somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেখেছ বাঙ্গালী করে, মানুষ করোনি

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বিশ্বাস করিনা সোশ্যাল মিডিয়া কোন রেভল্যুশন আনতে পারে। ঘরে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, ব্লগ লিখে কারও মনভাবে পরিবর্তন আনা যায় কিনা আমি জানিনা। শুধু জানি নীরব দর্শক হওয়ার চেয়ে প্রতিবাদী হওয়া ভালো। আরও ভালো হল প্রতিরোধ করা যাতে ভবিষ্যতে অন্যায় এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

টিএসসি তে যা ঘটে গেলো তা নিয়ে কিছু লেখার মত শক্তি বা শব্দ আমার মত ছোট মানুষের নেই। আমার সেই ভিডিওটি দেখার রুচি হয়নি, নিজেকে ওই জায়গায় কল্পনা করারও সাহস হয়নি। শুধু বলতে পারি এরকম ঘটনা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ঘরে বাইরে প্রতিদিন ঘটে। প্রতিদিন! উইমেন ভায়োলেন্স স্ট্যাটিসটিক্স বলে, বাংলাদেশে প্রতি দশজন নারীর মধ্যে নয়জনই নিজ স্বামী দ্বারা নির্যাতিত। ৮৭% নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার। প্রতি চার জনে একজন গর্ভবতী মহিলা শারীরিক অথবা যৌননিপীড়িত।

তাহলে বুঝতেই পারছেন সমস্যা গোঁড়াতেই, ঘরের মধ্যেই মোষ। ছোটবেলায় আমরা সবাই একটা proverb শিখেছি- "Courtesy begins at home." শিষ্ঠাচার এর শুরু ঘর থেকে, ফ্যামিলি থেকে। তারমানে বলতে পারি, ৮৭% এর ঘরে এটা শেখানো হয়নি অথবা কেউ এই কথাটার অর্থও কোনোদিন উপলব্ধি করতে পারেনি, গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তার ফলাফলই আমরা ভোগ করছি। আমি কিন্তু বলব, এই শতকরা হারটা আরও বেশী।

কেন বললাম এই শতকরার হার বেশী যাদের ছোটবেলায় কার্টেসী/শিষ্ঠাচার শেখানো হয়নি? একটু লক্ষ্য করলেই ব্যাপারটা ধরা যাবে। আমাদের বাঙ্গালীদের আহংবোধ অনেক বেশী। বাঙ্গালী পুরুষদের ইগো আরোও বড়। অল্প একটুতেই তাদের আঁতে ঘা লাগে। সুতরাং দুর্বল কামিনীদের যথার্থ সম্মান দিতেও তাদের অহংবোধে বাধা পায়। কতটুকু সম্মান পায় আসলেও নারীরা সমাজ থেকে, ঘর থেকে? আমি নারীবাদী নই। কিন্তু, প্রতিবাদী তো বটেই।

ছোট্ট একটা উদাহরন দেই। এই জেনারেশনের আমরা সবাই কম বেশী ইংলিশ মুভি দেখি। ব্রিটিশ দেখলে ওদের একসেন্ট শুনে ভাবি আহা! এমন খাঁটি ব্রিটিশ একসেন্টে ইংলিশ বলতে পারতাম! ওদের বিনয়ী ভাবটা, ওদের সেন্স অফ কার্টেসি কখনও দেখেছি খেয়াল করে? কখনও কেউ সেগুলো ফলো করার চেস্টা করেছে? কখনও কোন বাঙ্গালী ছেলেকে দেখেছি গাড়ি থেকে নেমে নিযে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে কাউকে নামতে সাহায্য করতে? না, আমরা ওইটা করলে আমাদের ইগোতে লাগবে! এগুলো তো ড্রাইভার, বড়জোর দাড়োয়ান এর কাজ, তাইনা! কখনো কোনো রেস্টুরেন্ট এ দেখেছি কোনো ছেলে তার সাথে আসা মেয়ে/মহিলাটিকে হাসিমুখে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিচ্ছে? মনে পড়ছেনা। পাবলিক প্লেসে অথবা বাসে কয়টা পুরুষ কোনো মহিলা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের আসনটি ছেড়ে দেয়? লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলে পিছনের ভদ্রমহিলাকে সামনে এগিয়ে আসার সম্মানটুকু দেখায়? ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা লাগলে কয়জন দাঁড়িয়ে দুঃখিত বলে? কয়জন ছেলে কোন মেয়ে/মহিলাকে আসতে দেখে লিফট এর বোতাম চেপে ধরে বলে "After you, mam!" খাঁটি ব্রিটিশ একসেন্ট লাগেনা, এতটুকু ভদ্রতাও কিন্তু নিযেকে জেন্টলম্যান হিসেবে প্রমান করার জন্য যথেস্ট! আমরা এইসব করিনা কারন আমাদের এইসব "বিদেশী" ভদ্রতা সেখানো হয়নি। আমাদের সেখানো হয়েছে মুরুব্বি দেখলে পায়ে ধরে সালাম দেয়া আর বড়দের সাথে তর্ক না করা। মহিলাদের প্রতি আলাদা করে কোনো ভদ্রতার কায়দা-কানুন আমাদের সেখানো হয়নি। বাঙ্গালী ব্রিটিশদের কাছ থেকে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চা খাওয়ার পাশাপাশি কিছু ভদ্রতা শিখলেও আজকে কিছুটা হলেও কাজে লাগত।

চরিত্রের গঠন ছোটবেলায় ঘর থেকেই শুরু হয়। যেই ঘরে যত্নের সাথে এইসব আদব-কায়দা সেখানো হয়, সেইরকম পরিবেশে রাখা হয়, সেই ছেলে বড় হয়ে কোনো মেয়ে দেখলে অসভ্যের মত টিজ করবে বলে আমার মনে হয়না। বরং যে নিযের মা কে ছোট থেকে অসম্মানে অবহেলায় দেখে বড় হয়েছে, সে-ই অন্য মেয়েকে অসম্মান করতে যাবে কারন, সে তো সম্মান করা শিখেনি, দেখেওনি। আজকাল কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই দোষী লোকটার বিরুদ্ধে একটা কমন কমেন্ট দেখি, "তোর ঘরের মা বোনদেরও নিশ্চয়ই এমন করস", "তোর মা -বোন খারাপ" অথবা, "তোর ঘরের মা-বোনদের সাথেও ঠিক এমন হওয়া উচিত।" কি বিকৃত নিম্নরুচির মানুষ হলে এমন কথা বলা যায়! তাহলে যেই ছেলে যৌন হয়রানী করল তার সাথে এইসব মানুষের পার্থক্য কোথায়? আবার কেউ কেউ ফতোয়া তুলবে ভিক্টিম এর বসন ও চরিত্র নিয়ে। তারা কি জানে প্রতিটা মেয়েই যে জীবনকালে অন্তত একবার হলেও ডিরেক্টলী/ইন্ডিরেক্টলী ঘরে অথবা বাইরে যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে? প্রত্যেকের পোষাকই কি খোলামেলা ছিল? প্রত্যেকেরই চরিত্র খারাপ? এত বড় হিপোক্রেইট কেনো আমরা? যেই মানুষগুলোর ক্রমাগত হিটে নায়লা নাঈমের মত বানিজ্যিক মেয়েদের পেজে লাইকের বন্যা বেড়ে যায়, সেই মানুষগুলোই আবার "যথার্থ আবরন" এর বিচার করতে করতে আসে?!

ইদানিং আবার "মাই চয়েস" এর খুব অপব্যবহার হচ্ছে। লেডীস এন্ড সো-কলড জেন্টলম্যান, মাই চয়েস দুইভাবে নেয়া যায়-নেগেটিভলী আর পসিটিভলী। আপনি আপনার চয়েস কোনভাবে নিবেন সেটাই আপনার ব্যাক্তিত্বকে তুলে ধরবে। Manners maketh Man! সুতরাং আগে নিযে বদলান, এরপর অন্যকে বদলাতে সাহায্য করুন। শাড়িটা মেয়েটার নাভীর নিচে ছিল না উপরে সেটায় মনোযোগ না দিয়ে এটলিস্ট, পরবর্তী জেনারেশন যাতে কিছুটা ম্যানার শিখে আপনার কাছ থেকে সেই দিকে মোনযোগ দিন। নিয নিয ঘরের মা-বোন-বউ তথা সকল নারীদের যথাযথ সম্মান দিন, পরবর্তী প্রজন্ম তাই শিখবে যা দেখে বড় হবে! Make your own choice but make sure it's good enough to bring the change!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×