somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসো একটু মাতাল হই

৩০ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(কাল্পনিক ঘটনা, কাল্পনিক কথাবার্তা- কেউ কারো সাথে মিল না খুঁজলেই আনন্দিত হই)

বিয়ের কথা হচ্ছে, আম্মুকে বললাম ছেলের ফোন নাম্বার দাও, কথা বলে দেখি। হতভম্ব আম্মু কল্পনাও করেনাই তার মেয়ে বেয়াড়া হলেও এই কাজ করতে পারে। লাজ-লজ্জা'র তো অন্ততঃ একটা ব্যাপার আছে তাইনা। তারউপর বড়ছেলে যখন বাধ্য ছেলের মত তাদের পছন্দের মেয়েকে এক কথাতেই বিয়ে করে ফেলেছে, সেখানে আমি কেনো যে সবসময় এমন ভেজাল লাগাই আম্মু বুঝে কখনোই বুঝেনি, তখনো না। তোমার নাম্বার নিয়ে নিলাম জোড় করে। আব্বু পর্যন্ত নাকি হা করে তাকিয়ে ছিল আম্মুর মুখের দিকে- ছোট ভাইয়ের কথা।

তুমি কেমন বেকুবের মত বসে ছিলে চেয়ারের ওপাশে। কফির কাপ সামনে নিয়ে বললাম দেখেন, যেহেতু আপনাকে আমি ডাকিয়ে এনেছি, হয় আমি পে করব দুইকাপের জন্য, না হয় আপনার টা আপনি আমার টা আমি।
তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল তোমার সামনে আমি না, কোনো এলিয়ান বসা। ভদ্রভাবে বললে, ছেলেরা বিল দেয়াটাই তো ভদ্রতা বলে জানি।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আনমনে বললাম, ওসব ভদ্রতা আমি মানিনা, অন্ততঃ বিয়ের আগ পর্যন্ত। বিয়ে হলে তো অটো আমার সব খরচ আপনার হয়ে যাবে। আগ পর্যন্ত নাহয় আমি স্বাধীন থাকি।
তুমি কিছু বলোনি, মিচকে হাসি লুকিয়ে ফেলেছিলে। তুমি কী তখন আসলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলে 'হায় স্বাধীনতা' ভেবে ভেবে? ফেলতেও পারো। বিয়ে মানেইতো একটা কম্প্রোমাইজ, যেখানে দু'জনেই বিয়ের ছাতার তলে পরাধীন জীবন-যাপন করে। দু'জন দু'জনের গোলাম। ভালই।

অনেক কথা বলবো বলে তোমাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু বিরক্ত লাগছিলো হঠাৎ, মেয়েরা মিস্টেরিয়াস- কবিরা বলে। আমি বলিনা। আমার মতে মেয়েদেরকে মিস্টেরিয়াস বানানোর এই সাহিত্যিক বিলাসিতা কবিদের নিজেদের প্রয়োজনে। কিন্তু মিস্টেরিয়াস না হলেও মুড কেনো যে কোনো আগাম নোটিশ ছাড়া ধুম ধাম চেইঞ্জ হয়ে যায়- সে এক রহস্যই বটে। তোমার সাথে দেখা হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্ত পর্যন্ত চিন্তা ছিল এমন সব কথা বলবো তুমি ভড়কে যাবা। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থায় পালাবা। কিন্তু তোমার সাথে বসলাম, পাশের টেবিলের আন্টির চোরা চোখের দিকে তাকিয়ে ভেচকি মারা একটা হাসি দিয়ে অপরিচিত আন্টিকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে যখন কফির টাকা আমি দিব না তুমি দিবা এই দিয়ে যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছি, কেমন ঝুম ঝুম বৃষ্টিটা এলো দেখলে? আমাদের টেবিলের পড়েই কাঁচের দেয়াল। মনে হচ্ছিল যেন আসলে বৃষ্টির নীচেই বসে আছি দু'জন। তাই ভেবেই হয়তো মুড ঘুরে গেল। বিরক্ত লাগছিল নিজের উপর। বিয়েতে তো হ্যা বলেই দিয়েছি, তোমাকে আবার ডেকে এনে ভড়কানোর এই নাটকীয় চেষ্টার মানে কী?

চুপ করে ছিলাম। ভাবছিলাম, যা ব্যাটা তুই বসে বসে কফি খা, আমি বৃষ্টি দেখি।
ছেলেরা সাধারণত মেয়েদের নিরবতায় ভড়কে যায়, তুমি দেখি উলটা। আরামসে কফি'র কাপে চুমুক দিচ্ছো আর পাশে বাচ্চাদের হাউ কাউ দেখছো, যেন আজীবনের অলস সময় তোমার সামনে; কোনো তাড়া নেই। কথা কে শুরু করেছিলো সে আর মনে নেই। বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলা আপনার জীবনের এমন কোনো ইচ্ছে আছে যা পূরন হয়নি?
ভ্রু বাঁকা করে বলেছিলাম, এত ইচ্ছা অপূর্ণ আছে যে লিস্ট করতে গেলে কয়েকটা ভল্যুম হবে।
তুমি তাতেও দমে যাওনি, হেসে বললে, আচ্ছা একটা ইচ্ছার কথাই না হয় বলুন।
বললাম, বিয়ের পরে মদ খেয়ে একবার মাতাল হতে চাই।
এবার আর তোমার মুখে কথা জোগালো না। এমন পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের মেয়ের মুখে মনে হয় এ ধরনের কথা আসা করোনি। অবাক হয়ে বললে তাতো হারাম!
আমি উলটা বললাম, আপনি তো আগে বলেন নি যে আমাকে হালাল ইচ্ছার কথা বলতে হবে!

তুমি কী থতমত খেয়েছিলে? কে জানে। তোমার চেহারায় অত সহজে এক্সপ্রেশান বুঝা যায়না। কিন্তু জানো, আমি একফোঁটা শয়তানি করিনি। এখনো আমার ইচ্ছা করে আমি মাতাল হই, অন্ততঃ একবারের জন্য। না, না, বাসায় না। নেভালের ঐ সিমেন্টের বাঁধের উপর মাতাল হই। তারপর মাতাল হয়ে চিকন বাঁধটার উপর দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে ফিরে প্রচন্ড চিৎকার করি। চিৎকার করতে করতে আমার গলা বসে যাক। চোখে পানি এসে যাক। সবাই আমাকে পাগল মনে করে দূরে সরে যাক। চিৎকারে আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাক। আমি এই পৃথিবীর, সমাজের আর চারপাশের মাঝখানে একজন মানুষ- এই সত্য ভুলে যাই। ভুলে যাই রীতি-নীতি সমাজ চিন্তা দুঃখ পরিবার হাসি ভালবাসা সব। আমি যেনো শুধু চিৎকারই করতেই থাকি। তারপর যখন গলায় আর শক্তি থাকবেনা, চোখের পানিতে ফুঁপাতে থাকবো, তখন তুমি পাশে এসে বলবে চলো ঘরে যাই। আমি সুবোধ বালিকার মত তোমার সাথে ঘরে চলে আসবো।

একবার হলে থাকতে রাতে সিনিয়র আপুরা যখন ছাঁদে গান গাচ্ছিলো, আমি এক কোণায় মাদুরে চিৎ হয়ে শুয়ে চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছিলাম। তখনই ভেবেছিলাম একদিন মাতাল হবো। কিন্তু যেহেতু মাতাল হওয়ার পর কাউকে না কাউকে আমাকে সামলাতে হবে, সেহেতু বিয়ের পরে মাতাল হওয়াই সুবিধাজনক। আমি যখন প্রচন্ড চিৎকারে কান ফাঁটিয়ে ফেলবো, তুমি তখন অবাক হয়ে দেখবে- এই মেয়েকে তুমি চিনোনা। তুমি আমাকে এরপরে চিনতে চাইবে, কিন্তু মাতলামি কেটে গেলেইতো সেই আবার বাস্তবের আমি চলে আসবো। তুমি আর কিছুতেই আমাকে চিনতে পারবেনা। বলো কেমন মজা হবে? তুমি শুধু মাঝে মাঝে অবাক হবে তখনের কথা ভেবে।

হাহাহাহা, এতক্ষণ এইসব আবজাব পড়ে তুমি কী ভাবছো আমি সত্যি একবার মাতাল হতে চাই? ধুর। তোমাকে বিয়ের আগের সেই দেখায় আসলে ভড়কে দেয়ার জন্যই বলেছিলাম। যদিও আমি বিশ্বাস করি, কিছু চরম শক্ত চরিত্রের মানুষ ছাড়া বাকী সব সাধারণ মানুষ একমাত্র মাতাল হলেই সত্যবাদী হয়। আমারও তাই মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় একদিন সত্যবাদী হই। তুমি যখন একের পর এক সত্যের ভারে নুইয়ে পরতে পরতে চরম বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকবে, তখন সব শেষে বুকে হাত দিয়ে বলি, তোমাকে ভালবাসি।
৭০টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×