সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বর্তমানে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং শিশু নির্যাতন বিষয়ক বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। দেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পটভূমিতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন তো হচ্ছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে হত্যা। নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের সঙ্গে হত্যাকা-টি এখন একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। আগে ধর্ষণের পর হত্যার এই প্রবণতাটি বর্তমানের মতো ছিল না।
বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে শুরু করে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ৯ মাসে ৩৩৮ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তথ্যটি শিহরিত হওয়ার মতো। কিন্তু তার চেয়েও শিহরিত হওয়ার তথ্য হচ্ছে ধর্ষণের পর ৫০ জন নারী ও ২২ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৮ নারী ও ৫১টি শিশু। এটা হচ্ছে প্রকাশিত হওয়া তথ্য থেকে পাওয়া সংখ্যা। এর বাইরে আরও কত নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার তথ্য কারও কাছে নেই। আমরা মনে করি, যে তথ্য ও সংখ্যাগুলো আমরা পাচ্ছি, বাস্তবে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং সেই সঙ্গে হত্যার সংখ্যা অনেক বেশি।
এমতাবস্থায় সরকার যদি এই মুহূর্ত থেকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও ধর্ষণসম্পৃক্ত হত্যার বিরুদ্ধে কঠোরহস্তে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা যে যাই বলুক, বাস্তবে দেশে ধর্ষণ ও হত্যা ইতোমধ্যেই সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের রাজনীতিবিদরাও এ প্রসঙ্গে যেসব কথাবার্তা বলেন সেটাও বাস্তবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। সবাই গজদন্তমিনারে বাস করছে বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং তাদের নেতা-নেত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পরিস্থিতি প্রতিরোধে কোন প্রকার আন্দোলন-সংগ্রামের ধারেকাছেও যাচ্ছেন না। ১৯৯৪ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাকা- নিয়ে মহিলা পরিষদসহ নারী সংগঠনগুলো যেভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবারের এই পরিস্থিতিতেও তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু নারী সংগঠনগুলোই নয়, সব মানবাধিকার সংগঠনসহ সমাজের সচেতন অংশকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। সরকার যদি এই পরিস্থিতিতে দ্রুততার সঙ্গে একশনে যেতে ব্যর্থ হয় তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হতে বাধ্য। কিন্তু সরকারের উদ্যোগগুলোও অপর্যাপ্ত।
প্রতিদিন সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন শহর ও গ্রামের শ্রমজীবী নারীরা। অথচ এদের ওপর নির্যাতন হলে সেটা কোনো বিশেষ খবর নয়।
শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় শত ধর্ষণের নায়ক(!) মানিক আজ বিদেশে পুনর্বাসিত। এদেরই ছত্রছায়ায় আজ আবার শুরু হয়েছে ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যদি না এদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা যায় এরা কোন শাস্তি ছাড়াউ পার পেয়ে যাবে, সাহস আরো বাড়বে এই নর্দমার কীটগুলোর।
এখনও নরপশুরা ব্যাপকতম গণপ্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে না বলেই নারী নির্যাতন আজ এতটা ব্যাপক হতে পেরেছে। এদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে, বিশেষত নারীদের নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। শাসক শ্রেণীর কোনো দলের কাছে এই লড়াইয়ে সামান্যতম সাহায্য প্রত্যাশা এই আন্দোলনকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে। একাত্ম হবে হবে ব্যাপকতম শ্রমজীবী জনসাধারণের সাথে।
তথ্যসূত্রঃ নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ বাড়ছে কঠোরভাবে দমন করুন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




