স্বদেশী আন্দোলনের দেশে "দেশী পণ্য কিনে হই ধন্য" এই স্লোগান বিপ্লবে রুপ নিতে পারেনি। কেন? -এই নিয়ে আলোচনাও সমাজে নেই। দেদারসে চলছে আমদানি। মানসম্পন্ন, মানহীন বস্তাপচা কোন বালাই নেই, উদ্যোক্তা - ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছেন বিদেশী পণ্যের ট্রেডিং করে অন্যের বাজার গড়তে নিজেদের বুদ্ধি বিবেক সপে দিচ্ছে। হ্যাঁ ব্যাক্তির দোষ দিয়ে লাভ নেই, সবাই কর্মসংস্থান খুঁজছেন। রুটি রুজির ব্যবস্থায় করছেন।
কিন্তু রাষ্ট্র, সরকার এবং প্রতিষ্ঠান গুলো?
আমাদের হীন বিদেশী পণ্য ক্রয় এবং বিদেশ ভোগ এর নির্লজ্জ মানুশিকতার প্রতীক হয়ে বছর বছর বাড়ছে ইম্পোর্ট বিল। আমাদের রাষ্ট্রের নিজস্ব পণ্য ব্যবস্থাপনার অবহেলা এবং স্ট্রেটেজিক অক্ষমতা প্রকাশ করে দেশের বাজার গুলো ভরে গেছে বিদেশী পন্যে। শুহুরে চেইন শপ গুলোতে চাল ঢাল সহ এমন কোন ক্যাটাগরি নেই, যেখানে বিদেশী পণ্যের আধিপত্য নেই।
এরই মাঝে নিরবে আসে যায় একেকটি "বিজয়ের মাস"! আহা! অর্থনৈতিক বিজয় যে আমাদের সূদুর পরাহত!
দেশের পণ্য মান খারাপ তাই সহজাত ভাবেই মানুষ বাইরের পণ্য কিনতে চায়- এটা স্বাভাবিক হতে পারে। দেশের পণ্য খারাপ এটাতো জেনারেলাইজড না, অনেক অনেক ভালো পণ্য আছে আমাদের, সেসব পণ্য ধুঁকছে! কাপড়েই উদাহরন, রেডিমেইড কাপড়ের বাজার ভারত (লেডিস), থাইল্যান্ড (চাইল্ড) আর চায়নার (জেনারেল) দখলে, যেখানে আমরা রেডিমেইড কাপড়ের ইউরোপীয় আমেরিকান বাজারে নেতৃস্থানীয়।
লোকাল পণ্যের বাজার এঙ্কারেজ করতে কি করা যায় তা নিয়ে ভাবছিলাম, করার খাতায় অনেক কিছুই আছে!
০১। বি এস টি আই এবং সমজাতীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর কার্জকরিতা ইম্প্রুভ করা দরকার, এগুলাকেই উচ্চ মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন নেয়ার টার্গেট দেয়া দরকার। ধরেন ২-৩ বছরের টার্গেট দিয়ে আইএসও (ইউ কে এস ইত্যাদি বহু আছে) এর সম মানের পরিচালনা সক্ষমতা না আনতে পারলে বি এস টি আই পরিচালনা বাজেট ৫০% কমিয়ে দেয়া হবে, বি এস টি আই বেসরকারি করন করা হবে, এই ধরনের কঠিন কোয়ালিটি টার্গেট দিতে হবে।
০২। দেশের সব রেজিস্টার্ড পণ্যের মান বি এস টি আই এর পাশাপাশি মানসম্পন্ন বিদেশী কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন কোম্পানীর মাধ্যমে র্যাংকিং করা, এতে কোন পণ্যের মান কতটা তা বেরিয়ে আসবে। এই সমীক্ষা সব দেশী কোম্পানী মিলে স্পন্সর করবে।
এখানে দেশি কোম্পানীদের ফেবার দেয়া যায়। প্রথম সমীক্ষার রেজাল্ট পাবলিক করা হবে না। খারাপ পণ্য ধরে ধরে কোয়ালিটি রিপোর্ট সহ টার্গেট ৬ মাসের দেয়া হবে। তার পর ২য় সমীক্ষা করা হবে। সেই রেজাল্ট এ ব্যাপক ইম্প্রুভমেট টার্গেট নেয়া হবে। ফেইল্ড কোম্পানীর পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। উদাহরন, প্রাণের আম ( কুমড়া) জুস। প্রাণকে একচুয়াল ইন গ্রেডিয়েন্ট রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে ৬ মাসের টার্গেট দিয়ে পণ্য ইম্প্রুভ করতে বলা হবে, না করলে সোজা ব্যান এবং ব্যাপক আর্থিক জরিমানার ভয়!
০৩। গ্লোবাইলেজেশন, ফ্রি ট্রেড, মুক্ত বাজার এইসব ধুন ফুন কন্সেপ্ট সরকারের মাথা থেকে সরাতে হবে। শুধু অক্ষম দেশ গুলাই তার দেশে সকল পণ্যের প্রবেশ উন্মুক্ত করে রেখেছে। সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যের স্ট্রেংথ বের করে এনে, স্ট্রং পণ্যের বিপরীতে বিদেশী পন্যে অতি শুল্ক বসাবে, ২০০-৩০০% শুল্ক বসাতে হয়ত পারবে না। কিন্তু আন স্ট্রাকচারড ওয়েতে দলাক অনেক কিছু করা যাবে, সেসব পণ্যের এল সি নিতে ব্যাংক অনাগ্রহ দেখাবে, প্রেসেসিং টাইম ১ সপ্তাহের যায়গায় ৬ মাস করবে, যখন ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ফান্ড দীর্ঘ সময় আটকে থাকবে তখন তারা এগুলার বিকল্প ভাব্বে, ঠিক তখনই স্ট্রং দেশী পণ্যের সরকারি বেসরকারি প্রমোশন চলবে। আরো অনেক প্যাসিভ ব্যাপার আছে, বন্দরে পণ্য খালাসে আন ইন্টারেস্টেড পণ্যের লীড টাইম বাড়িয়ে দেয়া যায়, আরো অনেক কিছু!
ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক প্রিপারেশন চলবে, লোকে সেসব জানবে না, লোকে শুধু জানবে দেশের ঐ ঐ পণ্য গুনগত মানে ভাল, ঐ ঐ পণ্য সার্টিফিকেশন এ উত্তীর্ন।
০৪। ফেস্টিভ্যাল প্রমোশন এর ব্যবস্থাঃ ২ ঈদে ৩-৪ সপ্তাহের ডিউরেশনে দেশী পণ্যের ভ্যাট পুরাপুরি সরিয়ে নিয়ে দেশী পণ্যের দাম কমিয়ে ফেলা হবে।
০৫। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের দেশি কোম্পানীর প্ল্যান্ট ভিজিট এর আয়োজন করাতে হবে প্রতি বছর, এতে কোম্পানি গুলোর আধুনিক প্ল্যান্ট দেখে তারা পণ্য ক্রয়ে উৎসাহী হবে। এখানে তাদেরকে আপ্যায়ন করানো হবে, কিছু সামান্য গিফট দেয়া হবে। স্টুডেন্ট রা বাড়ি এসে অবিভাবকদের গল্প করবে।
০৬। সরকারকে প্রমিজিং কোম্পনির কাছে যেতে হবে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে কোন খাত, কোন পণ্য ডেভেলপ করতে তাদের কি ধরনের সহায়তা দরকার। এখানে ধমকও দিতে হবে, সাহায্যও করতে হবে।
০৭। পণ্য দাম কমিয়ে মান বাড়াতে হলে, ট্রিমেন্ডস ট্রান্সপোর্টেশন অবকাঠামো লাগবে, যানজট মুক্ত হাইওয়ে এবং শহর গড়তে হবে
০৮। পণ্য দাম কমিয়ে মান বাড়াতে হলে, জ্বালানি তেলে দাম কমাতে হবে, বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে, নিরবিচ্ছিন্ন সরবারহ নিশ্চিত করতে হবে।
০৯। পণ্য দাম কমিয়ে মান বাড়াতে হলে, শিল্পকে চাঁদাবাজি মুক্ত করতে হবে।
দেশে মানসম্পন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি, তাই শিল্প আমদানি নির্ভর, এটা বুঝার জন্য পড়ালেখা না করলেও চলে। দেশীয় পন্যকে এঙ্কারেজ করার জন্য আমাদের মেলা কাজ করা বাকি।
ব্যক্তি ভোগবাদী। সমাজ বস্তুবাদী।
দেশাত্ববোধ তৈরির শর্টকাট কোন উপায় নাই।
অনুপ্রেরণাঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/arjansoul/30090332
কান্ডারি অথর্ব ব্লগের "বার্মিজ মার্কেট নয় চাই দেশীয় পণ্যের সমাহার" পোস্টে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫০