বঙ্গবন্ধুর ট্যাবলেট খেয়ে আজও তার মালা জপি। তার হত্যার প্রতিবাদে যৌবন খুইয়েছি, তারপরও আমি হলাম শত্রু। আর যারা একসময় তার গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানাতে চেয়েছে তারা বন্ধু। তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দু-একটি নিয়ম এবং অনিয়ম সম্পর্কে আমার অনুভূতি পাঠকদের কিছুটা অবহিত করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ১০ জুন জাতীয় সংসদে গাজী গোলাম দস্তগীরের আমার ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়িতে বসবাস নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পূর্ত প্রতিমন্ত্রী অবৈধ দখলদার হিসেবে আমার নাম উল্লেখ করায় এ সম্পর্কে দু'কথা না বলে পারছি না। তাই ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ নিয়ে পরের পর্বে আলোচনা করব।
যা বলতে ইচ্ছা হয় না, ভালো লাগে না, ইচ্ছার বাইরেও কিছু কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। স্বাধীনতার পর চাইলে মতিঝিল, ধানমন্ডি, বনানীর বহু জায়গা পায়ের তলে রাখতে পারতাম। গুলশান, বারিধারা তখন তো ছিল জঙ্গল। কিন্তু বাস্তব হলো ঢাকা শহরে আমার এক শতাংশ জায়গাও নেই। '৭৩ অথবা ৭৪ সালে বাবা-মা, ভাই-বোনের নামে কচুক্ষেতে আটটি সাফ কবলা দলিলে ৫২ শতাংশ জমি কিনেছিলাম। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সে জমির খাজনা-খারিজ সবকিছু থাকার পরও তা হাতছাড়া হয়ে আছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে ঢাকা তো দূরের কথা, সারা দেশে আমার নামে এক অযুত শতাংশ জমি বা অন্য কিছু মুক্তিযুদ্ধের কারণে আমাকে দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার পরপরই একটি গাড়ি, বাবর রোডের বাড়ি, টেলিফোনসহ ওই সময় বিশেষ বিবেচনায় প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছিল। তখন বয়স ছিল কম, বুঝতাম আরও কম। তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি। শেষ দিন পর্যন্ত ঘামাতেও চাইনি। কিন্তু পাপ ছাড়ে না বাপেরে, তেমনি কেন যেন বর্তমান সরকার, সরকারি দলের লোকেরা কোনোমতেই আমাকে ছাড়তে চায় না। আমি থাকি, আমার সন্তান সন্ততিরা বেঁচে থাকুক_ তাও বোধহয় চায় না। তা না হলে অনেক প্রবঞ্চক ভণ্ড যাদের দেশের জন্য কোনো ভূমিকা নেই তারা দেশটা লুটেপুটে খাচ্ছে, আর আমি শুধু বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু খাদ্যের প্রয়োজন, মাথা গোঁজার জন্য ঠাঁই প্রয়োজন সেটুকুও পাব না এটা কেমন কথা? আজ যারা ধনবান, গুলশান বারিধারায় বড় বড় বাড়িতে থাকে তারা অনেকেই স্বাধীনতার পর বাবর রোডের এই ভাঙা বাড়িতে মাসের পর মাস ধরনা দিয়েছে। গত ১০ জুন সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর ঢাকায় কতগুলো অবৈধ দখলদার আছে জানতে চেয়েছেন। স্বাধীনতার পর এই শহীদ-গাজীরা কী অবস্থায় ছিলেন তা সবার জানা। মাত্র ছয়-সাত বছর আগেও বিটিআরসির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ৫০-৬০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় আমার এক শিষ্যকে ধরেছিলেন। আমি মার্গুব মোরশেদকে গিয়ে বলায় এক কথায় তিনি লাইসেন্স দিয়েছিলেন। এক পয়সাও যেমন আমাকে দিতে হয়নি তেমনি মার্গুব মোরশেদকেও নয়। মাত্র ক'দিন আগে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রূপগঞ্জ-বেলাবোর হাউজিংয়ের জমি নিয়ে কত কেলেঙ্কারিই না করেছেন। তবে হ্যাঁ, ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়িতে নিশ্চয়ই আমি তাদের ভাষায় অবৈধভাবে আছি। তাই আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, একজন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা না করে আগামীকাল বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিলে আইনের আশ্রয় নেব, কোর্ট যেদিন বলবে আমি অবৈধ, ২০/৩০ বাবর রোডে থাকার আমার কোনো অধিকার নেই, সেই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে দেব। কোনো উচ্চ আদালতে আপিল করতেও যাব না। কারণ এখন এপার থেকে যাওয়ার সময়। এপারের অনেক লীলাখেলা দেখেছি, আর নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতে থাকতে আমার সঙ্গে কথা বলতে কতবার আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছেন, এখন কথা বলা যাবে? ওর মন মেজাজ ঠিক আছে তো? আর ক্ষমতায় বসে তিনিই আজ পরিবারসহ আমাকে পিষে মারতে চান। আল্লাহ রক্ষা করলে কে কাকে পিষে মারবে? হ্যাঁ, আমি মুক্তকণ্ঠে বলতে পারি, বাবর রোডের বাড়ি আমি দখল করিনি। এ বাড়িটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২২ অথবা ২৪ মার্চ দখল করে আমাকে বসিয়ে গেছেন। যদি ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়ি দখলের কৃতিত্ব কারও থেকে থাকে তা নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ জন্য প্রশংসা, নিন্দা দুটোই তার প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে আমি সম্পূর্ণ লাচার, আমার কোনো ভূমিকা নেই। মুক্তিযুদ্ধ করে এদেশের নাগরিক হিসেবে মোহাম্মদপুরের মতো অস্বাস্থ্যকর জায়গায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর আমি যদি একটি বাড়ি না পেতে পারি_ এতে এখন আর আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি ঢাকায় থাকতেও চাইনি। যদি শত্রুরা গুম না করে তাহলে দেহটা কবরস্থ করার বাসনা ছাতিহাটি গ্রামে মসজিদের পাশে বাবা-মায়ের পায়ের তলে। আমার মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব আনা থেকে বিরত থাকতে আবেদন করেছি। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আমার পিতা-মাতার নামে কোনো শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। কারণ তারা সমাজসেবক বা সেবিকা ছিলেন না। জীবিতকালে অপমান-অপদস্ত ও অকথ্য নির্যাতন করে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একেবারে মিসকিনের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান দেখাতে অপ্রশিক্ষিত পুলিশ দ্বারা যে অন্তিম সালাম দেওয়া হয় সেটা দিতেও বারণ করেছি সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। যদি এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ হয়ে থাকে, পরিপূর্ণ ইসলামী শরিয়ত মতো যদি একজন মুসলমানের অন্তিম ইচ্ছার মূল্য থাকে তাহলে সরকার কোনোমতেই আমার অন্তিম ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইসলামী শরিয়তের বরখেলাপ কিছু করবে না। মন্ত্রী উত্তরে বলেছেন, ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়ি অবৈধ দখলে রেখেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। ২০/৩০ বাবর রোডে বসবাস করি এটা সারা দুনিয়ার মানুষ জানে। ইয়াসির আরাফাত, ব্রেজনেভ, এডওয়ার্ড হিথ, ফিদেল কাস্ত্রো, আনোয়ার সাদাত জানে, ভারত জানে, পাকিস্তান জানে, আমেরিকা জানে, ব্রিটেন জানে, জার্মান জানে, এমনি অনেক বিশ্ববরেণ্য নেতাও জানেন। এ কারণে জানে যে, তারা ১৯৭৫-এর আগে এবং ১৯৯০-এর পরে এই ঠিকানায় বহু চিঠি দিয়েছেন। '৭২ থেকে ২০/৩০ বাবর রোডে আমার নামে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি '৭৩ সালের মাঠ জরিপে আমার নাম লেখা আছে। '৭৫-এ গভর্নর পদ্ধতি করা হলে ২০/৩০ বাবর রোড নামে আমার ঠিকানা গেজেটভুক্ত হয়েছে। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঢাকা ত্যাগ করলে বাবর রোডের যে সিজার লিস্ট করা হয়েছিল তাও ছিল আমার নামে। কয়েক বছর পর সরকার জিনিসপত্র আমার বোন রহিমা সিদ্দিকীর হাতে ফেরত দেওয়ার চিঠিতেও আমার নাম উল্লেখ আছে। এখনো বাবর রোডের সোফা, টি টেবিল মাননীয় মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে রয়েছে। আমি দুবার এমপি হয়েছি। তার গেজেটও বাবর রোডের ঠিকানায়। '৯০-এর পর আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানেও আমার ঠিকানা ছিল ২০/৩০ বাবর রোড। হাইকোর্টে রিট করে যখন আমি মুক্তি পাই সেখানেও বাবর রোডের কথা উল্লেখ আছে। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা মানুষ পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর বৈধভাবে এ দুনিয়ায় স্থান পেলাম না তাতে কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু পরপারে যাওয়ার পথে সাড়ে তিন হাত মাটি পেলেই হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এতকিছুর পরও কেন জানি আপনার অকল্যাণের কথা চিন্তায় আসে না। কিন্তু বয়স যখন হয়েছে তখন তো এটা নিশ্চয়ই বুঝি আপনার পূর্বানুমতি ছাড়া কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে আপনার দলের কারও কোনো কিছু বলা তো দূরের কথা, তাদের অনেকের মৃত বাপ-দাদারও সাধ্যের অতীত। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আমিও তো বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমার একটি ছেলে, একটি মেয়ে আর একটি শিশুকন্যা আল্লাহতায়ালার দান। আমার একজন খুবই সাদামাটা স্ত্রী আছে। আমাদের ওপর কেন আপনার এত আক্রোশ? আমি আপনার গোলাম হতে পারিনি তাই এত রাগ? আমি তো আপনার ভাই ছিলাম, এখনো আছি। আমাকে কেন চাটুকার, গোলাম বানাতে চেষ্টা করবেন? আওয়ামী লীগের জন্য এত পরিশ্রম করার পরও আমি যেদিন আওয়ামী লীগ ছেড়েছি সেদিন তো আপনাদের একটি চেয়ার-টেবিলেও ভাগ বসাতে যাইনি। দীর্ঘদিন ঘর-সংসার করা কোনো অভাগা স্ত্রীকে স্বামী বাড়িছাড়া-সংসারছাড়া করলে যেমন হয়, যেমন খ্যাতিমান সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ করেছেন, আমার ক্ষেত্রেও খুব একটা ব্যতিক্রম হয়নি। আমি একা মানুষ। আপনারা ক্ষমতাবান সবাই একত্র। আমি কি-ইবা করতে পারি। আপনাদের সঙ্গে মতে মেলেনি, পদত্যাগ করেছি। দেশের নাগরিক হিসেবে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। কত চোর-ডাকাতকে যে পাঠিয়েছিলেন তা তো আপনার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করুন। চিটাগাংয়ের জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু অনেক সম্পদশালী হয়েও ক্যান্সারে অকালে মারা গেছে। সেও ভোট চুরি করতে গিয়েছিল। আপনার উপদেষ্টা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার যাকে ভারতে বছরের পর বছর আর্থিক সাহায্য না করলে না খেয়ে মরত, সেও চোরের দলে শামিল হয়েছিল। আপনি খুব ভালো করেই জানেন '৯৯-এর ১৫ নভেম্বর সখিপুর-বাসাইল উপ-নির্বাচনে জিতেছেন না হেরেছেন? '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ওই সময় আমি সখিপুরে না গেলে আপনার বর্তমান এমপি শওকত মোমেন শাহজাহানকে তার বাবা মোক্তার আলী চেয়ারম্যান, মান্নান তালুকদার, বাদশা তালুকদার, হিম্মত তালুকদার ও অন্যরা আর এক বা দুদিন পর টাঙ্গাইল নিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে সঁপে দিয়ে পাকিস্তান রক্ষার জন্য বীর সিপাহী বানাত। মুসলিম লীগ ঘরানার সন্তান তাকে আপনি কোটি কোটি অবৈধ টাকা জোগান দিয়ে শুধু আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ভোটচোর এমপি বানিয়েছেন। ভোট ডাকাতির প্রতিবাদ সভার প্রতিবাদে ১৮ নভেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে বসিয়ে রেখে আমাকে যুদ্ধাপরাধী বলে গালাগাল করেছে। যে কারণে আপনাদের কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে এখন আর যাই না। একবার কি ভেবে দেখবেন আমি যুদ্ধাপরাধী হলে আমার রাজনৈতিক পিতা আপনার জন্মদাতা জাতির জনক কী হয়? আর আমি যুদ্ধাপরাধী হলে গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী যুদ্ধাপরাধী হয় কি করে? কারণ আমরা দুই মেরুর। যেহেতু ওই কথা বলার জন্য এখনো তার কোনো শাস্তি হয়নি, সেহেতু মনে করাই যায় কথাটা শাহজাহান বলেনি, তাকে দিয়ে বলানো হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর '৯৯ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে আমরা একটি মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনৈতিক দলের জন্ম দিয়েছি। কী প্রয়োজন ছিল সেখানে গুণ্ডা-তস্করদের লেলিয়ে দিয়ে ১০৩ নিরীহ মানুষকে আহত করার? বাংলাদেশে রাজনীতি করা কি নিষিদ্ধ? বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের? তাহলে অমন করলেন কেন? পাঁচ কাঠা জমির ওপর ১৯৬২ সালে নির্মিত ছোট্ট একটি খুপড়ি বাড়িতে অবস্থান করি। লোকজনকে ঠিকমতো জায়গা দেওয়া যায় না। কাগজপত্র, বই-পুস্তক ঠিকভাবে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এই জায়গাটুকুও সহ্য হয় না? আপনি তো গতবার ১১ একর জমির ওপর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা মূল্যের গণভবন লিখে নিয়েছিলেন। রেহানার নামে ধানমন্ডিতে দুই বিঘা না দুই একরের বাড়ি লিখে দিয়েছিলেন। দেশের জন্য, দেশবাসীর জন্য সত্যিকারেই বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, কী অবদান আছে তার? আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রধান। অনেক কষ্ট করে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন। তাই আপনি এখন দেশের মালিক-মোক্তার। আপনিই বুকে হাত দিয়ে বলুন তো দেশ সৃষ্টিতে আপনার ভূমিকা কি? আপনি তো তখন ভাগিনা জয়কে পেটে নিয়ে বড় উৎকণ্ঠায় হানাদারদের হাতে বন্দী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবার, তার বাসস্থান হেফাজতের জন্য আইন পাস করেছেন। আপনার টার্ম শেষ হওয়ার আগেই হয়তো আবার গণভবন লিখে নেবেন। মন চায় না সমস্ত অস্তিত্ব বিদ্রোহ করে। তারপরও বাস্তবতা বলে দেশ কি শুধু আপনার বাবাই স্বাধীন করেছে, আমাদের কোনো ভূমিকা নেই? আপনি প্রধানমন্ত্রী_ আপনার বোন, ছেলে, মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন এমনিতেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবলয়ের আওতাভুক্ত। আমাদের জীবনের নিরাপত্তার কি কোনো প্রয়োজন নেই? একবার কি ভেবে দেখেছেন? আপনার বাবা জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাকে বাবর রোডের বাড়ি দিয়েছিলেন। আপনার সঙ্গে মতের অমিল হয়েছে বলে সেই বরাদ্দ অস্বীকার করছেন। অথচ আপনার কত চাকর-বাকর-ভৃত্যদের সরকারি বাড়ি দিয়েছেন। এক নিঃশ্বাসে ৫০ জনের নাম বলে দিতে পারি। অন্যদিকে বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী আমার ভাবী, তিনিও কম যান না। কত আলানি-ফালানিকে সরকারি জমিজমা, বাড়িঘর দিয়েছেন। নিজেও ১৬৮ কাঠা জমির ওপর দুটি ফুটবল মাঠের সমান বাড়িতে ছিলেন। যেখান থেকে বড়বেশি অসম্মান করে তাকে বাড়িছাড়া করেছেন। তার সময়ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের সার-সংক্ষেপের ফাইল তার দফতরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বয়স হয়েছে, তাই অনেক কিছু বোঝার শক্তিও আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সারা দেশে এক ছটাক জায়গা পাইনি। যে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রথম অস্ত্র নিয়েছেন আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই কাদেরিয়া বাহিনীর জাদুঘরের জন্য এক ছটাক জায়গাও পাওয়া যায়নি। অথচ আপনার নেক বান্দারা মুক্তিযুদ্ধ না করেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নামে জায়গা পেয়েছে, টাকা পেয়েছে, নানা জায়গা থেকে নানা রংয়ে-ঢংয়ে অনুদান পেয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। কিন্তু যেহেতু আপনার সঙ্গে আমার মতের গরমিল সে কারণে সুবিধাভোগীরা সুবিধা লুটছে। এমনটাই হয়। রোম যখন পুড়ে নিরো তখন বাঁশি বাজায়। আপনি বাজাবেন না কেন? বাজান। আমি দুবার এমপি হয়েছি। ঢাকায় কোনো প্লট পাইনি। ২০ বা ৩০ লাখ টাকায় গুলশানে ২৬০০ স্কয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল। অত টাকা ছিল না আর দেমাকও ছিল জমি চেয়ে ঘর নেব কেন? আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে মন্ত্রী। '৭০ ও '৭৩-এ এমপি ছিলেন। তিনি প্লট পেয়েছেন। আমার ভাবী '৮৬-তে স্বতন্ত্র এমপি হয়েছিলেন। তিনিও প্লট পেয়েছেন। আমার দলের এক সময়ের সেক্রেটারি ফজলুর রহমান এমপি হিসেবে উত্তরায় প্লট পেয়েছেন। এখনো যারা এমপি হয়েছেন তাদের অনেকেই প্লট পেয়েছেন এবং পাবেন। নামগোত্রহীন এক দলের এক নেতা শিল্পমন্ত্রী তিনি। তার বউ-পোলাপান চৌদ্দ গোষ্ঠী সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় কী সব দেখছি। তারা সবাই বৈধ শুধু আমি অবৈধ। আসলে আগে বুঝতাম না, এখন বুঝি। এসবই ভাগ্যের ফের। ন্যায়-নীতি আদর্শের কোনো বালাই নেই। পক্ষে থাকলে ভালো, সত্য বললেই খারাপ। এই ক'দিন আগে মহামান্য হাইকোর্ট তেজগাঁও শিল্প এলাকায় প্লট নিয়ে রুলিং জারি করেছেন। হঠাৎই সেদিন দেখলাম যায়যায়দিনের অফিসের প্লট কয় একর হবে আল্লাহই জানেন। কামরুল ইসলাম, জিয়াউল হক প্রত্যেকের নামে প্লট। বামপন্থি নেতা রাশেদ খান মেনন একটি আবাসিক, আরেকটি বাণিজ্যিক প্লট পেয়েছেন। আসলেই তারা কি মুক্তিযুদ্ধে এবং পরে আমার চেয়ে খুব বেশি ক্ষমতাবান ছিলেন? সবার জন্য ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, বনানী, তেজগাঁও এলাকায় বিঘা বিঘা জমি সহ্য হয় আর জেনেভা ক্যাম্পের পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাবর রোডের পাঁচ কাঠা জমি আমার জন্য সহ্য হয় না- ভাবতেই অবাক লাগে। যাক আর কথা বাড়াতে চাই না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র দখল করা বাড়ি যদি অবৈধ হয় আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব। তবে সেইসঙ্গে দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রাখব- নব্য ধনবান সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর পদের গরমে এমন প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু মন্ত্রী মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়ে এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শপথ ভঙ্গ করেছেন। কারণ তার মন্ত্রণালয় আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়েছিল _ আপনার নামে এক হাজার এক টাকা প্রতীকী মূল্যে ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়ি বরাদ্দ দানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপনার এবং আপনার ওপর নির্ভরশীল পোষ্যদের ঢাকায় আর কোথাও সরকারি বরাদ্দের জায়গা আছে কিনা এই মর্মে আপনার একটি হলফনামা প্রয়োজন। হলফনামা পেলেই আমরা আপনার অনুকূলে ওই বাড়িটি বরাদ্দের সাফ কবলা দলিল স্বাক্ষর করতে পারি। আজ থেকে সাত-আট বছর আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় আমি অপরাধ করেছি, নাকি সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করেছে? এ বিচারের ভার দেশবাসীর ওপর ছেড়ে দিলাম। আমি ভালো করেই জানি জনগণের হৃদয় থেকে আমাকে মুছে ফেলতে, তাদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করতে ষড়যন্ত্রকারীদের এই অশুভ প্রয়াস কোনোমতেই সফল হবে না।
---------------------বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
লিংক দেখেন.......
আমার প্রতি এত আক্রোশ কেন??????????????-----পুরাই কপি পেস্ট.....
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(
আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন