১। তেলের দাম বাড়লে কৃষি এবং শিল্প উৎপাদন ব্যয় বহুল হয়ে পড়ে, আদতে প্রায় প্রত্যেকটি পন্য মূল্য বাড়তে থাকে তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে।
২। তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে গন পরিবহন, ব্যক্তি, কৃষি এবং শিল্প ট্রান্সপোর্টেশন খরচ সরাসরি বাড়ে। পরিবহন সেক্টরের লোকজন সব সরকারেরই ঘরের লোকজন, সরকার চাইলে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে পারে অবশ্যই। তেলের দাম তো কখনই কমে নি, তাদের উপর ভাড়া না কমানোর একতরফা দোষ ও দেয়া যাচ্ছে না!
ব্যাপক কানেক্টিভিটির গন পরিবহন (প্রথমে মেট্রো কিংবা আধুনিক মেট্রো ট্রাম তার পর বি আর টি ) ডিজাইন এ ঢাকার প্রায় সবগুলো ব্যস্ত রুটকে কানেক্ট করা গেলে প্রাইভেট বাস মালিকদের দৌরাত্ব (অকারণ ভাড়া বৃদ্ধি, স্বেচ্ছাচারী পরিবহন পরিচালনা, মানহীনতা, তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে লাগাম হীন ভাড়া বাড়ানো) থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। প্রাইভেট বাস আসলে গন পরিবহন নয়। শুধু মাত্র একটি মেট্রো লাইন করে বিশেষ কোন উপকার হবে বলে মনে হচ্ছে না, জাইকার প্রস্তাবিত ৮ টি মেট্রো লাইনের সবগুলোই এখন বাস্তবায়ন শুরু করা দরকার। মেট্রো লাইনের ডিজাইন ফেইজ এ রাজউকের পরিবহন সমীক্ষা এবং ফিউচার গ্রোথ এর রিপোর্ট আমলে নেয়া দরকার, যেখানে উনারা বলেছেন "আগামী ২০ বছরে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ৬৪ শতাংশ বাড়বে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে যানবাহনের চাহিদা ও সংখ্যা। নানা কাজে নগরবাসীর দৈনিক যাতায়াত (ট্রিপ) প্রায় ৭১ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু গণপরিবহন ব্যবস্থায় নজর না দেয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতা বাড়বে। ফলে তখন ঢাকার যানজটের তীব্রতা হবে দ্বিগুণ এবং যানবাহনের গতি অর্ধেকে নেমে আসবে।" "সমীক্ষার তথ্যমতে, ঢাকার জনসংখ্যা বর্তমানে ১ কোটি ৫৯ লাখ। ২০৩৫ সালে এ শহরের জনসংখ্যা হবে ২ কোটি ৬০ লাখ। মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়বে। বর্তমানে ঢাকায় মোট যানবাহনের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০। ২০৩৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৯ লাখ ১৯ হাজারে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি থাকবে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০। বর্তমানে এ ধরনের যানবাহন রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ১৫০টি।"
৪। বি পি সি একক ভাবে মোনপলি ব্যবসা করে, তাদের প্রতিযোগী নেই, তাদের বিপননে টাকা খরচ নাই। বাংলাদেশে তেলের দামের উপর কার্বন এমিশন ট্যাক্স নেই, নেই উচ্চ ভ্যাট। কিন্তু তার পরেও তারা নাকি লস করে, এর কারন অতি দুর্নীতি।
সময় হয়েছে বি পি সি র একক ব্যবসায় প্রাইভেট প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা, আমরা দেখতে চাই বি বি সি কি পরিমান দুর্নিতি করছে।
৫। বাংলাদেশ ক্রুড ওয়েল কিনে থাকে, আমাদের নিজস্ব রিফাইনারি রয়েছে, মিডল ইস্ট থেকে আমরা বেশ ভালো ডিস্কাউন্ট পাই ক্রুড ওয়েল ক্রয়ে। বিশেষ করে কুয়েত এবং সৌদি আরব থেকে। ধারনা করা হয় গালফ ওয়ার এর পর বাংলাদেশের মাইন সুইপ এবং রি কন্সট্রাকশন সহযোগিতার কারনে উভয় দেশ এই সুবিধা দিয়ে আসছে।
৬। ডিজেলে ভর্তুকির একটা মিথ্যা মিথ চালূ আছে বর্তমানে। এই ভর্তুকি আসলে ডিলার এবং ডিস্ট্রিবুশনের লোক জনের দুর্নিতি কে এক্সটেন্ড করছে। তথাকথিত ভর্তুকির পরে যে দামে ডীজেল সেল করা হয় তা উৎপাদন এবং ট্রান্সপোর্টেশন মূল্য থেকে অনেক বেশি। ভর্তুকি ছাড়াই ডিজেলের দাম এর চেয়ে কম হবার কথা! (অতীতে ভর্তুকি ছিল। দুর্নিতি কম থাকায় সেই ভর্তুকি কিছুটা কাজে এসেছে কৃষকের। সেই সাথে ডিজেল এবং কেরোসিন সীমান্তের ওপাড়ে পাচারও হোত।)
আমরা চাই ভর্তুকি বাদ দিয়ে কৃষকের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হোক।
কথা হচ্ছে নিজের আয় বাড়ানোর জন্য তেলের দাম একটা সরকার বেশি নিতেই পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে এই দামে রাজস্ব খাতে কি পরিমান জমা হচ্চে আর কি পরিমান দুর্নীতি লূটপাট হচ্ছে সেটা পাবলিকলি বলতে হবে।
উপরন্তু কার্বন এমিশন রোধ এবং বায়ূ দূষণ রোধে সরকারের ভূমিকা কি, এসব অনালোচিত রেখে বছর বছর তেলের দাম বাড়ানো যায় না, আন্তর্জাতিক তেলের বাজার খুবই নিন্ম মুখী, অ্যামেরিকা ফুয়েল প্রডাকশনে যাবার ফলে আগামী এক দশকে তেলের দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই!
পাওয়ার এন্ড এনার্জি সেক্টরে ইনফাস্ট্রাকচার এবং উৎপাদন সমস্যার দীর্ঘ ভুক্তভোগী বাংলাদেশ কি তেলের দামের এই অধোগতিকে নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হবে?