দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত দু’টায় লঞ্চ থেকে চাঁদপুর নামিয়ে দেওয়া হলো। সিএনজি (বেবী টেক্সি) রিজার্ভ নিলাম। কিছু দূর এসে ড্রাইভার বলল, সে আমাদের এলাকায় আসার পথ চিনে না।আমি বললাম, আমিও চিনি না। এবার উপায়? ড্রাইভার অনুমানে যেতে থাকলো। সে রাস্তা ভুল করলো। এক লোকের মোবাইল কল আসলো, সে নেট পাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে বের হলো। ড্রাইভারকে বললাম তাকে জিজ্ঞাস করো। জিজ্ঞাস করার পর জানা গেলো আমরা ভুল পথে যাচ্ছি। তবে ভুল পথে খুব বেশী পথ আমরা আসিনি। বেক না করে সে ঠিক পথ দেখিয়ে দিলো। তার পর মোড়ে মোড়ে আরো লোক পাওয়া গেল। আমার স্ত্রী বাড়ী এসে বলতে ছিলো মোড়ে মোড়ে লোক দাঁড়িয়ে ছিলো আমাদেরকে পথ দেখাতে। নতুবা এত রাতে রাস্তায় লোক থাকার কথা না। তবে এত রাতে রাস্তায় সাধারণত যারা থাকে তারা থাকলে আমরা ওজনে হালকা হয়ে বাড়ী যেতে পারতাম। যাক সহি সালামতে রাত চার টায় ঘরে ফিরলাম।
গতকাল আমি সকাল নয়টায় ঝালকাঠি যাত্রা শুরু করলাম। ঘাটে এস শুনি এ ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে না। নদীর পানি কমে যাওয়ায় এ ঘাটে লঞ্চ আসে না।তারপর আরেক ঘাটে গেলাম। লোকেরা বলল, ট্রলারে উঠেন।ট্রলার ছাড়ার সাথে সাথে ঘাটে আসলো ভোলার সীট্রাক। মনে মনে ভাবলাম এক মিনিট পর ঘাটে আসলে তো সীট্রাকে উঠতে পারতাম। ট্রলার বহুদূর গিয়ে ভোলার অপরাজিতা লঞ্চে তুললো। সাথে সাথেই সেখানে হাজির বরিশালের পারিজাত লঞ্চ। কিন্তু অপরাজিতা থেকে পারিজাতে যাওয়ার উপায় নেই। লঞ্চ দু’টি চরে আটকে আছে।তিনটায় নাকি জোয়ার আসার পর এখান থেকে লঞ্চ ছাড়বে। হিসাব অনুযায়ী যখন বরিশাল পৌঁছার কথা তখন আবার ঝালকাঠির গাড়ি না পাওয়ার কথা। ফোনে ঘরের লোকদেরকে বললাম, আজ মনে হয় আর ঝালকাঠি পৌঁছতে পারব না। এদিকে আটকে পড়া লঞ্চের পাশদিয়ে সীট্রাক ভোলার দিকে চলে গেলো। এক মহীলা একটা ট্রলারকে বলল, সে পাতার হাট যাবে তাকে যেন অপরাজিতা থেকে পারিজাতে নেওয়া হয়। ট্রলারের লোক তাতে কিছুতেই রাজি না। তারা বলে অপরাজিতার যাত্রী স্থানান্তরে তাদের সম্মতি লাগবে। মহিলা হিসাবে অপরাজিতা কর্তৃপক্ষ তাকে স্থানান্তরের অনুমতি দিলো। হতভাগা পুরুষ হিসাবে আমার আব্দার নাকচ হলো। যখন হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তখন ট্রলার ওয়ালার দয়া হলো। তারপর পারিজাতে উঠতে পারলাম। একটায় জোয়ার আসলো। হিসাবে সাড়ে পাঁচটায় বরিশাল পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পারিজাত সাড়ে চারটায় বরিশাল পৌঁছে গেল। একমিনিট পরে ঘাটে আসলে সীট্রাকের যাত্রী হয়ে ভোলায় গিয়ে কাটা পথে অনেক ঝক্কি ঝামেলায় পড়ে ঝালকাঠি যেতে হতো। একমিনিট আগে ঘাটে এসে প্রথমে ঠকেছি মনে হলেও পরে দেখা গেল সেজন্যই সরাসরি কম সময়ে বরিশাল আসতে পারলাম। লঞ্চথেকে একমিনিট পরে রূপাতলি আসায় ঝালকাঠির বাস ফেলকরলাম। একমিনিট আগে এসে সেই বাস পেলে পুরাপথ দাঁড়িয়ে যেতে হতো।সেই বাস ফেল করায় পরের বাসে সামনে সীট পেয়ে আরামে ঝালকাঠি পৌঁছলাম।
লক্ষ্মীপুর আসার পথে বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আসলে ঘাটের অনেক আগে লঞ্চথেকে ট্রলারে নামিয়ে দিতএমতাবস্থায় আমার স্ত্রী ট্রলারে না উঠে বরিশালে ফেরত যেত। বিষয়টা অনেক ঝামেলার হয়ে যেত। তাকে নিয়ে চাঁদপুর রুটে যাওয়া সঠিক ছিলো। যদিও তাতে ডাকাতের ভয় ছিলো।বিষয়গুলো আমার আল্লাহর সাহায্য বলে বিশ্বাস হলো। নাস্তিকরা অবশ্য এর একটা ভিন্ন নাম দিতে পারে।কারণ তারা তো আবার আল্লাহতে বিশ্বাস করে না।