অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে রায় হলে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ভারত এ আইন মেনে কাজ করতে বাধ্য হবে।' আমার মনে হয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত বন্দি-বিনিময় চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
গত শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
অন্যদিকে ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া প্রসঙ্গে যে ভূমিকা নেয়ার কথা, সেই সময় এখনও আসে নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এ খবরটি আজ ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক বসছে। বৈঠকে ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে আমাদের যে ভূমিকা নেয়ার কথা, সেই সময় এখনও আসেনি। এ বিষয়ে আমার পূর্বসূরি (সাবেক মুখপাত্র তৌফিক হাসান) নিশ্চয়ই একটা বক্তব্য আপনাদের দিয়েছেন। এটার একমাত্র বিষয় শুধু আমরা না। এখানে আমরা একটা অংশ। আমাদের যে অংশে ভূমিকা পালন করার কথা, তা প্রয়োগ করার সময় এখনও আসেনি। ওইটা যখন আসবে তখন আমরা করব।’
অন্য সবার মতো আমার মনেও এই ইনোসেন্ট প্রশ্নটা জাগছে আগে থেকেই, শেখ হাসিনাকে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়া হচ্ছে না কেন? শেখ হাসিনা একজন জঘন্য অপরাধী, প্রায় ২ হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতার রক্তপানকারী একজন হিংস্র হায়েনা, যার বিরুদ্ধে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী মামলার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে, যা এতদিনে হয়ত আরো গোটা ৫০-এর মতো বেড়ে গেছে। ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখের খবর অনুযায়ী, শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইবুনালে হাজিরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তাকে হাজির করানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পত্রালাপের ব্যাপারটা মিডিয়ায় উঠে এসেছিল।
১৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের এক সংবাদে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেন্ডিং আছে, কিন্তু বাংলাদেশের জুরিসডিকশনের বাইরে তিনি চলে গেছেন, সে কারণে আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোল যাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করার ব্যবস্থা নেয় এবং তাঁর ব্যাপারে অন্তত রেড অ্যালার্ট জারি করে, সেই ব্যাপারে আমরা অনুরোধ পাঠিয়েছি।’
শেখ হাসিনা একজন খুনি, মানবতাবিরোধী অপরাধী, যিনি ০৫ আগস্টে প্রাণের ভয়ে তার দল ও নেতাকর্মীদের পশ্চাতে ফেলে ভারতে পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন। জানা যায়, ভারত থেকে তিনি অন্য কোনো দেশে যেতে চাইলে কোনো দেশই তাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয় নি। ইতিমধ্যে ট্রাইবুন্যালের কাজ শুরু হয়েছে। একজন অপরাধীর বিচার করতে হলে তাকে সশরীরে হাজির থাকা জরুরি, তার বক্তব্য, সাক্ষ্য, জেরা ইত্যাদির জন্য। কোর্টে হাজির করানোর জন্য প্রথম উদ্যোগই নেয়া উচিত ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া। এতে ভারত তাকে ফেরত দিয়ে দিলে ঝামেলা আপাতত ওখানেই শেষ হয়ে যেত; আর ভারত যদি ফেরত না দিত তাহলে কূটনৈতিকভাবে ওখানে ভারতের একটা দোষ চিহ্নিত হতো।
কেন চাওয়া হলো না? ভারত ফেরত দিবে না, এই আশঙ্কা? নাকি শেখ হাসিনা দেশে এলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তা ট্যাকল দেয়া কষ্টকর হবে? কারণ যদি এ দুটো বা যে-কোনো একটাও হয়, তাহলে এখানেই আমাদের দুর্বলতা ফুটে উঠছে।
আমার মনে হয়, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্তা নিশ্চিত করে, বিচারের রায়ের পরে নয়, এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া উচিত। তার অনুপস্থিতিতে নয়, তাকে সামনে রেখেই তার বিচার করা হোক।
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



