somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুটি

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাঝে মাঝে সংসার থেকে ছুটি নিতে হবে
সন্ততির কোলাহল-মধুর সান্নিধ্য ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হবে
বর্তমানের খোলস ছিঁড়ে উদ্দাম অষ্টাদশে ফিরে যেতে হবে

সবুজ পেয়ারাগাছে যে যুবতী এ-ডাল ও-ডাল ছুটে বেড়াচ্ছে, লাল রঙের
ওড়না পেঁচিয়ে কোমরে, সোনালি চরণে রুপোর পায়েল,
চিকন আগডালে ঝুলে পড়ে তুলে আনছে পক্ব পেয়ারা, মুখভর্তি রস-
কারণে অথবা অকারণে হেসে গড়িয়ে পড়ে বান্ধবীদের গায়;

সে তখন বালিকা- চপলাচপল হেঁটে যায় রাস্তায়
স্কুল অথবা কলেজে-
একটি যুবক প্রতিদিন চৌমাথায় দাঁড়িয়ে থাকে, যে-পথে যুবতী হেঁটে যায়
একটি যুবক প্রতিদিন চুপিচুপি পিছু নেয়, যে-পথে যুবতী এঁকেবেঁকে চলে
একটি যুবক মিছেই খুব ভীরু ছিল, একদিন সাহসী হয়ে ওঠে, তির ছোঁড়ে
শরাহত বালিকা কতো না উদগ্রীব ছিল ঘায়েল হবার জন্যেই- আহা,
নিমেষেই কুপোকাত।
একদিন মেয়েটির কাছে ফিরে যেতে হবে-

চলো, কিছুদিন ছুটি নিই।
গেরস্থালির হাড়মাংস ঝেড়েঝুড়ে নিপাট নির্জনে যাবো।
আঠার অথবা বিশ- টগবগে, দুর্ধ্বর্ষ দিন
আমাদের মাঝখানে বিলকুল কিছু নেই, আমরা দুজন যাবতীয় জঞ্জালহীন।

সদ্য প্রেমে পড়া যুগলের মতো একদিন ছুটে যাবো শালবন বিহার, যমুনার চর,
আনন্দ রাজার দিঘি, ধনবাড়ির পুরোনো জমিদার বাড়ি।
একদিন ভোরে রিভার ভিউ’র ভেজা বালুতে খালি পায়ে হাঁটবো। বেড়ালের লোমের
মতো শাদা ও নরম থোকা থোকা কাশফুল, স্নিগ্ধ মনোরম- তোমার গাল ছুঁয়ে দেবো,
আর চোরা চোখে চারদিক পরখ করে বার বার ‘অসভ্য’ হবো।
টিএসসি চত্বরে আর নয়, একুশে বইমেলা আরেক জীবনে। সিনেপ্লেক্স বড্ড যান্ত্রিক।
আজকাল সেভাবে সিনেমা দেখে না কেউ। আমরা পালিয়ে
সিনেমা দেখবার লোভে খুঁজতে যাবো ‘জয়পাড়া সিনেমা’ হল, যার দালানের গায়ে
একদা কে যেন লিখেছিল ‘খ’ যোগ ‘ল’।

মাঝে মাঝে ছুটি নিতে হবে, ভুলে যেতে হবে আমাদের বয়স বেড়েছে
প্রতি ৫ মিনিটে মিস্‌ড কল না পেলে বাঘিনীর মতো হিংস্র হয়ে উঠবে
ডেটিং প্লেসে পৌঁছবো না, কিংবা পৌঁছবো ঠিক ঠিক একবেলা দেরি করে
আর তুমি ভয়ানক ফণা তুলে বিড়ায় বসে ফুঁসতে থাকবে
গভীর ভিড়ের মধ্যেও মওকা খুঁজবো, রিকশাতে হুড ফেলে দেবো,
একটু অন্ধকার পেলেই যত্তসব ‘অসভ্যতা’- তুমি সবেগে
হাত ফিরিয়ে দাও- অথচ মনে মনে জোর করো!
আমরা লঞ্চের রেলিঙে বসে ঝালমুড়ি খাবো- বান্দুরা-কলাকোপা-ইছামতির ঢেউ
আমরা ভুলে যাবো মর্ত্য অথবা অমরাবতীর কথা–তোমার অমৃতের চেয়ে
আর কিছু আরাধনা নেই

ভাটিমাইন চূড়ায় যেদিন হেলিকপ্টার নামলো, মাটিতে পা ফেলে ২০ গজ দূরে
এক ভিক্ষু’কে দেখি- ভিক্ষু নয় সে, সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসী নয় সে, মহান প্রেমিক।
কী গভীর তার ধ্যান! তার ক্ষুদ্র একটা ছাপরাঘর ছিল। ছিমছাম অন্ধকার।
দিন যায়, রাত আর কুয়াশা, এবং মেঘ উড়ে আসে ছাপরাঘরে।
থির সন্ন্যাসী জেগে থাকে ধ্যানের ভিতর- পিঁপড়া, মশা, সরীসৃপ দংশন-
বেজায় নস্যি।

সংসার পেছনে পড়ে থাক, সন্তানেরা একদিন ওদিকটা সামলাক-
ওদেরও ছুটি চাই, শাসন-বারণ থেকে বিস্তর স্বাধীনতা চাই।
ওরা নিজেরাই একদিন নিজেদের মা অথবা বাবা হয়ে উঠুক।
দেখা যাক- লাবিবের গোসল হলো কিনা, ইশকুলের হোমটাস্ক কে করে দিল;
ঐশীর টিফিন কে বানালো, আর সাইফকে কে দিল ঘুম থেকে জাগিয়ে।

আমরা একদিন ছুটি নিয়ে হাইকিঙে যাবো, ১৮০৩ ফুট আপ-হিল বেয়ে
ভাটিমাইন চূড়ায় উঠবো- বিস্তৃত কালাপাহাড় পুরোটাই দখলে;
ভিক্ষু'কে দিয়ে ছুটি
ক্ষুদ্র ছাপরাঘরে গড়বো আমাদের জন্য অন্য একটি পৃথিবী।

জীবনে সজীবতা আনে ছুটি, ছুটিতে ভীষণ চাঙ্গা হয়ে উঠি-
এজন্য একদিন ছুটি নিতে হবে, ভাবনাহীন নির্ভেজাল ছুটি।

চলো, ছুটি নিই আজই।

২৩ জানুয়ারি ২০১২

ভাটিমাইন চূড়া

পার্বত্য চট্টগ্রামের সুদীর্ঘ কালাপাহাড় রেঞ্জে আমার জানামতে সর্বোচ্চ চূড়ার নাম ভাটিমাইন, যার উচ্চতা ১৮১৮/১৮০৩/২১০০ ফুট– সঠিক মনে নেই। এটি আমার একটি প্রিয় জায়গা, স্বপ্নের মতো। কবুতরের মতো ডিগবাজি খেতে খেতে এ চূড়াটিকে উপর থেকে দেখলে এক অদ্ভুত সুন্দর ঢেউখেলা সবুজ চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়। অবর্ণনীয়। ধ্যানমগ্ন ভিক্ষু’র কথা আমি আজও ভুলতে পারি না। অমন সবুজ চূড়ায়, নির্জনতার অনুপম সুখ ও স্বাদ পাওয়া যায়।

ভাটিমাইনের পথ অতিশয় দুর্গম। সকাল ৬টায় পাদদেশ থেকে ক্লাইম্বিং শুরু করলে দুপুর ২-৩টায় পৌঁছা যাবে ভিক্ষু'র ছাপরায়। আমি অবশ্য ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং করেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×