somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টিফেন হকিং এর বিজ্ঞানের নামে অনুমান ভিত্তিক কথার প্রমান

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রফেসর স্টিফেন হকিং তাঁর "A Brief History of Time" বইতে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে একজন গডের প্রয়োজন থাকার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। অথচ সম্প্রতি প্রকাশিত "The Grand Design" বইতে বলেছেন,
“Because there is a law such as gravity, the universe can and will create itself from nothing. Spontaneous creation is the reason there is something rather than nothing, why the universe exists, why we exist. It is not necessary to invoke God to light the blue touch paper and set the universe going.”
তার মানে স্টিফেন হকিং-এর আগের বক্তব্যের সাথে বর্তমান বক্তব্য সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। আজ বাদে কাল আবার নতুন কিছু যে বলবেন না – তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ অভিজিৎ রায়ের মতো ছুপা নাস্তিকরা তড়িঘড়ি করে তাঁর এই বক্তব্যকে "গডের অভ্রান্ত বাণী" ধরে নিয়ে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করেছে এই বলে যে, মুসলিমরা বিজ্ঞান মানে না! হকিং-এর এই বক্তব্য নাকি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য! এমনকি বাংলা নাস্তিকদের কাছে দেবতুল্য পীরবাবা রিচার্ড ডকিন্স তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন এভাবে-
“Darwinism kicked God out of biology but physics remained more uncertain. Hawking is now administering the coup de grace.”
বাহ্‌! নাস্তিক পাদ্রী-পুরোহিত-মোল্লা'রা জীববিজ্ঞান আর পদার্থবিজ্ঞান থেকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে কিক মেরে আউট করে দেওয়ার জন্য 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা' করছেন এবং ইতোমধ্যে স্রষ্টাকে আউট করে দেওয়া হয়েছে! বিজ্ঞানের আজ এ-কী হাল! এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে নিয়ে 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা' যে কোন্‌ ল্যাবে হচ্ছে, কে জানে! আমিও সেই ল্যাবে যোগ দিতে চাই!
যাহোক, হকিং-এর সাম্প্রতিক বক্তব্য অনুযায়ী এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে গডের কোনো ভূমিকা নাই। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব নাকি এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে – যাকে বলে স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি। উল্লেখ্য যে, হকিং কিন্তু গডের অস্তিত্বকে নাকচ করে দিচ্ছেন না কিংবা বলেছেন না যে গড বলে কিছু নাই! উনি শুধু বলছেন এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে গডের কোনো "ভূমিকা" নাই। তার মানে হকিং-এর বিশ্বাস অনুযায়ী গড থাকতেও পারে! অন্যথায় গডের অস্তিত্বকে সরাসরি নাকচ করে দিলেই তো সব ল্যাটা চুকে যেত!
পাঠক! এবার ব্যাপারটা নিয়ে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখা যাক। গড আছে – কিন্তু এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে তার কোনো "ভূমিকা" নাই! ব্যাপারটা কিন্তু বেশ হাস্যকর শুনায়। যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে গড থেকে থাকলে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে তার ভূমিকাও থাকতে হবে। অন্যথায় এই মহাবিশ্ব হবে স্বয়ম্ভূ। তাহলে হকিং-এর সাম্প্রতিক দাবি থেকে নিদেনপক্ষে দু'জন সমান্তরাল ও স্বতন্ত্র গডের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে: গড এবং প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব। কিন্তু গড ও প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব একে অপর থেকে স্বতন্ত্র হতে পারে না।
এবার বিষয়টাকে যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরেকটু সূক্ষভাবে দেখা যাক:
– এই মহাবিশ্বের যে কোনো স্রষ্টা নাই – সেটি হকিন্স-ডকিন্সসহ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মিলে অনন্তকাল ধরে চেষ্টা করলেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন না।
– এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে যে গডের কোনো "ভূমিকা" নাই – যেমনটি হকিং দাবি করেছেন – সেটিও সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মিলে অনন্তকাল ধরে চেষ্টা করলেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন না। কারণটাও খুব সহজ। বিষয় দুটি এমন যে – কোনো ভাবেই তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিশ্বাস ছাড়া অন্য কোনো পথ-ই খোলা নেই। ব্যাপারটা এমন নয় যে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী কারো উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, "দেখুন! পিরামিড তৈরীতে আপনার কোনো ভূমিকা নাই, যেহেতু আপনার বয়স পিরামিডের বয়সের চেয়ে অনেক কম!" অথবা বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলছেন, "আইফেল টাওয়ার তৈরীতে আপনাদের কোনো ভূমিকা নাই।" এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার ভূমিকার ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও সে'রকম কিছু নয়।
– একটি শূন্য ঘরকে অসীম সময় ধরে রেখে দিলেও সেই ঘরের মধ্যে পদার্থবিদ্যার সূত্র মেনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মহাবিশ্বের মতো ছোট-খাটো একটি প্রতিরূপও তৈরী হবে না – যেখানে আবার জীবজগত থাকা তো দূরে থাক! হকিং বা ডকিন্স যদি সত্যি সত্যি এমন কিছুতে বিশ্বাস করেন তাহলে তাদের সাথে ট্রিলিয়ন-ডলার বাজি ধরা হবে। অধিকন্তু, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু সৃষ্টি হওয়াকে কিন্তু কোনো ভাবেই বৈজ্ঞানিক বলা যাবে না। এমন কিছু হয়ে থাকলেও সেটি হবে দৈব ঘটনা – আর দৈব ঘটনা বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত নহে। ফলে বিজ্ঞানের নামে হকিন্স-ডকিন্স যতই ভেলকিবাজী মার্কা কথাবার্তা বলুক না কেন – দৈব ঘটনায় বিশ্বাস করতেই হবে। হায় কপাল!
– আজ থেকে কয়েক দশক আগে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর জড় বস্তু থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাণ বা জীব সৃষ্টির সম্ভাবনাকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যেই বাতিল করে দিয়েছেন।
এই যখন বাস্তবতা তখন ডকিন্স-হকিন্স বিজ্ঞানের নামে আমজনতাকে ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন কেন, আর কেনই বা ইসলাম-বিরোধীরা হকিং-এর বক্তব্যকে লুফে নিয়ে বিজ্ঞানের নামে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করছে? মুসলিমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে সত্য – কিন্তু তাই বলে সব দিক দিয়েই পিছিয়ে আছে ভাবাটা নিঃসন্দেহে চরম গোঁড়ামী বা জাতিবিদ্বেষ ছাড়া কিছু নয়। ইসলাম-বিরোধীদের নিজস্বতা বলে কিছু নাই। তারা তীর্থের কাকের মতো পশ্চিমা বিশ্বের নাস্তিক বিজ্ঞানীদের দিকে চেয়ে থাকে। পশ্চিমা কোনো নাস্তিক বিজ্ঞানী কিছু একটা বলার সাথে সাথে সেটিকে বিজ্ঞানের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভার্চুয়াল আত্মতৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। তারপর দু-দিন যেতে না যেতে অন্য কোনো নাস্তিক বিজ্ঞানীর দ্বারে ধন্না দেয়। বছরের পর বছর ধরে পরগাছার মতো এভাবেই তারা বেঁচে আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে হকিং একজন পদার্থবিদ হয়ে বিজ্ঞানের নামে এই ধরণের উটকো বক্তব্যের পেছনে উদ্দেশ্যটা কী হতে পারে। আমার ধারণা এর পেছনে ডকিন্স ও সমমনা নাস্তিকদের ভূমিকা আছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে বিজ্ঞানের নামে ধর্ম-বিহীন সমাজ তৈরী করা। এছাড়া অন্য কোনো যৌক্তিক কারণ তো দেখা যায় না। তবে তা-ই যদি হয় তাহলে মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্টরা তো ইতোমধ্যে বিজ্ঞানের নামে ধর্ম-বিহীন সমাজ তৈরী করেছে। সোসাল ডারউইনিজম সম্পর্কেও অনেকেই কম-বেশি অবগত। তো মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্টদের ধর্ম-বিহীন সমাজের সাথে হকিন্স-ডকিন্স'দের ধর্ম-বিহীন সমাজের পার্থক্য তাহলে কী হবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×