somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিশ্চয়তার মুখে হাজার হাজার শিক্ষার্থী (re post)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৩/০১/২০১২ তারিখে দৈনিক সিলেটের ডাক (http://www.sylheterdakbd.com) এ প্রকাশিত সাইয়েদ আহমদ শহীদ (ছাত্র শাবি) এর লিখা কলাম পোস্ট করা হল---- -



শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিখ্যাত ওলি হযরত শাহজালালের নামে প্রতিষ্ঠিত সিলেটবাসীর গর্বের ধন, শিক্ষার হৃদপিন্ড। শাহজালালের বাণীর মতোই শান্ত নিরিবিলি এক ক্যাম্পাস। নানা কারণে এটি সারাদেশের মধ্যে বিশিষ্ট এক শিক্ষালয়। সুদীর্ঘ ছায়াঢাকা প্রবেশ পথ, সুউচ্চ শহীদ মিনার, পাহাড় ঘেরা সবুজে ছায়া এক শান্তির নীড়। পুরো ক্যাম্পাসটি যেন একখন্ড সবুজ বাংলাদেশ। সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো যখন নানা কারণে একের পর এক বন্ধ হয়েছে তখনও এটি তার আপন গতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের ভিসি স্যার ড. সালেহ উদ্দিন সেদিন গর্ব করে বলেছিলেন ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একদিনের জন্যও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে বন্ধ থাকেনি’। আমরাও আমাদের বন্ধুরা যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদের সাথে গর্ব করে বলি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচে’ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চার বছরের অনার্স চার বছরের মধ্যেই শেষ করবো, তোমাদের মতো পাঁচ-ছয় বছর লাগবেনা। কারণ গত ৪ বছরে ছুটির দিন ছাড়া আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। কিন্তু আমাদের এ গৌরব আর বেশিদিন টিকলোনা। ১১ জানুয়ারি ২০১২, তখন সন্ধ্যা নামি নামি করছে। হলবাসী ছাত্রদের কেউ কেউ পরীক্ষা দিয়ে, কেউ ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত দেহে ফিরে আসছিলো হলে। কেউ গেছে টিউশনে আবার কেউবা হলে অলস সময় কাটাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ শোনা গেল ভয়ার্ত চিৎকার আর ভাংচুরের শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শত শত ছেলে রামদা, চাপাতি নিয়ে রুমগুলো ভাংতে লাগলো আর সবাইকে পিটাতে লাগলো। ওরা শিবির হঠানোর শ্লোগান দিচ্ছে। কিন্তু শিবির আর সাধারণ ছাত্রের মধ্যে কোন ভেদাভেদ রইলনা, যাকে যেখানে পাচ্ছে পিটাচ্ছে আর হল ছাড়তে বলছে। আমরা যারা সাধারণ ছাত্র প্রাণভয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে রুমের ভিতরে অবস্থান নিলাম। ওরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে আক্রমণ করে আমাদের পিটালো। আমাদের চোখে তখন মৃত্যু ভয়, শত অনুনয়-বিনয়ও ওদের টলাতে পারলোনা। কোনক্রমে পৈত্রিক প্রাণটা রক্ষা পেলো। কিন্তু ওরা আমাদের রুমগুলো তছনছ করে দিল। আমরা জানে বেঁচে গেলাম, কিন্তু ওরা আমাদের সবশেষ করে দিল। ডিজিটালাইজেশনের যুগে নিজেকে সময়ের সাথে এগিয়ে রাখবো বলে টিউশন আর বাবার কষ্টের টাকা দিয়ে যে ল্যাপটপ কম্পিউটারটি কিনেছিলাম ওরা চোখের সামনে তা নিয়ে গেলো। কাপড়-চোপড়, গ্লাস, ফ্যান থেকে শুরু করে যা নেয়া যায় সবই নিল, আর বাকীগুলো ভেঙ্গে খান খান করে দিলো। সারা জীবনের অর্জন সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কাগজপত্রে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। অন্ধকার করে দিল পুরোটা জীবন। কিন্তু আমাদের অপরাধ কি ছিল আজও আমরা তা জানিনা। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। হল ছাড়া হয়ে ছাত্র শিবির আবার হল দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রলীগের যাকে পাচ্ছে তাকেই পিটাচ্ছে। ছাত্রলীগ ও ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে শসস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। তারা শিবিরকে আর হল কিংবা ক্যাম্পাসে উঠতে দিবে না। আবার শিবিরও তাদের ক্ষতিপূরণ এবং সহাবস্থানের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন গাড়ি বাইরে বেরুলে হামলা চালাচ্ছে, আহত হচ্ছে বিভিন্ন জন, কিন্তু বিপাকে পড়েছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রলীগ আর শিবিরের সংঘর্ষের ভয়ে তারা যেতে পারছে না ক্যাম্পাসে। ফলে কার্যত অচল হয়ে গেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১১ জানুয়ারী থেকে বন্ধ আছে ক্যাম্পাস। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিশ্চিত সেশনজটের কবলে পড়বে শাবি, এমন আশংকাই করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাই এ অবস্থার নিরসন দরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ঘটনার পেছনে মূল দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেয়াটাও জরুরী মনে করছেন শিক্ষকবৃন্দ। বর্তমান সরকারের গত তিন বছরের শাসনামলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝামেলা ও অস্থিরতা বাড়লেও সিলেটের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন বছরে কোন সমস্যা হয়নি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেই ছিল ছাত্র সংগঠনগুলো। কিন্তু হঠাৎ কোন কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে ভাবছেন অনেকে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঝামেলা এড়াতে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। আর ওদিকে অভিভাবকরা আছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠায়। তারা ভয় পাচ্ছেন তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে। পুরো ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে রাজ্যের আতংক। আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সিলেটের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও। এ অবস্থা আর বেশিদিন চলতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি তাদের শিক্ষাজীবন যাতে দীর্ঘায়িত না হয়। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ধরে রাখতে চাই। আর শান্তিপ্রিয় সিলেটবাসী এ ক্যাম্পাসে আর রক্তপাত দেখতে চান না। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এর সুষ্ঠু সমাধান করা।

----সাইয়েদ আহমদ শহীদ (শাবি)




০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×