somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেহেরজান: যুদ্ধ ও ভালবাসার মালিকানার মামলা ২

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম কিস্তি: Click This Link

প্রচারণায় যা আড়াল করা হচ্ছে
চলচ্চিত্রতাত্ত্বিক গাঁস্ত রোবের্জ শিখিয়েছিলেন, ফিল্মের বেলায় শুরুর কয়েকটি দৃশ্য ও আবহ থেকেই একটি ছবি কী বলতে যাচ্ছে তার আঁচ-অনুমান পাওয়া যায়। প্রথম দৃশ্যেই ড্রাম-বিউগলের বাদ্যধ্বনির সঙ্গে ভারতবর্ষের মানচিত্র দেখানো হয় এবং বলা হয়, ‘১৯৪৭ সাল, ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের শেষ এবং হিন্দু প্রধান ভারত ও মুসলিম প্রধান পাকিস্তানের জন্ম।’ দৃশ্যে দেখি চাঁদ-তারা খচিত পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান; মাঝখানে ভারত। পরের মুহুর্তেই পূর্ব পাকিস্তানকে দেখা যায় মানচিত্রে ফাটল তৈরি করে দূরে সরে যেতে। ভাষ্যে বলা হয়, ‘গভীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পার্থক্যের জন্য পাকিস্তানের উভয় অংশ পরস্পর থেকে দূরে সরতে থাকে।’ বঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তান একপর্যায়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং মানচিত্রে পূর্ব পাকিস্তানের চাঁদ তারার সাদা-সবুজ মুছে গিয়ে ভেসে ওঠে লাল সবুজ একাত্তরের পতাকা। আবহে শোনা যায়, শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ, ‘তোমাদের যা কিছূ আছে তা নিয়ে শত্র“র মোকাবেলা করো...এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু।

ছবিরও শুরু সেখানে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যুদ্ধশিশু সারা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে একাত্তরের স্মৃতিচিহ্ন। ৪১ বছর আগে তখন গ্রামে ঢুকছে পাকিস্তানী বাহিনী। জাদুঘরে গণহত্যার স্টিল ছবি, ধর্ষিতার ফটোগ্রাফ, গণহত্যায় নিহত শিশুদের লাশ। মুক্তিযুদ্ধের পরিচিত আবহ নির্মিত হয়ে যায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই। এবং এ পর্যন্ত আপত্তির কোনো কারণ দেখি না।

এই পটভূমিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশের একটি গ্রামকে, যেখানে যুদ্ধ ক্রমশই তার ছায়া ফেলছে। পুরো ছবিতে যুদ্ধ-নৃশংসতার এই পটভূমির বিরুদ্ধে একটি কথা বা দৃশ্য নেই। সুতরাং প্রথম পাঁচ মিনিটকে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত ইতিহাসের বর্ণনা, যার ভিত্তিতে ছবির চরিত্রগুলো এবং ছবির দ্বন্দ্বগুলো আত্মপ্রকাশ করবে। এটাই সেই ফাউন্ডেশনাল এক্সপেরিয়েন্স, যার নিরিখে কাহিনীটিও বিবেচিত হবে।

এবার ছবির শৈল্পিক বিচারের আগে ছবির ন্যারেটিভকে একাত্তরের ইতিহাস ও রাজনীতির নিরিখে যাচাই করা যাক। আমরা একে একে চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে সে পথে যাব। সবার শেষে আসবে চলমান বিতর্ক নিয়ে পর্যালোচনা।

নানাজান চরিত্রের শেকড় কোন ইতিহাসে?
নানাজান এককথায় ইতিহাসের প্রতিনিধি। উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আবহে সৃষ্ট এক আইডিয়ার জীবন্ত মূর্তি। কোন আইডিয়ার? বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদের। কতগুলি ঐতিহাসিক-মতাদর্শিক ধারণা দিয়ে গড়া তাঁর চরিত্র। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের একটা ক্রাইসিসের একধরনের সমাধান হিসেবে নির্মিত হন। ছবিতে তাঁর বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশী বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক ঐতিহাসিক সংকটের আপাত সমাধান হিসেবে আসে। বাংলাশের রাজনৈতিক সমাজে বাঙালিত্ব আর মুসলমানত্ব পরস্পরের বিপরীত হিসেবে দেখার শক্তিশালী ধারা আছে। একাত্তরের একটা ব্যাখ্যান এটাও বলে যে, মুক্তিযুদ্ধ ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম ও সংখ্যাগরিষ্ঠের আত্মপরিচয়ের এই ফাঁকের মাঝখানে সেতু হিসেবে আবির্ভূত হন নানাজান। বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যে আবশ্যিকভাবে বাঙালি মুসলমানের মনও থাকবে, ছফা বলেছিলেন। শেখ মুজিবের বাঙালি জাতীয়তাবাদ এভাবেই নিজেকে ভারতীয় হিন্দু বাঙালিদের থেকে রাজনৈতিকভাবে নিজের বিশেষত্ব চিহ্নিত করেছিল। করতে হয়েছিল।

নানাজানের কিছু স্টেটমেন্ট তাঁর রাজনৈতিক চরিত্রকে চিনতে সাহায্য করবে।

রাজাকার নেতা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁর সাহায্য চাইলে তিনি বলেন,

কোন পাকিস্তান? পাকিস্তান কায়েম করতে আপনাদের মতো সুবিধাবাদীরাই চেয়েছে। আমি কখনো পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করিনি। পাকিস্তান স্টেটে বাঙালিদের অবস্থান সম্পর্কে বরাবরই সন্দিহান ছিলাম। ১৯৪০ এর লাহোর প্রস্তাবে বাংলার উল্লেখ ছিল না। লাহোর ও বাংলার মুসলমানরাও এক নয়।

এরপরও রাজাকার মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি কথা তুললে তিনি তাকে হাত তুলে থামান এবং বিদায় নিতে বলেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে তিনি বলেন,

বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু বারবার সেই সংগ্রাম বেহাত হয়েছে। ...কৃষকদের সত্যিকার চাওয়া কে কবে বুঝেছে? ...এ ভূখণ্ডের মানুষ শ্রী চৈতন্য ও শাহজালালকে ভক্তি করে।

পাকিস্তানী মেজরের মুখের ওপর তিনি জবাব দেন।

কখনো সেপারেটিস্ট ছিলাম না। ৪৭ এর দেশভাগ সমর্থন করিনি। কিন্তু সময় আসে যখন মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ায়।

খেয়াল করার বিষয়, কথা হয় ইংরেজিতে, আলীগড়ের স্কলার হয়েও তিনি উর্দু জবান সচেতনভাবে পরিহার করেন।


৪৮ এ অর্ধেক দেশ হারালাম আর এখন (৭১-এ) হারাচ্ছি অর্ধেক মানুষ। আমি কখনো জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাস করতাম না।... এক তরবারীর নীচে দুই বাংলার মুসলমানরা কোরবানী হলো।

বাঙালি মুসলমানের মন বিভক্ত কতটা বাঙালি আর কতটা মুসলমান তা নিয়ে। নানাজানের কাছে এর সমাধানসূত্র হলো, বাঙালি কৃষকের চৈতন্য।...যে জমিতে গামছা পেতে নামাজ পড়ে আবার সংগ্রামেও পিছপা হয় না।

দৃশ্যে তখন ভাসতে থাকে এস এম সুলতানের সংগ্রামী সবল কৃষকের চিত্রমালা। বাঙালির নিম্নবর্গীয় সেকুলার পরিচয়ের ভিত্তি সুলতানের এই কৃষকেরা।

পেয়ারাবাগান থেকে সিরাজ সিকদারেরবাহিনীর অন্যতম কমাণ্ডার জাহানারার চিঠি নিয়ে আসে কমিউনিস্ট মুক্তিযোদ্ধা জবা। তাঁকে তিনি আশ্রয় দেন এবং বসিয়ে সম্মান করে সাগ্রহে আমাদের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা জানতে চান। জিজ্ঞেস করেন,

বলুন মা, কীভাবে আমাদের জেনানারা বন্দুক হাতে মুক্তিযুদ্ধ করছে, কীভাবে আমাদের মেয়েরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করছে?

তাহলে দাঁড়ালো এই যে, নানাজান খাজা সাহেব বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী। তিনি সাম্প্রদায়িক দেশভাগ মানেন নি। দেশভাগের জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদকে দায়ী করেন। মুসলমানিত্ব ও বাঙালিত্বের মধ্যে যে তিনি কোনো বিরোধ দেখতে পান না। পশ্চিমা গণতন্ত্র, সেকুলারিজম ও কমিউনিজম দিয়ে বাঙালি কৃষকের মনকে বোঝা যাবে না, তাদের মুক্তিও এসবের মাধ্যমে আসবে না। কিন্তু কীভাবে আসবে তাও বলেন না। ইসলাম তাঁর আধ্যাত্মিক বিশ্বাস মাত্র। তাঁর পরিবারের সদস্যরা কেউ পর্দা করে না, মেয়েরা স্বাধীন, পুরুষরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি প্রগতিশীল পাকিস্তানী কবি ফায়েজ আহমেদ ফায়েজের কবিতা আউড়ান, যিনি একাত্তরে বাংলাদেশের পে ছিলেন বলে নির্যাতিত ও কারাবন্দি হয়েছিলেন। প্রকৃতি ও প্রাণ তাঁর অপার আগ্রহের আর ভালবাসার বিষয়।

রাজাকার ছাড়া সকলেই তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়। বাড়িতে হিন্দু শরণার্থীদের আশ্রয় দেন। তাঁর গ্রামে জয় বাংলার মুক্তিযোদ্ধা, কমিউনিস্ট মুক্তিযোদ্ধা সবাই আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা পায়। তাদের তিনি খাওয়ান। কিন্তু গ্রামকে হানাহানি মুক্ত রাখতে সবাইকে অপারেশন চালাতে নিষেধ করেন। তাঁর ধারণা এতে গ্রামবাসীদের জীবন বাঁচতে পারে। এ জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে কমিউনিস্টরা পর্যন্ত তাঁকে পথের বাধা মনে করে। পিস কমিটিতে নাম লেখাতে তাঁর ঘৃণা হয়। এ জন্য তাঁকে মৃত্যুর হুমকি মাথায় নিয়ে চলতে হয়, অপমান আর লাঞ্ছনার শিকারও হন পাকিস্তানী আর্মির তরফ থেকে। অহিংসা তাঁর নীতি, রক্তপাতের মাধ্যমে কোনো অগ্রগতি ও সমাধানে তাঁর আস্থা নেই (যদিও মনে করেন, সময় আসে যখন মানুষ উঠে দাঁড়ায়)। পাকিস্তানী আর্মি যুদ্ধজয়ের জন্য দোয়া চাইলে তিনি বলেন, তারা যাতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে। তিনি যুদ্ধবিরোধী কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তার সক্রিয় সহায়তাকারী।

একটি চরিত্রের আগাপাশতলা বুঝতে আর কী লাগে? এককথায় বললে, নানাজান হলেন অহিংসা, বাঙালি মুসলমান কৃষকের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও মানবপ্রেমের বিশুদ্ধ নীতির বাস্তব প্রতিমা। বাস্তবে ইতিহাস তাঁর মতো করে চলেনি, যেমন চলেনি ভিন্ন অর্থে গান্ধি এবং শেখ মুজিবের কথায়ও। কিন্তু এঁদের জীবন ইতিহাসের আরেকটি সম্ভাবনার কথাও বলে। সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা ইতিহাসেরও বিষয় শিল্পেরও বিষয়।

নীতির শহীদ

গান্ধি ও মুজিব চরিত্রের আইডিয়ার নির্যাস নানাজান। দুই নেতাই একটা মাত্রা পর্যন্ত সব ধরনের জাতীয়তাবাদীদের সমীহ পেয়েছিলেন। ৬৯-এর পর থেকেই বাম-ডান জাতীয়তাবাদীরা বারবার মুজিবের কাছে এসেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছে বা নিজেরা যে সেই পথে যাওয়া খবর দিয়ে তার সমর্থন চেয়েছে। মুজিব দৃশ্যত তাদের বাতিল না করে ধারণের চেষ্টা করেছেন। গান্ধির মতোই মুজিবও শান্তিপূর্ণ অহিংস সংগ্রামকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পন্থা হিসেবে নিয়েছেন এবং একইসঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল ধারার যোগসূত্র হওয়ার চেষ্টা করেছেন বা তাকেই রাজনৈতিক কৌশল করেছেন। নানাজানও তা-ই করেছেন। এবং গান্ধি ও মুজিবের মতোই অহিংসার নীতির অকার্যকারিতা প্রমাণ হতে দেখেছেন। মুজিবও ২৫ মার্চ পর্যন্ত দৃশ্যত যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন, সংলাপ চালিয়েছেন (যদিও ৭ মার্চের ভঅষণ যুদ্ধঘোষণার সামিল)। মুৃজিবের আত্মসমর্পণের যুক্তি ছিল যে, তাতের মানুষের জীবন বাঁচতে পারে (যদিও একে কেউ কেউ দায়িত্বহীনতা মনে করেন এবং কার্যত এ ঘটনা গণহত্যা ঠেকাতে পারেনি)। নানাজানও গ্রামে কাউকে অপারেশন করতে না দিয়ে বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি।

মুজিব নিজেকে কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করেননি। মেজরিটির অধিকার দাবি করা সেপারেটিজম নয়। সেটা হয় তখনই যখন মাইনরিটি মেজরিটির থেকে আলাদা হতে চায়। এ কারণে ৪৭-এ মুসলিম লীগ সেপারেটিস্ট এবং সেপারেটিস্ট হলো হিন্দু নিয়ন্ত্রিত বাংলা কংগ্রেস। অন্যদিকে ৭১-এ পশ্চিম পাকিস্তানের আচরণ সেপারেটিজমের পক্ষে কারণ তারাও বাংলা কংগ্রেসের মতো মেজরিটির দেশশাসন মানতে চায়নি। মুজিব তাই অভিযোগ করেন, ‘তিনি আমাদের কথা শুনলেন না, শুনলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।’ ঠিক যেমন মাওলানা আজাদ, শরুৎ বোস, আবুল হাশিম, সীমান্ত গান্ধির কথা গান্ধি শোনেননি, শুনেছেন নেহরু ও প্যাটেলের কথা, এমনকি জিন্নাহর কথাও। রুশ বিপ্লবেও ইতিহাসের পরাজিত প্রস্থানে দেখতে পাই ট্রটস্কিকে। কিংবা আমাদের বেলায় তাজউদ্দীন আহমদকেও।

গান্ধির ঘোষিত পথে নয় বরং নেহরুর চক্রান্তেই দেশভাগ হয়েছে। নেহরুর কেবিনেট মিশন প্ল্যান পরিত্যাগ করার ঘোষণাতেই মুসলমানদের সঙ্গে ন্যায্য মতা বণ্টনের সম্ভাবনা তিরোহিত হয় এবং বলা যায়, নেহরুর এ সিদ্ধান্তই দেশভাগের মূল কারণ।

নানাজানের রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে কখনো মেলে অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের তরুণ জেনারেল সেক্রেটারি আবুল হাশিমের, যিনি সাম্প্রদায়িক দেশভাগের বিপে এবং কংগ্রেসের ভিন্নমতাবলম্বী শরৎ বসুর সঙ্গে মিলে গান্ধি-নেহরুর বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তিনি প্রগতিশীল এবং কৃষক স্বার্থের পরে সংগ্রামী। আবার কংগ্রেসের প্র্যাকটিকাল দ্বিজাতিত্ত্ব কিংবা মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক আইডলিজিক্যাল দ্বিজাতিতত্ত্বের বাইরে তাঁর অবস্থান। ছবির কোথাও তাঁকে মুসলিম লীগার হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয়নি, এবং তিনিও এমন কিছু করেননি যাতে মনে হয় তাঁর অবস্থান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকারী দলটির কাছাকাছি। বরং রাজাকারদের ইন্ধনে পাকিস্তান আর্মিই তাঁকে হত্যা করে। তাঁর জীবনের মতো মৃত্যুতেও তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি পাকিস্তানের শত্রু।

ছবিতে এটা স্পষ্ট। কিন্তু যদি এতটুকুই দেখানো হতো যে, তিন পই তাঁকে পথের বাধা মনে করে এবং তাঁর অপসারণ ছাড়া যুদ্ধের ইঞ্জিন চালু হতে পারছে না। এ কারণে তিনপই সুবহে সাদিকে তাঁকে হত্যার জন্য এগিয়ে আসে। এই তিন পরে কাদের হাতে তিনি নিহত হলেন তা রহস্য রাখাই ভাল ছিল। তাঁতে তাঁর ভুল বোঝা জীবনের মতো মৃত্যুও হয়ে উঠতো আরো ট্র্যাজিক ও ভাবনাসঞ্চারি। আমাদের সামনে তখন প্রশ্ন থাকতো এই মৃত্যুর তাৎপর্য কী? সেটাই হতো শিল্পের আরাধ্য সংকটবিন্দু।

আশ্চর্য নয় যে, গান্ধি ও মুজিবের মৃত্যুর সঙ্গেও তাঁর প্রতীকী মিল। তিন জন এক গুণের মানুষ নন, কিন্তু চরিত্রলক্ষণের এই মিল নানাজান চরিত্রের ঐতিহাসিক পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে। সেই পরিণতি ট্র্যাজিক এবং সেই ট্র্যাজেডি মুক্তিসংগ্রামের মানবিক ও ঐতিহাসিক জটিলতার অংশ হতো। আরো ভাবাত।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৪
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×