
তার মা তাকে বরই তলায় শুইয়ে রাখত। আমি বলতাম, অনুপমা ও নিরুপমা! পাখির রাসার মত দু’টি চোখ তোমার, ঠিক যেন নাটরের বনলতা সেন। তারপর তার মা একদিন আমার মাকে হামলা করে। আমার মা চলে আসেন ঢাকায়। কিছু দিন পর তার মা চলে আসেন নারায়নগঞ্জ। তারপর যখন আমি কামিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন সে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী আসে। তার মায়ের সাথে তার বাবার ছাড়াছাড়ি হওয়ায় তার মা তার সাথে আসেনি। তার সাথে আসে তার বাবা। আমি যে স্থানে বসে পড়তাম সে তার থেকে দু’হাত দুরে চেয়ারে বসে কবুতরের বাসা দেখতো। মা বিষয়টা দেখলেন এবং বললেন, এখানে বসে আর পড়া-লেখা চলবে না। অবস্থান চেঞ্জ করতে হবে। অন্য ঘরের টিউবয়েলের পাশের রুমে পড়ার ঘর বানালাম। সে সেখানে প্রায় আসতে থাকে জগ ভরে পানি নিতে। মা বললেন, এখানেও পড়া চলবে না। চেঞ্জ করতে হবে। গেলাম অন্যঘরে। পাশেই ছিল ভাবীর বাসা। তখন সে প্রায় ভাবীর বাসাতেই পড়ে থাকে।
যখন প্রথম তাকে নিয়ে গান ধরে ছিলাম তখন সে তা’ বুঝেনি। কারণ তখন তার বয়স হয়ত এক বছরের কম ছিল। এখন তার বয়স আঠার। এখন সে গান বুঝে। সে অন্যদের সাথে পিকনিক করছিল। তাদের পেয়ারা গাছে উঠে তাকে গান শুনালাম, মাধবী ফুটেছে ঐ তারারা উঠেছে ঐ আমি কি তোমার নই? সে চুপ করে গান শুনছিল। এক ভাবীকে বললাম আপনার এখানে ওর সাথে বিকেলে কিছুটা সময় কাটতে চাই। তিনি বললেন, ঠিক আছে। ওকে বিষয়টা জানালাম। এটাই ছিল ওর সাথে প্রথম কথা। তারপর বিকেলে দু’জন ভাবীর বাসায় যেতাম। উঠনে বসে সবুজ ধান ক্ষেত দেখতাম। পাশাপশি দু’জন। ফুরফুরে বাতাস। সন্ধার আগে ঘরে ফিরে আসতাম।
বাল্যবন্ধু ফুফাতো ভাই প্রায় প্রায় আমাদের বাড়ী চলে আসতো। আমার সাথে থাকতো। দাবা খেলতো। আমি ওর কথা তাকে বলতাম। সে মনযোগ দিয়ে শুনতো। একদিন সে দুঃখ করে বলল, আমি ওকে আই লাভ ইউ বলে একটা চড় খেয়ে ছিলাম। তখন বুঝলাম সে নানা বাড়ী এমন ঘন ঘন কেন আসে।
বিষয়টা জানাজানি হলে উভয় পরিবার চার হাত এক করতে সম্মত হলো। কিন্তু লোকে বলল, ওর মা ওর বাবাকে ছেড়ে গেছে মায়ের স্বভাব ও যদি পায় তাহলে সেও আপনার ছেলেকে ছেড়ে যাবে।এমন আগুনে রূপ মেয়ে এমন ছেলের কাছে কেন থাকবে? মোক্ষম যুক্তি। মা বেঁকে গেলেন। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার তখন কিছু করার মত অবস্থা ছিল না। সুতরাং চার হাত এক করার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে গেল।
ফুফাতভাই তার ভাবীকে বলল, ভাইয়াকে বলেন এখনি মামার নিকট যেন আমার প্রস্তাব দেয়। এবার সে সফল। তারা সুখে আছে। আমিও সুখে আছি। নিরুপমার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হলে পাশাপাশি হাটি কিছুটা সময়। অথবা দূর থেকে তাকে দেখি। আমি এখন দুই জামাইয়ের শ্বশুর। নিরুপমাও হয়ত ক’দিন পরে শাশুড়ি হবে। এক বছরের কম নিরুপমাকে নিয়ে যে গুনগুনিয়ে গান গেতাম সেটা মনে হয় তাকে বলা হয়নি। কখনো বলা হবে কিনা তাও জানি না। আমরা যোগাযোগ রাখি না। হয়ত তা’ দু’পরিবারের জন্য। এটাই হয়ত সঠিক কাজ।
# ১০০% বাস্তব।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




