somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার চশমা-বৃত্তান্ত!/:)/:)/:)/:)/:):-/:-/:-/:-/

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন সম্ভবত ক্লাস টু-থ্রীতে পড়তাম। সন্ধ্যার দিকে আম্মু আর পূরবী কাকী অন্ধকারে বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। আর আমি এক কোনায় বসে হালকা আলোর ভিতর চাচা চৌধুরীর একটা সিরিজের ভিতর মুখ গুজে সেটা দেখার চেষ্টা করছি। অন্ধকারে দেখতে খুব কষ্ট হয়,তাও মনে হচ্ছিল-এখনই বইটা না পড়লে আমার জীবন বের হয়ে যাবে। আমার অবস্থা দেখে পূরবী কাকী একটা ঝাড়ি দিলেন।বললেন, “এই,এত অন্ধকারে পড়োনা। অন্ধকারে বই পড়লে কিছুদিন পরে তোমাকেও তোমার কেকাদির মত চশমা পরতে হবে।”
আমি কাকীর ঝাড়ি খেয়ে বইটা বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। মনে মনে ভাবলাম- আহারে কেকাদি কত ভাগ্যবতী।কি সুন্দর চোখে চশমা দিয়ে থাকে!
ঐ বয়সটাই সম্ভবত এমন ছিল। কাউকে চশমা পরতে দেখলে আমারো চশমা পরতে ইচ্ছা করে। বারবার মনে হয়,আহারে যদি একটু চশমা চোখে দিতে পারতাম!
তার চার বছর পরে,আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। সব সময় সামনের বেঞ্চে বসি দেখে সবাই মনে করে আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করি। কিন্তু ঘটনা আসলে তা না। আমি পিছনে থেকে আসলে বোর্ডে্র লেখাগুলো দেখতে পাইনা। লেখা দেখতে না পেলে আমার কেন যেন কানের ভিতরেও কিচ্ছু ঢোকে না।মোট কথা, আমার মাথায় কিছু ঢোকেনা। তার কিছুদিন পরেই আমার চোখে চশমা লাগল।
চশমা পরার পর আমার ভাব-সাব গেট-আপই চেঞ্জ হয়ে গেল।চোখে গোল-গোল চশমা লাগালে আমাকে বেশ জ্ঞানী জ্ঞানী লাগে। তারচেয়েও বড় কথা আমার চেহারায় একটা ব্রিলিয়ান্ট-ব্রিলিয়ান্ট ভাব ফুটে উঠল। পরীক্ষায় ভাল না করেও ব্রিলিয়ান্ট হওয়ার এই চরম সুযোগে আমি আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু তখনও কি জানতাম এই চশমাই একদিন আমার চক্ষুশূল হয়ে ধরা দেবে?

স্কুলে ঊর্মীলা নামে আমার এক বান্ধবী ছিল। ও আমার অনেক আগে থেকেই চশমা পরত। একদিন দেখি ও খুব সুন্দর নতুন একটা রিমলেস চশমা পরে এসেছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলা-তার আগের চশমাটা কোথায়?সে জানাল-ওটা ভেঙ্গে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আমরা গল্প করার এক পর্যায়ে আমার হাতের ছিটায় ওর চশমাটা দুইভাগ হয়ে নিচে পড়ে গেল (বলা বাহুল্যঃ কথা বলার সময় আমার হাত এদিক-ওদিক ছোড়ার খানিকটা অভ্যাস আছে)। আমি আর ও দুইজনই হতভম্ব হয়ে চশমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। একটু পর ও প্রচন্ড কান্না শুরু করল আর বলতে লাগল-নতুন চশমা ভেঙ্গে গিয়েছে এটা ওর মা জানতে পারলে ওকে অনেক শাস্তি দেবে! আমি বোকার মত তাকিয়ে রইলাম। পরের দিন দেখি ও নতুন চশমা পরে এসেছে। “কিভাবে চশমার ব্যবস্থা হল”-এটা জানতে চাইলে ও জানালো ওর বড় ভাই টিউশনীর টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছে। আমি মনে মনে ওর সেই বড় ভাইকে একটা থ্যাংকিউ দিলাম।

কলেজে পড়ার সময় আমার বান্ধবী নাদিয়ার সাথে দুষ্টমী করে মারামারি করতে গিয়ে ওর গালে কষিয়ে একটা চড় মেরেছিলাম। তারপর দেখলাম রিমলেস সেই চশমাটার অর্ধেক ওর নাকের উপর ঝুলছে,বাকি অর্ধেক নিচে পরে আছে। পুরো ব্যাপারটা দেখে আমার ভিতরে অপরাধবোধ জাগার বদলে চরম হাসি আসল। আমি দেখলাম নাদিয়া নিজেও আমার সাথে সাথে হাসতে শুরু করেছে। কিন্তু ফাজীলটা ঠিকই প্রতিশোধ নিয়েছিল। ঐদিন সে পুরো সময়টা আমার চশমা চোখে দিয়ে ক্লাস করেছে। আর আমি চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসেছিলাম!

এইচ এস সি পাশ করার পর স্বাভাবিক ভাবেই নিজের চেহারা সুরতের দিকে খেয়াল রাখার প্রয়োজন বোধ করলাম। তখনই প্রথম বুঝলাম- চশমা পরলে আমাকে বেশ বুড়িবুড়ি লাগে। সাথে সাথে আমি চশমা পরা বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে অনুধাবন করলাম চশমাটা পুরোপুরি ছাড়া যাবেনা। তাই ঠিক করলাম-শুধু ক্লাসের সময় চশমা পরব।
আমি এখন শুধু ক্লাসের সময়ই চশমা পরি,আর ক্লাস শেষ হলে টুপ করে চশমাটা খুলে ব্যাগে রেখে দেই। একারণে অনেকেই জানে না আমি চশমা ব্যবহার করি। তাই আমাকে চশমা পড়া দেখলে কেউ কেউ খুব মশকরা করে বলে, “কিরে নয়া চশমা পিনছোস নাকি?” অথবা “কি্রে চশমা পরা শুরু করলি কি মনে কইরা?”
এই ধরনের প্রশ্ন শুনলেই হাসি আসে। কি মনে কইরা চশমা পরি এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে ইচ্ছা করে, “ চশমা পরলে আমার অন্তরচক্ষু খুইলা যায়-এই জন্য চশমা পরি।”

চশমা নিয়ে যথেষ্ট গঞ্জনায় আছি। এক কালে চশমা পরার জন্য মনটা কি ভীষন আকুপাকুই না করত। অথচ এখন আমার চশমা জিনিসটা দেখলেও বিরক্ত লাগে। কি আশ্চর্য পরিবর্তনশীল এই আউলা ঝাউলা মন!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫৫
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×