শুক্রবার অফ-ডে তার উপর আমি খানিকটা নিশাচর। ঘুম ভাঙল বিকাল ৩টায়। রুমমেটের বিছানা খালি মানে, গেছে হয়তো প্রেমিকার কাছে ১০০% attendance proof করতে। যাই হোক অন্যান্য ফ্ল্যাটমেট রাও বাসায় নাই। বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে টিভি ছাড়লাম ব্রেকিং নিউজের আশায়। 'কোথাও না কোথাও গণ্ডগোল হবেই' এটাই ইদানিংকার শুক্রবার গুলোর ট্যাগ নাম হয়ে গেছে। না কিছুই হয়নি। চ্যানেল ঘুরাতে গিয়ে হটাত দেখলাম একটা চ্যানেলে বাংলা সিনেমা মাত্র শুরু হচ্ছে। যথারীতি পর্দায় গরীবের সন্তান এবং ড্যাশিং হিরো প্রয়াত জসিমের ভক্ত উনার খোমা দেইখা দাঁড়ালাম। প্রায় ৩০ কি ৩৫ মিনিট পর নায়কের খেটে খাওয়া বাবা হিসাবে পর্দায় আসলেন অত্যন্ত ব্যস্ত এবং প্রবীণ নায়ক আনোয়ার। কি দেখলাম পরিচালক উনার জন্য বরাদ্দ রেখেছিলেন হয়তো ৩০ কি ৫০ সে. কিন্তু তাতে কি উনিতো(আনোয়ার) হচ্ছেন জাত অভিনেতা। এই স্বল্প সেকেন্ডের মধ্যেই উনি উনার কারিশমা দেখায় দিলেন। যথারীতি হার্ট-অ্যাটাক এবং নায়কের নাম ছিল রাজু, রাজু তো...র মমমাকে দেখে রাখি....(স)। বাবা বাবা কথা বলো বাবা, নাআআআআ... তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারোনা, মা ওমা মাগো বাবা কথা বলছে না কেন, মা। অশ্রু বিসর্জন এবং এই ধরনের আবেগঘন পরিবেশে আমি নিজেকে খুব একটা বেশি নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা। ভাবলাম যাই ফ্রেশ হয়ে আসি। উঠি। তখনি দরজায় নক এবং জোরে চিৎকার খোলা। দারোয়ান, ভাইয়া কি কর, টিভি চালাও? হুম এইতো সিনেমা দেখি। ওকে টিভি ছেড়ে দিয়ে আমি উঠে গেলাম। তুমি থাইকবা না চলি যাইবা, আচ্ছা সিনেমা দেখো তাইলে আমি খাই আসি।
তখনো ব্রাশ করা হয়নি। খিদের জ্বালায় কিচেনে গিয়ে দেখলাম কি যেন একটা মাছ রান্না করা এবং ভাত আছে। ভাবলাম একবারে ব্রাশ এবং গোসল করে এসেই ভাত খাবো। দারোয়ান তখনো টিভি দেখছিলো।
আমিঃ ড্যানিয়েল(দারোয়ান উপজাতি মুল নাম আলভী, আমি এই নামে ডাকি) তুমি যাওয়ার সময় দরজা টেনে যাইয়ো আমি গোসল করে আসি।
ড্যানিয়েলঃ আমি ছাদে যাবো..আচ্ছা টেনে দিবুনি। কত লক্ষ লক্ষ লোক(গার্মেন্টস শ্রমিকরা জসিমের নেতৃত্বে মিছিল করছিলো) দেখসো।
আচ্ছা টিভি দেখো আমি আসি।।
ব্রাশ শেষে যাবতীয় প্রাকৃতিক কাজ করছিলাম টয়লেটের দরজায় নক, ভাইয়া আমি যাই- ড্যানিয়েল।
ওকে দরজা টানি দিয়ো।
তোমার টিভি চলে আমি যাই, টানি দিবো- ড্যানিয়েল।
আমার আবার বেশ বাতরুম প্রীতি। সবার যে কাজ করতে ৮-১০মিনিট লাগে আমার সে কাজ ২০-২৫মিনিটেও কেন জানি হয়ে উঠে না। আসলে স্বাচ্ছন্দ্য বলে একটা ব্যাপার থাকে, তাই হয়তো।
আমাদের টয়লেট, আমার রুম এবং কিচেন লাগোয়া,একসারিতে। ড্যানিয়েল যাওয়ার ১০-১৫মিনিট পর হটাত কিচেন থেকে পাতিলের ঢাকনা পড়ে যাওয়ার সাউন্ড শুনলাম। কি ড্যানিয়েল ভাত খাও নাই? একথা বলার পর পরই কেউ একজন দ্রুত হেঁটে যাওয়ার টের পেলাম। আচ্ছা, দরজা টানি দিয়ো। এরপর আবার ৫-৬মিনিট পর, আমি তখন মাথা মুছছিলাম। টয়লেটের দরজার নিচের ফাঁকে একটা ছায়া হেঁটে যাচ্ছে কিচেনের দিকে, ড্রয়িঙে লাইট জালানো ছিল। তখন ডাকলাম ড্যানিয়েল কথা বললনা চলে গেলো এখন আবার কি। কেমন জানি মনে হল। তখনো আমার রুমে টিভি চলছিলো জোরে জোরে। এবার ডাক দিলাম না তাড়াতাড়ি কোনমতে কোমরে টাওয়াল পেঁচিয়ে যথাসম্ভব বেরিয়ে আসলাম। দেখি ঘরের মেইন দরজা পুরাটা খোলা। আমি তখনো টয়লেটের সামনেই ছিলাম। দরজা খোলা দেখে মেজাজ গরম। কিচেন ক্রস করে আমার রুমের সামনে ড্যানিয়েলকে ডাক দিলাম। দেখলাম কিচেন থেকে কালো লিকলিকে ১০/১২ বছরের একটা পিচ্চি বেরিয়ে এলো বাম হাতে ভাতের পাতিল। কিরে তুই এখানে কি করছ? পিচ্চি চুপচাপ। আমি তাকে ধরব ধরব ঠিক তখন ঘটলো বিপত্তি। আমি তাকে কি ধরবো? উল্টা সে আমার পরনের টাওয়ালটা একটানে খুলে হাতে পাতিলসহ দিলো দৌড়। হটাত এরকম আকস্মিক সম্ভ্রমহানিতে আমি পুরা তাজ্জব হয়ে গেলাম(কি বলবো পুরা একটা থমথমে পরিবেশ)। কাওকে যে ডাকবো অথবা নিজে যাবো সেই পরিস্থিতিতো নাই। অর্থাৎ আমি দ্বিগম্বর পিচ্চি গেটের বাইরে।
যাই হোক টাওয়াল টেনে কোনমতে পরিস্থিতি সামলে রুমে গিয়ে দেখি মোবাইল, মানিব্যাগ, টিভি, ল্যাপটপ সবই আছে। কিচেনে গিয়ে দেখি ভাত, ভাতের পাতিল, রান্নাকরা মাছ আর কিছু চাল ছিল ওগুলা নাই। পরে বুঝলাম ওএকটা টোকাই ছিল এখনো ভালো করে চুরিদারি শিখে নায়। খুবই ক্ষুধার্ত ছিল এবং সে হয়তো সৎ অথবা টাকা পয়সায় লোভ নেয় তা নাহলে মোবাইল, মানিব্যাগ, ল্যাপটপ সবই সামনে ছিল কিছুই নিলোনা কেন? ওগুলা কোন একটা নিলে বিক্রি করে অনেক দিন খাইতে পারত, তা নিলোনা নিলো কি ভাতের পাতিল। সারাদিন উপোষ থাকে বোধহয় তাই ভাত ছাড়া হয়তো কোন কিছুর সাথে ভালোভাবে পরিচয় নায়।
কারে বলবো কি বলবো কিভাবে বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কি করি বলুনতো? পিচ্চিটা আমারে দ্বিগম্বর(লেংটা) না করলেও পারত। বললেই ভাত খাওয়ায় দিতাম........
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


