পাহাড়ীরা কেউ চান ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি,কেউবা ‘জাতিসত্তা’র,বাঙালীরা ‘আদিবাসী’ মানেন’ই না
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবসাকারী পাহাড়ী জনগোষ্ঠীসমূহকে কি নামে ডাকা হবে তা নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। দীর্ঘকাল থেকেই এইসব জনগোষ্ঠী কখনো ‘ট্রাইবাল,কখনো জুম্ম বা জুমিয়া,কখনো উপজাতি আবার কখনো কখনো নিজ জাতিগোষ্ঠী ‘চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা এইসব নামেই পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে সাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে ‘উপজাতি’ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছিলেন তারা।
কিন্তু গত এক দশকে বিশ্ব রাজনীতির নানা মেরুকরণে এই অঞ্চলে বসবাসকারীরা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানাচ্ছেন। এই দাবীতে পাহাড়ী সংগঠনগুলো প্রতিনিয়তই আন্দোলন সংগ্রামসহ নানা কর্মসূচী পালণ করে আসছে। এমনকি সংবিধানের পঞ্চোদশ সংশোধনীতে নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানালেও সরকার তাদের শেষ পর্যন্ত ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ হিসেবেই সংবিধানে সংযোজন করে। কিন্তু আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবী এখনো বহাল আছে।
একদিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবারই এই দেশে কোন আদিবাসী নেই বলে ঘোষণা দেয়া আর অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নানা চাপ আর পাহাড়ীদের নানা সংগঠনের দাবী দাওয়াও থেমে নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ পাহাড়ীদের বড় অংশটিই নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবী করে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন,বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো,তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচীতে আমাদের আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান আমরা জানতে পেরেছি,স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে একটি চিঠি তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে আদিবাসী দিবস পালন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করা এবং দেশে আদিবাসী নেই বলে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা জানিনা,সরকার কোন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে এই কাজ করছে। আমরা মনে করি,সরকারের এই অবস্থান থেকে সরে আসা উচিত। ইউপিডিএফ কেনো আদিবাসী দাবীর সাথে একমত নয়,এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,তাদের বক্তব্য স্বরিরোধী এবং স্পষ্ট নয়।
আবার পাহাড়ীদের আরেকটি গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর নেতৃত্বে মনে করেন ‘আদিবাসী’-‘উপজাতি’ বা ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নয়,প্রতিটি জাতিসত্ত্বার নিজ নামেই স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত ।
ইউপিডিএফ এর মুখপাত্র ও গনতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক মাইকেল চাকমা বলেন, ‘আদিবাসী’একটি ঔপনিবেশিক শব্দ এবং বর্তমানে এটি একটি এনজিও টার্ম। এর মাধ্যমে একটি জাতির স্বাতন্ত্র ও নিজস্ব পরিচয়,সংস্কৃতি,জীবনাচারের পরিচয় পাওয়া যায়না। আমাদের যে জাতিগত পরিচয়- ‘চাকমা’ ‘মারমা’গাঁরো,সাওসাঁল-এইভাবে আমাদের নিজ নিজ জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি প্রয়োজন এবং সেটাই দেয়া হোক। যারা ‘আদিবাসী’ দাবী করেছেন তারা কিসের আশায় বা কিজন্য তা করছেন তা জানেননা জানিয়ে এই ইউপিডিএফ নেতা আরো বলেন,আমরা ‘উপজাতি’ ‘আদিবাসী’ বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ এইসব নামে নয়,নিজ নিজ জাতিসত্তার নামেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই। তিনি আরো বলেন, আমরা আদিবাসী দিবস পালনও করিনা, যারা পালন করে তাদের বাধাও দেইনা।
অন্যদিকে ‘আদিবাসী’ মানতে নারাজ বাঙালীভিত্তিক সংগঠনগুলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের রাঙামাটি জেলা আহ্বায়ক পেয়ার আহম্মেদ খান বলেন,বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। আন্তর্জাতিক নানা গোষ্ঠী পাহাড়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে বাংলাদেশকে পূর্ব তিমুরে পরিণত করার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি দেশবিরোধী যেকোন তৎপরতা বন্ধে সরকারের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান। তিনি জানান,রাঙামাটিতে তার সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ পাল্টা কর্মসূচী পালন করা হবে।
তবে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল,এই ধরণের কোন চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন,আমি দায়িত্ব নিয়েছি প্রায় দুইমাস হলো। আমি এর মধ্যে এই ইস্যুতে কোন চিঠি পাইনি। আর কে কোন দিবস পালণ করলো এটা তাদের ব্যাপার। আমি আইনশৃংখলা এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি দেখবো। তবে এই ধরণের কোন চিঠি আদৌ এসেছে কিনা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন,যদি আদৌ কোন চিঠি এসে থাকে,আমি সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিবো।
রাঙামাটির আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রজ্ঞন চাকমা বলেন,আমরা র্যালী,আলোচনা সভা এবং আদিবাসী গুনীজন সংবর্ধনার আয়োজন করেছি। আর অন্যতিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের নেতারা ওইদিন রাঙামাটিতে মানববন্ধন,সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হতে যাওয়া এই দিনটিকে ঘিরে তাই পাহাড়ে আবার নতুন করে সংঘাত-সহিংসতার আশংকা করছেন অনেকেই।
সংবিধানের পঞ্চোদশ সংশোধনীতে সরকার পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী ভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রায় পনের লক্ষ মানুষকে ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এইসব জনগোষ্ঠীর মানুষের কেউ চান ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি আবার কেউবা নিজ নিজ ‘জাতিসত্তার’। আর সরকার ও বাঙালী সংগঠনগুলো এই দাবীর বিরোধীতা করছে। আর এই সংকটের মধ্য দিয়ে আজ ৯ আগষ্ট পালিত হবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।