somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উনিশজন পিস-এক্টিভিস্টস, তোমাদের মৃত্যু আমাদের লজ্জা…

০২ রা জুন, ২০১০ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউনিতে প্রথম দিকে (এখনো প্রথম দিকে শেষের দিকে বলার সময় আসেনাই যদিও, একবছরও হয় নায়) একদিন বাস থেকে নেমে থতমত খায়ে গেলাম। বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে, রাবিশ বিন থেকে শুরু করে, লাইটপোষ্ট থেকে শুরু করে, গেইটের আশেপাশে, টেবিলে চেয়ারে সব জায়গায় পোষ্টার আর পোষ্টার “ফ্রী প্যালেস্টাইন”! এই একটা লাইন বাকা করে বড় বড় করে লেখা। আমিতো মনে মনে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ শুরু করলাম, খাইছে আমারে। এই কাজ যদি মুসলিম পোলাপাইন করে থাকে তাইলে খবর আছে।

ভিতরে ঢুকে দেখি সিঁড়ির গোড়ায় দুই মেয়ে দাঁড়ানো। একজনের নাক কান চোখের পাতা, আইব্রু, জিহবা কিছুই বাদ নাই যেখানে রিং লাগানো নাই। আরেকজন গিক-টাইপ, ভদ্রস্থ, ঢোলাঢালা শার্ট-প্যান্ট পরা। হাতে একই পোষ্টার। বিলাইতেছে যাকে সামনে পাইতেছে তাকেই। মনে মনে খুশী হইলাম, কারণ মেয়ে দুইটাই সাদা চামড়া। নাম জিগায়ে বুঝলাম মুসলিম ও না। খুশী মনে তাই পোষ্টার নিলাম। জানতে চাইলাম ঘটনা কী। রিং রিং-এ রিংময় মেয়েটা ঠা ঠা ঠা ঠা করে লেকচার দেয়া শুরু করে দিলো। যা বুঝলাম তা হইল এর আগেরদিনও প্যালেস্টাইনে ছোট একটা ছেলে মারা গেছে মর্টার শেলে না কিসে, তার প্রতিবাদ। এইভাবে আর কতদিন, ফিলিস্তিনকে ইসরাঈল ‘ওপেন এয়ার প্রিজন সেল’ বানায়ে ফেলছে। তার প্রতিবাদ করা মানুষ হিসেবে দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তারা পালন করতেছে। স্টুডেন্ট এসোসিয়েশানে মিটিং ডাকছে। আমিও সেই মিটিং এ আসলে সে খুবই খুশী হবে।

সত্য কথা বলতে, কোনো ফিলিংসই হইলোনা আমার। প্রতিদিনই বলতে গেলে ফিলিস্তিনে মানুষ মরে। তার উপর বিশ্ব-অবরোধের কারণে পরোক্ষ মৃত্যু তো আছেই। কেমন যেন গন্ডারের চামড়া হয়ে গেছে। এত সহজে আর ফিলিংস হয়না। মনে মনে লজ্জা লাগলো নিজেরই অনুভূতিহীনতা দেখে। উলটা কেমন যেন স্বস্থির অনুভূতি মেয়েগুলা সাদা আর অমুসলিম দেখে। যেন নিজের উপর থেকে জবাবদিহীতার ভার কমে গেল!

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পিস-এক্টিভিস্টদেররা ত্রান-সাহায্য নিয়ে তুরস্কের শিপে করে পৌঁছাইলে ইসরাঈলী সৈন্যরা হামলা করে কমপক্ষে উনিশজন এক্টিভিষ্টকে মাইরে ফেলছে, বন্দী করে রাখছে বাকী সবাইকে। খবরে অবাক হয়ে দেখি, ইসরাঈল বার বার বলতেছে একটিভিষ্টরা ইসরাঈলে হামলা করতে আসতেছিল। অস্ত্র হিসেবে যা দেখানো হইল- অনেকগুলো গুলতি, মার্বেল, লাঠি, আর পেপার কাটারের মত ছোট ছুরি!!!!!!!!!............ আমি হাঁ করে তাকায়ে থাকি। ওরা কি মনে করে পৃথিবীর সব মানুষ চারপায়ের গাধা, যা বুঝাবে তাই বুঝে বসে থাকবে??! এইগুলা অস্ত্র?!?!?!
জার্মানের দুইজন বামপন্থী রাজনীতিবিদও ছিলেন ঐ শিপে, এক্টিভিস্ট হিসেবেই অবশ্যই। ইসরাঈল তাদেরকে ডিপোর্ট করছে সাথে সাথে। একজন প্রতিবাদ মিছিলে জানালেন “… ওরা বিনা উস্কানীতে আমাদের উপর হামলা করছে…… শেষে যখন বসেছিলাম, আমার পাশেই আরেকজন তার্কিশ মহিলা বসে ছিলেন। তার স্বামী একটু আগেই বন্দুকের গুলিতে স্পট ডেড হয়েছেন…… আমি বুঝতে পারছিলাম না তাকে কিভাবে স্বান্তনা দিবো, ইংগিতে ইশারায় চেষ্টা করছিলাম আমার সহমর্মিতা বুঝাতে…”।

উস্কুখুশকু চুলের মহিলাটার কথা শুনতে শুনতেই একটা চরম অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে আমার মধ্যে। এই মহিলা, যার সাথে কিনা ইসলাম-মুসলিমদের নূন্যতম কোনো লেনাদেনা নাই, সে পর্যন্ত তার মানবিক দায়িত্ব হিসেবে গাজার মুসলিমদেরকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের জীবনের রিস্ক নিতে পারছে; আর আমি-আমরা?!?!…… এখনো মিডিয়ায় পুরা বিস্তারিত আসতে পারে নাই। আসতেছে। অনেক খুঁজে দুইটা স্টিল ছবি পাইলাম। দুইজন এক্টিভিস্ট পরে আছে গুলি খায়ে। জানলাম, শিপে ছয় মাসের একটা ছোট্ট তার্কিশ পিচ্চিও ছিল ওর বাপ-মা’র সাথে।

স্টুডেন্ট এসোসিয়েশান শিউর প্রতিবাদ টাইপ কিছু করবে। এইবার ভাবতেছি যাইতেই হবে। নাইলে নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেই লজ্জা লাগবে। একটু আগে খুব সুন্দর লাইন পড়তেছিলাম, মুক্তমনা’র জাফরউল্লাহ নামের একজনের লিখায়- “The good sense has taken the back seat” …… কথাটা তিতা হইলেও সত্য। উপায় নাই, প্রতিবাদে তাই যাইতেই হবে। কোন যেন বিখ্যাত ব্যক্তি বলে গেছেন, “পৃথিবীতে খারাপ কিছু হওয়ার জন্যে ভাল মানুষদের চুপচাপ বসে থাকাই যথেষ্ট”। কথাটা চরম সত্য!
৪৯টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×