somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষকদের জন্য যা যা করা যেতে পারে

২৫ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে-কোনো মূল্যে আমাদের কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা টেকনোলজিক্যালি যত উন্নতই হই না কেন, আমরা কোনো সফটওয়্যার খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না, বা না খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য কোনো সফটওয়্যার আবিষ্কার করা সম্ভব হবে না। আমাদের ফসলের মাঠে ধান, গম, সবজি উৎপাদন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। এজন্য, কৃষকরা যাতে কৃষিকাজে অনবরত লোকসানের ফলে কৃষি বন্ধ করে না দেন, আমাদের সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।

অন্যদিকে ভোক্তা হিসাবে, আমাদের দৈনন্দিন খাবারের জন্য চাল, আঁটা, মাছ, মাংশের দামও নাগালের মধ্যে থাকতে হবে। মনে হচ্ছে, এই কিছুদিন আগেও আমরা ১০-১২টাকা সের দরে চাল কিনেছি। তখন কিন্তু কৃষকের এত হাহাকারের কথা শোনা যায় নি। এখন কৃষকদের জন্য সরকার থেকে প্রচুর সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু, একদিকে চাল-আঁটার দাম আকাশ-ছোঁয়া, অন্যদিকে, ধানের মূল্য অনেক কম হওয়ায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য খুবই সংকটের কথা।

আমাদের দেশে দুর্নীতি এত রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে যে, সরকার যে-কোনো ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অচিরেই তাতে দুর্নীতিবাজরা ঢুকে যায়, যার ফলে কৃষকদের অবস্থার উন্নতি করা কতখানি সম্ভব হবে তা বিরাট প্রশ্নের জন্ম দেয়। বর্তমান সময়ে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে যেয়ে ধানের মূল্য খুব কম হওয়ায় তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনও দেখা যাচ্ছে, একমণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে একসের মাংসও কিনতে পারছেন না। অভিমানে বিক্ষুব্ধ হয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে চাইছেন কৃষকরা। কিন্তু সেটা কি কোনো সমাধান এনে দিবে আমাদের জন্য? আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কৃষিকাজের বিকল্প নেই। সরকার কৃষকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক পথ খুঁজছেন। কিছুদিন আগে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীকেও দেখলাম খুব আন্তরিকভাবেই তিনি বলছেন কীভাবে সমাধান করা যায় তার উপায় খুঁজছেন। অনেকের কাছেই অনেক সমাধান আছে। সবগুলো সমাধানই হয়ত ভালো, কিন্তু তা ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’ সেটা নির্ভর করছে তা কতখানি সঠিক ও কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করা গেলো তার উপর। আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন, এবং আমি নিজে কৃষিকাজ করে বড়ো হয়েছি। আমার সেই সময়ের কৃষিকাজ ও আজকের কৃষিকাজে বেশ তফাত রয়েছে। তবু, আমার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি এ বিষয়টা আলোচনা করবো ও কিছু সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করবো।

এই মুহূর্তে কৃষকদের জন্য কোন পদ্ধতিটা উপকারী বা অধিক কার্যকর হবে, তা গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন। আমরা যে পদ্ধতিতেই যাই না, একটা নতুন শ্রেণি গড়ে উঠবে যারা মধ্যস্বত্বভোগীদের স্থান দখল করে নেবে, ফলে মূল কৃষকদের ভাগ্যে কোনো/তেমন পরিবর্তন আসবে না। সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের ধান কিনতে চায়, সেটাও খুব বাস্তব হবে না, কারণ, কৃষকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে না, মাঝখানে আরো কয়েকটা দালাল শ্রেণী গড়ে উঠবে, যারা লাভটা খেয়ে ফেলবে। দুর্নীতিও বাড়বে। একটা শ্রেণী একদিকে ধান বিক্রি করবে, আরেকদিকে নিজেই কৃষক সেজে অন্যদের কাছ থেকে ধান কিনে আবার সরকারের কাছে বিক্রি করবে। ধানকল করতে গেলেও অনেক সমস্যা হবে বলে ধারণা করছি।

৪০ কেজি ধান থেকে গড়পড়তা ২৩-২৭ কেজি চাল পাওয়া যায়। কিন্তু এর পেছনে ধান সিদ্ধ ও ভাঙানো বাবদ আরো অনেক খরচ আছে। এই ধান ভাঙানোর প্রক্রিয়ার ভেতরেই মনে হয় অনেক দুর্নীতি জড়িয়ে আছে। যার ফলে চাউলের মূল্য অনেক বেড়ে যায়।

যাই হোক, সরকারও এই বিষয়টা সমাধানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে মনে হচ্ছে। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকিটা ঠিক ধরা যাচ্ছে বলে মনে হয় না। যারা চাল কিনে খান, তারা ইচ্ছে করলেই ধান কিনে চাল ভাঙিয়ে নিতে পারেন, ফলে ১৫ টাকা দরের ধান কিনলে ২৫-৩০টাকা কেজি পড়ে চালের দাম। এটা না করে তারা ৪০-৪৫টাকা দরে চাল কিনেন কীজন্য? এখানেও হয় আমাদের ক্যাককুলেশনে ভুল, অথবা বাজার দরে ভুল- কোনো এক জায়গায় সমস্যা আছে।

সরকার যদি কৃষকদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করে, সেটা কৃষকদের কাছে না যেয়ে ভূয়া কৃষকদের কাছে চলে যাবে। বিনামূল্যে সার ও কীটনাশক বা অন্যান্য কৃষি উপকরণ, যেমন চাষের ট্র্যাক্টর, তেল, ইত্যাদি বিনা মূল্যে দিলে উৎপাদন মূল্য কমে আসবে, যার ফলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বে না।

বাংলাদেশ একদিকে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে, অন্যদিকে কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন সেজন্য বিদেশে চাল রপ্তানির কথা বলা হচ্ছে। এখানে সমীকরণটা গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রধান ও প্রথম শর্ত হলো ধান ও গমের উৎপাদন হতে হবে দেশের চাহিদার সমপরিমাণ। যতটুকু ঘাটতি থাকবে, সেই পরিমাণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। দেশের চাহিদা মেটানোর পর দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত রিজার্ভ রেখে বাড়তি পরিমাণ বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। কিন্তু, যখন দেশের ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে ধান-গম-চাল আমদানি করা হচ্ছে, ঠিক সেই অবস্থায় আমদানি ও রপ্তানি উভয় প্রক্রিয়া একই সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া হলো একটা অবাস্তব ও অকার্যকর প্রক্রিয়া।

কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন, এজন্য বিদেশে চাল রপ্তানি করার প্রস্তাবনা উঠে আসছে। সেইক্ষেত্রে সরকার হয়ত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে, যাতে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পান; সরকার সেই ধান ভাঙাবে, অতঃপর চাল বিদেশে রপ্তানি করা হবে। এতে দেখা যায়, একদিকে এক জাহাজে চাল বিদেশে যাচ্ছে, অন্য জাহাজে বিদেশ থেকে দেশে চাল আসছে। প্রক্রিয়াটা আমার কাছে অদ্ভুত ও হাস্যকর মনে হচ্ছে। সরকার এই চাল বিদেশে রপ্তানি না করে আমদানিযোগ্য পরিমাণ দেশীয় আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারে। কিংবা সরকারের নিজস্ব গোডাউনে সংরক্ষণ করে খোলা বাজারে বা পাইকারি দরে বিক্রি করতে পারে।

একজন কৃষকের ধান উৎপাদনে কীভাবে খরচ বেড়ে যায় আমরা সেদিকে একটু নজর দিতে পারি।

১। জমিতে ২-৪ বার লাঙল দিতে হয়। হয় ট্র্যাক্টর অথবা হালের গরু প্রয়োজন।
২। ইটা ভাঙতে হয়। ইটা ভাঙার কাজ মেশিন দিয়ে করা যায় না এখনো। ভালো ট্র্যাক্টর হলে এবং মাটি ভেজা থাকলে ইটা হয় না।
৩। মই দিতে হয়। এটাও ম্যানুয়ালি করতে হয়।
৪। বীজ বুনতে হয়।
৫। সার ও কীটনাশক দিতে হয়।
৬। ২-৩ বার মানুষ দিয়ে আগাছা নিড়াতে হয়।
৭। পানি দিতে হয়। সেচকল বা ডিপওয়েল থেকে পানি দিতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ ও ডিপওয়েল লাগে।
৮। ধান কাটা, মাড়ানো বাবদ মজুরি।
৯। এর বাইরেও অন্যান্য খরচ থাকতে পারে।

কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতে হলে উপরের খাতগুলোতে খরচ কমাতে হবে। কৃষক নিজে যে-কাজগুলো করেন, তার বাইরের প্রতিটা কাজের জন্য মজুরি খরচ অনেক বেশি। যেমন, খেত নিড়ানো বাবদ প্রতি ব্যক্তিকে দৈনিক ৯০০ টাকা দিতে হয় বলে সম্প্রতি টিভি রিপোর্টে জানতে পারলাম। শ্রমিকদের এই দৈনিক মজুরি কমানো যাবে না। সার, বিদ্যুৎ বা পানি সেচ, কীটনাশক, ও বীজ- এই ক্ষেত্রগুলো ছাড়া অন্য কোথাও ব্যয় কমানোর কোনো সুযোগ আপাত নাই বললেই চলে। কাজেই, কর্তৃপক্ষের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে কৃষকগণ যাতে সার, বিদ্যুৎ, পানি সেচের ব্যবস্থা, ইত্যাদি বিনামূল্যে পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা। পানি সেচের জন্য বর্তমানে যে ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, আমার কাছে মনে হয়েছে, মূলত সেই ব্যবস্থার কারণেই কৃষকের লোকসানের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। যেমন, প্রতি সেচ প্রকল্পে এক বা একাধিক ডিপওয়েল বসানো হয় পানি সরবরাহের জন্য। মোট ধানের একটা বড়ো অংশ, সম্ভবত তিন ভাগের একভাগ চলে যায় সেই ডিপওয়েল মালিকের কাছে। ডিপওয়েল চলে তেল বা বিদ্যুতে, যার একটা বড়ো খরচ রয়েছে। সেই খরচের কারণে তিন ভাগের এক ভাগও হয়ত ডিপওয়েল মালিককে লোকসানের দিকে ঠেলে দেয়; অর্থাৎ, তিনিও চান তার ভাগের অংশটা যাতে আরো বেশি হয়। আবার, এ জমি যদি বর্গা জমি হয়, তাহলে বাকি তিন ভাগের দুই ভাগ-কে সমান দুই ভাগে ভাগ করা হয়- একভাগ বর্গা চাষীর, অন্যভাগ জমির মালিকের। জমির মালিককে সার ও অন্যান্য অনেক খরচের ভার বহন করতে হয়, যা স্থান ভেদে একেক জায়গায় একেক নিয়ম। কপালে দুর্ভোগ থাকলে ধানের মৌসুমে শিলাবৃষ্টি হলে ধান হয়ে যায় চিটা, বা নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ফলন কমে যায় ব্যাপক অংশে।

কৃষকের এই অবস্থা উত্তরণের জন্য যেটা কর্তৃপক্ষ করতে পারে তা হলোঃ

১। প্রতি এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্র্যাক্টর সরবরাহ করা। ট্র্যাক্টর অপারেটর সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে (উপজেলা কৃষি অফিসার) পরিচালিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড মেম্বারদেরকেও এই দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা যেতে পারে।

২। প্রতি এলাকায় সরকারি সেচ প্রকল্প থাকবে। সেগুলোও বিনামূল্যে কৃষকদের ক্ষেতে পানি সেচের ব্যবস্থা করবে। সেচ প্রকল্পও ট্র্যাক্টরের মতো উপজেলা কৃষি অফিসারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে।

৩। সার, বীজ ও কীটনাশকও উপজেলা কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।

৪। আরেকটা বিকল্প পথ হলো- কৃষকরা বর্তমান পদ্ধতিতেই চাষাবাদ অব্যাহত রাখবেন। তবে, সরকার থেকে প্রতি বৎসর তাদের ভর্তুকি প্রদান করা হবে। ভর্তুকির জন্য মণপ্রতি একটা দর নির্ধারণ করে দেয়া হবে। মণপ্রতি দর নির্ধারণের ফলে কৃষকরা অধিক ধান ফলনের জন্য উৎসাহিত হবেন; ভর্তুকি লাভের ফলে লোকসানের হাত থেকে রেহাই পাবেন। তবে, এখানে সবচাইতে বড়ো জটিলতা দেখা দেবে প্রকৃত কৃষকের হাতে সঠিক টাকার অঙ্ক পৌঁছানো। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ব্যক্তি টাকার ভাগ বসানো শুরু করবে, কৃষকের ভাগ্যে শেষমেষ কিছুই হয়ত জুটবে না। দরিদ্র কৃষকরা ভয়ে হয়ত মুখও খুলবে না। দুর্নীতগ্রস্ত ভূমিহীন অনেকেই রাতারাতি কৃষকের খাতায় নাম লেখাবে। উপজেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে হবে।

কৃষকরা যাতে ধান বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ন্যায্য মূল্য পান, সেইক্ষেত্রে নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

১। এলএসডিতে ধান বেচাকেনার একটা সর্বনিম্ন দর সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে।

২। ব্যবসায়ীদের কর্তৃক কৃষকদের কাছ থেকে খোলা বাজারে ধান কেনাবেচা নিষিদ্ধ করতে হবে। কৃষকদের কর্তৃক সরাসরি সরকার নির্ধারিত স্থানে সরকারের নির্দিষ্ট এলএসডি বা অ্যাজেন্টের কাছে ধান বিক্রির নিয়ম জারি করা যেতে পারে। তবে, কারা ব্যবসায়ী আর কারা খুচরা বা সাধারণ ক্রেতা, সেটা নির্ণয়ের একটা পদ্ধতি থাকতে হবে। এটা জটিল প্রক্রিয়া সন্দেহ নেই, তবে একটা ফুলপ্রুফ সিস্টেম বের করা আবশ্যিক।

৩। প্রতি উপজেলায় একটা এলএসডি থাকবে, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার কর্তৃক ধান কেনার ব্যবস্থা থাকতে পারে। যিনি ধান বিক্রি করছেন, তিনি তার নিজের ক্ষেতে উৎপাদিত ধানই বিক্রি করছেন, এটা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, কিছু দালাল বা ফরিয়া বা মধ্যস্বত্বলাভী ব্যক্তিরা মাঠ বা গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে এনে এলএসডিতে সরকার নির্ধারিত দরে ধান বেচা শুরু করবে। কালক্রমে এখানেও দুর্নীতি ঢুকে যাবে। তবে, কাজটি সহজ করার জন্য দুর্গম এলাকায় সরকার কর্তৃক একটা মধ্যবর্তী অ্যাজেন্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। অ্যাজেন্টের কাছে বিক্রির অন্য একটা সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া যেতে পারে।

৪। এলএসডি থেকে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে ধান বিক্রির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা হবে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা দরের চাইতে কম। একই সাথে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এলএসডি থেকে ধান কিনে আবার এলএসডিতেই চড়া দরে বিক্রি করতে না পারে।

৫। এলএসডি থেকে ধান ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করতে হবে এই শর্তে যে, তারা ধান ভাঙ্গিয়ে চাল বিক্রি করবে, কোনোক্রমেই ধান বিক্রি করতে পারবে না। কারণ, এরাও অসৎ উপায়ে সরকারের কাছে চড়া মূল্যে ধান বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারে। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা না গেলে সরকারকে অহেতুক অনেক ভর্তুকি দিতে হবে। এই ধান বিক্রির মূল্য এমন হতে হবে, যাতে চালের মূল্য বেড়ে না যায়। চালের মূল্য যাতে স্থিতিশীল থাকে, সেটা সূক্ষ্মভাবে হিসাব করে এলএসডি থেকে ধান বিক্রির দর নির্ধারণ করতে হবে। আরেকটি বিকল্প পথ হতে পারে, সরকার এই ধান সরাসরি চালে পরিণত করবে, এবং সেই চাল খুচরা বা পাইকারি দরে বাজারে ছাড়বে।

সর্বশেষ জানা গেল যে, চাল আমদানির উপর শুল্কহার বাড়ানো হচ্ছে, যাতে চাল আমদানিকারকরা চাল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হোন। আমার কাছে এটা একটা সুইসাইডাল অ্যাটেম্পট মনে হচ্ছে। কারণ, এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। একদিকে বাজারে চালের মূল্য বেড়ে যাবে, অন্যদিকে কৃষকদের ধানের মূল্যও বাড়বে, কিন্তু ধান বেচা ও চাল কেনার আনুপাতিক হার অপরিবর্তিত থাকবে; আরেকটা বিষয় হলো, চালের দরের সাথে আমাদের যাবতীয় জিনিসপত্রের দাম পরিবর্তিত হতে থাকে; ফলে চালের মূল্য বেড়ে গেলে অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর দামও বাড়বে সন্দেহ নেই। এতে কৃষকরা 'ন্যায্য' দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিতই থাকবেন। তাই, চাল আমদানির শুল্কহার না বাড়ানোই উত্তম হবে। বরং, সরকারিভাবে ধান কিনে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ধান থেকে চাল ভাঙানোর প্রক্রিয়া শুরু করা একটা উত্তম পদ্ধতি হতে পারে।

কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মাকর্তাদের আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা, সত্যনিষ্ঠা ও সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি। কেবল তারাই পারেন সরকারের যে-কোনো পদক্ষেপকে সাফল্যমণ্ডিত করে একদিকে কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে, অন্যদিকে সরকারের সাফল্যের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে।

২৫ মে ২০১৯




এখানে সাজ্জাদ ভাইয়ের সুন্দর একটা কমেন্ট আছে। আমার পোস্টের সাথে তার কমেন্টটাও পড়তে পারেন।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৩:০০
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×