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ করা উচিত নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর প্রতিবাদ করি। শিক্ষক আদর্শের প্রতীক। আর আদর্শের কোনো লিঙ্গ ভেদাভেদ নেই। এর মানে কি কোন পুরুষই শিক্ষকের মর্যাদার আসনে অধিষ্টিত হয়ে ছাত্রীদের সুশিক্ষাদানের জন্য নিরাপদ নয়? তাহলে তারা কী বলবেন আমাদের পিতৃসুলভ সুভাস স্যার, শাহ আলম স্যর, মহসীন স্যারদের অকৃত্তিম আদর্শকে? যাঁরা শাসন করে আবার পরম মমতায় মাথায় হাত রাখলে এক আশীর্বাদস্বরূপ নিরাপদ আশ্রয়ে মনে হয়, আমি পারব!

কোথায় গেল আমাদের সেই আশ্বাস, কোথায় আমাদের সন্দেহাতীত নিরাপত্তা? সুশিক্ষার নামে আমরা কতদিন স্বশিক্ষাকে এভাবে শোষন করব? শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদন্ড হয়, আর কতদিন এই শিক্ষাকে রাজনীতিকরন, বাণিজ্য ও দলীয়করন করে নিজেদের মেরুদন্ড নিযেরাই কুরেকুরে খাবো? রাজনীতির সুবিধাবাদী ছত্রছায়ায় থেকে সহস্র আতংকিত মুখের কথা ভুলে গিয়ে কতদিন পরিমলদের মত নির্মলতাহীন অমানুষদের আড়াল করতে গিয়ে rape কে mutual sex বলে ধামাচাপা দেয়ার মত অন্যায় করা হবে? কিভাবে ভিকারুননিসার মত স্বনামখ্যাত একটা স্কুলের কৃতিত্বঘেরা নাম পালটিয়ে রাজনৈতিক কুটকৌশলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মা’য়ের নামে নামকরনের প্রস্তাব আসে? সুবিচার তো দূরে থাক! রাজনীতি কোন নীতিবলে শিক্ষাঙ্গনেও দুর্নীতি করে চলবে? আমরা নিজেরাই যখন মা হব গর্বিত মুখে মেয়েকে একই স্কুলে না পাঠিয়ে কেন দু’চারটা নরকের কীটের ভয়ে দুশ্চিন্তা করব? যে স্কুল থেকে সুশিক্ষা গ্রহন করে আমরা নিজেদের জীবনে সাফল্যের পথে চলছি, আজ সেই স্কুলের প্রতি, আমাদের ছোটবোনদের প্রতি কি কোনোই দায়িত্ব নেই আমাদের?

"দ্বাররুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি" আমরা নিজেদের মনের দ্বার রুদ্ধ করে নির্বাক দর্শকের মতো ভুলকে বা কোনো অন্যায় কে দেখে বসে বসে হা-হুতাস করতে চাই না। সত্যের প্রকাশ চাই। শিক্ষাঙ্গনে অনৈতিক অন্যায়ের সুবিচার চাই। পরিমলদের শাস্তি চাই। আমরা কি নতুন প্রজন্মকে একটা সুস্থ সমাজ, পরিমল-বিহীন নির্মল পরিবেশ রেখে যেতে পারি না যেখানে কিছু বিশ্রী নোংরা শব্দের আতংক নিস্পাপ মুখগুলো থেকে চিরতরে মুছে যাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১০:১৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×