এক যে এক পাখিরাজ্য ছিল, কোনো এক সত্যযুগে -
খুব দয়াবান আর প্রজাবৎসল ছিল পাখিরাজ্যের রাজা
আর তার সমগ্র পারিষদ।
তাদের মনে একবিন্দু নিষ্ঠুরতা ছিল না,
এতটুকু প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা ছিল না,
একফোঁটা নৈরাজ্য ছিল না পাখিরাজ্যের কোথাও,
তারা খুব ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিল।
প্রজাপাখিদের সুখের জন্য চিন্তার অন্ত ছিল না,
চেষ্টার ছিল না কোনো ত্রুটি;
নিজেরা না খেয়ে, সব তারা বিলিয়ে দিত প্রজাদের।
তাদের বাণী আর বচন ছিল গানের চেয়েও অতিশয় মধুর,
যা শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যেত; প্রজাকূল সুখমগ্ন হতো।
প্রজাদের কখনো কামড়ায় নি, ঠোকরায়ে শরীর ঘা করে
মেরে ফেলে নি রাজা বা তার কোনো পারিষদ,
গাছের বুকে গোপন গর্ত খুঁড়ে
কোনো পাখিকে লুকিয়ে ফেলে নি চিরদিনের জন্য,
এমনকি কাউকে ঝাঁটিয়ে পরদেশেও পাঠায় নি,
তাই, প্রজাদের কোনো ভয় বা আতঙ্কের চিহ্নমাত্র ছিল না;
তারা পরম সুখে বারোমাস নিঃশঙ্ক বিলাসী জীবন কাটাতো।
গুণমুগ্ধ সুখী প্রজারা প্রাণের চাইতেও
বেশি ভালোবাসতো রাজ-রাজড়াদের।
কোনো পাখিরাজা বা জনৈক পারিষদ দৈবাৎ অসুস্থ হলে,
কিংবা মারা গেলে কখনোই কোনো প্রজাপাখি
কাউকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে নি,
কোনো ধরনের আনন্দ-উল্লাসও করে নি,
বরঞ্চ সারা রাজ্য শোকে মোহ্যমান হতো।
দুঃখাকুল আপামর পাখিরা দলবেঁধে গলাগলি ধরে
অনেক অনেকদিন কাঁদতো।
কাঁদতে কাঁদতে চোখ ক্ষয় করে ফেলতো।
আহা, আকাশ-বাতাস-মেঘ গলে গলে পড়তো তাদের কান্নায়,
কান্নার আবহে মৃতদের আত্মা আনন্দ ও তৃপ্তিতে বিভোর হতো।
সেই যে এক স্বপ্নরাজ্য ছিল, রূপকথার সত্যযুগে,
যার জন্য পাখিরা এখনো ব্যাকুল হয়ে কাঁদে।
১৩ জুন ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৩