ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ চমৎকার ভাবে। তাদের সাথে আনন্দে যোগ দিল মানুষের বাচ্চা। কুকুর দম্পতি খাবরের জন্য এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করছিল।
জীবনান্দ দাস পার্কের উদ্ভোধন না হতেই আওয়ামী লীগ সরকার পড়ে গেল। পাশের মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, মনে করে ছিলাম দেশটা ধ্বংস হয়ে গেল। এখন দেখছি দেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।জীবনান্দ দাস পার্কের স্থাপনা ঘুরে দেখলাম। ইমাম সাহেব বললেন, ঠিকাদার টাকা তুলতে পেরেছে। যাক এমন সুন্দর স্থাপনা যারা তৈরী করেছে তারা ক্ষতির মধ্যে পড়েনি জেনে শান্তি পেলাম। গিন্নিকে বললাম, দেখা যাক বিএনপি এসে আর কি করে?
নদীর অপর পাড়ে যাওয়ার জন্য একটা ব্রীজ আছে। অপর পাড়ে নদীর পাড়ের সরু পথের দু’ধারে সরু পথের দু’ ধারে আছে গাছের সারি এবং ঝরা পাতা। নির্জন স্থান বেছে কয়েক জনকে কবিতা আবৃত্তি করে রেকড করতে দেখলাম। সেদিকে গিয়ে তাদেরকে আর ডিস্টার্ব করলাম না। নদীর পাড়ে হাঁটতে থাকলাম। একটা ক্যানেলের উপর একটা গাছ ফেলে রেখেছে। ওটার উপর হাঁটার জন্য ধরার মত কিছু নাই। গিন্নি কে বললাম, ওটা পার হওয়া আমাদের কাজ নয়। সুতরাং ফিরে আসলাম। তখন দেখলাম সূর্য মামা দীগন্তে অস্ত যাচ্ছে। নদীর দু’পাড়ে বিস্তীর্ণ ধানের ক্ষেত। কন্যাদেরকে বললাম, ধানসিঁড়ি নদীর নাম ঠিক আছে। মাঠের শেষে দেখা যাচ্ছিল দূরের গ্রাম। একজন নদীতে মাছ ধরছিলেন। ফিরার পথে দেখলাম রাখাল গরুর পাল নিয়ে ফিরছে। এখনকার গরুগুলো গফুরের গরুর মত নয়। বেশ মোটাসোটা।
মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, ধানের ক্ষেত, দূরের গ্রাম, ব্রীজ-শাঁকো, ছাগল শিশু, নৌযান, হরেক রকম গাছ-পালা, শাক-সবজি চাষ, গ্রামের সরল মানুষ, মসজিদের ইমাম, শালিক ও তাদের কিচির-মিচির, বকের ঝাঁকের বার বার টহল। তারা মাথার খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। একটা শিশু গড়িয়ে অনেক নীচ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল। গিন্নীকে বললাম, ঘুরাঘুরি কেমন ছিল? সে বলল অতি চমৎকার। গাবখান সেতু দু’বার পাড়ি দেওয়া হলো। মেয়েরা সেখানে যাত্রা বিরতি করতে চেয়েছিল। তাদেরকে আগামী শুক্রবারের কথা বলে এবারের যাত্রা সংক্ষেপ করলাম। মেয়েরা পারিবারিক ছবিই বেশী তুলেছে। যারা সেখানে গিয়েছে তারা ছবি তোলাতেই ব্যস্ত ছিল। একটা মেয়েকে খুব কিউট ভুতের মত মনে হচ্ছিল। পরে তাদের পরিবারকে একত্রে দেখলাম। আমি বললাম, এরা কিউট ভুত পরিবার। বড় ছোট সবাই একরকম। তারা সবাই ছিল চোখ জুড়ান ভুতের মত। সব মিলিয়ে আনন্দটা চমৎকার ছিল। আর আমার কবিতার নায়িকা কিন্তু অরিজিনাল। তবে তাকে নিয়ে ঘুরাঘুরির সাহস পাচ্ছি না।সে যেন পাশাপাশি বসিবার মনলতা সেন। কোথা থেকে এসে জুটেছে কে জানে? বললাম, তোমাকে নিয়ে কাব্য হবে। সে বলল, আচ্ছা। স্ত্রী বললেন, ওসব বনলতার জন্য কোন ছাড় নয়। আমি বললাম, আচ্ছা। স্ত্রীদের কথায় আসলে ‘না’ বলা যায় না। বনলতা সেটা বুঝে। সে বলল, আমি একটা পাঠাগার গড়ব। আপনি এবং মা-বাবা, এর নিয়মিত পাঠক হবেন। আমি বললাম, আচ্ছা। ভাবলাম সেই পর্যন্ত আগে তো বাঁচি। তবে পাঠক হওয়া আমার প্রিয় কাজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫