somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ামার াজকের লেখা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য কী?
ফারজানা আলম
শেয়ার - মন্তব্য (0) - প্রিন্ট
অঅ-অ+
মুক্তিযুদ্ধের সময়টা কতটা ভয়াবহ ছিল সেটা আমরা কিছুটা অনুভব করতে পারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সিনেমাগুলো দেখে। ছোটবেলা থেকেই ওই সব সিনেমায় দেখেছি মানুষ মরে রাস্তায় পড়ে আছে, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে লোকজনের আহাজারি, আতঙ্ক, ছুটে বেড়ানো, সন্তান হারিয়ে মায়ের বুকফাটা কান্না, স্বামী হারিয়ে স্ত্রীর- এ ধরনের দৃশ্য দেখামাত্র না জানলেও বুঝতে পারতাম যুদ্ধের সিনেমা হচ্ছে। আর দেখতাম বিশেষ দিনগুলোতে টিভিতে এ ধরনের তথ্যচিত্র। যেমন- বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস।

একটু অবাক লাগে, আজকাল আমাদের স্বাধীন দেশের টিভি খুললে ওই একই দৃশ্য দেখতে পাই। ওই একইভাবে মানুষ মরে পড়ে আছে, গাড়ি পুড়ছে, দাউদাউ আগুন, অসহায় মানুষের আর্তনাদ! ভাঙচুর আর জ্বালাও-পোড়াওজাতীয় দৃশ্যগুলো যখন দেখি আরো অবাক লাগে, কেন এগুলো দেখতে সেই একাত্তরের যুদ্ধদৃশ্যের মতো! একাত্তরে যে অসহযোগ-অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করা হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়া; আমাদের একটি মহান উদ্দেশ্য ছিল, আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেরা নিজেদের স্বকীয়তা, স্বাধীনতা নিয়ে আলাদা হতে চেয়েছিলাম। আমরা লড়েছিলাম পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যাদের ভাষা পর্যন্ত আমাদের থেকে আলাদা, যাদের সঙ্গে আমাদের কখনো কোনো প্রাণের বন্ধন গড়ে ওঠেনি। কিন্তু আজ আমরা কাদের বিরুদ্ধে একইভাবে জ্বালাও-পোড়াও করছি! এটা তো আমাদের নিজের দেশ, স্বাধীন দেশ! এই দেশের প্রতিটি সম্পদ আমাদের নিজেদের সম্পদ। অনেক কষ্টের বিনিময়ে একটু একটু করে আমরা এই দেশ গড়েছি। আমরা কেন আমাদের সম্পদ নষ্ট করছি!

নিজের কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে সাধারণত নেশাগ্রস্তরা। আমরা কি তাহলে নেশাগ্রস্ত অসুস্থ কোনো জাতি? তা কেন হবে? নিতান্ত ক্ষুদ্র একটি জাতি হয়েও আমরা কত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একটা জাতি ছিলাম! আমাদের ছেলেরা রাতের অন্ধকারে কাউকে না বলে ঘর ছেড়েছিল দেশ স্বাধীন করার জন্য! আমরা কী করে সেই স্বাধীন করা দেশের জানমালের এত ক্ষতি করছি! আমরা একসময় অত্যাচারী পাকিস্তানিদের গুলি করে মেরেছিলাম বাঁচার জন্য! আজ কী করে আমরা আমাদের নিজের দেশের নিরীহ মানুষদের পুড়িয়ে মারছি! এই দৃশ্য কি দেখা যায়! এই দৃশ্য কি সহ্য করা সম্ভব!

রাজনীতি মানে রাজাদের নীতি। রাজা সব সময়ই বড়, উদার। নেতা বলতে বরাবর বুঝে এসেছি যাঁর কাছে ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে মানুষের স্বার্থ বড়, দেশ বড়। এখন যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, তার সঙ্গে যে সহিংসতা, এর সঙ্গে কি সত্যি কোনো রাজনৈতিক নেতার সম্পর্ক আছে? আমার কেন জানি বিশ্বাস হয় না। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে মানুষ পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়, নেতাদের পক্ষে তো আরো সম্ভব নয়। তাঁরা তো দেশের মানুষের প্রতিনিধি, জনগণের কল্যাণে তাঁরা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন! তাঁদের পক্ষে এমন ভয়ংকর কাজের সঙ্গে জড়িত থাকা অসম্ভব! আমি অন্তত বিশ্বাস করি না!

কিন্তু এসব তো ঘটছে! বলা যায়, প্রতিদিন ঘটছে! তাহলে কারা করছে এসব কাজ!

আমার কেন জানি মনে হয়, মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো কাজ অল্পসংখ্যক কিছু লোক করে, যারা করে তারাই সব সময় করে, সব দলের হয়ে করে। তারা আলাদা একটা গোষ্ঠী, আলাদা একটি চক্র! মানুষের মতো দেখতে হলেও ঠিক মানুষ নয় তারা! মানুষে মানুষ মারতে পারে না। মানুষের পরিবার থাকে, সংসার থাকে, শিশু থাকে- মানুষের পক্ষে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারা সম্ভব না।

একটি ব্যাপার খুবই হতাশাজনক। পৃথিবী এত এগিয়ে গেছে, এমনকি আমাদের দেশও এত এগিয়ে গেছে; কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও আমরা হার মানিয়েছি। আমাদের দেশে বিরোধী দলের যেকোনো দাবি-দাওয়া আদায়ের অস্ত্র হলো সাধারণ মানুষ। দাবি যত জোরালো হত্যা তত বেশি, তত নৃশংস! সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সবচেয়ে মোক্ষম উপায় জ্বালাও-পোড়াও! যত জ্বালানো তত শক্তি প্রদর্শন, তত নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা! ছোট একটি দেশ অল্প সময়ে এত এগিয়ে গেছে; কিন্তু এখনো কি রাজনীতির কৌশলে কোনো পরিবর্তন আনতে পারল না! এই ব্যর্থতা কার! বিরোধী দলের লক্ষ্য কেন সব সময় নিরীহ জনগণ! কোন অপরাধে আমরা এত ঝুঁকির মুখে জীবন কাটাব! এই যে মানুষ পুড়ে যাচ্ছে, ঝরে যাচ্ছে, এর দায় কে নেবে! কখনো কি কেউ নিয়েছে? যারা বিনা দোষে রাস্তাঘাটে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মরেছে, তাদের পরিবারের পরে কী হয়েছে, কিভাবে বেঁচে আছে, আদৌ বেঁচে আছে কি না- এই খবর কেউ নেয়নি। কেউ নেবে না। কারণ তাদের সংখ্যা অনেক বড়। এত বড় দায় নেওয়ার ক্ষমতা কোনো দলের নেই!

আচ্ছা, একবার যদি এভাবে ভাবি, এই হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতায় আসা। ক্ষমতায় আসতে চাওয়া কোনো অপরাধ নয়। মানুষের জন্য সত্যি কিছু করতে হলে হাতে ক্ষমতা থাকতে হয়। ক্ষমতায় আসতে হলে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন, জনপ্রিয়তা প্রয়োজন। আমাদের রাজনীতিবিদরা একটা সরল সত্য বোঝেন না। তা হলো, জ্বালাও-পোড়াও, বিপ্লব-বিদ্রোহ ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়া ছাড়াও ক্ষমতায় আসার আরো সহজ একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। মানুষের মন জয় করে ক্ষমতায় আসা। এই ছোট দরিদ্র দেশে মানুষের মন জয় করা খুব সহজ। এ দেশের মানুষ এখনো বেশ নিরীহ, তারা উদারতা পছন্দ করে, তারা সহিংসতা পছন্দ করে না। তারা পরচর্চা বা পরনিন্দা নয়; বরং ভালো কথা শুনতে পছন্দ করে, ভালো কাজ তারা মনে রাখে। কাজেই রাজনীতি যে দলের হয়েই করা হোক না কেন, মানুষের জন্য দরদ থাকলে মানুষ বোঝে, মনে রাখে। এ দেশে রাজনীতি করতে চাইলে সুপারম্যান হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, সাধারণ মানুষের মনে মানুষের জন্য যেটুকু সহানুভূতি ও মমতা থাকে ততটুকু থাকলেই যথেষ্ট। আমরা অনেক অল্পে খুশি। আমরা সরকারি ভাতা চাই না, সাহায্য চাই না; আমরা দিন এনে দিন খাই, পরিশ্রম করে উপার্জন করি। আমাদের শুধু নিজেদের নিরাপত্তা দিলেই আমরা খুশি। নিজেদের মতো কাজ করব, চাকরিবাকরি করব, লেখাপড়া করব, সময়মতো নিরাপদে বাড়ি ফিরব- আমার মনে হয়, দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ এখন শুধু এই-ই চায়। অপমৃত্যুর আতঙ্ক থেকে মুক্তি চায়। শুধু এই নিশ্চয়তা দিয়ে দেখা হোক, দেশ নিজের গতিতেই নিজে এগিয়ে যাবে। কারো সাহায্যের প্রয়োজন হবে না।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইউরোপিয়ান

ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ



- See more at: Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×