চোখে তোমার প্রচুর পানি জমবে
কত হীনমন্যতায়, কত সংগ্রামে দলিত জীবনের
পরতে পরতে দুঃখরা লেপ্টে আছে।
মাঝে মাঝে মাঝরাতে, গভীর ঘুমের ভেতর
উথলে উঠবে কান্না, চোখদুটো ব্যথায় টাটিয়ে উঠবে, যেন
এখনই পর্দা ফেটে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসবে রক্ত, তখন
বাঁধ খুলে দিবে- সব পানি ঝরে যাক, নিভৃতে, অলক্ষে
তোমার বুক ভারী হবে। বহুকাল বেদনারা জমে জমে
হৃৎপিণ্ড জমাট পাথর।
তোমার নিশ্বাস আটকে আসবে। কথারা গলার
উপকণ্ঠে বিঁধে থাকবে। তোমার পাঁজর চরচর করে
ফাটবে। তুমি ককিয়ে উঠবে। তখন তুমি কাঁদবে। তখন
জোয়ারভাঙা বাঁধের মতো উদাত্ত স্বরে গলা ছেড়ে দিবে।
তখন তুমি প্রাণ ভরে কাঁদবে, নিঃশেষে বুক খালি করবে।
তোমাকে বাঁচতে হবে। দুঃখ, বেদনাগুলো ঝেড়ে ফেলে
ফুরফুরে সজীব চারার মতো প্রতিভোরে সূর্যের আলোয়
হাসতে হবে। হাসতে হাসতে অযুত আনন্দে তুমি বাঁচবে।
এই যে পার্শ্ববর্তিনী সুপ্তমগ্না নিগূঢ়া রমণী, সুদীর্ঘ জীবনে
একই আত্মায় করেছি বসবাস, হায়, একদিন সে আর
আমার পাশে শোবে না, কিংবা আমিও এক-পাশ শূন্য করে
শায়িত হব অনন্ত শয্যায়। কীভাবে একাকী বাঁচবো সেই জীবনে?
বিষম ভাবনারা জেঁকে ধরে যখন-তখন, সুগভীর মধ্যনিশীথে
বুকের কন্দর দুমড়ে মুচড়ে খান খান হয়, কণ্ঠ রুদ্ধ হয় উথাল
পাথাল কান্নায়। তখন বাঁচতে পারি না।
গতকাল মধ্যরাতে বিছানায় শুতেই বুক ভাঙতে শুরু হলো।
আগ্নেয় লাভার তীব্র উদ্গিরণে চোখ গলে ছিটকে ছুটতে থাকলো
অজস্র অগ্নিজোয়ার। আজ যেখানে শুয়ে আছি, হয়ত-বা কাল
আমি আর থাকব না এখানে। হয়ত-বা কাল রাতে অন্ধকারে খা-খা
জ্বলবে পাশের শয্যাটি। কীভাবে বেঁচে থাকে নিঃস্ব, জীর্ণ,
বিক্ষত একটা হৃদয়, যখন পাশ থেকে হারিয়ে যায় জ্বলন্ত
যৌবনের বিশ্বস্ত সঙ্গীটি! এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়,
অনির্ণেয় অনাগত কাল?
আমি তবে কীভাবে হালকা করি বুক? কীভাবে চোখের পানি
আগভীর সেঁচে ফেলে শূন্য করি চোখ?
কোনো কোনো কান্না কখনো থামে না, প্রতিটা গভীর রাতে
পাঁজর ভাঙতে থাকে। প্রতিটা গভীর রাতে পুড়তে থাকে চোখ,
অবিরল জ্বলতে থাকে জীবন। দুর্বিষহ সেই জীবনের কথা ভাবলেই
ভেঙে যেতে থাকি। রাতভর কেবলই ভেঙে যেতে থাকি, যেমন এখনো
ঘুমন্ত সঙ্গিনীর ঝাঁপসা মুখের দিকে তাকিয়ে অবিরাম ভেঙে যাচ্ছি,
ভেঙে যাচ্ছি অবিরাম।
২১ আগস্ট ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৫৪