somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

ভূমিকম্প প্রস্তুতির​ কারিগরি​ ও প্রশাসনিক দিক সমূহ!​

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(​বাংলাদেশের ২টি প্রধান ​ফল্ট জোন এবং আন্ত জোন জিপিএস ভেলসিটি ডিরেকশন)। বাংলাদেশে ভুমিকম্প ঝুঁকির মূল কারণ গুলোর মধ্যে মোটা দাগে রয়েছে- ইউরেশিয়ান প্লেটের দিকে ইন্ডিয়ান প্লেটের​ তুলনামূলক বেশি গতির সঞ্চালন​ (বছরপ্রতি​ ​৬ সেমি)। প্লেট​দ্বয়ের মাঝে অবস্থিত​​ ডাউকি ফল্টে জমা হওয়া শক্তি​ বিগত প্রায় শত বছরে শক্তিশালী ভূকম্প দ্বারা রিলিজ না হওয়ায় গড়ে উঠেছে প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকি। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান প্লেটের দিকে বার্মিজ প্লেটের এগিয়ে আসা এবং ইন্ডো-বার্মা রেঞ্জে সম্প্রতি আবিষ্কৃত মেগা থ্রাস্ট যা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি পূর্ন শহর ঢাকার মাত্র ৬০ মাইল অদূরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তর এবং পুর্বের ২ ফল্ট জোনকে কেন্দ্র করে ২টি বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকির উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।

জুলাই ২০১৬ তে প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার জিওসায়েন্স আট জন বিজ্ঞানীর গবেষণা প্রতিবেদন "Locked and loading megathrust linked to active subduction beneath the Indo-Burman Ranges" প্রকাশ করেছে যেখানে​ ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থা​নের কারনে দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে​ বলা হয়েছে এবং গঙ্গা-ব্রম্মাপুত্র ডেল্টার দিকে ধেয়ে আসা ইন্দো-বার্মা রেঞ্জের ফল্ট বেল্টেমেগা থ্রাস্টের অস্তিত্বেরকথা ব্যাখ্যা করেছেন।(উল্লেখ্য বিজ্ঞানীদলে রয়েছেন বাংলাদেশী গবেষক অধ্যাপক সৈয়্দ হুমায়ুন আখতার​ এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আর্থ অবজারভেটরি)।

কিন্তু এতদসত্ত্বেও​ ​মেগা ভূমিকম্প পরবর্তি (অবকাঠামো-যোগাযোগ-প্রাণ-মানবিক) বিপর্যয় সামাল দিতে বাংলাদেশ কারিগরি দিক থেকে কতটা প্রস্তুত? প্রশাসনিক দিক থেকে বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের​ পরবর্তি ব্যবস্থাপনার​ জন্য কতটা​ তৈরি​ সেটা নিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশদ আলোচনা হচ্চে না। দৃশ্যত বাংলাদেশের প্রশাসন ভূকম্প প্রস্তুতি নিয়ে তথ্য প্রকাশ করতে বিব্রত বোধ করে।​ ​​​বাংলাদেশে ভূমিকম্প প্রস্তুতির প্রাথমিক ধাপে দেখা গিয়েছে কিছু অতি সাধারণ তথ্য প্রচার কেন্দ্রিক জনসচেতনতা কার্যক্রম যেখানে ভূকম্পে নাগরিকের করণীয় নিয়ে নির্দেশনা থাকতো।​ ​ভূমিকম্পের​ প্রস্তুতি কি এর প্রশাসনিক জিজ্ঞসা শুধু মাত্র ভলান্টিয়ার ট্রেনিং এ সীমাবদ্ধ থাকায় প্রতীয়মান হচ্ছে এই ধরণের বিশদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে বৈশ্বিক মানের সমসাময়িক জ্ঞান সঞ্চারণ ও সন্নিবেশ প্রয়োজন তার অভাব প্রকট।​ বাংলাদেশ এধরনের ভয়াবহ দুর্যোগে আধুনিক কারিগরি দিক থেকে কতটা পিছিয়ে এবং এতদসংক্রান্ত ব্যাপারে প্রস্তুতি নিবার কি কি স্কোপ আছে সেই আলোচনা টানাই এই লিখার মূল প্রয়াস। ​
​​

​​ভূমিকম্প প্রস্তুতির​ কারিগরি​ দিক সমূহ!​

​​
১। এলার্ট সিস্টেমঃ

সবগুলো মোবাইল টেলিকম অপারেটর সমন্বয়ে একটি দুর্যোগ এলার্ট সিস্টেম (ইন্টিগ্রেটেড এস এম এস সেন্টারও হতে পারে) দরকার যা থেকে ইমিডিয়েট আর্থ কোয়েক বা অন্য ইমার্জেন্সি এলার্ট ম্যাসেজ পাঠানো হবে যাতে নাগরিকরা যে যেখানেই থাকুন না কেন সাথে সাথেই ইনফরমড হতে পারেন।

সমন্বিত এলার্ট সেন্টার থেকে ২জি/৩জি/৪জি সার্ভিস গুলোর সেল ব্রডকাস্ট করেও প্রায়োরিটি ভিত্তিতে বাংলাদেশের সকল মোবাইল অপারেটরের সকল সচল জিএসএম বা ইউটির‍্যান সেলে এলার্টিং সিস্টেম প্রয়োগ করা যায় যা আরো বেশি কার্যকর, তবে অপারেটর গুলোর শত ভাগ সেলে ইমার্জেন্সি সেল ব্রডকাস্ট সার্ভিস ক্যাপাবিলিটি - লাইসেন্স-কনফিগারেশন ইত্যাদি ভেরিফাই করে নিতে হবে, ট্রায়াল -পাইলট করে এবং সময়ে সময়ে ড্রিল করে বিপদের জন্য রেডি থাকতে হবে। এই ব্যবস্থা গার্মেন্টসে ভবন ধ্বস কিংবা বহুতল ভাবনে অগ্নি সংযোগেও বিশেষ এলাকায় কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করা যাবে।


২। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার​ অটোমেশনঃ ​


ঢাকার ​নাগরিকেরা অনেকটা ​সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বাস করছে। মাকড়সার জালের মতো​ ভূগর্ভস্থ​ গ্যাস লাইনে আচ্ছাদিত ​শহরের সকল রাস্তা অলি-গলি​। শক্তিশালী ভূমিকম্প ​হয়ে​ গ্যাস লাইনগুলো ফেটে​ যেতে পারে। ক্ষতি গ্রস্ত হতে পারে ভূগর্ভস্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের হাই ভোল্টেজ লাইন গুলো। ভূমিকম্পে বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়ে​,​ বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে স্ফুলিঙ্গ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘট​তে পারে। সেই অবস্থায় উপরে আগুন, নিচে দাহ্য গ্যাস​-​ দুইয়ে মিলে ঢাকা এক অগ্নিকূপে রূপ ​নিবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের প্রধান প্রধান পয়েন্ট গুলোতে কন্ট্রোল সিস্টেম বসাতে হবে যাতে শক্তিশালী ভূকম্পন সাপেক্ষে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ​ কিংবা একেবারেই প্রবাহ বন্ধ করে যায়। এখানে বিভিন্ন​ এলার্ট জেনারেশন​ এলগোরিদম থাকবে যাতে ফলস এলার্ট তৈরি না হয়​। অটোমেশন একেবারেই না​ করা গেলে যাতে অন্তত ম্যানুয়াল ভাবেও​ সঠিক সময়ে সঠিক এলাকার​ প্র​​বাহ বন্ধ করা যায় তার জন্য সঠিক পয়েন্ট অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা করে রাখা চাই।

​৩। বহুমূখী যোগাযোগঃ
ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য কর্মী, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সহ সকল সেবা খাতে নিয়োজিত কর্মীগণ, পুলিশ-আনসার, সেনা নৌ এবং বিমান এই তিন বাহিনীর সদস্য সাথে হাসপাতাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক লোকজন (এবং উচ্চ পার্যায়ের মনিটরিং সেল সহ) সকল পেশার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং তাঁদের ব্যাকআপ রিসোর্স পরিকল্পনা, কমিউনিকেশন চ্যানেল, ব্যক্তির অবস্থান এবং দায়িত্ব নির্নয়, আন্তঃযোগাযোগ এর সঠিক কাঠামো ম্যাট্রিক্ষ আগেই ডিফাইন্ড থাকা চাই। চাই ল্যান্ড ফোন কিংবা মোবাইল ফোন অথবা সেবা খাতের নিজস্ব ইমার্জেন্সি কমিউনিকেশন ব্যবস্থা ডিফাইন্ড করে রাখা। এছাড়া তৈরি করে রাখতে হবে বিভিন্ন পেশার এক্সপারটিজ ডেটাবেইজ, রিডান্ড্যান্ট হিউম্যান এক্সপার্ট রিসোর্স ব্যাকআপ, দুর্যোগ কালীন এভেইলেবিলিটি ও ও​​য়ার্ক রোস্টার ম্যাট্রিক্স।

ল্যান্ড ফোন যোগাযোগ সাধারণ ভূমিকম্প পরবর্তি সেবা খাতের কর্মীদের যোগাযোগে জন্য বিশেষ উপযোগী, তবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার অতি সীমিত। মোবাইল টেলিকমে সেবা খাতের কর্মীদের সীমে বিশেষ এক্সেস ক্লাস ডিফাইন করা থাকলে তারা সাধারণ কিংবা কমার্শিয়াল প্রিমিয়াম গ্রাহক থেকেও উচ্চ প্রায়োরিটি পেয়ে থাকেন। ফলে ভূকম্প পরবর্তি সময়ে এক্সেস নেটোয়ার্ক বিজি থাকলেও সেই সীম গুলো অন্য গ্রাহকদের সরিয়ে (প্রি-এম্পশন) নিজেরা কল সেটআপ করে নেয়, এতে সেবা খাতের কর্মীদের আন্তঃ এবং অন্তঃ যোগাযোগ বিঘ্নিত হয় না। ​ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস সীম প্রভিশনিং এর বাইরেও আছে স্টান্ডার্ড টেলিকম কোয়ালিটি অফ সার্ভিস, যা ইমপ্লিমেন্টেড থাকলে মোবাইল নেটোয়ের্কে সকল ইমার্জেন্সি নম্বর উচ্চ এটেনশন এবং রিলোকেশন প্রায়োরিটি পেয়ে থাকে এবং যে কোন ব্যস্ত নেটওয়ার্কেও (দুর্যোগ কালীন) সেবা কর্মীদের কল সেটআপ করিয়ে দিবে অন্যদের সরিয়ে।

এর বাইরে ইমার্জেন্সি নম্বর ১১২ বা ১১৯ এর মত সেবা গুলো স্টান্ডার্ড মোবাইল নেটোয়ার্কে "এস ও এস" সেবা হিসেবে ডিফাইন্ড থাকা চাই, যাতে সেবা খাতের কর্মী এবং নাগরিক​ (ধরুন ভবন ধ্বসের স্তূপের ভিতরে আটকে পড়া কেউ যার প্রাণ সংকটাপন্ন)​ উভয়েই এস ও এস বার্তা পাঠাতে পারেন। বিটিআরসি কে ১১২/১১৯ কল সেন্টার সেটআপ, সেখানে সকল ইউটিলিটি ও সেবা খাতের সংযোগ ও সমন্বয় নিয়ে বাংলাদেশের ফিক্সড এবং মোবাইল অপারেটর সাথে কাজ করতে হবে, এইসব খুবই পুরানো টেকনোলজি। এই কল সেন্টারে সেবা দানকারী ইন্তারফেইস হিসেবে সরাসরি থাকবে ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য কর্মী, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সহ সকল সেবা খাতে নিয়োজিত কর্মীগণ, পুলিশ-আনসার, সেনা নৌ এবং বিমান এই তিন বাহিনীর সদস্য, হাসপাতাল প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক লোকজন। এই কল সেন্টারের প্রবলেম এস্কালেশন ম্যাট্রিক্স, এস্কালেশন এক্সটেনশন এবং এস্কালেশন ম্যানেজার আগেই ডিফাইন্ড করে রাখতে হবে, আসলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ছাড়াও স্বাভাবিক সময়েই এই ধরণের ইমার্জেন্সি সাপোর্ট সেন্টার বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে। বাংলাদেশে কেন তা গড়ে উঠেনি না নিয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে এই বোধ জাগ্রত করে এই কাজটি দ্রুত সম্পাদন এবং নাগরিক সেবাদান শুরু করা আশু বাঞ্চনীয়। ​​ ​ ​

তবে বড় মাত্রার ভূমিধ্বস হলে সেখানে ফিক্সড লাইনের এবং টেলিকমের অপটিক ফাইবার নেটোয়ার্কের একটি বৃহৎ অংশ অকেজো হবার আশংকা থেকে যায়। মোবাইল অপারেটরদের এমপিএলএস বা এমপিবিএন ব্যাকবোনে যেহেতু রিং ফাইবার থাকে তাই সম্পুর্ণ নেটোয়ার্ক ব্ল্যাক আউট হওয়া আমূলক, তবে পুলিশ এবং সেনা বাহিনীর নিজস্ব ওয়াকি-টকি লাইন গুলো সচল থাকার সম্ভাবনা যেহেতু খুবই বেশি তাই অতি দুর্যোগ পূর্ণ সময়ে এই সার্ভিসে ফায়ার সার্ভিসের গুরুত্বপূর্ন কিছু কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করার বন্দোবস্ত রাখা বিবেচনার দাবি রাখে।

তবে অতি বড় আকারের ভূমি ধ্বস,ম্যাসিভ পাওয়ার ব্ল্যাক আউট, অগ্নি কান্ড কিংবা উচ্চ সংখ্যক বিল্ডীং ধ্বসের ঘটনা ঘটলে মোবাইল আপারেটর সেবা একেবারেই বিঘ্নিত হতে পারে। ঢাকায় হাতে গুনা কিছু টাওয়ারে বিভিন্ন অপারেটরের কোর নেটওয়ার্ক ইনফাস্ট্রাকচার রয়েছে তাও কিছু বিল্ডিং এ একাধিক অপারেটরের ডেটা সেন্টার বিদ্যমান। সেক্ষেত্রে টেলকম ভেন্ডর গুলোর পোর্টেবল অল ইন ওয়ান ইমার্জেন্সি নেটয়ার্ক বিল্ড আপ ইকুইপমেন্ট রয়েছে, বিটিআরসি টেলকম নেটয়ার্ক জায়ান্ট এরিকসন কিংবা হুয়াওয়ের সাথে এই নিয়ে ট্রায়াল দিতে পারে। উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্রিটিশ অপারেটর ভোডাফোন হাইতি ভুমিকম্প পরবর্তি সময়ে এই ধরণের ইমারজেন্সি নেটোয়ার্ক পাইলট করেছে সফলভাবে।

এই​ কারিগরি​ জ্ঞান গুলো বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি আথোরিটি বিটিআরসি কে আয়ত্বে আনতে হবে এবং দুর্যোগ কালীন সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশাসন এবং সেবা খাতের কর্মীদের কাজ নিরবিচ্ছিন্ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

​​
​৪​। যন্ত্রঃ ​​​টুলস​ মেশিনারি, ক্যাপাসিটি, মেশিনারি​ ডেটাবেইজ​, ​​মেশিন টুলস পজিশনিং ট্র্যাকিং ​

​​​একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট রিসার্চার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে হেভি মেশিনারিজ কিনার ঝোঁক রয়েছে। ( বোধ করি এখানে হেভি কমিশন ও হেভি দুর্নিতীর যোগ থাকা খুব স্বাভাবিক)। কিন্তু ভূমিকম্প পরবর্তি ইমিডিয়েট গোল্ডেন আওয়ার্স (২৪ ঘন্টা) এর মধ্যে যখন অধিকাংশ আটকে পড়া মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায় থাকবে, সে সময়ে ঢাকার মত শহরে যেখানে ফ্রি স্পেইস একেবারেই নেই সেখানে হেভি মেশিনারি গুলো মুভ করা, হেভি মেশিনারির জন্য অপারেটিং স্পেইস তৈরি, কন্সট্রাকশন, অন্যান্য সলিড এবং সেমি লিকুইড সুয়ারেজ ডেব্রি রাখার বা সরানোর স্পেইস ম্যানেজমেন্ট কিভাবে হবে তার এসেস্মেন্ট কিংবা এরেঞ্জমেন্ট নিয়ে কোন ম্যাচিউঊর পরিকল্পনা একেবারেই নেই।

এই বিবেচনায় গোল্ডেন আওয়ার্সের ২৪ ঘন্টায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য অধিক সংখ্যক লাইট ইকুইপমেন্ট ​​(জনসংখ্যা অনুপাতে অবশ্যই), কম সংখ্যক হেভি মেশিনারি থেকে বেশি কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।​ এই ব্যাপারে রিজিওনাল রিস্পন্স ফেইজ কোওর্ডিনেশন মেকানিজম ​​​জাতিসংঘের ​​INSARAG ​এবং রেডক্রস ​​​থেকে পরিকল্পনা এবং ওয়ার্ক প্রসেস ফ্লো'র ধারনা নেয়া যেতে পারে। ইমার্জেন্সিতে ​INSARAG​ এর দুবাই আঞ্চলিক অফিস কিংবা রেডক্রস থেকে আমাদেরকে কি কি হেভি বা লাইট মেশিনারি সাপোর্ট দিতে পারবে তার ডায়ালগ শুরু করে লোকাল ইনভেন্টরি ক্যাপাসিটি বিল্ড করা দরকার। এতে খরচ কমবে। ​

​​​ভালনারেবেলিটি এসেসমেন্ট এবং টুলস ক্যাপাসিটিঃ
​​​ধারনা করা হয় যত না মানুষ মারা যাবে প্রাথমিক ভূমিকম্পের আঘাতে তার চেয়ে অধিক মানুষ মারা যাবে উদ্ধারের অভাবে, বাংলাদেশের শহর ও অঞ্চল ভেদে ভালনারেবেলিটি এসেসমেন্ট , শহর ও অঞ্চল ভেদে ডিজাস্টার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি এসেসমেন্ট তাই গুরুত্বপুর্ণ। সি ডি এম পি বলেছে ঢাকার নিকটবর্তী এলাকায় ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে আনুমানিক ৭২ হাজার ভবন ধ্বসে পড়তে পারে।

তাই সম্ভাব্য আক্রান্ত স্থাপনা, ভবন, জনসংখ্যা ইত্যাদির এলাকা ভিত্তিক হালনাগাদ ভালনারেবেলিটির বিপরীতে দরকারী সারঞ্জামের এস্টিমেশনের ভিত্তিতেই দুর্যোগ ব্যবপস্থাপনার​ সারঞ্জাম ও​ মেশিনারি ক্যাপাসিটি ঠিক করতে হবে। আমরা বলছি বেশি পরিমাণ সেন্ট্রালাইজড হেভি মেশিনারির দিকে না গিয়ে ডি-সেন্ট্রালাইজড (এলাকাভিত্তিক) ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশিং ইকুইপমেন্ট,​ ফায়ার ভেহিকল,​ ইমার্জেন্সি ট্রান্সপোর্ট, লাইট ক্রেইন, কনটেইনার মুভার, কন্সট্রাকশন ডেব্রি রিমুভার, গ্রার্বেজ ট্রাক, বিপুল সাপোর্টিভ টুলস, মোবাইল হসপিটাল (ইত্যাদি ইত্যাদি) এরেঞ্জমেন্ট করা​ যায়​।​ হ্যাঁ বড় বড় কন্সট্রাকশন ধ্বসে পড়লে হেভি ভেহিকল অবশ্যই লাগবে, তবে সব ফোকাস যাতে সেদিকেই ব্যয়িত না হয়। ​

​পাশাপাশি ​মেশিন টুলস ভেহিক্যাল সমূহের ক্যাটাগরি ভিত্তিক পজিশনিং রেকর্ড নিয়ে ব্যাকআপ সহ ডেটাবেইজ বিভিন্ন সরকারি অফিসে সার্কুলেট করতে হবে, সফস্টিকেটেড মেশিনারিজ গুলো জিপিএস ট্র্যাকিং এর আওতায় আনা যায়, যা এই সময়ে ​​সস্তা টেকনোলোজি। ​
​​​​
পাবলিক প্রাইভেট সমন্বয় এবং মেশিনারি মেইন্টেনেন্স চর্চাঃ
রাষ্ট্রীয় প্রতিস্থান সমূহের সাথে মেশিনারিজ ইনভেন্টরির সাথে এলাকা ভিত্তিক বেসরকারি নির্মাতা কোম্পানী এবং হাসপাতালের ইন্টেগ্রেশন করলে ক্যাপাসিটি ম্যানেজমেন্ট ইফিশিয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। এতে অধিক খরুচে সামগ্রীর অপব্যবহার কিংবা আইডল পড়ে থাকার সম্ভাবনা কমে আসবে। সারঞ্জাম ক্যাপাসিটি বিল্ড আপের পাশাপাশি সেসব মেন্টেইন করার স্থানীয় জ্ঞান এবং চর্চাও দরকার যাতে প্রয়োজনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মেশিনারি অকেজো বা অপারেশন অভিজ্ঞতা হীনতায় অব্যবহৃত না থাকে।


৫। ভূমিকম্প প্রস্তুতির অন্যতম বড় বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হাই ডেফিনিশন স্যাটেলাইট ইমেইজ প্রসেসিং। World Conference on Earthquake Engineering এ এই বিষয়ের উপর গভীর জোর দেয়া হয়। এখানে দুটি প্রধান বিষয় উঠে আসে। ৫ক- ভূমিকম্পের ঠিক অব্যবহতি পরেই রিয়েল টাইম হাই ডেফিনিশন ইমেইজ প্রসেসিং করে রাস্তা ও ভবনের ম্যাসিভ ক্ষয়ক্ষতির ইনস্ট্যান্ট হিসেবে করে সাথে সাথে উদ্ধার ও ইভাকুয়েশনের রুট প্ল্যান করা, উদ্ধার ও ইভাকুয়েশনের প্ল্যান ও ক্যাপাসিটি সাজানো, উদ্ধার ও ত্রাণের টিম ও কর্মী বন্টন করা যাবে। সেই জন্য নাসা সহ ঠিক যে যে স্যাটেলাইট সোর্সে এই হাই ডেফিনিশন রিয়েল টাইম ইমেইজ পাওয়া যায় সেগুলার সাথে অগ্রিম কমিউনিকেশন চ্যানেল স্থাপন করে রাখতে হবে। ৫খ-স্যাটেলেইট ইমেইজ প্রসেসিং এর অন্য দিকটি হল, পুর্বের ও পরের ইমেইজ প্রসেসিং করে জনাকীর্ণ এলাকার অভ্যন্তরে পুরো ধ্বংস না হয়েও হেলে পড়া ভবনের সম্ভাব্য স্পট বের করা, রাস্তা ও জলাভূমির পরিবর্তন বের করা, ডেব্রি ব্যবস্থার স্পেইস এবং ইভাকুয়েশন স্পেইস তৈরির ইনস্ট্যান্ট ও ফলদায়ক পরিকল্পনা করা।এর মাধ্যমে পুর্বের পরিকল্পনার সাথে ডেভিয়েশন বের করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা টেকসই ভাবে সাজানো যাবে। ফলে সম্ভাব্য সব ফ্রি স্যাটেলাইট ইমেইজ সোর্স সাইটের হালনাগাদ ডেটাবেইজ বানাতে হবে, আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংঘঠন গুলোর সাথে এই আলোচনার সূত্রপাত করতে হবে, এমনকি ইমেইজ সোর্সের প্রতিষ্ঠানের সাথে আনুষ্ঠানিক সংযোগ স্থাপন করতে হবে। দেশে এই স্কিল সেট (ম্যানপাওয়ার) গুলো বাংলাদেশে রয়েছে শুধু দরকার রাইট স্কিল সেট রাইট প্লেইসে বসানোর এবং সঠিক আর সমন্বিত কোওর্ডিনেশনের।
ভূমিকম্প ছাড়াও বন্য, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এর মত দুর্যোগেও বাংলাদেশকে হাই ডেফিনিশন স্যাটেলাইট ইমেইজ প্রসেসিং ভিত্তিক উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

৬। সারঞ্জাম এবং হাসপাতাল ভবনঃ


টুলস মেশিনারিজ এমন ভবনে রাখা যাবে না যা নিজেই ভঙ্গুর। ​হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল সেন্টার ভবন গুলোর জন্যও বিশেষ নজর রাখা দরকার যাতে হাসপাতাল গুলোর ঝুঁকি পুর্ণ ভবন রিপ্লেইস করা হয় বা নতুনভাবে ঝুকিপুর্ণ ভবনে গড়ে না উঠে। অন্যথায় বড় বড় হাসপাতাল ভাবন ধ্বসে পড়লে সমূদয় কাজই বৃথা যাবে।


​৭। ইভাকুয়েশন স্পেস এবং ডেব্রি ম্যানেজমেন্ট

​​সিডিএমপি সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার নূন্যতম ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে অনুমান করেছে। সেসব ভবনের কন্সট্রাকশন ডেব্রি রাস্তায় আংশিক কিংবা সম্পুর্ণ ব্লকেড করবে, সাথে ভবনগুলোর ফার্নিচার ও অন্যান্য ডেব্রি, ওভার এন্ড আন্ডার গ্রাউন্ড বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলি, সুয়ারেজ লাইনের ডেব্রি এবং আন্ডার গ্রাউন্ড সুয়ারেজের সেমি সলিড ডেব্রি ওপেন স্পেইস এবং রোড স্পেইস নষ্ট করবে এটা কতটা বিবেচনায় আনা হয়ছে জানা নেই। ​

৭-১। প্রথম কাজ হচ্ছে এক্সট্রিমিলি ভালনারেবল ভবন এবং স্থাপনা গুলো অতি দ্রুত চিহ্নিত করন শেষ করে সর্বোচ্চ ১-২ বছরের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলার হার্ড টার্গেট নেয়া (অতি ভঙ্গুর কলোনী গুলো, পুরানো ঢাকার পুরানো ভবন এবং অন্য সব মেয়াদুত্তীর্ণ ভবন) এবং নির্মান স্থাপনার কনফ্রিট আবর্জনা দুর্যোগের আগেই সরিয়ে ফেলা। এতে করে একদিকে প্রাণ এবং সম্পদের অপচয় রোধ করা যাবে অন্যদিকে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ডিজাস্টার রিকভারি কাজের ভলিউম এবং খরচ কমে আসবে, আফটার কেয়ার সহজ হবে।

৭-২। এলাকা ভিত্তিক স্পেইস তৈরি করা যা একেবারেই নেই। ঢাকায় সামান্য কিছু স্কুলে মাঠ আছে, সবাই ভেবে বসে আছেন এইসব মাঠ কাজে আসবে। কিন্তু কি কাজে ব্যবহৃত হবে ডেব্রি ম্যানেজমেন্টের স্পেইস হিসেবে নাকি হিউম্যান ইভাকিউশন স্পেইস হিসেবে, এই এসেস্মেন্ট নেই! উপরন্তু মাঠ গুলো এমনিতেই ছোট দুর্বিত্তের দখলে পড়ে আরো ছোট হয়েছে, তবে আশঙ্কা থেকে যায় ডোনেশনে বা সরকারি ঠিকাদারিতে নির্মিত মানহীন স্কুল ভবন ধ্বসেই এই ছোট ছোট মাঠ গুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

৭-৩। সরকার ওপেন স্পেইস তৈরির জন্য প্রতিটি এলাকার খাস জমি উদ্ধার ও দখলমুক্ত করতে পারে, অতীতের রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ খাস জমির প্লট বরাদ্দ বাতিল করতে পারে, এমনকি ঢাকার পুরানো এলাকা গুলোতে সাবেক পশ্চিম পাকিস্তানী নাগরিকদের মালিকানাধীন বাড়ি গুলোকে যে স্বচ্চ বা অস্বচ্চ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক নেতাদের প্রায় বিনামূল্যে হস্তান্তর করা হয়েছিল তাও বাতিল করতে পারে, উদ্ধার করা যেতে পারে ভারতে মাইগ্রেটেড হিন্দুদের সত্যিকারের অবিক্রীত প্লট। এইসব প্লটের ভবন ভেঙ্গে ওপেন স্পেইস তৈরি করতে পারে। এসবের জন্য দরকার সততা, রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনের প্রতি রাজনৈতিক দায়।

৭-৪। একটি অতি কার্যকর পরিকল্পনা এমন হতে পারে যে, ঢাকায় ফাংশনালিটি নেই এমন বহু হেড অফিস (মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন ইন্সটিউট, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান) গুলো সরিয়ে ​সেগুলোর অফিস স্পেইস ভূমিকম্পের কন্টিনজেন্সি ও ইভাকুয়েশন প্ল্যানে নিয়ে আসা। ঢাকাকে ডি-সেন্ট্রালাইজ করা গেলে বহু সরকারি-আধা সরকারি অফিস ও কলোনি পাওয়া যাবে যার কোন ফাংশনালিটি ঢাকায় নেই।

​৭-৫। অন্যথায় সরকারকে প্রতিটি এলাকার প্রতিটি অলি গলিতে যেসব ফাঁকা প্লট আছে সেখান থেকে কিছু জমি "মেশিনারি অপারেশন স্পেইস, ডেব্রি ম্যানেজমেন্টের স্পেইস​ এবং হিউম্যান ইভাকিউশন স্পেইস​"​ হিসেবে প্রয়োজনীয় ক্যাপাসিটির অনুপাতিক আয়তনে কিনে নিয়ে তা সর্বদা উন্মুক্ত রাখতে হবে।


৭-৬। বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিটি বহুতল ভবনের অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক সমাবেশ স্পেইস (মিউস্টার পয়েন্ট) বাধ্যতামূলক থাকে যাতে ফায়ার ইভাকিউশন সহজ হয়। বাংলাদেশে দুটি আবাসিক ভবনের মাঝে ২+২ হাত স্পেইস রাখা হয়না ৩০% বা ৪৫% ওপেন স্পেইস রাখার আইন করার পরেও। উল্লেখ্য ৩০%-৪৫% মডেলে যে সব বহুতল ভবন হয়েছে সেসবের খালি স্পেইস আসলে সমাবেশ স্পেইস (মিউস্টার পয়েন্ট) ​হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী নয় কেননা সেই স্পেইস পার্কিং কিংবা অন্য স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।​

৭-৭। এলাকাভিত্তিক ওপেন স্পেইস এর বাইরে আছে সেন্ট্রাল ওপেন স্পেইস যেখানে ম্যাসিভ এমাউন্টের আবর্জনা, নির্মান স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ স্তূপ করতে হবে। ২-৩টি স্টেডিয়াম কিংবা পার্ক কিংবা কুর্মিটোলার গলফ কোর্ট ছাড়া এর জন্য উপযোগী কোন স্পেইস নেই ঢাকায়। ফলে ডেব্রি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার বাইরে নিতে হতে পারে যা সময় সাপেক্ষ। তবে ধ্বংস প্রাপ্ত একটি পুরো এলাকাকে সাময়িকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তাও পুনরায় ক্লিন করা কঠিন হবে। ​

৭-৮। এর বাইরে ইভাকুয়েশন স্পেইস তৈরিতে সরকারের ভিন্ন কোন পরিকল্পনা থাকলে (আমরা জানতে পারিনি যদিও) সেগুলোও বাস্তবায়ন করতে হবে দ্রুত।

ইভাকুয়েশন স্পেস যদি আগে থেকে ক্রিয়েট করা না থাকে তাহলে ইভাকুয়েশন প্ল্যানটাই কোনো কাজে আসবে না। ​​সিডিএমপি যে কন্টিনজেন্সি ও ইভাকুয়েশন প্ল্যান করেছে সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে জনসংখ্যা অনুপাতে নতুন নতুন ওপেন স্পেস তৈরি করতে হবে। সেটার জন্য এখনই​ কাজে নামতে হবে। ​
​​

​​৮। ইন্ট্রা এবং ইন্টার সার্ভিসেস কো-ওরডিনেশনঃ

ভূমিকম্প পরবর্তি ইন্ট্রা এবং ইন্টার সার্ভিসেস কমিউনিকেশন (ফায়ার ব্রিগেড, হসপিটাল ইমার্জেন্সি, পুলিশ ইমার্জেন্সি, ব্লাড ব্যাংক, ইলেকট্রিক হ্যাজার্ড, কন্সটাকশন হ্যাজার্ড, গ্যাস প্ল্যান্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বয়লার হ্যাজার্ড), কমিনিউকেশন মিডিয়াম এন্ড নেটোয়ার্ক, ইন্ট্রা এবং ইন্টার সার্ভিসেস কো-অরডিনেশন, মেশিন-টুলস ক্যাপাসিটি ডিস্ট্রিবিউশন, মেশিন টুলস ডেটাবেইজ আপডেইট, মেশিন টুলস পজিশনিং ট্র্যাকিং, স্পেইস এন্ড ডেব্রি ম্যানেজমেন্ট কোর্ডিনেশনে ক্ষমতা সম্পন্ন এবং কারিগরি দিক থেকে সমৃদ্ধ ওয়ার্ক ফোর্স লাগবে। ভূমিকম্প পরবর্তিতে সিভিল এনার্কি এবং লুটপাট ব্যাপক আকার ধারণ করবে যা উদ্ধার কার্যক্রম ব্যহত করবে, এই বিষয়ে সজাগ থেকে কো-অর্ডিনেশন পরিকল্পনা সাজাতে হবে, তবে এই আলোচনায় এইদিকটি বিস্তারিত করছি না।

কো-অর্ডিনেশ​নের সমূদয় কাজ ২টি ভাগে বিভক্ত করে এজেন্ডা সেট করতে হবে-

ক।​ ​ইমেডিয়েট রিস্পন্স ফেইজ​ রেসকিউ, মেডিক্যাল সাপোর্ট এবং কোওর্ডিনেশন মেকানিজম ​(এই সক্ষমতা একান্তই নিজেদের অর্জন করতে হবে, ২৪ ঘন্টার গোল্ডেন পিরিয়ডে আটকে পড়া মানুষদের প্রাণে বাঁচানোর যোগ্যতা নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে), এই স্বল্প সময়ে বাইরে থেকে সাহায্য আশা করা যাবে না। ​

​​খ।​ ​​ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে কোওর্ডিনেশন মেকানিজম। আন্তর্জাতিক সহায়ক সংস্থা গুলো এবং অন্যান্য ​রিজিওনাল রিস্পন্স ফেইজ কোওর্ডিনেশন মেকানিজম গুলো এখানে সমন্বিত হবে।


​৯​।​​ ​বিমানবন্দর

​​ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকে ঢাকা চট্রগ্রাম এবং সিলেটের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সুরক্ষিত করা খুবই জরুরি। অন্যথায় বড় ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশ দরকারি আন্তর্জাতিক সারাঞ্জাম এবং মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। বাংলাদেশের বিমান্দরগুলোর রানওয়ে নাতি দীর্ঘ যা বড় এয়ারক্রাফট উঠা নামায় বাঁধা। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম নিন্ম মানের রানওয়ে গুলোর অ্যাসফল্ট ওভারলের অনেক জায়গাতেই ছোট বড় ক্ষত আছে যা ভূমিকম্পে খুব বেশি ভালনারেবল। ভূমিকম্প পরবর্তি প্রিপারেশন ভাবনা সমন্বিত করা খুব প্রয়োজন।


বিমান বন্দরের বাইরেও যে জিনিসটা লাগবে সেটা হল পর্যাপ্ত সংখ্যক হেলিপ্যাড, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার কিংবা প্রতিবেশী দেশের সামরিক হেলিকপ্টার কারিগরি উদ্ধার দল এবং ত্রাণ নিয়ে যাতে অতি দ্রুত নামতে পারে তার জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা চাই।পরিস্থিতি খুব বেগতিক হলে হতে পারে ডেব্রি ব্যবস্থাপনা, ইভাকুয়েশন স্পেইস এবং হেলিকপ্টার ল্যান্ডীং এর জন্য কুর্মিটোলার গলফ ক্লাব ছাড়া আর কোন যায়গা নেই। তবে কোথায় কি করা হবে, এটা আগে থেকেই পরিকল্পনা ও নকাশা আকারে ভেবে রাখা চাই।

​১০।​ ট্রেনিং, ড্রিল এবং ভলান্টিয়ার বিষয়ক কর্মশা​লাঃ
​​
ট্রেনিং​ এবং ড্রিল এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে এখানে সব ধরণের এক্সপার্ট গ্রুপ থাকে। ট্রেনিং এ​ সাধারণ​ নাগরিককে অংশগ্রহণের সূযোগ দিতে হবে​ এলাকা ভিত্তিক জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে​। সরকারি বেসরকারি কোপানিগুলোতে ফায়ার ড্রিল এবং ইভাকিউশন ড্রিল নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এর বাইরে হেলিকপ্টার ভিত্তিক উদ্ধারের সামরিক ড্রিল এবং প্রাক প্রস্তুতি থাকা চাই। ​
​​​​

১​১​। অন্যদেশের ভূমিকম্প পরবর্তী অভিজ্ঞতা আমলে নেয়া

​​নেপাল ​ইন্দোনেশিয়া​ ইরান​ ​জাপান​ কিংবা নিউজিল্যান্ডের মত দেশের সাথে ​(​যারা নিয়মিত বড় বড় ভূমিকম্প ফেইস করে​) ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল এক্সপেরিয়েন্স এক্সচেঞ্জ এর ক্ষেত্র তৈরি​ করতে হবে​। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে যে প্রলয়ঙ্করী ভূকম্প হয়েছে তা থেকে চাইনিজ টীমের সাথে অভিজ্ঞতার এক্সচেঞ্জ করা খুব দরকার।আর ​অভ্যন্তরীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পলিসি এমনভাবে নিতে হবে যাতে নিজের সমূহ বিপদের সঠিক প্রস্তুতি নিজেই নিতে পারে বাংলাদেশ।

তৃতীয় নিকটতম প্রতিবেশী দেশ​ নেপালের​ প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প বিপদে হিউম্যানিটেরিয়ান এফেয়ারস এর বাধ্যবাধকতা বাদ দিলেও অন্তত​ নিজেদের​ প্রস্তুতি অভিজ্ঞতা নেয়ার​ (স্বার্থপরতার)​ জন্য হলেও ফায়ার সার্ভিস​, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ​ এবং সেনা​-নৌ-বিমান​ বাহিনীর ​বড়​ বড়​ কয়েকটা​ টীমকে​ অন্তত​ উদ্ধার তৎপরতা​ সাপোর্টং টুলস​​ ও ​মেডিক্যাল​ ​ ফ্যাসিলিটি​ সমৃদ্ধ করে নেপালে পাঠানো দরকার ছিল।​​ অতি নগণ্য পরিমাণ কিছু শুকনা খাবার নিয়ে একটা প্লেইন পাঠানো হয়েছিল, সেটা ল্যান্ডিং করতে না পেরে প্রথম​ দফা​ ফেরত এসেছিল, পরে​ কখন গিয়েছে ​কিভাবে ডিস্ট্রিউবিউশন করেছে বিস্তারিত যানা যায়নি। প্রতিবেশী হিসেবে নেপাল এত তূছ্য তাচ্ছিল্য আশা করে না। সাম্প্রতিক নেপাল ফুয়েল ক্রাইসিস সহ ভূমিকম্পে বাংলাদেশের দায়সারা অংশগ্রহণের (হয়ত ভারত কি ভাবে সেই ভয়ে!) হীনমান্যতা ইতিহাস হয়ে থাকবে। সেই সাথে নিজেদের প্রিপারেশন নিবার মত দুরদর্শী ব্যাপার গুলোও অবহেলিত থাকবে। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের এই অবহেলার পুনারব্রিত্তি দেখতে চাই না।

সেখানে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন​, বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক এজেন্সি, লোকাল ইমার্জেন্সি​ সার্ভিসেস টীম সমূহ​ কিভাবে কাজ করেছে, টুলস - স্পেইস - ডেব্রি ম্যানেজমেন্ট কিভাবে হয়, কমিউনিকেশন এবং সাপোর্ট প্রসেস ও স্টেপ কি ধরনের, কি কি ইস্ফাস্ট্রাকচার এবং টেকনিক্যাল সমস্যা রাইজ করেছে, লোকাল- ইন্টারন্যাশনাল ইমেরজেন্সি রিস্পন্স টীম এবং ​​জাতিসংঘের INSARAG ​কিভাবে এই​​ ব্যাপার গুলো সমন্বয় করে​ছে​ সেটা খুব কাছে থেকে​ দেখা​​,জানা এবং বুঝা দরকার ছিল।​এখনও নেপাল দুর্ঘটনার পোষ্ট ম্যানেজমেন্ট পেপার ওয়ার্কস স্ট্যাডি করা জরুরি সেখানে কি কি সমস্যা তৈরি কিংবা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে এবং সেসব কিভাবে টেকেল করা হয়েছে তা জানার জন্য।
​ ​

আমাদের ব্যবস্থাপনা জ্ঞান সমৃদ্ধ হোক, কারিগরি প্রস্তুতির বোধ আসুক!
লক্ষ প্রাণ সুরক্ষা পাক!

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০৫
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×