somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় জগৎ সম্পূর্ণ (বড়দের বড় গল্প)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়ে দেখলেই যে জসিম তার প্লান বাস্তবায়নে হামলে পড়ে বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। তবে মেয়েদেরকে তার ভালো লাগে। তা ছাড়া জসিম ছেলে হিসেবে মন্দ একথা তেমন কেউ বলবে না। এমন কি মেসের জটিল বড়ভাই আব্বাসেরও তেমন আপত্তি থাকে না যখন তার সম্পর্কে কেউ এমনটি বলে থাকে। ভালই ছেলেটি। হতে পারে বিরক্তিকর সরল, বেশ কিছুটা গ্রাম্য আর কাজে কর্মে শ্লথ গতির, তবে মোটের উপর খারাপ না।

জসিম এই শহরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য। সুশীলন কোচিং সেন্টারের একজন সুশীল ছাত্র সে। তার কাসে অন্য সকল ছাত্রই আশেপাশের কলেজগুলো থেকে পাশ করা। শুধু সেই এসেছে পাড়া গাঁ থেকে। ঝুলন, তারেক, ফরহাদ, পিংকি, তাসফিয়া এদের সামনে বেশ অবগুন্ঠিত মনে হয় নিজেকে। শহুরে ছেলে মেয়েদের কথা বলার ধরন, বিষয়, লিঙ্গীয় পরিধি এই সব খুব ছুঁয়ে যায় তাকে। সিন্ডি, নওমি কিংবা পামেলাদের পরিচয় আর মানচিত্র তাদের মুখস্ত। জসিম শুধু জানে মুহূরী নদী, বালু মাঠ, নদী তীরের কাশবন আর শাকিল, শাবনূরদের।

মেসে তারা তিন জন থাকে। সে, আব্বাস আর রণি। আব্বাস শহরের নাম করা কলেজে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করছে। তুখোড় সমাজতান্ত্রিক। একটি ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের মাঝারি গোছের নেতা সে। এর বাহিরে শেয়ার ব্যবসা করে আর একটা প্রেম করে। শিমু আপা। আব্বাস ভাইয়ের প্রেমিকা। চশমা পরা শ্যামলা গোছের সাধারন মেয়েটি নাকি তাদের সংগঠনের একজন নামকরা কমরেড। আব্বাস ভাইয়ের কাছে ছবি দেখেছে জসিম, উত্তোলিত হাতে লাল কালিতে লেখা ফেস্টুন ধরা যেখানে পুঁজির রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়া শ্রমিকদের পে কি যেন লেখা। একটু বাঁকা করে ধরা বলে জসিম পুরোটা পড়তে পারে না। তাতে কি! আব্বাস ভাই আর শিমু আপা যে কত বড় একটা সংগ্রামের কাজে জড়িত তা বুঝতে দেরী হয় না জসিমের।

রণির কথা বেশী বলার দরকার নেই আর বলার মত তেমন কিছু নেইও। রণি বাইরে গেলে সকাল সাতটায় ঘুম ভেঙ্গে জসিমের সদর দরজা বন্ধ করতে হয়। এছাড়া সারা দিন তেমন কোন বিরক্ত করে না রণি। কারন সে রাত এগারোটার আগে মেসে ফেরে না। বাড়িওয়ালার গেট বন্ধ করার পূর্ব মুহূর্তে রণির ত্রস্তপায়ে আগমন যেন আচমকা তাড়া খাওয়া কোন প্রাণীর প্রতিচ্ছবি।

তিনতলা বাড়ীর সাড়ে তিনতলায় থাকে জসিমরা। অর্থাৎ, দুটো পয়সা বেশী কামানোর আশায় জসিমদের দুবাই ফেরত বাড়ীওয়ালা ছাদের একপাশে তিন কামরার ছোট এই ঘরটি নির্মান করে ছাত্রদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। ব্যাচেলর হিসেবে কোথাও ঘর ভাড়া চাইতে যাওয়াটা যেমন বেয়াদবীর পর্যায় পড়ে সেখানে কিছু টাকা বেশী দিয়ে হলেও এমন একটা খোলা ছাদ সমেত বাড়ী নিয়ে জসিমদের পরিতৃপ্তির শেষ নেই। মেসের বড় ভাই আব্বাসের কাছ থেকে প্রতি মাসের তিন তারিখের মধ্যে ভাড়া চাইতে আসা ছাড়া বাড়ীওয়ালা উপরে উঠেন না। শুধু কাপড় শুকানো আর অর্ধমৃত কাজি পেয়ারা ও পাথরকুচি গাছে পানি দেয়ার ছাড়া অন্যরাও ছাদে উঠেনা বললেই চলে। তবে মাঝে মধ্যে বাড়ীওয়ালা খালাম্মা ছাদে উঠলেই বড় বিপদ হয় জসিমদের। লোমহর্ষক বিভিন্ন উচ্চকিত হূমকী বাসায় থাকার সুবাদে নীরবে পরিপাক করে জসিম। কেন যে বুয়া ঘর কুড়ানো ময়লাগুলো বাস্কেটে না ফেলে ছাদে ছড়িয়ে ফেলে!

দেখতে গ্রাম্য ধরনের গোলগাল ও ফর্সা জসিম কিন্তু নিতান্তই সাধাসিধে একটি ছেলে। তবে এই বয়সের একটা ছেলের তোষকের নিচে গোটা চারেক নিউজপ্রিন্টের চটি থাকাটাকে যদি আপনি বাঁকা চোখে দেখে থাকেন তাহলে জসিমকে আপনার খুব বেশী ভালো না ও লাগতে পারে। দুপুরের পর মেস যখন খুবই খালি থাকে তখন গুপ্ত সাহিত্যের রসময় জগতে হারিয়ে যাওয়া জসিমের সা¤প্রতিক সময়ের একটা ভাব বিলাসিতা। জসিমের এই সাহিত্য বিলাসের পেছনের ঘটনাটা কিন্তু বেশ নাটকীয়।

বুয়া আসেনি সেদিন। গলি থেকে বের হয়ে সদর রাস্তার পাশে একটা বিরানী হাউস থেকে তেহেরী খেয়ে মৌরী চিবুতে চিবুতে পত্রিকার স্টলে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিল সে। এই সময়ে স্কুলের পোষাক পরা একটি মেয়ে, হয়তো নাইন বা টেনে পড়ে এসে হকারকে জিজ্ঞাসা করলো,

ঐ সব বই আছে?
মেয়েটার জিজ্ঞাস করার বিচিত্র ধরনে জসিমের মনযোগ এরশাদের বক্তব্য বিবরনী থেকে পিছলে যায় মেয়েটির দিকে।

জে আফা। আছে!
বলে মিচকি হাসি দিল ফিচেল পিচ্চি। সারে সারে ম্যাগাজিনগুলোর একদম নীচ থেকে টেনে বের করা হলো একটি বই। চকিতে মলাটে চোখ পড়ে । লেখা যৌবনের ............. কি যেন আর পড়া যায় না। তবে জনৈকা শ্বেতাঙ্গীনির উন্মুক্ত উচু-নিচু ভাঁজ ভঙ্গিল ঠিকই চোখে পড়ে তার। খবরের কাগজে মোড়ানো বইটি ব্যাগে ঢুকিয়ে দাম চুকিয়ে মেয়েটি চলে গেলে জসিম হকারের কাছে জিজ্ঞাসা করে আর আছে কি না। পিচ্চি হকার এক গাল হেসে চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞাস করে,

ভাইয়া, দেশী না ফরেন?
সেই থেকে শুরু। তোষকের নিচে গোটা তিন চারেক আর ট্রাভেল ব্যাগের ভেতরে গোটা বিশেক চটির বর্তমান মালিক জসিমের একটা প্রিয় ফ্যন্টাসী হচ্ছে, পথেঘাটে সেই মেয়েটির সাথে আবার দেখা হয়ে গেলে সে প্রস্তাব করবে অহেতুক রাস্তার রোদে এই সব কেনাকাটা বাদ দিয়ে সুবিধাজনক সময়ে মেসে এসে জসিমের পুরোটা (লাইব্রেরী) নেড়েচেড়ে দেখার জন্য।

খুব চাইলেও আব্বাস ভাইয়ের সংগ্রাম মূখর মেজাজের কারনে তার কাছাকাছি ঘেষা হয় না জসিমের। তবে যেদিন যেদিন শিমু আপা তাদের মেসে আসে সেদিনগুলো ছাড়া। শিমু আপা এলে সকাল সকালই আসেন। সেদিন আব্বাস ভাইয়ের গলায় মধুর নহর বয়ে যায়। দুপুরে উন্নতমানের রান্না আর ঠান্ডা পানীয় থাকে। জসিমের মনের মধ্যেও উৎসব হয়। কতই না ভালো থাকে আব্বাস ভাইয়ের মন! কিন্তু জসিমের মত হতভাগারা যেখানে থাকে সেখানে ভালো কিছু বেশী দিন টিকবে কেন?

সুশীলন কোচিং সেন্টারের জনৈক পরিচালকের মায়ের অকস্মাৎ মৃত্যুতে তিন ঘন্টার কোচিং শেষ হয়ে যায় মাত্র আধা ঘন্টায়। অবসর সময়টুকু জসিম পুরাতন বইয়ের দোকানে যেতে পারতো কিংবা বিপ্লব উদ্যানে হাটাহাটি কিংবা হকার মার্কেট! কিন্তু না জসিম একা একা সেখানগুলোতে যাওয়া পচ্ছন্দ করে না। পছন্দ করে না এমন কি ইত:স্তত রাস্তায় হাটা হাটি করাও। সে ল্য করেছে শহরের ধাউর লোকজনগুলো কিভাবে যেন বুঝে যায় যে সে গ্রাম থেকে এসেছে। অনাবশ্যক অসংলগ্ন ব্যবহার করে তার সাথে। যেন শহরের এই যে এতো নাগরিক অসুবিধা তার অন্যতম কারণ হচ্ছে জসিম। তাই সে রাস্তায় হাটাহাটি বেজায় অপছন্দ করে। পছন্দ করে মেসে তার আট বাই আট রুমটাকেই।

নিজের ভাগের চাবিটা দিয়ে সদর দরজার তালা খোলে জসিম। অনেকণ ধরে চেপে থাকা তরলকে শরীর নির্গত করার জন্য টয়লেটে যায়। টয়লেটে একটা চাপা সুগন্ধ ভুরভুর করছে। কেমন যেন পরিচিত। আদুল গায়ের পানি মুছতে মুছতে হঠাৎ মনে পড়ে - আরে! এতো শিমু আপার ব্যবহৃত পারফিউমের সুগন্ধ! এসেছে নাকি! মন ভালো হয়ে যায় জসিমের। মেসে শিমু আপার উপস্থিতি এক গোপন ও নিজস্ব ভালোলাগা জসিমের। এসেছে নাকি দেখতে আব্বাস ভাইয়ের ভেজানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে জসিম।

হঠাৎ যেন তরল হাইড্রোজেন ছড়িয়ে পড়ে জসিমের শরিরে। হাটু প্রথিত হয়ে যায় কালো সিমেন্টের মেঝেতে। শিমু আপার সেলোয়ার, কামিজ ওড়না ইত্যাদি অবিন্যস্ত রাখা আব্বাস ভাইয়ের চেয়ারের হাতলে আর আব্বাস ভাইয়ের লুঙ্গি গোল করে রাখা মাথার কাছে। পোষাক ছাড়া কেমন ফর্সা, বেমানান আর বোকা বোকা লাগে শিমু আপাকে। এই প্রথম এমন করে মেয়ে দেখা। হাস্যকর ভঙ্গিতে স্ট্যাচু হয়ে থাকা নেংটুদ্বয়কে পেছনে ফেলে টলতে টলতে রুম থেকে বের হয় জসিম। শুয়ে পড়ে বিছানায়। ছয় মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড পর হঠাৎ বিদ্যুতস্পৃষ্টের মত লাফিয়ে উঠে টয়লেটে যায়। আরো চার মিনিটের গোড়ার দিকে কান্ত পায়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে কপালে বাহু রেখে। উচ্চকিত কথোপোকথন শোনা যায় আব্বাস ভাইয়ের রুম থেকে। সব বোঝা যায় না। শিমু আপার শব্দই বেশী। প্রধানতরগুলো হচ্ছে, ‘আমি আগেই বলছিলাম’, ‘বেআক্কেল’, ‘আর যদি আসি’ ইত্যাদি।

শুয়ে থাকতে থাকতে দীর্ঘ কয়েক যুগ পার করে দেয় জসিম। টিপ টিপ করে ঝরে পড়ছে সময়। অনন্তকাল পর হঠাৎ ধা করে খুলে যায় আব্বাসের ঘরের দরজা। কাপড় চোপড়ে সর সর শব্দ তুলে দ্রুতগামী সরিসৃপের মত বেরিয়ে যায় শিমু। হায়! বাহিরে যাবার সদর দরজাটি যে জসিমের কামরাতেই।

জসিম জানেনা কতণ সময় পেরিয়ে ছিল। বুঝি বা একটু তন্দ্রা মতই এসেছিল। তবুও তার কামরাতে আব্বাসের ইতস্তত: বিপ্তি পদচারণা সে ঠিকই টের পায়। একই ভাবে শুয়ে থাকে সে।

‘ জসিম, ঘুমাইছ নাকি’?
আব্বাসের গলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের কুটনৈতিক মশৃণতা।

‘ নাহ্! এমনেই শুয়ে আছি’।
প্রমাণ করার জন্যই হয়তো ভয়ার্ত কিংবা বিহবল জসিম উঠে বসে চৌকিতে।
জসিমের কুন্ঠিতভাব দেখে কিছুটা আস্বস্ত হয় আব্বাস। দেড় কাঠি চড়া সুরে বলে,

‘ আইজ তোমার শিমু আপার কাছে খুব অপমান হইতে হইল আমার। এই কামডা তুমি ক্যান করলা’?

‘ আমি বুঝি নাই ভাই! মনে করছি আপা আইছে দেখা কইরা আসি’।
জীভ তড়পিয়ে আর মাথা নীচু করেই দ্রুত উত্তর দেয় জসিম।

‘ শিমু কি তোমার কাছে আইছিল? তুমি ক্যান্ ব্যস্ত হইলা তার সাথে দেখা করার জন্য’? কৈফিয়তের ধনূকে যুক্তি বিষ মাখানো তীর ছোঁড়ে আব্বাস। সরাসরি জসিমের মগজ লক্ষ করে। তারপরই একটা অদৃশ্য ভোজালীর দুই পিঠ হাতের তালুতে ঘষতে ঘষতে বলে,

‘ যাক যা হওয়ার হইছে। এই বিষয়টা গোপন থাকা আমার জন্যও ভালো, তোমার জন্য আরো ভাল । কি বল’?

‘না! না! - থাকবো থাকবো! এইটা কি মানুষরে বলার বিষয় নাকি’?
জসিম আশ্বস্ত করে আব্বাসকে (নাকি নিজেকে)। একটা চোরাশ্বাস নাক চুইয়ে মুক্তি পেয়ে মিশে যায় চার দেয়ালে ঘেরা বাতাসে। জসিম মনে মনে স্বীকার করে তার এতণ ধরে ভাবা অন্তত গোটা সাতেক সম্ভাব্য সমাধানের চেয়েও অনেক সহজ হয়েছে বাস্তবেরটি।

তাই দু’দিন পরেই যখন আবার শিমুর পারফিউমের গন্ধে আমোদিত হল খোলা সদর দরজার ওপাশটা। জসিম যেকোন ধরনের প্রতিক্রিয়া গলাই যত্নের সাথে টিপে ধরে। শিমু এখন প্রায়ই আসে মেসে। আগের চেয়েও ঘন ঘন, সুগন্ধও তেজী। প্রতিবারই অনেকটা একই কায়দায় বন্ধ হয়ে যায় আব্বাসের ঘরের দরজা।

এক অলিখিত দন্ড নিয়ে জসিম তখন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পথে পথে হাটে। ভিন্ন চোখে খুজে বেড়ায় কোন চাহনীর চাকচিক্য। রাস্তায় হাটতে গিয়ে ইদানিং জসিমের একটা প্রিয় আভ্যাস হলো শিমুকে বাটখারা বানিয়ে অন্য সবাইকে মেপে দেখা। জসিম দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পায় কার ভেতরটা কেমন! তার আকার, আয়তন আর ওজনইবা কি। খট খট খট ভাঙ্গা রাস্তার রিকসায় কিংবা দ্রুতগামী সিএনজি টেক্সিতে বাতাসের বাতুলতায় স্খলিত আভরণের ক্ষণকালীন বদান্যতায় জসিম আপ্লুত হয়। জীবনের বদলে যাওয়া হয় জীবনে প্রথম একটি নারীদেহ দেখার অভিজ্ঞতায়। জসিমের জীবনে সৃষ্টি করে দ্বিতীয় জগৎ। সযতনে লালিত ও চর্চিত হওয়া দ্বিতীয় জগৎ, যার সন্ধান শুধু আব্বাস কেন, কোন বাপের ব্যাটারই জানা নেই। এটি জসিমের একান্ত নিজস্ব।

ক'য়েক ঘন্টা পর আবার ফিরে আসে ঘরে। সদর দরজায় লাগানো থাকে তালা আর শুন্য ঘরে কেবলই ভেসে বেড়ায় শিমুর সুগন্ধি। ঘ্রানেন্দ্রিয় আরো সু করে তুলতে চায় জসিম। আরো কিছু গন্ধ খোঁজে, আদিম গন্ধ। খালি গায়ে গড়াগড়ি খায় আব্বাসের বিছানায়। নাকে খত দিয়ে ঘুরে বেড়ায় বিছানার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। যেন বা উপাসনা করে সন্তুষ্ট করতে চায় কোন দেবীকে। লুলা ভিক্ষুকের আকুলতায় মনের আকাঙ্খা হাত বাড়ায় স্বর্গীয় অথচ পার্থিব কোন আপেলের আশায়। আর কবিতা লেখে। ছন্দ, লয়, মিলহীন কবিতা যার অরে অরে জড়ানো থাকে তীব্র পিপাসা, ছত্র থেকে ছত্রে গড়িয়ে পড়ে আঠালোতা, আপেল পাবার উদ্দেশ্যে।

নিরুত্তাপ জীবনে একমাত্র উত্তাপ ছিল ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম। তার মাঝেও পানি ঢেলে দিতেই বুঝি একদিন ঝপাঝপ বৃষ্টি এলো! জসিম মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে চ্যাপ্টা তোষক বিছানো চৌকিতে গড়িয়ে গড়িয়ে সাহিত্যে নিমগ্ন হয়েছিল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ভাবে যাচাই করছিল বিভিন্ন গল্পের নাটকীয় গল্পগুলোকে। বৃষ্টি এসে তাকে উদাসীন করে তুলল। নিমগ্নভাবে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে তদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল জসিম। ফ্যান্টাসির নানা উপাদানগুলো লাল, নীল রঙের আশ্চর্য বুদবুদের মত ঘুরতে থাকছিল তার চারপাশে। এমন সময় সহসা বজ্রপাতের মত গুড়–ম গুড়–ম শব্দে দরজায় আঘাত পড়ে।

জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বাড়ীওয়ালার বাসার কাজের মেয়ে, সাবেক গার্মেন্টস্ কর্মী, দেড় বছরের কন্যা সন্তানের জননী ও এক বছর আগে স্বামী পরিত্যক্তা - রীণা। মালিক পরে লোক বলে রীণার মধ্যেও একটা মালকিন মালকিন ভাব রয়েছে। তাই দরজায় বজ্রপাত হতেই পারে। বিহবল জসিম করণীয় ভাবতে থাকে।

‘ ভাইয়া দরজাডা খুলেন না, ভিইজ্জা যাইতেছি তো’

খলবলিয়ে অস্থিরতা প্রকাশ করে রীণা।
এক হাতে লুঙ্গি গোছাতে গোছাতে অন্য হাতে দরজা খোলে জসিম। বিহবলতার কৈফিয়ত দেয়

‘ঘরে কেউ নাই তো ......’।

‘তো কি অইছে, আমি কি বাগ? ইশশিরে, খালাম্মার শুকনা কাপরগুলা ভিজ্জা গেল’!

বলে জসিমকে অগ্রাহ্য করে ঘরে ঢুকে গেল রীণা। অর্ধ ভেজা কাপড়গুলো জসিমের চেয়ারের হাতলে রেখে জসিমের দিকে ঝুঁকে কুন্তল চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

বাড়ীওয়ালার আধুনিকা মেয়ে সিলভীর ব্যবহৃত সাদা জর্জেটের কামিজটির মালিকানা পরিবর্তন সুত্রে বর্তমান মালিক রীণা। ভেজা কামিজ গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়ে অর্গল খুলে যায় গোপনের। অর্ধ স্বচ্চতা মাঝে মধ্যেই কি ছাড়িয়ে যায় পুরো স্বচ্ছতাকে? চুল ঝাকানোর ছন্দে মনে হচ্ছে কাঁচের দেয়ালে আটকা পড়া খয়েরী চঞ্চুর একজোড়া শুভ্র কবুতর ডানা ঝাপটা ঝাপটি করছে মুক্তির পিপাসায়।

এই নির্জন দুপুরে, জলে ভেজা হাওয়ায় কিছুণের মধ্যেই হঠাৎ করে জ্বরের ভাইরাস আক্রমন করে জসিমকে। সারা শরীর হতে বিকিরণ ঘটে তাপের আর জসিম বিকারগ্রস্থ হয়। অন্ধ ভিখারীর মত লাল, নীল, সাদা সব বর্ণ একাকার হয়ে যায়। এক অমোঘ আকর্ষনে সে কাচপোকার মত এগিয়ে যায়। হাতড়াতে হাতড়াতে কোমল বাহুলতার নীচ দিয়ে দুই করতলে মুঠো করে ধরে ফেলে দোদুল্যমান দুটি পায়রা। ভলো ভাবে কিংবা শক্ত করে ধরে রাখে যেন মুঠো আলগা হলেই এই বর্ষণমুখর দুপুরে উড়ে যাবে ওরা।

এ্যই .....হি হি হি..... ভাইয়া করেন কি! করেন কি! হি হি হি!

মুচড়ে মুচড়ে রীণা লেপ্টে যয়ি জসিমের সাথে।

জসিমের মনে হতে থাকে রীণা নিউজপ্রিন্ট কাগজের মানুষ। অনেক আগে থেকেই তার সাথে পরিচয়, অভ্যস্ত নিবিড় লেনদেনে। তাই টানতে টানতে খিল খিল খিল ভাঙ্গতে থাকা রীণাকে নিয়ে যায় আব্বাস ভাইয়ের খাটে। কাঁপা হাতে তোষকের নীচ থেকে বের করে আনে অন্যজনের মোড়কবদ্ধ প্রতিরোধ। রীণা প্রগলভ ও গভীর গলায় বলে ওঠে

“ উরে বাপ! দেইখ্যা তো মনে হয় ভাজা মাছও উল্ডাইয়া ‍‍‍খাইতে পারে না, এহন দেহি সব ব্যবস্থাই আছে”।

ব্যপক পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে রীণা বন্দরে নোঙ্গর ফেলে ব্যস্ততায় গম্ভীর জসিম। কখনো তার কাছে মনে হয় চট্টগ্রাম বন্দর, কখনো খুলনা বন্দর, কখনো শিমু বন্দর, অপসৃয়মান সিএনজির যাত্রী বন্দর আর কখনো বিদেশীনি বন্দর। মনে মনে বিভিন্ন বন্দরগুলোর নব্যতা মাপতে থাকে গভীর মনোযোগী কাপ্তানের মত। নোঙ্গরের আঘাতে আলোড়িত হয় উপকূলের নোনা পানি। প্রথম সমুদ্রযাত্রার উত্তেজনায় থরো থরো কাঁপে জসিম। যেন এক দিনেই সাত সমুদ্দুর আর তের নদী পাড়ি দিয়ে দেবে। পানি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এক সময় হঠাৎ নীরব হয়ে যায় জসিম। যেন আসন্ন কোন সাইকোনের প্রতিক্ষায় অপেক্ষমান হয় সে।

তারপরই, তেমন কোন পূর্ব সংকেত ছাড়াই জসিমের শরীর ফুঁড়ে ওঠে ঘূর্ণি, অচেনা আঘাতে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত করে রীণা বন্দর জলোচ্ছাসের আঘাতে প্লাবিত করে দূর্বল হয়ে পড়ে ঝড়। তারপর শুধুই নীরবতা। এতোণের ব্যস্ততা ও কর্মচাঞ্চল্য হঠাৎ করেই যেন থেমে যায়। মাঝ দুপুরে সমাধি পাড়ের নীরবতা ছড়িয়ে পড়ে জসিমদের সেমি পাকা ভাড়া ঘরে।

বিদ্ধস্ত রীণার কাছ থেকে গড়িয়ে দূরে সরে যেতে যেতে জসিমের মাথায় দু’টি চিন্তা প্রধানতর হয়ে ওঠে। যথাঃ ০১. ‘একটি সিগারেট খাবো’ এবং ০২. ‘এ আমি কি করলাম’। এই চিন্তাদ্বয়ের অবকাশে কখন যে রীণা টলতে টলতে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় আর বাড়ীওয়ালী খালাম্মার কাপড়গুলো নিয়ে নীচে চলে যায় তা খেয়ালও করতে পারেনা। তার ভাবনা জুড়ে এখন অন্য চিন্তা। সিগারেটে কষে টান দিতে দিতে ভাবে, যে ভাববিলাসে সে মত্ত এতোদিন, যে ফ্যান্টাসি তার সকাল দুপুরের অবকাশ কাটানোর সবচেয়ে প্রিয় বিষয় তার শেকড় আসলে অনেক গভীরে প্রথিত। এতো সস্তা নয়। খুব গভীর ভাবে জড়ানো কারো সাথে ছাড়া এই বিনিময় বড়ই অপ্রাসঙ্গিক, বড়ই বিড়ম্বনার। কি যেন একটা চিরতরে হারিয়ে ফেলার বেদনা আর অচেনা অনুশোচনা দগ্ধ মন নিয়ে জসিম কাধে তোয়ালে ফেলে। বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়।

রীণার মুখোমুখি হবার ভয় থাকলেও গত দুই ধরে পার পেয়ে গেছে জসিম। তৃতীয় দিন আর হলো না। সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরে আব্বাস দাতে লুঙ্গি কামড় দিয়ে ঘামে ভেজা জামা-অন্তর্বাস পরিত্যাগ করছে। জসিম ষাট ওয়াট বাল্বের অস্বচ্ছ আলোয় কোচিং সেন্টারের চাররঙা সচিত্র প্রগতি বিবরনীর উপর হতাশ চোখ বুলাচ্ছে। এই সময় দরজায় খট খট শব্দ হলো। অনিচ্ছুক জসিম দরজা খুলে প্রথমে হতচকিত হয়ে পরমুর্হূতে গুটিয়ে গিয়ে পেছনে সরে এলো। বাড়ীওয়ালা চাচা এসেছেন। আব্বাসের চোখে মুখে নিখাদ বিস্ময়। চাচাতো এভাবে কখনো আসেন না! আর মাসের সবেমাত্র উনিশ তারিখ আজ। ভাড়া চাওয়ারও তো কোন প্রশ্ন নেই।

প্রশ্নবোধক সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে

‘ চাচা এই সময়’?

‘তোমারে ঘরে ফিরতে দেইখ্যা উপরে উঠছি, কথা আছে তোমার লগে’।

বুড়া ভাড়া বাড়ানোর ধান্দা করছে। মন্দ মুখে আব্বাস ভাবে,

‘ কি কথা বলেন চাচা’?

‘ দেখ আব্বাস, পাড়ার সবাই মানা করলেও তোমাগরে ভাল লাগছিল বইল্লা ব্যাচেলর ভাড়া দিছিলাম। এখন দেখি মস্ত বড় ভুল করছি’!

দুবাই আতরের গন্ধ ছড়িয়ে স্বাগোক্তি করলেন বাড়ীওয়ালা।

‘কেন চাচা কি হইছে’? আব্বাসের ধন্দ কাটেনা।

‘ হওয়ার তো কিছু আর বাকি থাকলো না। তোমাগো লগে থাকে যে জসিম্ম্যা, হেয় রীণার ইজ্জত লইছে’।

সিলিংয়ের টিনের চাল যেন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়েছে আব্বাসের উপর। হতবিহ্বল ভঙ্গিতে বলে,

‘কবে? কখন’?

‘গত পরশুকা। এই ঘরে’।

আব্বাস এবার স্বতস্ফ’র্ত আন্তরিক অবিশ্বাস নিয়েই বলল,

‘ কি কন চাচা! আমি বিশ্বাস করিনা। প্রমান কি’?

জসিম ম্যান্দা ছেলে, সে শিমুর সাথের গোপন অভিসারও দেখে ফেলেছে, কিন্তু সে যে এই কাজ করবে সেটা আব্বাসের কাছে অবিশ্বাস্য।

‘ রীণা কি নিজের এমন বিষয় নিয়া মিথ্যা কথা বলবে? ডাক দাও হারামজারে, জিগায়া দেহ’।

তারপর চাচা জসিমের বিভিন্ন খুঁটিনাটি চিহ্নাদী নিয়ে যে বিষদ বিবরণ ফাঁদতে শুরু করলেন।

দুবাই চাচার মুখ বন্ধ করতেই কি না? আব্বাস ডাকে জসিমকে। জসিম গুটিগুটি পায়ে এসে দাড়ায়। চেয়ারে বসার সাহস হারিয়েছে সে। আব্বাস বিব্রত স্বরে প্রশ্ন করে

‘জসিম, ব্যাপার কি সত্য’?
আনত নেত্রের নীরবতায় সহসা নগ্ন হয়ে পড়ে জসিমের সম্মতি।

‘ ছি ছি জসিম এইডা তুমি কি করলা? এইডা তোমার কেমন রুচি? আর্তনাদ করে উঠে আব্বাস। ‘ রীণা কি কয়’?



আব্বাসের প্রশ্ন।
‘ রীণার কথা তুমি রীণারেই জিগাও’, দায়িত্ব নেন না দুবাই চাচা। ‘ওই রীণা, রীণা? এদিগ আয়’।

চিৎকার করে ওঠেন চাচা। রঙ্গ মঞ্চে রীণার আগমন ঘটে। সদর দরজার পাশে মিশে দাড়ায়। মৃদু চোখ ঘুরিয়ে নেয় উপস্থিত সমাবেশের দিকে। স্থির হয় জসিমের উপর।

‘ রীণা তুই ক জসিইম্মা তরে কেমনে কি করছে’?

চাচার চোখ হালকা চকচকে।
না রীণা চুপচাপই থাকে। হঠাৎ করে একরোখা কন্ঠে বলে

‘ হেরে কন আমারে বিয়া করতে’।

আব্বাস চমকে উঠে, আর জসিম? আর কোন মানসিক মহামারী জসিমকে স্পর্শ করে না। সে এখন হাত পা বাঁধা একটি চোর মাত্র। আরো খারাপ কি ঘটতে পারে? মৃত্যু? জসিম তো এখন তাই প্রত্যাশা করছে মনে মনে। এই পরিস্থিতির থেকে মৃত্যুই শ্রেয় মনে হচ্ছে তার কাছে!
নড়েচড়ে ওঠে আব্বাস। কথা বলে,

‘ এইটা কি বল রীণা! একটা ঘটনা ঘইট্টা গেছে এহন বিয়ার প্রশ্ন আসে কেন? জসিম ছাত্র মানুষ তার বাপ-মা আছে, এইডা একটা আন্দাজি কথা হইল না?

‘ কাম মারার সময় মনো আছিল না? আমারে হে নষ্ট করছে। এহন বিয়া না করলে দর্ষণের মামলা করুম। মাইয়ালোকের লগে আকাম করনের শখ গোয়া দিয়া ঢুকাইয়া দেমু’।

গ্রামীন ব্যাংক আর আশার ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা রীণার কন্ঠে ঝাসির রাণীর ঝাঁঝ।

‘না মামলা মোকদ্দমা কেন হইবো, চাচা মুরুব্বী আছে ওনারা একটা সমাধান বাইর কইর‌্যা দিব। তুমি কোন চিন্তা কইরো না’।
আব্বাস অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে।

‘ আমি চিন্তা করুম কেন? চিন্তা যা করার আপনেরা করেন। কাইলকা দুপুরের মইদ্যে বিয়ার ব্যবস্থা না করলে আমি কাউরে ছাড়তাম না। সবতারেই আমার চেনা আছে’।

সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করে নীচে চলে যায় রীণা। আর বাকী সবাই মাথা নীচু করে বসে থাকে।

‘ বিরাট ভুল করছি, বিরাট ভুল!

মাথা নেড়ে মুখ নীচু করেন বাড়ীওয়ালা। তারপর আলোচনা শুরু করেন আব্বাসদের সাথে।

আর দশটা দুপুরের মতই সাধারন দুপুর। সাদা ভাত, আলু-গোশ আর মুশুরির ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে নগদ পকেটে পুরে বিদায় হলেন কাজী । সদর রাস্তার নালার পাশে একটা সেমিপাকা ঘর ভাড়া নেয়া হয়েছে। রীণার প্রতিবেশী খালা গতরাতেই ব্যবস্থা পাকা করেছেন। সাব্যস্ত হয়েছিল আজ দুপুরের পর জসিম বউ নিয়ে মেস ছেড়ে নতুন বাসায় উঠবে।

এক ট্রাভেল ব্যাগে কাপড় চোপড়, খবরের কাগজে মোড়া বই, গোটা বারো অডিও ক্যাসেট ও একটা ক্যাসেট প্লেয়ার, একটা আলনা আর একটা চ্যাপ্টা তোষক সমেত চৌকি। জসিমের এইতো সম্বল। রীণা বাড়ীওয়ালার বাসায় আছে। নীচে ভ্যানের উপর চিৎ করে রাখা চৌকি-তোষক, ভ্যানচালক আর তার বালক সহযোগী হল্লা করে আলনা নামাচ্ছে। জসিমের একহাতে টাভেল ব্যাগ আর ক্যাসেট প্লেয়ার আর অন্য হাতে বইয়ের বোঝা।

দুই হাতের ভরে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে করতে হঠাৎ করে বুদ্ধি ঝিলিক দেয় জসিমের মাথায়। সিদ্ধান্ত নেয়। পড়ে থাক চৌকি আর আলনা চিৎ হয়ে ভ্যানের উপর, হাতের মালামাল নিয়ে একটু এগিয়ে পানের দোকনের সামনে থেমে থাকা একটি খালি রিকশায় হঠাৎ উঠে পড়ে জসিম। সোজা বাস স্টেশন আর তারপর গ্রামে। মা নিশ্চয়ই ঠেলে ফেলবেন না তাকে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গোমতীতে গোসল করে পরিশুদ্ধ হবে সে। শুরু করবে নতুন জীবন। যে জীবনে থাকবে না কোন আব্বাস, শিমু , রীণা কিংবা কোন বাড়িওয়ালা। এমন কি শহরের নষ্ট বাতাস প্রশ্বাসে নিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া সাহিত্যানুরাগও পরিত্যাগ করবে সে।

সময় থেমে যায়। ভ্যানওয়ালা আর তার বালক সহকারী অনন্ত কাল ধরে নামাতে পারে না আলনাটাকে, বাড়িওয়ালী খালাম্মা আর সিলভি বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়েই থাকে এমন এক লুইচ্চ্যাকে সামনা সামনি দেখার কৌতুহলে, রীণা অপো করতে থাকে স্বামীর, আব্বাস আপদ বিদায় হবার মহেন্দ্রণের। অপো করতে করতে তাদের গায়ে শ্যাওলা পড়ে যায়। শুধু জসিমই গতিশীল, শুধু জসিমই যাচ্ছে অন্য সবাইকে স্থির করে দিয়ে।

কিছুদুর যেতে না যেতেই হঠাৎ হু.....শি.........উ...উ...উ...উ...উ... করে সামনের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয় রিকশাটা। আর রিকশাওয়ালা কুৎসিত একটা ভঙ্গি করে বলে, ‘ধ্যূর! গতকাইল না সারাইলাম ফুডাডারে’!
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×