১।
এই যে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর- এটা প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকলে তারাই আজ সরকারকে পথ দেখাতো। ঠিক গত বছরই দেশে একটা ডেঙ্গু মহামারি হয়েছে এবং তখন চিকিৎসক ও গবেষকগণ সবাই বলেছেন এই জীবাণু বৈশিষ্ট্য পাল্টেছে। শুধু ডেঙ্গু মোকাবেলাতেও তাদের প্রস্তুতি দেখি না, পরিসংখ্যান বলছে গত বছরের মার্চের তুলনায় এই বাছর মার্চের প্রথমার্ধে প্রায় চারগুণ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার দায়িত্বরত ইনস্টিটিউট হিসেবে হিসেবে আইইডিসিআর কি পদক্ষেপ নিয়েছে? শুধু করোনা নয়, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবও পেয়ে বসেছে দেশে।
আইইডিসিআর চাইলেই মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারিতেই চীনের করোনা পরিস্থাতি বিশ্লেষণ করে সরকারকে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত নির্দেশনা দিতে পারতো। সেখানে এপিডেমিলোজিস্ট রয়েছেন। আমরা দেখি ইন্সটিটিউশানের জরুরী পরামর্শ না শুনলে, ইন্সটিটিউশানের ম্যানেজমেন্ট অন্তত পদত্যাগ করে হলেও জনসম্মুখে এসে পাবলিক প্রেসার ডেভেলপ করেন। বরং আমরা দেখে যাচ্ছি, ক্রমাগত ফেব্রিকেটেড কথা বলেই যাচ্ছেন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তারা সংক্রমণের যে তথ্য দিচ্ছেন তা আন্তর্জাতিক মহামারি সংক্রামণের মডেলে মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে।
২।
"টেস্ট করবো না, প্রমাণিতও হবে না" এই ধ্বংসাত্মক আত্মঘাতী নীতি নিয়েছে তারা, যেহেতু করোনা টেস্টেড নয়, প্রমাণিত নয়- তাই মিডিয়া রিপোর্টও করা যাবে না। আজকে IEDCR হটলাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ মানুষের সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমন মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে মরার আগেই মরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে করোনা বা এর মত সিম্পটম থাকা রোগীদের কোন হাসপাতালই ভর্তি নিচ্ছে না, সরকারি ভয়ে, সংক্রমণের ভয়ে, প্রটেক্টিভ পিপিই না থাকার ভয়ে।
আচ্ছা, সাধারণ মানুষের কি সম্মানজনক মৃত্যুরও অধিকার দিবে না, এই বাকশালী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র?!
৩।
আইইডিসিআর ছাড়াও আইসিডিডিআরবি, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল, পিজি হাসপাতাল, বারডেম, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের Reverse transcription polymerase chain reaction (rt PCR) রয়েছে, আইসিডিডিআরবি তৈরিও ছিল কিন্তু তাদের পরীক্ষা করতে দেয়া হল না, অথচ চিকিৎসা সেবায় বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান বিশ্ববিধিত।
আইইডিআর ছাড়াও আইসিডিডিআরবি, চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, বিআইটিআইডি, ডিজডিএ, নিপসম, আইপিএইচ, বিএমআরআই এ উন্নতমানের গবেষণাগার আছে। ফেসবুকে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত সেখানে কিটের সংকটে পরীক্ষা শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।
রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার দায়িত্বরত ইনস্টিটিউট পরিণত হয়েছে "রোগ ধামাচাপা, সংক্রমণ বিস্তার ও তথ্য ষড়যন্ত্র গবেষণা" করার কৌশলী প্রতিষ্ঠান। এ যেন, আরেকটা নির্বাচন কমিশন, মানুষের প্রাণ নিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলাই যাদের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। অথচ প্রতিজন অপরিক্ষিত করোনা রোগীর মৃত্যু এক একটা পুরো এলাকাকে সংক্রমনের কেন্দ্র বানিয়ে দিতে পারে।
আমার মনে হয় এখনও সময় আছে, মীরজাদি ম্যাডামের উচিৎ হবে ব্রাক, নর্থ সাউথ, জন হপকিন্সন ও লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের সিমুলেশান মডেল সরকারকে বুঝিয়ে যথাযথ প্রস্তুতির একমুখী পরামর্শ নেয়ার দায়িত্ব নেয়া। যদি সরকার উনার কথা না শুনে, উনার উচিৎ হবে সরে দাঁড়ানো। অন্যথায় বুঝাযাবে উনি "ধামাচাপা" চক্রেরই অংশ।
৪।
A.t.m Golam Kibria ভাই লিখেছেন, "ব্র্যাক, নর্থ সাউথ আর জন হপকিন্সের তিন রিসার্চারের করা যে রিপোর্টটা ফাঁস বা প্রকাশিত হয়েছে, তার ভিত্তি ইম্পেরিয়াল কলেজের এপিডিমিয়োলজিস্ট নিল ফার্গুসনের টিমের করা একটা সিমুলেশান মডেল। নিল ফার্গুসন মহামারীবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ লোক, এত গুরুত্তপূর্ণ যে তার রিপোর্টটা বের হবার পরে হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিং এ ওইটা নিয়ে কথা হইছে এবং ইংল্যান্ড তার পুরো স্ট্র্যাটেজি চেইঞ্জ করছে। 'Mitigation' থেকে 'Suppresion' এ গেছে। হি ইজ দ্যা মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল একাডেমিক অফ দিস প্ল্যানেট রাইট নাউ। এই রিপোর্টে দেখাইছে সরকার যদি ইন্টারভেন না করে তাহলে কি হবে, Mitigation Strategy নিলে কি হবে আর Suppresion Strategy তে কি হবে? একটা জনগোষ্ঠীর ৮১ ভাগের এই রোগ হবে। বয়স্ক আক্রান্তদের সিকিভাগ হাসপাতালে যাবে, যারা হাস্পাতালে যাবে তাদের ৩০ ভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার দরকার পড়বে এবং যাদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার দরকার পড়বে, তাদের পঞ্চাশ ভাগ মারা যাবে। মানুষ মুলত মারা যাবে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের অপর্যাপ্ততার কারনে, এইটাই তাদের মূল কন্সার্ন।"
দেখুন, প্রতিষ্ঠান একটা দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ! একটা বিশ্ববিদ্যালয়, একজন শিক্ষক বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর স্ট্র্যাটিজিকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন, কল্যাণের জন্য।
আজকে টেস্ট সাপেক্ষে রোগী কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে শুধু লকডাউন করার কি মানে আছে? এইযে শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভাতা বা রেশন দিবারও কোন উদ্যোগ নেই। এরকম সেবাহীন লকডাউনের উদ্দেশ্য কি- এটা কি মৃত্যু ঠেকাবে না কি অর্থনীতি রক্ষা করবে?
৫।
খবর বেরিয়েছে ব্রাকের স্কুল অফ পাবলিক হেলথের নন কমিউনিক্যাল ডিজিজের ডিরেক্টর ও গবেষক মলয় কান্তি মৃধার (পিএইচডি, ইউ সি ড্যাভিস) বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
৬।
আমার মনে হয়, এই মুহুর্তে যে ভদ্রলোক সরকারকে প্রস্তুতি নিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারেন, তিনি হচ্ছে ডা এ বি এম আবদুল্লাহ স্যার। সরকারি বেতনভুক্ত হওয়ায় এটা উনার জন্য একটা কঠিন পরীক্ষাও বটে। আশাকরি স্যার সরকারকে বুঝাতে পারবেন যে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর ফেব্রিকেটেড তথ্য বন্ধ করে বাস্তবতা সবাইকে জানানো হোক এবং সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক হোক। সাথে সাথে সরকার মেডিক্যাল সাপ্লাই সংগ্রহে জোর দিক, কূটনৈতিক তৎপরতা চালাক। বিশেষায়িত কিংবা আলাদা হাসপাতাল করুক।ড্রাগ সংগ্রহে মনযোগী হোক। একই সাথে স্যারকে অনুরোধ করি, গবেষকদের হয়রানির পরিবর্তে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করুন, সরকারকে সঠিক প্রস্তুতির পথ দেখান। সবাই একজনের দিকে তাকিয়ে আছেন, যিনি এতদিন উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, গতকাল ছিলেন নির্বাচন নিয়ে। গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন এলাকা, হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারা রোগীর মৃত্যুর সংবাদ আসছে। ডা এ বি এম আবদুল্লাহ স্যার, প্লিজ তাঁকে কনভিন্স করুন। দেশের ও দশের উপকার করুন।
প্রতিষ্ঠান হীন দেশে, আপনি এবং আপনার মত যারা আছেন, তাঁরাই ইন্সটিটিউশান হয়ে উঠুন। ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্ররা পিপিই বানানোর ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ গুলোর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের দায়িত্বশীলদের অনুরোধ করুন যাতে বাংলাদেশে কভিড-১৯ এর প্রকৃতি ও সংক্রমণ প্যাটার্ণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১৫