তামিলনাড়ুর এক বিজেপি নেতা গ্রেফতার হয়েছে। নাম ভেলুমুরুগান। কারন শুনলে অবাক হবেন। তার অপরাধ হল তিনি মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় হজ যাত্রীদের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন। তিনি আরো বলেন মক্কার ওই দুর্ঘটনায় যদি তাঁর প্রতিবেশী কেউ মারা যেত তাহলে তিনি আরও বেশি খুশি হতেন। আজমের আলি নামের এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আদালত তার বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
এরকম বর্বর, মুর্খ, নিকৃষ্ট মানুষও দুনিয়াতে আছে ভাবতেই অবাক লাগে। মনের মধ্যে কতটা বিদ্বেষ আর ঘৃণা থাকলে কেউ এমন করে ভেবে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় কিছু মুসলিম নামধারী মানুষও ঠিক এমনই কাজ করে থাকেন। কেদারনাথ বা অন্য তীর্থযাত্রীদের দুর্ভোগেও অনেককে দেখেছি আনন্দ করতে। এমনকি নেপালে ভুমিকম্পের সময়তেও অনেকে বলেছিলেন নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র তাই আল্লাহর গজব পড়েছে। এনিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পোষ্টও দেখেছি অনেক।
এই নামধারী মুসলিমরা ইসলামকে না জেনেই ইসলাম নিয়ে মাতামাতি করে। নিজের মর্জি মতো কাজ করে ভাবে ইসলামের জন্য কাজ করলাম। আসলে ইসলাম একটি পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের জন্য কাজ করলে ইসলামসম্মতভাবে করতে হবে। যেভাবে নির্দেশ আছে, যেভাবে সলফে সলেহীনরা করেছেন সেভাবেই করতে হবে। নয়লে সমাধান তো হবেই না শুধু সমস্যা সৃষ্টি হবে। যেমন, কিছু লোক জিহাদ করতে গিয়ে শান্তির বদলে অশান্তি সৃষ্টি করছেন, শৃঙ্খল জায়গাকে বিশৃঙ্খল করে তুলছেন।
ইসলাম কখনও বিধর্মী মাত্রই ঘৃণা করতে শেখায় না। মহান আল্লাহ বলেন, 'দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিস্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরয়ায়ণদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেছে এবং তোমাদের বহিস্করণে সহযোগিতা করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে, তারাই তো অত্যাচারী’। (মুমতাহিনাহ/৮-৯)
এবার একটা ঘটনা শুনুন। যা আমাদের শিক্ষা দেয় মুসলিমরা শুধু নিজ ধর্মের লোকের প্রতি নয় অন্যদের প্রতিও মানবতার দরদ রাখে। একদা এক ইহুদির জানাযা সামনে বেয়ে পার হতে দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁকে বলা হল হে আল্লাহর রাসুল! ওটা তো ইহুদির জানাযা। তিনি বললেন, ‘ওটা কি একটা প্রাণ নয়?’। তাঁর পরবর্তীতে তাঁর সাহাবাগণও মানবতার সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ক্বাদেসিয়াতে সাহল বিন হুনাইফ ও ক্বাইস বিন সাদ বসে ছিলেন। এক জিম্মী অমুসলিমের লাশ নিয়ে যেতে দেখে তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন। লোকেরা অবাক হলে তাঁরা মহানবীর হাওয়ালা দিলেন’। (বুখারী/১৩১১-১৩১৩; মুসলিম/৯৬১)।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২১