somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষদাহ : পর্ব-৩

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষদাহ : পর্ব-১

বিষদাহ : পর্ব-২

একদিন একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে আমাকে কেউ একজন একটানা কল দিচ্ছিল। পরিচিত নাম্বারের বাইরে আমি কল ধরি না, যদি না নিজের আইডেন্টিটি লিখে মেসেজ করে আমাকে জানায়। এটাও ধরছিলাম না মূলত ব্যস্ততার জন্য। ব্যস্ততা আর কিছু না, দমুহমা ললিখের ‘গল্পটা সত্যি হতে পারতো’ উপন্যাসিকা। গল্পটা আপাত সরল, কিন্তু এর স্ক্রিপ্ট কীভাবে লেখা হচ্ছে, কে লিখছেন, পরিচালক নিজেই লিখছেন কিনা, তা এখনো জানা যায় নি। আমি সত্যি সত্যিই গল্পটার গভীরে ঢুকে যাচ্ছিলাম। নিজেকে সত্যিকারের একজন বিবাহিত পুরুষ হিসাবে ভাবছিলাম, আর নায়ক চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করছিলাম। চরিত্র খুব পছন্দ হয়েছে আমার। এমন ব্যক্তিত্বশীল পুরুষের প্রতি যে-কোনো বয়সের যে-কোনো নারীই আকৃষ্ট হবেন। আমি এ চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে নারীদের পছন্দের আইকনে পরিণত হতে চাই।
হঠাৎ কলিংবেল।
এমন সময়ে বাসায় কারো আসার কথা না। কে আসবে? সময়টা অযথাই নষ্ট হবে। ভাবছিলাম এ বিকেলেই গল্পটার বাকি অংশ পড়ে শেষ করবো, সন্ধ্যার দিকে সহেলীর সাথে কোনো ক্যাফেতে বসে কফি খেতে খেতে এ নিয়ে একটু আলোচনা ও শলাপরামর্শ করবো।

আবার কলিংবেল!
এবং সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল।
জেলিনা!
জেলিনা কলকলিয়ে উঠলো।
আচ্ছা ভাইয়া, আপনার কি একটুও কাণ্ডজ্ঞান নাই? তার আগে স্যরি, এভাবে বাসায় ঢোকার জন্য। আমি কতবার বেল টিপেছি আপনি কি শোনেন নাই? বাসায় কি অন্য কোনো প্রাণী নাই, যারা দরজা খুলে দিতে পারে? শেষমেষ ধাক্কা দিতেই -
আমি তার মুখরা মুখটিতে ডান হাতের তালু চেপে ধরে বলি, একটু থামুন। ঘরে তো ঢুকতে পেরেছেন, এখন আর সমস্যা কী? আমার রুমে সিটকিনি লাগাই না, যাতে যে-কেউ যখন-তখন আসতে পারে, এমনকি চোরও।
- সমস্যার তো শেষ নাই। আপনাকে এক হাজার কল দিয়েছি, আর আপনি কিচ্ছুতেই রিসিভ করছেন না, এর মানে কী?
আমি স্মিত হেসে নিরুত্তর থাকি। তারপর বলি, হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসার কারণ কী?
-কারণ বহুবিধ। স্মিথ যে গল্প দিয়েছেন, তা আমার পছন্দ হয় নি।
-পছন্দ হয় নি? কী বলেন? টোটালি আনকমন একটা গল্প।
-এই তো, মিডিয়া ব্রিফের মতো গঁৎবাঁধা কথা শুরু করলেন। মিডিয়াতে সব সময়ই সব ছবির গল্পটি আলাদা ও ভিন্নরকম বলে প্রচার করা হয়। আদতে নতুন জিনিসের খুব আকাল।
-নাহ, এটা খুব আকর্ষণীয় গল্প। আমি অবশ্য পুরোটা পড়ি নি, অর্ধেকের একটু বেশি পড়েছি।
-বস্তাপঁচা একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি, যাতে কোনো ভালো মেসেজ নাই।
-হতে পারে। তবে, ছবিতে নিশ্চয়ই একটা মেসেজ থাকবে। প্রয়োজনে গল্পে সংযোজন বা পরিমার্জন করা হবে।
তারপর জেলিনা একটু মাথা নীচু করে বসে থাকে। এরপর বলে, আসলে ভাইয়া, আমি তো এ পর্যন্ত সব ছবিতেই মেইন ফিমেইল ক্যারেক্টারের রোলই করেছি। কিন্তু এ ছবিতে আমার রোলটা খুবই নগণ্য। আমার রাইজ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
তারপর আমার ডান হাতটা ওর হাতের মধ্যে নিয়ে মোচড়াতে মোচড়াতে বলে, পুরা মুভি জুড়েই থাকবে তিশা আর তুমি। আমাকে তো দেখাই যাবে না। দর্শকরা হয়ত জানবেই না, নিশা নামেও একটা ক্যারেক্টার আছে।
বুঝলাম, জেলিনার অন্তরে আগুন জ্বলছিল, সহেলীর জন্য। যত জোরে আগুন জ্বলছিল, ও ততখানি জোরেই আমার হাতের মুঠি মোচড়াতে মোচড়াতে ভেঙে ফেলার জো করছিল।
আমি একটু টায়ার্ড। বাসায় কি খাবার দাবার কিছু আছে? জেলিনা জানতে চাইল। আমি উঠে ওর জন্য কিছু খাবার বের করতে যাবার আগেই সে ‘তুমি বসো, আমিই খেয়ে নিচ্ছি’ বলে উঠে চলে গেল। আমি গল্পের খাতাটা হাতে তুলে নিলাম।




একদিন দুপুরে তিশা জিজ্ঞাসা করলো, ‘আচ্ছা, আপনি আমার কাছে কী চান?’ ওর কাছ থেকে কিছু চাই বলে আমার কখনো মনে হয় নি। এবং আমাদের মধ্যে বোধহয় একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, তাতে আমার চেয়ে ওর ভূমিকাই বেশি। তাহলে এই প্রশ্ন আসে কেন? আমারই বরং জিজ্ঞাসা করার কথা ছিল, ‘আপনি আমার কাছে কী চান?’

‘আমি তো কিছু চাই না।’ আমি বলি।
‘সত্যিই কিছু চান না আপনি?’ ও বলে।
আমি : ‘নাহ্, আমি কিছুই চাই না। আমার কোনো দাবি নেই।’
সে : ‘তা হলে আর সম্পর্ক রেখে কী লাভ?’
আমি : ‘আপনি কি কিছু চান আমার কাছে?’
সে: ‘নাহ্, আমি আবার আপনার কাছে কী চাইব?’
আমি : ‘আমিও কিছুই চাই না।’
সে : ‘সত্যি?’
আমি : ‘সত্যি।’
সে : ‘আচ্ছা তাহলে। রাখি। খোদা হাফেজ।’ ও ফোন রেখে দেয়।

প্রায় বছর হতে চললো নিশিদের ফোনে 'নো-রিপ্লাই' হচ্ছিল। কিন্তু ঐদিন বিকেলবেলা ওদের বাসায় ফোন করলে ঝলমলে কণ্ঠে যে মেয়েটি ‘হ্যালো স্লামালাইকুম’ বললো, সে নিশি। আমি খুব উৎফুল্ল হলাম, নিশিও। নিশি এতদিন স্বামীর বাসায় ছিল, ব্যস্ত ছিল পড়ালেখা, স্বামীসংসার নিয়ে। আমার কথা তার মাঝে মাঝে মনে পড়তো, কিন্তু ফোন করার সুযোগ হতো না। আমি নাকি ওর কাছে বিরাট রহস্যময় পুরুষ। এতদিন একটা সন্দেহ ছিল- হয়ত নিশিই ‘তিশা’ নামে আবির্ভূত হয়েছে, নিশিকে আজ পেয়ে আমার সেই ভুল ভাঙলো। নিশিকে তিশার কথা বললাম, ‘অবিকল আপনার কণ্ঠস্বর। আপনার মতোই ওর সব আচরণ। ‘হুঁম’, ‘হায় আল্লাহ’ শব্দগুলো আপনার মতোই উচ্চারণ করে সে।’ নিশি বলে, ‘বাহ্, ভালো তো। আপনি আরেকটা নিশি পেয়ে গেছেন। আমি না থাকলেও তো আর ক্ষতি নেই, তাই না?’

দুপুরে তিশা ফোন রেখে দেয়ায় আমার মনে একটা ব্যথা হয়েছিল, ও আমাকে আর কখনোই কল করবে না এই ভেবে। নিশির সাথে কথা হবার পর বুক হালকা হয়ে গেল, কিন্তু তিশার সাথে এ সুখটা শেয়ার করার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে উঠলাম। অবশেষে সন্ধ্যায় তিশাকে এসএমএস করি- ‘হ্যালো তিশা, আমার আজ খুব ভালো লাগছে। প্রায় এক বছর পর আজ নিশিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। নিশিকে আপনার কথা বলেছি। আপনার কথা শুনে ও হাসে।’
তিশার উত্তর আসে, ‘তাহলে তো আজ আপনার ইদের দিন। ইদ করুন।’

ঘণ্টা দুয়েক পর তিশাকে কল করি। ও অভিমানে ফেটে পড়ে বলে, ‘আপনার তো আজ আনন্দের সীমা নেই। নিশির সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আমার আর কী দরকার?’
তিশাকে বুঝিয়ে শান্ত করি। অনেকক্ষণ কথা বলার পর বলি, ‘আমি যদি এখন আপনাকে একটা চুমু দিতে চাই?’
‘আপনার ব্যাপার।’
‘আপনি সুখ পাবেন না?’
‘আমার কোনো ফিলিংস নেই।’
‘দিই?’ উত্তরের অপেক্ষা না করে আমি চার-পাঁচটা চুমু দিই শব্দ করে। তারপর বলি, ‘এবার আপনি দিন।’
‘আমি চুমু দিতে পারি না।’
‘প্লিজ তিশা। প্লিজ।’
‘না।’
আমি আরো কয়েকটা চুমু দিয়ে বলি, খুব উত্তেজিতভাবে, ‘প্লিজ... প্লিজ।’
ও কিছুই দেয় না।
সকালে খুব শান্তভাবে আমার ঘুম ভাঙে। আমার ব্যস্ততাময় দিন শুরু হয়।

আমি বাসায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তিশার ফোন। সে খুব আহ্লাদ করতে শুরু করলো। আমি ফোন রেখে দিতে চাই ব্যস্ততার জন্য। সে বলে মোবাইল অন করে যেন টেবিলের উপর রেখে দিই। আমি কাজ করতে থাকবো, কার সাথে কী কথা হয় এসব সে শুনতে থাকবে। এমন পাগল কেউ কোনোদিন দেখেছে? কিন্তু ওর এ আহ্লাদ আমার খুব ভালো লাগে। আমি ওর কথামতো মোবাইল অন করে টেবিলের উপর রেখে দিই। কাজের লোকদের সাথে খুটফরমায়েস করতে থাকলাম, ও শুনছে সবই।
২টার দিকে বাসে উঠলাম। এ সময় ওর একটা মেসেজ পাই, ‘যখন আপনার কালো জিন্‌স আর লাল টি-শার্টটার কথা বললেন, তখন থেকেই আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। জিন্‌স আর লাল টি-শার্ট পরলে না জানি আপনাকে কেমন দেখায়।’ ওর এই মেসেজটা আমার মনে দারুণ রোমান্স সৃষ্টি করে।
পরদিন রাত দশটায় সে কল করে। ভীষণ অগ্নিমূর্তি সে। বাসায় গিয়ে তাকে কল দেয়ার কথা ছিল। কেন দিই নি? এতটা সময় পার করে দিলাম, ওর কথা কি আমার একবারও মনে পড়ে নি? আমার সম্পর্কে ওর খুবই একটা বাজে ধারণা হয়, আমি হয়ত ঘরে স্ত্রী রেখে কয়েকদিন দূরে ছিলাম, ঐ সময়ে বিনোদনের সামগ্রী হিসেবে ওকে ব্যবহার করেছি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, স্ত্রীর গলা ধরে শুয়ে থাকলেও অবস্থা এমন হতে পারতো।
আমার মধ্যে ইতোমধ্যে একটা অনুশোচনা শুরু হয়েছে। আমি তাকে চুমু খেয়েছি, নিজেকে নিজের কাছেই অবিশ্বস্ত মনে হতে থাকলো। আমার বয়স, পরিবার সবকিছু বিশ্লেষণ করে আমি নিজেকে খুব খাটো ভাবতে থাকি। নিশির সাথে ততোদিনে বোধহয় আমার চার বছর হয়ে গেছে, এমন ‘অরুচিকর’ আচরণ ওর সাথে আমার স্বপ্নেও ভাবা হয় নি।
‘তিশা, আমাকে মাফ করবেন। আপনাকে চুমু খাওয়া আমার ঠিক হয় নি। আমি কোনোদিন এমন ছিলাম না।’ আমি বলি। তিশা ক্ষেপে যায়। বলে, ‘এখন খুব সাধু সাজা হচ্ছে, তাই না?’ আরো অনেক বিতণ্ডা হয়।
‘নিশি কেমন আছে? ওর সাথে নিশ্চয়ই দিনরাত কথা হচ্ছে!’
‘না, ওর সাথে কখনোই এত ঘন ঘন কথা হয় নি।’
‘আমি কারো ছায়া হয়ে থাকতে রাজি নই।’
‘এর মানে কী?’
‘আমি কখনো শুনতে চাই না যে আমার কণ্ঠস্বর নিশির মতো।’
আমাদের অনর্গল কথা চলতে থাকে। এক ফাঁকে খুব হিসেব করে বলি, ‘তিশা, আপনার সাথে কথা বলতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত অগ্রসর হবো। তা অতিক্রমের উপক্রম হলে আমরা দুজনই পরস্পরকে সতর্ক করবো, কেমন?’

একদিন তিশা রাগে ফেটে পড়লো।
‘আমি তো কেউ না! আপনার নিশি আছে, সুন্দরী স্ত্রী আছে। সারাক্ষণ তো শুধু ওদের গল্পই বলেন। ওরাই যদি আপনার সব হয়, তাহলে আমার সাথে সম্পর্ক কেন?’
তিশার আকস্মিক এমন অগ্নিবর্ষণে আমি অবাক হই। তিশার সাথে তো আসলে আমি কোনো সম্পর্ক করি নি, আমার কোনো নেইও। আবার সম্পর্ক যে নেই, সেটাও কি ঠিক? আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, এ অসম্পর্কের আসলে শেষ কোথায়? বা পরিণতিই বা কী? একটা ব্যাপারে আমি বদ্ধপরিকর, আমার সোনার সংসারে অন্য ‘জঞ্জালের’ কোনোদিন কোনো স্থান হবে না। তিশাকে কী বলা যায়, তা নিয়ে ভাবছিলাম। তিশা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো – ‘আমি খুবই বিপদে পড়ে গেছি, ভাইয়া।’ তিশা বহুদিন পর আমাকে ‘ভাইয়া’ ডাকলো। মনে পড়ে, ওকে একদিন বলেছিলাম, ‘আপনার মুখে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনতে আমার ভালো লাগে, মনে হয় আমার বোনেরা আমাকে ডাকছে।’ এ কথা বলার পর সে বেশ কিছুদিন আমার সাথে কথা বলে নি। সে হয়ত হঠাৎ অসুখে পড়েছে, এ ভেবে তাকে যখন কল করি, অনেক বার কল করার পরও সে কল ধরে নি। রাতের দিকে তার একটা ছোট্ট মেসেজ এসেছিল, ‘আমি কারো বোন হতে চাই না।’ এর পর থেকে সে আমাকে আর ‘ভাইয়া’ ডাকে নি; সত্যি বলছি, আমি খুব আহত হয়েছিল একজন ‘ছোটোবোন’-এর মিষ্টি ‘ভাইয়া’ ডাক শুনবো না বলে।
তিশা বলতে থাকলো, ‘ভাইয়া, আমি রুশোকে অনেক অনেক, অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।’
আমার কেবলই অবাক হবার পালা। আমার মধ্যে এমন সংকট কখনোই সৃষ্টি হয় নি, নিশি বা তিশাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। আমি কোনো গভীর প্রেমে মরণপণ অবস্থায় পতিত হই নি যে, প্রেমিকাবঁধুকে না পেলে আমার জীবন-সংশয় ঘটবে।
তিশা বলতে থাকে, ‘আমাকে প্লিজ বাঁচান, ভাইয়া। আমি রুশোকে ছাড়া বাঁচবো না।’ এমন না যে, আমি তিশার প্রেমে পড়েছি, তিশা পড়েছে রুশোর, এবং আমি তিশাকে রুশোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসছি। এখানে আমরা স্বাধীন, মুক্ত, স্বতন্ত্র ; কেউ কাউকে আটকে রাখি নি, আঁকড়ে ধরি নি। তাহলে তিশার এমন আকুতির অর্থ কী?
‘আপনি আমার জীবন থেকে হারিয়ে যান’, তিশা বলতে থাকে, ‘আমি জানি না আপনার মধ্যে কী আছে ভাইয়া, আমি আপনাকে চাই না, কিন্তু আপনাকে ছাড়তেও পারছি না। অথচ, আমার সমস্তটা জুড়ে আছে রুশো। আমি এখন কী করবো? আমি বাঁচতে চাই, ভাইয়া।’ তিশা শিশুদের মতো কাঁদতে থাকে, সেই কান্নায় তাকে খুব অসহায় মনে হয়।

একদিন সন্ধ্যায় ঢাকা শহরের এক চাইনিজ রেস্তরাঁয় আমাদের মিলন হলো। আমার স্ত্রী ও সন্তানাদি। তিশা ও তার স্বামী। তিশার শরীর স্ফীত হয়ে পেট সামনে ঝুলে পড়েছে; সে মা হতে চলেছে; সর্বাঙ্গে লজ্জা জড়ানো। খাবারের টেবিলে আমাদের অনেক গল্প হয়। সেসব গল্পে নিশি অপাঙ্‌ক্তেয়া ছিল।

এর পরের গল্প খুব দীর্ঘ।
সে অহনা। ভোর। একটা সূর্যোদয়ের ভেতর তার প্রকাশ ও যবনিকাপাত। একটা পূর্ণাঙ্গ প্রেম। অসম্পর্কের গভীরে এমন মধুরতম সম্পর্কের কোনো ইতিহাস আমার জানা নেই। গল্প দীর্ঘতর হয়; অস্তাচলগামী সূর্যালোকের ছায়ার মতো। রং ফ্লেক্সিলোডের রম্যকথন হয়; হাসাহাসি হয়; আমার অনুসন্ধিৎসা আজও শেষ হয় না- কোথা পেয়েছিল অহনা আমার নাম্বার? ও যা বলে, তা কি সত্যিই সত্যি ছিল?
আমি ভেবে শুধু এতটুকু কূল পাই, অহনার গল্পটা সত্যি হতে পারে, সবটুকু বানানো নয়।



গল্প পড়া শেষ। লেখক এটা কী ধরনের গল্প লিখেছেন, বুঝতে পারলাম না। পরকীয়া প্রেমের কাহিনি। কিন্তু পরকীয়ার জন্য যেসব রশদের দরকার, তা একেবারেই অনুপস্থিত। এ গল্প দর্শকরা খাবে বলে মনে হচ্ছে না। এর মধ্যে অনেক মাল-মশলা যোগ করতে হবে। কিছু অ্যাডাল্ট সিকোয়েন্স থাকতে হবে। তখন একটা সমস্যা অবশ্য হবে – সেন্সরবোর্ড আটকে দিতে পারে।
জেলিনার সাথে এ নিয়ে একটু আলাপ করা যেতে পারে। সে খেয়েদেয়ে আরামসে আমার বেডে ঘুমুচ্ছে। তার সাথে তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। অন্য কোনো মেয়ে কেন, কোনো ছেলে বন্ধুও এভাবে আমার রুমে শুয়ে ঘুমায় না। আসেও না।
দুলতে দুলতে জেলিনা সামনে এসে বসলো।
তোমার বাসাটা বেশ ভালো। রুমটাও গোছানো। বউ নাই, এত সুন্দর করে গুছিয়ে দেয় কে? হাউজ স্টাফ? কই, কাউকে দেখছি না যে? একটানে অনেকগুলো কথা বললো জেলিনা। আমি শুধু ওর দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছি। তারপর সে বললো, আজ রাতে কিন্তু আমি তোমার সাথে থাকবো।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×