প্রতিষ্ঠা পাবার মহান মন্ত্রে আমরা উদ্দিপ্ত, দিপ্ত আমাদের চোখ কেড়ে, ছিড়ে নেয়ার আগুনে উতপ্ত। আমরা জ্বালিয়ে পারি, পুড়িয়ে পারি, কাউকে যদি মারতে হয় ধাক্কা, তাও করি, কিন্তু সামনে যেতে চাই, কোন ভাবেই হোক, খুনে, ছিনে, কেটে আমাদের আগে যেতেই হবে। বাসে ওঠা থেকে শুরু করে প্লেনে ওঠা, জন্ম হওয়া শিশুকে দেখতে যাওয়া থেকে শুরু করে কবরে মাটি দেয়া পর্যন্ত সবখানে ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি। সবার একটাই উদ্দেশ্য আগে আমাকে যেতেই হবে। কোন কথা নাই, কোন উপায় নাই রুখার। যদি এদের কাউকে ডাক দিয়ে বলেন, ভাই আপনার আগে চলার সিদ্ধান্তে আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়, প্রতিবেশি যে পেছনে পড়ে থাকছে, আপনার ধাক্কায় ওরা তো ছিটকে পড়ছে জীবন থেকে। তাদের পরিস্কার উত্তর- থাক না, পড়ে, টাইম নাই, সরেন, পথ ছাড়েন, ওতো দেখলে জীবনে সামনে যাওয়া যায় না।
অবাক হওয়ার মত গতি, হিংস্র তাদের চাওয়া, অপ্রতিরোধ্য তাদের চাহিদা। কে থামাবে? জীবনের কাছ থেকে সরে যাওয়া, সভ্যতায় ধরে যাওয়া এসব মেশিন-মানবদের উর্দ্ধ-ছোটা। মানবতার প্রশ্ন, মমতা-জন্মদাতার অধিকার, ভাই-বোনের প্রতি ভালবাসা আর দায়িত্ব এদের কাছে যেন, একটি চার্জ এর মত,
-“এই নাও টাকা, সময় নাই, আসতে পারব না, প্রচুর কাজ, তোমাদের মত বসে বসে খাই না”। মাঝে মাঝে এরকমও হয়,
- “এ মাসে অনেক ঝামেলা টাকা দিতে পারব না, তোমার বউ-মার ডাক্তারি চেক-আপ, আমার বিদেশ ভ্রমন, ইত্যাদি ইত্যাদি”।
হায়! হায়রে আমার মেশিন-তা, আমার আধুনিকতা। হায়রে, চাহিদা। আরে বেটা, সম্রাট আকবার ওতো বড় মুঘল সাম্রাজ্য কবরে নিয়ে যেতে পারেনি, কিংবা নেপোলিয়ন। কি নিয়ে কবরে গেছে অর্থ মন্ত্রী কিবরিয়া কিংবা সাইফুর রহমান, কিছুই না।নেংটো দেহের উপর ৩০ টাকা গজের সফেদ কাপড়। সুখে-শান্তিতে থাকতে হবে এর জন্য টাকার প্রয়োজন, িিঠক আছে, কন্তু টাকার প্রয়োজনে পশু হতে হবে, তা কিন্তু সভ্য নয়। জীবনের প্রয়োজনে টাকা, টাকার প্রয়োজনে জীবন নয়। কোথায় যাচ্ছো হে, মানবতা, কোথায়? একবার ভেবে দেখো, যতদ্রুতই তুমি যাও না কেন, ততই তোমার গতি তোমার জীবনকে যেন অমানুষের কাতারে না ঢেলে দেয়। তোমার জীবন যেন মেশিনের মত নিঃসঙ্গ না হয়ে পড়ে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি, ছুটতে ছুটতে সবাই কে ছুড়তে ছুড়তে এক সময় এ মেশিন মানবরা, নিঃসঙ্গ রয়ে যায়, বন্ধ হওয়া সেই কারখানার মত যেখানে আর কেউ আসে না, যায় না, সময়ের ধুলো পড়ে পড়ে, জং ধরে ধরে জীবন কাঁদতে থাকে অঝরে।
মমতার বন্ধন, শ্রদ্ধা ভালবাসার সর্ম্পকগুলো আসলেই মানুষের জীবনে অনেক মানে রাখে। সংসার, আত্মীয়তা মানুষকে বড় করে। কিন্তু আমরা অনেকে আত্মীয়তার বন্ধনকে মমতা ভালবাসার সর্ম্পকগুলোকে নিছক টাকা খরচের উপায় হিসেবে দেখে জীবনকে বীষ বানিয়ে ফেলছি, যার ভয়ংকর দংশন আজ কিংবা কাল আমাদেরি জখমি করে দেয়।
শেষে একটা কথার অবতারনা করতে চাই -

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




