somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি বিলাসিনী

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-লাইনে নতুন?
-(নিরবতা)
-তুমি কি ভাবছো চুপ করে থাকলেই তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
-(নিরবতা)
-চোখ দিয়ে পানিও পড়ে দেখি! কান্দ ক্যানো? এই লাইনে কানতে থাকলে সারাজীবন কানবা। ……আমাকে দেখো তোমার কী মনে হয় আমি কান্দি?
-(নিরবতা)।
-কী? তুমি কী ঠিক করছো কথা বলবানা? কথা না বললে পরিস্থিতি আরো বেশী খারাপ হবে। চোখের পানি মুছো। বলো দেখি কীভাবে আসলা এইখানে?
-ও…… ও আমাকে……… (ঢুকরে কান্না)।
-একবার বললাম চোখের পানি ফালবা না, কথা কানে যায়না?...... আর বলতে হবেনা। বুঝছি। শোনো তোমার মতন কেইসের মেয়ে এখানে অনেক আছে। মেয়ে হয়ে জন্মাইছো এমনিতেই অনেক পাপ নিয়ে জন্মাইছো, তার মধ্যে আবার গাধা হয়ে জন্মাইছো। ছেলে একটা আইসে ননায়ে ননায়ে দু’কথা বলছে, যে বাপ-মা এত কষ্ট করে জন্ম দিছে, খাওয়ায়ে পরায়ে বড় করছে, তাদেরকে ফালায়ে বের হয়ে পড়ছো ঐ ছেলের হাত ধরে। পাপের উপর পাপ, গাধার উপর গাধা, এখানে আসবা না তো কোথায় যাবা!
-বুবু, আমি কল্পনাও করিনাই……
-চুপ! তুমি আমাকে বুবু বলবানা। আমি তোমাকে বুবু বলার কোনো অধিকার দেই নাই।
-বুবু, প্লীজ…
-আবার ইংরেজী মারাও! দূরে যাও। ঐখানে গিয়ে বস। শোনো, তোমাকে এই রুমে দিয়ে গেছে কিছু আসল জিনিস শিখায়ে পড়ায়ে দিতে। তোমার চেহারা আছে। একটু শিখে নিতে পারলে খদ্দেরের কাছে অনেক ডিমান্ড বাড়বে।
-বুবু প্লীজ, এভাবে কথা বলবেন না, প্লীজ আমাকে বাঁচান! ঐ মহিলাকে বলেন আমি দরকার হলে মানুষের বাসায় কাজ করে খেটে ওনার টাকা দিয়ে যাবো! প্লীজ আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন!
-অসম্ভব। তোমার জন্যে সে অনেক টাকা দিছে তোমার নাগরকে।
-প্লীজ, আপনার পায়ে ধরি, প্লীজ, আমার বাবা অনেক বড়লোক, যত টাকা দিয়েছে তার ডাবল দিবে। প্লীজ…
-আমার পায়ে এভাবে চোখের পানি ফেলে লাভ নেই, তোমাকে প্রথমেই বলছি। এখানে ঐ ডাইনির কথাতেই সব চলে। আমার ডিমান্ড খদ্দেরদের কাছে বেশী তাই আমাকে একটু সাইড দিয়ে চলে, এই যা। তোমাকে বের করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
-বুবু, প্লীজ…
-(নীরবতা)
-আমাকে বাঁচান! আমি জীবনেও আর এই ভুল করবোনা। আপনি আমাকে বাঁচান। একবার শুধু আমাকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, প্লীজ! আপনার কথাবার্তা শুনে আপনাকে শিক্ষিত মনে হচ্ছে। প্লীজ, আমাকে বাঁচান!
-শুধু শুধু এইভাবে আমার পা ধরে চোখের পানি ফেলতেছ। এই পৃথিবীর একটা কঠিন নিয়ম আছে। ছেলেরা ভুল করলে দুনিয়া তাকে আরো ভুল করার সুযোগ দেয়। কিন্তু মেয়েরা একবার ভুল করলে এই দুনিয়া তাকে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দেয়। আমাকে দিছে। পাশের রুমের শাহানাকে দিছে। এখানের যত মেয়ে আছে সবাইকে দিছে। তোমাকে বাদ দিবে কেনো? ……… কেঁদে লাভ নেই। কাঁদলে সবাই তোমাকে আরো বেশী পেয়ে বসবে, ঐ ডাইনি আরো বেশী খদ্দের চাপায়ে দিবে। শক্ত হও, খদ্দের সামলাইতে শেখ।
-আমি আপনার পা ছাঁড়বোনা। আমাকে বাঁচান, না হলে আমি সুইসাইড করবো! আমার পেটে ওর বাচ্চা! আমাকে আর পেটের বাচ্চাটাকে আপনি মেরে ফেলেন! বিষ দিয়ে মেরে ফেলেন বুবু, তাও এখান থেকে আমাকে বাঁচান! এইখানে এইভাবে আমি বাঁচবোনা। আমি ভুল করছি! আমাকে বাঁচান! প্লীজজজজজ!

(চৈতি- যার এখনকার নাম মাধুরী- মিশ্র অনুভূতি নিয়ে তার পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কাঁদতে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। একসময় তার মনে হয় লাথি মেরে মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দেয়। ঘিন্না লাগে মেয়েটার ভেতর নিজেরই অতীত দেখে। কিন্তু কেনো যেনো পা দু’টো লোহার মত মনে হয়। লাথি দেয়ার শক্তি নেই সে পায়ে। আড়াইবছর আগে শেষবার আর কোনোদিন চোখের পানি ফেলবেনা বলে শক্ত প্রতিজ্ঞা নেয়া চৈতি’র চোখ ভিজে আসতে থাকে। সে সময় ইন্টারমিডিয়েট পড়া ছোট বোন মিতি’র ‘আপু’ ডাক কানে ভাসতে থাকে ডং ডং ঘন্টার মত। ভেজা চোখেই চৈতি বুঝে, এই বুবু ডাকতে থাকা মেয়েটাকে এখন ও শক্ত করে লাথি না দিলে, সারাজীবন মেয়েটা লাথি খাবে!

শ্রাবনের একদিন বিকেলে, সতী গৃহবধুদের কাছে খারাপ পাড়া বলে বিখ্যাত গলিটার, একটা রুমের ভিতরে দু’জন মেয়ের একজন চোখে পানি নিয়ে, আরেকজন বুকে সমুদ্র নিয়ে কাঁদে। কিন্তু প্রচন্ড বৃষ্টির শব্দের সাথে সে কান্নার শব্দ বিলীন হয়ে যায় বলে পৃথিবীর কারো কোনো খবর হয় না। অনেক দূরে কোথাও কলেজ পড়ুয়া সদ্য কিশোরী মেয়েটা খোলা চুলে জানালার গ্রীল দিয়ে হাত বাড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে বৃষ্টি ধরতে চায়।)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৫২
২৪টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×