-ভালো করে চেয়ে দেখ আত্মকেন্দ্রিক হতে পারছি কই!
-তাও এতো কেন সিরিয়াসলি নিচ্ছিস জীবনটা!
-ওটা আমার রোগ।
টাইফয়েডের মতো ভুগি আমি- অফিসে, আড্ডায়, প্রেমে! প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে ঠারেঠোরে শুনিয়ে দিই, এই যে তোমার কেলানো দাঁতের ছুরির ফলা এর ধার আমি জানি! পেছন ফিরলেই ড্রাকুলা হয়ে কামড়াবে আমার পিঠ। আমার ঘাড়ে বন্দুকের নলের ক্ষমতার উৎস আর তোমাদের শোবার ঘরে ট্রিংকাস-এর উল্লাস!
মামুন বললো, এতো রেগে যাচ্ছিস কেন?
ওটা রেগে যাই না ওটা রোগে যাই! প্রেমিকার নগ্ন শরীরের নীল হ্রদে হিমালয় হয়ে বসে যখন দেখি ওর চোখের কোনে আত্মারাম বাইরে উড়ে যাবার ছটফটানি তখন আমি ফারুকীর ‘কাট’ শোনার আগেই আমি ঘোড়া চালাই, মার্সিডিজ বেঞ্জের বেগে রাগে অথবা রোগে! এটা ভেবোনা এটা কোনো রোজগেরে নৈমিত্তিকতা। এটা স্বপ্নও বা সত্যিও।
সেদিন নীল পুকুরের ধারে, পরীর ডানায় ঘুমোতে ইচ্ছে করছিলো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতেও। জেগে থেকে পরীকে দেখতে পাচ্ছিলাম নীল পুকুরের সব জলে ভেসে যাচ্ছিলো আমার দু চোখ। পরী ওর ডানা গুটিয়ে আমার চোখে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। আমি উড়ে গেলাম। এটাও রোগ! মামুন বুঝতে পারছিস তো রাগী নই!
এই সেদিন লাল গোধূলীর রঙ যখন মিশে যাচ্ছে জ্বলা সিগারেটের রঙে, ও বললো আমায় ছেড়ে যাবে না তো! মনে হলো, আমায় হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পদ্যপুকুরে যেখানে প্যাঁক প্যাঁক করে পদ্যের পুরুষেরা যেখানে হিসেব কষে দিনমান। কোথায় ছেড়ে যাবো!
কেউ কি ছেড়ে যেতে পারে ভালোবাসলে?
আর যাই ভাবো পদ্যপুকুরের অতিথি ভেবো না আমায়! ও আমার কথায় জ্যামিতির উপপাদ্য দেখলো আর আবার ডুব দিলো নির্জন হৃদ-মন্দিরের ফ্যান্টাসিতে।
পরীকে আমি ছেড়ে আসিনি তো! নিয়ে এসেছি বুকে করে ও জানতেই পারেনি বোধহয়। রেখে দেবো কাঠের আলমারির মাথায় রাখা নারকেলের মালায়। চুপটি করে থাক আমার প্রান ভোমরা আমার মনের সাথে। কান্না পেলে তেপায়া টেবিলে ভরদিয়ে উঠে অপু পেড়ে দেবে সেই নারকেলের মালা। আস্তে করে ঢুকিয়ে নেবো বুকের খাঁচায় কেউ টেরই পাবে না!
সেদিন বাজারে গেলাম চোখ ধাঁধাতে আর মন ভোলাতে! কত রকমের হাঁক ডাকের মুখোমুখি। আমার মন তো ইন্দ্রিয়ের হাত চেপে ছুটে পালাতে পারলে বাঁচে এদিকে চেতনার তখন অ্যাজমার টান। আমি তখন শাঁখের করাতে যাই কোন দিকে। দেখলাম মণ্ডায়ের দোকানের পাশে পরী হাসছে নীল পোশাকে। বললাম পরী আমার কষ্ট হচ্ছে। পরী আমার হাত ছুঁলো হাতে পড়ে রইলো ধূসর ইনহেলার।
বেঁচে গেলাম আমি একটুর জন্য!
সেদিন সারাদিন একলা ঘর। একলা আমি একলা আমার টুথ পেষ্ট। একলা আমার দৈনন্দিন কুলকুচি। মনের গলি দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম গড়াইয়ের ধারে। একলা নদীর পারে একলা আমি। ছলাত ছলাত ঢেউ। সাদা সাদা কালো চোখের পাখি। ওই দূরে অর্ধনগ্ন নারীর সৌন্দর্য্য ঘর্মাক্ত। আমার কানে লেগে থাকা লালন গানের ভাঁজ।
রক্ত আমার জীবনের আসে মৃত্যুর অতিথি হয়ে মাঝে মাঝেই। সে রাস্তায় রক্তাক্ত আমার সাদা জামায় সার্ফ এক্সেলের আপ্রান চেষ্টাতেই হোক বা হাসপাতালের সামনের মাঝ রাস্তায় ভটভটির কালো ধোঁয়া রক্তে লতপত হয়ে আঁশটে গন্ধ ছড়ানোতেই হোক! পরী বললো রক্ত ওরও ছোটবেলাকার সাথী। ছোটবেলাকে বড় করেছে নাকি রক্ত!
নব্বই ঘরের দাদুর চোখে এসে দেখলাম ফুটন্ত যৌবন সেদিন দাদীর গাল বেয়ে সাদা ফেনার ঢেউ। বাড়ীতে কান্না আর কীর্তনের যুগলবন্দী। আমি বুকের মধ্যে পরীকে খুঁজছিলাম পাগলের মতো।
পরী আমিও একদিন মরে যাবো! মরার আগে উড়বোনা তোর সাথে? পরী উড়েছিলো আমাকে নিয়ে উড়তে উড়তে এলো এই সাদা কালো অক্ষরে ভরা শহরটার উত্তুরে হাওয়ায় যারা বেঁচে থাকে সেই সাঁঝবাতির চড়া মেক আপের গলিতে।
পরী ছুঁড়ে দিয়েছিলো প্রশ্নের নামাবলি আমায় তুমি কি আহম্মক কেঁদে মরো এর চেয়েও ঢের ভালো নেই কো তুমি! ভক করে নাকে এসেছিলো বুলি চড়ানোর পচা গন্ধ। গন্ধটা আমায় উড়িয়ে নিয়ে গেলো কল্পনার যুবতীদের গেঁয়ো হাটে যারা আমায় ডেকেছে বিজ্ঞাপনের আঁশটে গন্ধে! সবাইকে ভুলিয়েছে দিনকে দিন। আমি ভুলতে চাইছি জ্যান্ত মেটামরফোসিস। কি চাইছি শুধু হাতড়ানো সিনেমা হলের পেছন সিটের মতো।
-কি পাচ্ছি?
ধোঁয়াটে উত্তর টিভির সাধুদের জ্ঞানের মতো। সবাই বুলি খাওয়াতে চাইছে পরী। পরী হেসে বললো খাও কেন? খাই না রে পরী গিলি।
আর কোনো নৌকা নেই তো এ গিলোটিনে ঢুকে পড়েছি তো। খাঁড়াটা নেমে আসছে একটু একটু করে। পরী আমার সামনে থেকে যাস না রে। ওরা আমার মুন্ডহীন দেহটাকে রিসাইকেল বিন থেকে রিষ্টোর করে বাজারে ছাড়বে। ওটাই ওদের চাই মুন্ডহীন একটা "দেহ'। আর আমার প্রশ্নে ভরা মুন্ডুটা নিয়ে ওরা ৭০ দশকে পাঠাবে ময়দানে ফুটবল খেলার জন্য কোনো কাকভোরে। ওরা প্রশ্ন চায়না পরী ওরা আনুগত্য চায়। ভিয়েতনামের ধানক্ষেত থেকে বোকা চাষা যখন প্রশ্ন ছুঁড়লো বোমারু পাখীর চোখে ওরা আগ্নেয়গিরি ঢেলে দিলো ইরাকের খনিতে।
আজ যখন তোর পিঠে আমার আদরের লাল লাল ছোঁয়া, তোর কালো পাতায় মোড়া চোখ দুটো বোজা কোনো অলীক স্বপ্নের সুখে তোর সারা দেহে সাঁতার কাটতে কাটতে বাঁচতে ইচ্ছে করে আরেকবার। সত্যি করে ভুলে যেতে ইচ্ছে করে বাঁচতে গেলে ‘চে' এর মতো মহান হয়ে যাবো যদিও ইতিহাস বলে মহান শুধু মৃত্যুর পরিণতি।
পরী আমাকে একটা চশমা কিনে দিবি যে চশমায় শুধু তোকে দেখা যায় না দিবি তো অন্ধ করে দে আমায়।
শক্তিবাবুর কথাটা মনে আছেতো, ‘ভালোবাসা পেলে লন্ডভন্ড করে চলে যাবো একদিন!’
আমাকে একটু ভালোবাসবি পরী? আমি কি পারবো এই জমকালো মেকওভার ছেড়ে সবকিছু লন্ডভন্ড করে বেরিয়ে পড়তে নীল আকাশে?
কী রে বলনা পরী?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


