somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখাপড়া করে তুই হবি দুষ্টু

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘‘শারীর, তুই এক্ষুণি রুম থেকে বের হয়ে যা’’

নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সহপাঠী শারীরকে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বললাম। সে মাহবুবাকে দেখে মৃদুমন্দভাবে শিস দিচ্ছিল। এখনো সে ক্লাস ফাইভে পড়ে। এমন বদমাশি ভাব। এক ধাক্কায় বের করে দিলাম ক্লাসরুম থেকে। ঠিক তখন রুমে ঢুকলেন আমাদের স্যার আবদুল খাইর। শারীর তাঁর প্রিয় ছাত্রদের একজন। স্যার তাকে বের করে দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমি উত্তরে বললাম, ‘‘স্যার, ছেলেটা খুউব দুষ্টু। তার স্বভাব-চরিত্র খুব বিগড়ে গেছে। ক্লাসের মেয়েদের দেখলে হাতে তালি ও মুখে সিটি বাজায়। এখন মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে, এই অবস্থা। সেকেন্ডারি সেকশানে গেলে কী করে আল্লাই মালুম।’’

আমার কথা শেষ হতে না হতেই স্যার যেন আমার কানে একটা মস্তবড় বোমা ফাটালেন, ‘‘এ তো শুধু সিটি বাজিয়েছে। তাতে আর তেমন কী হলো? তোমার কি জানা আছে, বহু স্কুলে এমন সব রচনা পড়ানো হয় যেগুলো নৈতিকতা ও চরিত্রকে গলা টিপে হত্যা করে। যেন শিক্ষকদের বলা হচ্ছে যে, আপনারা নিজেদের হাতেই বাচ্চাদেরকে নির্লজ্জ ও দুচ্চরিত্র বানিয়ে ছাড়ুন।”

-স্যার, তার মানে? এমন কী আর পড়ানো হয় যা শিশুদেরকে ....?

স্যার তাঁর বক্তব্য আরো স্পষ্ট করে বললেন, “যৌনচর্চা বিষয়ক কিছু রচনা পড়ানো হয় বিভিন্ন স্কুলে এবং তার জন্য শিক্ষকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ শিক্ষক নারী। তাও আবার অবিবাহিতা। তাদেরকে এমন সব বইপুস্তক পড়ানো হয় যেগুলো চরম অনৈতিক এবং শিশুদের চরিত্র হননকারী। আমরা তো সর্বদা সন্তানদেরকে ক্যাবলের দুর্প্রভাব থেকে দূরে রাখার কথা বলি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখন স্কুল থেকেও দূরে রাখার কথা বলতে হবে। না হলে সেই প্রবাদই সত্য প্রমাণিত হবে, “লেখা-পড়া করে তুই হবি দুষ্টু।”

‘‘এমন রচনা শিশুদের পড়ানোর উদ্দেশ্য কী, স্যার?’’ -আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

আবদুল খাইর স্যার বললেন, “আসলে এগুলি পশ্চিমা দেশগুলোর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। এসব ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য হলো আমাদের সমাজ যেন সুস্থ-সুন্দর শিক্ষা-সংস্কৃতি ভুলে তাদের রাঙানো সংস্কৃতিতে রঙিন হয়ে যায়।” কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্যার আবার বলতে লাগলেন, “আমার যদ্দুর মনে পড়ে, নব্বইয়ের পরের কথা হবে, নতুন নতুন যখন আমাদের পোস্টিং হলো বাতিঝলমলে নতুন শহরে, তখন আমাদেরকে পাঠানো হলো যৌথ প্রশিক্ষণের জন্য। আমাদের জন্য সেটা বড় বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল। কারণ, তখনো দেশের পরিবেশ এমন হয়ে ওঠেনি যে, নারী-পুরুষ একসঙ্গে বসে পড়বে অথবা প্রশিক্ষণ নেবে। প্রশিক্ষণে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল পাঁচশ টাকার দৈনিক ভাতা। সেই দিনে দৈনিক পাঁচশ টাকার ভাতা চাট্টিখানি কথা নয়।” নিজের মনোভাব ব্যক্ত করে আবদুল খাইর স্যার আমার অভিজ্ঞতাকে অনেকাংশে সমৃদ্ধ করলেন।
“আমাদেরকে প্রথম দিনই আদেশ দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক নারী-পুরুষ পরস্পর একেকজনকে জুড়ি বানিয়ে নেবে। প্রত্যেকে জুড়ির সঙ্গে বসবে। তারপর কোনো শিরোনাম দিয়ে বলা হত, প্রত্যেকে নিজের জুড়ি সঙ্গে এ-বিষয়ে মনভরে আলোচনা করুন। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদেরকে পরীক্ষাও দিত হয়েছিল। আমাদের ধারণা ছিল, পরস্পরের আলোচনার জন্য দেওয়া বিষয়সমূহ থেকেই প্রশ্ন আসবে। কিন্তু পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র দেখে আমরা, যারপর নেই, বিস্মিত।”

“প্রশ্নপত্রে কী দেওয়া হয়েছিল, স্যার?” -বিস্ময়ভরা কণ্ঠে আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
স্যার বললেন, “তেমন খারাপ বা দোষনীয় কোনো প্রশ্ন দেওয়া হয়নি। খুব সাদা-সিদে প্রশ্ন। তবে সব প্রশ্ন জুড়ি সম্পর্কে। যেমন, ধর :
১ প্র.- আপনার জুড়ির পছন্দসই রঙ কোনটি?
২ প্র.- আপনার জুড়ির প্রিয় জিনিসের নাম কী?
৩ প্র.- আপনি নিজের জুড়ির কী নাম রেখেছেন এবং কেন?
৪ প্র.- নিজের জুড়ির তিনটি ভালো ও তিনটি খারাপ অভ্যাসের কথা লিখুন।
৫ প্র.- আপনার জুড়ির সঙ্গে আপনার প্রেম হয়েছে কিনা, হলে কেন, না হলে কেন হয় নি?

এই ধরনের আরো কিছু প্রশ্ন। ব্যস, আর কিছু নয়, এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েই প্রশিক্ষণের এক পর্ব শেষ হলো।
আমি প্রশ্নকে আরেকটু বাড়িয়ে স্যারকে জিজ্ঞাসা করলাম, “স্যার, শিশুদের পড়ানোর সঙ্গে ওইসব প্রশিক্ষণের কী সম্পর্ক?”
স্যার বললেন, “বাবা, এ ব্যাপারে আমাদের শাসকরাই বেশি জানবেন। অথবা এ বিষয়ে মনভজানো তত্ত্ব দিতে পারবেন আমাদের শিক্ষা ও ধর্মমন্ত্রণালয়। এসব চরিত্রবিধ্বংসী কথা শিক্ষা দিয়ে শিক্ষকদের ভেতর তারা কী যোগ্যতা সৃষ্টি করতে চান, সেটা তারাই ভালো করে জানবেন।” স্যারের কণ্ঠে ক্ষোভঝাঁঝালো স্বর। স্যার আরো বললেন, “আমার এক বন্ধু সরকারি স্কুলের হেডমাস্টার। তার স্কুলেও ওই বই পড়ানো হত। গতকাল তার সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, যে-বই শিশুদের পড়ানোর হচ্ছিল, সেটি চরম অশ্লিলতাপূর্ণ। আমি সেটা পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি যখন আমাকে বইটি দেখালেন, তখন আমি সত্যি বিস্মিত হলাম। ভাবলাম, এ-বই তো বিবাহিত ব্যক্তিদের জন্য। শিশুদের সঙ্গে এ-বইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু, জানি না, কেন নিষ্পাপ শিশুদেরকে নষ্ট করার এসব হীন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে?”

এইটুকু বলে স্যার কাসে চলে গেলেন। আমি কিন্তু বরাবর শারীরের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে মনে ভাবছিলাম, এসব মাছুম বাচ্চাদের এমনসব বই পড়ানোর হলে, একটি জাতির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, তা আল্লাই মালুম। আমার ফের মনে পড়ে যায় প্রবাদটির কথা, “লেখা-পড়া করে তুই হবি দুষ্টু”।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×