somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি দুজন ব্লগারকে স্বপ্নে দেখেছি

২২ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি একবার একজন ব্লগারকে স্বপ্নে দেখেছিলাম।

আমি অফিসে। সে হঠাৎ ফোন দিয়ে বললো, 'জলদি আমাকে একটা লিফট দিয়া যা।' আমি বললাম, 'আমি তো গাড়ি চালাইতে পারি না।' সে বললো, 'আমি পারি, তুই গাড়ি নিয়া আয়।' আমি বললাম, 'আপনার পর্যন্ত কীভাবে আসবো? এতবড়ো গাড়ি তো মাথায় নিতে পারবো না।' সে বললো, 'মাথায় নিবি কেন, বলদ, ঠেইল্যা নিয়া আয়।'

আমি একটা রিকশার পেছনে গাড়ি বেঁধে রিকশা চালিয়ে তার কাছে গাড়ি নিয়া গেলাম (রিকশা আমি চালাই নাই। কে চালাইছে সেটা উহ্য ছিল স্বপ্নে)। নতুন গাড়ি। বড়ো আদরের গাড়ি আমার, চালাই না, নষ্ট হইয়া যাইব বলে ড্রয়িং রুমে রাখি, প্রতিদিন তিনবেলা ঝাড়পুক করি। এখনো ঝকঝকে।

এর পরের মুহূর্তে আমি নিজেকে একটা শপিং মলের ভেতরে একটা বেতের চেয়ার বসা অবস্থায় দেখলাম। ব্লগার তখনো আপন মনে শপিং করছিল। স্বপ্নে আমার নিজেকে বেশ টেনশন-ফ্রিই মনে হইল, যেন অফিসে কোনো কাজকর্ম নাই। মহান ব্লগারেরও যেন কোনো তাড়া নাই। সে শাড়ি পরেছে। তার শাড়ির রঙটা ভাসা ভাসা চোখে ভাসছে, অফ-হোয়াইট ও হালকা হলুদ রঙের মাঝামাঝি, তাও ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডের মধ্যে দেখা আর কী। কিন্তু চেহারা দেখা যায় নাই। তবে, স্বপ্নের ভেতর এটা স্পষ্ট ছিল যে, এ ব্লগার খুবই জনপ্রিয় ও মেধাবী এবং সদাহাস্য ব্লগার। তার সাথে দেখা হয় নি কখনো, কিন্তু লেখালেখি ও কমেন্ট আদান-প্রদানে, কিংবা ছবিতে তাকে সদাহাস্য মনে হয়। সে খুব উৎফুল্ল, চঞ্চলভাবে মুভমেন্ট করছে, শপিং করছে, ইম্প্রেশনটা এরকম যে, আমরা বহুদিনের পরিচিত- বড়ো বোনেরা কোথাও যাওয়ার সময় যেমন একজন ছোটোভাইকে সাথে করে নিয়ে যায়, কিংবা চাচা-মামা গোছের কাউকে সঙ্গে রাখে, অনেকটা সেরকমই। মনের আনন্দে সে শপিং করছে, আর তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায়।

ঘুম ভাঙার পর মনে হইল বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছি। ড্রয়িং রুমে গেলাম, গাড়িটা ঠিকঠাক মতো আছে কিনা দেখার জন্য। ড্রয়িং রুমে গিয়ে বোকা বনে গেলাম। ওখানে কোনো গাড়ি নাই, করোনার কালে মেয়ে ড্রয়িং রুমটাকে রিডিং রুম বানিয়ে ফেলেছে। গাড়ি আছে পার্কিং-এ, বেইজমেন্টে। বুকটা দুরুদুরু করতে লাগলো, গাড়ি আবার শপিং মলে রেখে আসি নাই তো? পার্কিং-এ যাইয়া দেখে আসবো নাকি?
শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম, ঘুমকে ধন্যবাদও দিলাম স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বপ্নভঙ্গ করে আমাকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য। নইলে কতক্ষণ যে শপিং মলে বসে থাকতে হতো, কেউ জানে না।

২০ আগস্ট ২০২০



উপরের স্বপ্নটা দেখেছিলাম ১৯ আগস্ট দিবাগত রাতে। পরের বছর ১৯ মার্চ দিবাগত রাতে আরেক ব্লগারকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখলাম।

এ ব্লগারের আচরণ আমাকে খুব ক্ষুব্ধ করছে। তিনি নিজের পোস্টে সচারচর কোনো কমেন্টের উত্তর দেন না। কিন্তু যখন দেন, তখন বেছে বেছে দেন। কোনো কমেন্টের উত্তর না দেয়াটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু বেছে বেছে উত্তর দেয়া ব্লগারকে আমার সবচাইতে ইডিয়ট ও বেয়াদব মনে হয়। যারা উত্তর দেন না, কিংবা বেছে বেছে দেন, একসময় তাদের পোস্টে যাওয়াই বন্ধ করে দিই, কমেন্ট করা তো দূরের কথা।

দুজন ব্লগার তাদের পোস্টে কমেন্টের রিপ্লাই দিতেন না। তাদের আদিকালের পোস্টগুলোর মেইডেন রিডার ও কমেন্টার ছিলাম আমি। রিপ্লাইয়ের উত্তর না দিলেও আমি পোস্ট পড়তাম, ভালো লাগতো বলে, কমেন্টও করতাম। কিন্তু মাঝে মাঝে মেজাজ বিগড়াইয়া যাইত আমার। ক্ষোভ প্রকাশ করতাম। তবু কোনো রিঅ্যাকশন নাই তাদের। তারপর অভিমান করে দীর্ঘদিন তাদের পোস্ট পড়ায় বিরতি দিলাম। ততদিনেও তাদের কোনো পাঠকও হয় নি, প্রায় সব পোস্টই কমেন্টবিহীন স্বল্পভিউসংখ্যায় প্রথম পাতা পার করে।

এরপর আবার তাদের পোস্টে যাওয়া শুরু করি। দুজনকেই পরামর্শ দিতে থাকি। এবার কেন যেন তারা পরামর্শগুলো গ্রহণ করলেন। এবং অল্পদিনেই তাদের পাঠকসংখ্যা গেল বেড়ে এবং তারা একসময় অনেক জনপ্রিয়ও হয়ে উঠলেন। এদের একজন অবশ্য সবসময়ই স্বীকার করেন যে, তার ব্লগীয় জীবনে আমার অবদান আছে। এটা শুনতে ভালো লাগে, যদিও লজ্জা পাই ও বিব্রত হই। যে-কেউ উপরে ওঠেন মূলত নিজের চেষ্টা ও মেধা দিয়েই; তিনি নিজের শ্রম ও মেধার বিনিময়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। অন্যজনকে অবশ্য আমি পরিত্যাগ করেছি। অফ লেট বুঝতে পেরেছি, তিনি ভালো মানুষ নন, একজন হিপোক্রেটের জ্বলন্ত উদাহরণ।

বেয়াদবিকে আমি প্রচণ্ড ঘৃণা করি। যত ট্যালেন্টেডই হোক না কেন, কেউ বেয়াদবি করলে সেটা আমি মেনে নিতে পারি না। ওরে চান্দু, তুই কোন বালস্য মাল চ্যাটের বাল, তোরে কি আমি একপয়সায় গোণায় ধরি? ফের যদি সামনে পড়িস, ঘাড় মটকে খাব, ‘মুদির’ ভাই।

সেই ব্লগারের পোস্টে আমার কমেন্টটা ছিল মৃদু সমালোচনামূলক। খুব সাধারণ মানের পোস্ট। পোস্ট পড়ে তার বুদ্ধিমত্তার লেভেলও খুব সাধারণ মানের মনে হয়। তো, ধরেই নিয়েছিলাম তিনি কমেন্টের রিপ্লাই দিবেন না। কিন্তু হঠাৎ তার রিপ্লাই দেখা গেল প্রথম পাতায়। অতীব বেদনার কথা, তিনি আমার কমেন্টের রিপ্লাই না দিয়ে পরের কমেন্টের রিপ্লাই দিয়েছেন। আমি দুঃখে, কষ্টে আর্তনাদ করে উঠলুম, মুষড়ে পড়লুম, আই মিন, ভেঙে পড়লুম। আরো বেদনার বিষয়, পরে তিনি আরো একটা কমেন্টের রিপ্লাই দিয়েছেন, কিন্তু আমার কমেন্টের রিপ্লাই নাই। ব্যথায় আমার বুকটা ফাইট্ট্যা যাইতে লাগলো। আমি চিৎকার করে বলে উঠলুম, ওরে চান্দু, যেই বালস্য মাল পোস্টের বাল লিখছাও, সমালোচনা করায় কি খুবই লাগছে? আহহারে যাদু রে আমার!!!

আমি কোনো এক লাইব্রেরি, কিংবা খোলামেলা রিডিং রুম টাইপের ঘরে বসে আছি। আমার সামনে হয় কিছু খাতাপত্র, অথবা কম্পিউটার। এমন সময় হালকা গড়নের, সেলোয়ার কামিজ পরা, চশমা-চোখে এক মেয়ে হাসিমুখে আমার কাছে এলো। আমার প্রতি সে নানাভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকলো। কারণ কী? আমি কম্পিউটারে তার কী যেন একটা সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি। এতে সে অনেক উপকৃত হয়েছে, এবং আমার প্রতি সে অনেক সন্তুষ্ট ও প্রীত। তার কী সমস্যা সমাধান করেছি, তা স্পষ্ট না; কিন্তু সমস্যাটা সমাধান করতে আমাকে মোটেও বেগ পেতে হয় নি, সেটা বোঝা যাচ্ছে।

কিন্তু আমি তাকে চিনতে পারছি না।
‘আপনি কে?’ আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি।
সে প্রাণখোলা মধুর হাসি হেসে আমাকে বললো, আমি ব্লগার আলিজা, আমাকে চিনতে পারলেন না?

স্বপ্নের মধ্যেই আলিজার হাসি মিলিয়ে যেতে থাকে। ঘুম ভাঙার পরও তার হাসিটা আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। আমি পিসি খুলে ব্লগ ওপেন করি, তার পোস্টে যাই। আলিজা স্মিত হাসছেন অবিরাম, কিন্তু হাসিটাকে মনে হচ্ছে ক্রূর ও বিষাক্ত; তিনি কমেন্টের উত্তর দেন না, সেজন্য।

২১ মার্চ ২০২২

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৩৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×