somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারওয়ারচৌধুরী : অবমূল্যায়িত এক প্রতিভা/সামহোয়ারের পরশ পাথর

০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ক্ষ্যাপা পরশ পাথর খুঁজে বেড়ায। নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবির কবিতার নায়ক ক্ষ্যাপা অর্থাত পাগল। মাথার ঠিক নেই। আর পরশ পাথর হচ্ছে যা ছোঁয়ালেই সোনা হযে যায। ক্ষ্যাপা পরশ পাথর খুজতো নুড়ি পাথরের মাঝে। রাস্তায় যা দেখতো তাই ছোয়াতো তার শরীরে বাধা শিকলে। তারপর দেখতো সোনা হয় কিনা, হতাশায় ছুড়ে ফেলে দিতো পাথর। একদিন দেখে তার শিকল সত্যিই সোনা হয়ে গেছে। অর্থাত সে পরশ পাথর পেয়েছিলো, কিন্তু নিজের ভুলে অবহেলায় বুঝতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষ্যাপা ভুল করেছিলো। আমি করিনি। এই ব্লগে প্রতিভাবান লেখক খুব কমই আছে। সারওয়ার চৌধুরীকে আমি তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে রাখব। যোগ্যতা বলেই তিনি আমার কাছে সে মর্যাদা আদায় করে নিয়েছেন।
কে এই সারওয়ার চৌধুরী। শুধুই কি চাদ সওদাগরের মতো সাত সাগরে ভেলা ভাসিয়ে দেশান্তরী হওযা এক রাজপুত্র? না শুধু তা নয়। যদিও দিব্যকান্ত সাচৌকে দেখলে এই ভাবনার ব্যত্যয় হবে না কারো মধ্যে। চোস্ত বাংলা, হিন্দি, উর্দু, আরবীতে কথা বলেন, ব্রিটিশ একসেন্ট ইংরেজী। বহুভাষাবিদ সাচৌর সঙ্গে তুলনা চলে শুধুমাত্র ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর। কিন্তু শহীদুল্লাহ সাহেব ভাষা শিখেছেন বই পড়ে। এমন বই ফুটপাথে প্রচুর পাওয়া যায় যাতে সাতদিনে কোরিয়ান থেকে স্প‌্যানিশ সব ভাষা শেখানোর চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু সাচৌ এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন মানুষের সঙ্গে মিশে। তিনি যখন তার আসল দেশের নাম বলেন তখন নিশ্চয় শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে অপরিচিত কারো। সিলেটি হিসেবে আমার গর্বে বুক ভরে ওঠে।
কিন্তু সাচৌ তো শুধু মানুষের নন। তিনি সকল জীবের। জীবকে ভালোবেসেই তিনি ঈশ্বর সেবা করেন। তাই আমার কাছে যা পাখি, সাচৌ তাকে নীলপরী হিসেবে কল্পনা করে নেন। আমার কাছে যা মাছ, তার কাছে তা মৎসকুমারী। আর এর মাঝে তার বক্ষ্রচারী যাপনের কিংবা জিতেন্দ্রিযতার এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। সাচৌর কল্পনার নারীরা তার সঙ্গে ব্যাভিচার করে না। তারা শিল্প নিয়ে কথা বলে। সম্পর্কটাও দুই তরফেই প্লেটনিক। এই যে আবিষ্কারের চোখ, বোধের অভূতপূর্ব উন্মেষ- তা যেনতেন লেখকের মননে ধারণ করেনা। সাচৌ এখানেই বাকি সবার চেয়ে এগিয়ে।
তার কবিতায় ফররুখ আহমেদের জোশিলাপান আর জীবনানন্দ দাসের সুরিয়াল রোমান্টিসিজম হাত ধরে চলে। তারপরও বড্ড হেলাফেলায় লিখেন তিনি এসব লেখা। প্রতিনিয়ত চলে ফরম্যাট ভাঙ্গার খেলা। নিজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। অবুঝ অবোধ সমালোচকরা সেই লীলা না বুঝে ঝাপিয়ে পড়েন হিংস্র বাক্যবানে তার পোস্টকে জর্জরিত করতে। কিন্তু অসীম ধৈয্য নিয়ে সাচৌ অপেক্ষা করেন তাদের সম্বিত ফেরার। রচনা করেন নতুন কাব্য। কিন্তু তাকে শুধুই লেখকের কাতারে রাখলে তাকে অসম্মাণ করা হয়। তিনি পাঠক। সক্রেটিস থেকে ফুকো তার নখদর্পনে। আর্কিমিডিসের ইউরেকা থেকে আলজাবিরের এলজেব্রা কিংবা স্টিভেন হকিংও তার কাছে অপরিচিত নন। বিজ্ঞান, দর্শন, কলা- সব কিছুকে সুপাচ্য ও সুস্বাদু খিচুড়িতে রূপ দিতে পারেন এই সব্যসাচী। আর বিদগ্ধ পাঠক অবাক হয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে এই ক্ষণজন্মা প্রতিভাবানের প্রতিভার দ্যুতিকে।
সেই আলো সাচৌ অনায়াসে বিলান। আর তাতে আলোকিত সামহোয়ারে আমাদের মতো পাঠকরা। তার জ্ঞানে কুয়ার অতল সীমা ন্যানোমিটারে মাপার নয়। তার এই সৃষ্টিশীলতার পরশ পাথরে সোনা হয়ে উঠেছে কাদা ছোড়াছুড়ির কারণে বিপর্যস্ত সামহোয়ার। আমাদের মতো নির্বিবাদী জ্ঞানপিয়াসীদের জন্য তিনি ত্রাতা। প্রেরিত এক অলৌকিক ব্লগার। প্রার্থনা করি তার ক্ষুরধার লেখনীতে ফালা ফালা হয়ে চিরে যাক যতো বিরুদ্ধবাদিতা। প্রার্থনা করি তার কুমারত্বের অবসান যদি কখনও ঘটে, তার ঘর আলো করে আসেন যেন তারই মতো প্রতিভাবান কোনো নারী। তারই মতো ধারালো লেখনী নিয়ে। এতে ভবিষ্যত বংশধরদের মাধ্যমে আমাদের দেশ আরো বড় কোনো প্রতিভা পাবে। ধন্যবাদ সাচৌ আমার জ্ঞানচক্ষু খুলে দিয়ে আপনার কাব্যসুধা পান করতে দেযার জন্র্য। যুগ যুগ জিও সাচৌ। ধন্য সামহোয়ার, ধন্য আমরা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ২:০৯
৩৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×