somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গারা নিজভূমে পরবাসী!

১৩ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিজরী প্রথম শতকের শেষ দিকে (৯৬ হিজরী) ৭১২ ঈসায়ীতে উমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সেনাপতি হযরত মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেতৃত্বে সিন্ধু অঞ্চলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হবার মধ্যদিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা শুরু হলেও মূলত পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়কালে অর্থাৎ ৮ম হিজরীতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই এ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে।
কারণ চাঁদ দ্বিখ-ন্ডিত হওয়ার পর চীনের রাজা তাঁইসাং বা তাইসং ইসলাম গ্রহণ করার জন্য লোক পাঠালে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবু কাবশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেসহ এক কাফেলা পাঠান। তখনকার দিনে চীনের ক্যান্টনে যাওয়ার জন্য আরবদেশ থেকে রওনা করলে পথিমধ্যে ভারতের মালাবার, কালিকট, চেররবন্দর, তৎকালীন আরাকানের আকিয়াবসহ বিভিন্ন স্থানে জাহাজ নোঙ্গর করতো এবং বাতাসের গতিবেগের কারণে বিভিন্ন বন্দরে অনেকদিন যাবৎ অবস্থান করতে হতো। এভাবে যাত্রাকালীন সময়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বিভিন্ন বন্দরে ইসলাম প্রচারের কাজ করতেন। এ ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম ও আকিয়াবেও জাহাজ নোঙ্গর করে উনারা ইসলাম প্রচারের কাজ করেছেন। তখন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিশেষত মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে।
এ আরাকানের পূর্ব নাম ‘রোখাম’ এটি আরবী শব্দ; যার অর্থ শ্বেতপাথর এবং আরাকানের প্রাচীন রাজধানী ম্রোহংয়ের পূর্বনাম কায়কপ্রু। এটি বার্মিজ শব্দ; যার অর্থও শ্বেতপাথর। এদিক থেকে কায়াকপ্রু অঞ্চল ও রোখাম একই অঞ্চল হেতু রুহমী বলতে রোখাম বা আরাকানকেই বুঝানো হয়।
আরাকানের চন্দ্র-সূর্য বংশের প্রথম রাজা মহৎ ইঙ্গ চন্দ্র (৭৮৮-৮১০ খ্রিস্টাব্দে) মুসলমানদের আচার-আচরণ ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে সেখানে ইসলাম প্রচারের ব্যাপক সুযোগ দেন এবং সাথে সাথে রাজা মুসলমানদের স্থায়ীভাবে বসবাসেরও অনুমতি দেন। তাছাড়া আরবে ইসলাম কায়েমের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শতাব্দীতে আরব, ইরানী, গৌড়ীয়, ভারতীয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম বণিক, নাবিক, ইসলাম প্রচারকগণ আরাকানে এসে এখানকার স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতেন। এভাবে আরাকানে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এরাই বর্তমান আরাকানী মুসলমান।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এ আরাকান রাজ্যে মিয়ানমারের মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ সামরিক জান্তা সরকার এখানকার “রোহাংঙ্গ” এলাকার মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত তাদের উপর অহরহ কঠোর ও নির্মমভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্ববাসীর জানা সম্ভব হয়না। তাদের মৌলিক অধিকার বলতে কিছুই নেই। মুসলিম দেশগুলোও এ ভয়াবহ নির্যাতনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব।
রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। শত শত বছর ধরে তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়, এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে উঠে, আরাকান তথা বর্তমান রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানী মুসলমানদের বংশধর। ১৪৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন দুইশ’ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। ১৬৩১ থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ হয়। এরপর মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজা সান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করে। এরপর শুরু হয় মুসলমানদের উপর তার নিপীড়ন ও নির্যাতন। প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছর মুসলমানদের এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়। ১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। সেও ছিল ঘোর মুসলিমবিদ্বেষী। বর্মী রাজা ঢালাওভাবে মুসলমানদের শহীদ করে। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজ দখলে গেলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মার স্বায়ত্তশাসন লাভের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং অন্তত ৩০ লাখ মুসলমান শহীদ হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীন দেশের সরকার আজ পর্যন্ত তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার দেয়নি। অত্যাচার নির্যাতন ও বিতাড়নের মুখে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহুদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এরা বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক।
বর্তমান নৃশংসতা ও সহিংসতা ছাড়াও রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন যাবতই নিজ দেশেই অত্যাচারিত ও বিতাড়িত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বর্তমান সামরিক জান্তা কথিত শান্ত অবস্থায়ও বিভিন্ন কূটকৌশলে এ অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে।
মিয়ানমারের আরাকানে বসবাসরত ২০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সামরিক জান্তা। ‘মডেল ভিলেজ’ নাম দিয়ে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় রাখাইন বসতি স্থাপন করার মাধ্যমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের আওতায় নতুন গ্রাম তৈরি করে সেখানে রাখাইন বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এসব এলাকার রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে তাদের ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আরাকানের পূর্ব কেপ্রু এলাকায় রোহিঙ্গা পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশেও পালিয়ে আসছে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী আমাদের এই অসহায় ভাই-বোনদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। শুধুমাত্র মুসলমান পরিচয়ের কারণে ওরা নিগৃহীত হচ্ছে, নির্বাসিত হচ্ছে। যেমনটি হয়েছিল ইসলামের প্রথম যুগে। তখন মুসলমানরা প্রথমে আবিসিনিয়ায় এবং পরে কোরাইশদের ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতনের কারণে মদীনা শরীফ-এ হিজরত করেন। অবস্থা ও অবস্থানের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ধর্মের কারণে প্রায় পনেরশ’ বছরের আগের ইতিহাস এবং বিংশ শতাব্দীর রোহিঙ্গা উম্মতদের দেশান্তরি হওয়ার ইতিহাস প্রায় অভিন্ন।
তাই বাংলাদেশে তাদের পুনর্বাসন না হলেও অন্তত শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা যুগপৎভাবে ইসলামিক ও মানবিক। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মিসরসহ সব মুসলিম দেশের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ উজ্জীবিত করা। এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতামূলক ঈমানী দায়িত্ব পালনে উদ্ধুদ্ধ করা। ও.আই.সিকে ব্যাপক তৎপরতা গ্রহণে বাধ্য করা। পাশাপাশি জাতিসংঘে বিষয়টি জোরদারভাবে তোলা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×