somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ পতিত নারী কিংবা ব্যর্থ মানুষের গল্প

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিটার সাথে আমার সাক্ষাৎঃ

আমি জানি রিটা আমাকে নিয়ে কিছুটা কনফিউজড। ও প্রথমে আমাকে ওর কাস্টোমার ভেবেছিল। যখনই ঘনিষ্ট হতে চেয়েছে, আমি একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে চলে গিয়েছি। আমার কাছে পাত্তা না পেয়ে আমাকে কয়েকটা গালি দিয়ে ও অন্য কাস্টোমার খুজতে চলে গেল। ঐদিনই আমি রিটাকে প্রথম দেখেছিলাম। অষ্টাদশী এই কিশোরীর যখন মা বাবার আদরে ছায়ায় কথা, যখন বন্ধুদের সাথে দুষ্টমী করার কথা,তখন সে পতিতা হয়ে কাস্টোমার খুজতে ব্যস্ত।একটু পরেই দেখলাম সে একজন কাস্টোমার বাগিয়ে বারের পিছনের খুপরিগুলোর ভিতর চলে গেল। কাজ থেকে অবসর নেয়ার পর বারে মাঝেমাঝেই আমি বেশী সময় কাটাই। মানুষের কর্মকান্ড দেখি। মাতাল হলে মানুষের ভিতরের পশুটা যেমন মাঝেমাঝে বের হয়ে আসে, তেমনি সত্যিটাও বেড়িয়ে যায়।আমার এসব দেখতে ভাল লাগে। সময়টা কেটে যায়।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম রিটা চিৎকার করে তার কাস্টোমারকে গালি দিচ্ছে।কাস্টোমার নাকি তার টাকা ঠিকভাবে পরিশোধ করেনি।কিছুক্ষন চিৎকার করার পর দেখলাম রিটা ভিতরে গিয়ে ভদ্রস্থ পোষাক পরে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কই যেন যাচ্ছে। আমার কি হল জানিনা। আমি ওর পিছন পিছন চলতে শুরু করলাম।আমার এই বয়সে এই ছ্যাবলামো মানায় না।তাও কেন যে করলাম কে জানে?

আমাকে পেছন পেছন আসতে দেখে রিটা আমার দিকে চোখ-মুখ কুচকে বলল, “দেখো, অযথা আমাকে বিরক্ত করবে না।”
আমি কথা না বাড়িয়ে ফিরে আসলাম। এরপর প্রতিদিনই আমি ঐ বারে যেতে শুরু করি। রিটার সাথে কথা বলি না।কিন্তু আমার সমস্ত সময় দৃষ্টি থাকে রিটার উপর। আমার এই আগ্রহ রিটারও চোখে পড়েছিল। একদিন সে নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলল।
-তোমার কি স্ত্রী কিংবা বান্ধবী নেই?
-স্ত্রী ছিল, ১৭ বছর আগে মারা গিয়েছে।
-এভাবে সব সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকো কেন? আমাকে বিয়ে করতে চাও?
রিটার কথা শুনে আমার হাসি এসে গেল। আমার হাসি হাসি মুখ দেখে সে আবার বলল, “ দেখ, তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারব না। এটলিস্ট বন্ধু হতে পারো।কিন্তু বিয়ে করা সম্ভব না।”
_তোমার নাম রিটা,তাইনা?
-হ্যা।
-তোমার সাথে আমার পরিচিত একজন মেয়ের মিল আছে। যাই হোক,তোমার কাজ শেষ হয়েছে?
-নাহ।আরো একজন কাস্টোমার ডিল করে বাড়ি ফিরব।
-আমার সাথে ডিনার করবে?
-আমাকে পাউন্ড পে করলে ডিনার করব,অযথা সময় নষ্ট করতে পারব না।
-আচ্ছা দেব।
-আগে দাও।

রিটার মাঝে শিউলির ছায়াঃ
আমি রিটাকে তার পাউন্ড বুঝিয়ে দিতেই সে আমার সাথে ডিনার করতে চলে আসল। আসলে রিটার কাজই তো এটা। রিটার সাথে ডিনার করতে করতে আমার শিউলির কথা মনে পরে গেল। বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসার কিছুদিন আগে আমার শিউলির সাথে পরিচয় হয়েছিল। প্রচন্ড অসহায় একটা মেয়ে।তারপরেও তার কি ভীষন আত্মবিশ্বাস! শিউলির সাথে পরিচয় হয়েছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনে। শিউলি তখন মাধুকর খুজতে ব্যস্ত। আমাকে একা বসে থাকতে দেখে আমার পাশে বসে বলল, “ কোনো সেবা যত্ন লাগবে?”
আমি বললাম , “হু, লাগবে।এক প্লেট ভাত খাওয়াইতে পারবা?গতকালকে রাতের পর কিছু খাইনাই!”
-বুঝছি আপনের কাছে পোষাইব না।
-হ সেইটাই। অন্য জায়গায় যাও।আমার পকেটে যদি টাকা থাকত তাইলে এখন ভাত খাইতাম।
এরপর শিউলি কিছুক্ষণ আমার পাশে চুপচাপ বসে থাকল। তারপর আবার বলল, “ চেহারা সুরতে তো বুঝা যায় না যে এইরকমের ফকির।
-আমি ফকির তাতে তোমার সমস্যা? তুমি যদি ভাত খাওয়াইতে পারো তাইলে খাওয়াও, না হইলে দূরে যাও।
-ওরে বাবা,ফকিরটা দেখি ছ্যানছ্যান করে। বাপের কেনা জায়গা নাকি যে অন্য কেউ বসতে পারবো না?

আমি বুঝলাম এই মেয়ের সাথে কথা বাড়ালে কথা বাড়তেই থাকবে। পেটে ক্ষুধা থাকলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। গতকাল রাতে বড় ভাই তার বাসা থেকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। এরপর আর কিছু খাওয়া হয়নি।
একটু পর দেখলাম শিউলি আমার পাশ থেকে চলে গিয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন হল পতিতা আর আমার মত উদ্বাস্তুদের একটা আশ্রয়বিশেষ।
শিউলি চলে যাবার পর আমি বেঞ্চে পেট লাগিয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করি। ক্ষুধার সময় পেটটা কিছুর সাথে চেপে ধরে রাখলে ক্ষুধা কমে।এভাবে ঘন্টাখানেক শুয়ে থাকার পর সম্ভবত আমার তন্দ্রা চলে এসেছিল। একটু পর দেখি শিউলি এসে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে।
-ঐ মিয়া উঠেন।ভাত খাইতে চলেন।
আমি কোনো কথা না বাড়িয়ে শিউলির পিছন পিছন হাটা শুরু করলাম। শিউলি আমাকে একটা ছুপড়ি ঘরে নিয়ে আসল। তারপর একটা প্লেটে ভাত আর পেপে রান্না দিয়ে খেতে দিল।আমি কোনো কথা না বলে খেতে লাগলাম। শিউলিকে দেখলাম চকচকে শাড়ি পালটে একটা পুরোনো শাড়ি জড়িয়ে এসেছে। এবার ওকে আমার একদম আপন কেউ একজন মনে হল। ওকে কৃতজ্ঞতা জানানো দরকার।কিন্তু কি কথা বলা যায়?
-তুমি খুবই ভাল মেয়ে।
-কেন খাওয়াইছি দেইখা?
-হুম।তোমার মনে মায়া দয়া আছে। তোমার কপালটাও অবশ্য ভাল।
-কোনদিক দিয়া কপাল ভাল দেখলেন?
-এই যে তুমি মেয়ে হয়ে জন্মাইছো, তাই তুমি এই কাজ করতে পারতেছো।আর আমারে দেখ,কি একখান কপাল নিয়া জন্মাইছি! মেয়ে মানুষ হইলে তো তোমার মত এই লাইনে ঢুকতাম,কিন্তু এই রকম জোয়ান পুরুষ হইছি দেখে ভিক্ষাও করতে পারিনা।
আমার কথা শুনে শিউলি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “ হ আমার আমার ভাগ্যডা খুব ভাল।এক্কেরে রাজকপাল নিয়া জন্মাইছি।”
আমি আর কোনো কথা না বলে খেতে থাকি। শিউলি আবার কথা বলে।
-বাড়ি কই?
-বাড়ি নাই। ভাইয়ের বাড়ি থাকতাম।কালকে রাত্রে বের করে দিছে।
-কেন?
-ভাইয়ের শালীও ভাইয়ের বাড়ি থাকত। কিভাবে কিভাবে জানি ভাইয়ের শালীর পেটে বাচ্চা আসছে,এখন সবাই বলে ঐ বাচ্চা নাকি আমার। আমারে বিয়া করতে বলছিল। আমি যেই অস্বীকার করছি,আমারে ঘাড় ধইরা নামায়ে দিল।
-হ জানি তো, আকাম করার পর সব পুরুষ এই একটা কথাই কয়।সে কিছু জানে না।সে এক্কেরে পাক-সাফ!
-আমি আসলেই করিনাই।
-তাইলে করল কে?
-জানিনা। কিন্তু আমি যে করিনাই তা একদম নিশ্চিত।
ঐদিন শিউলির কাছ থেকে ভাত খেয়ে আমি ওর বাড়িতেই এক চোট ঘুমিয়ে নেই।একটু পর ও আমাকে বের করে দেয় বাড়ি থেকে। ওর নাকি কাস্টোমার আসবে।
পরের দুইদিন এক বন্ধুর বাসায় থাকি। কিন্তু দুই দিনের বেশী তো থাকা আসলে একটা লজ্জার ব্যাপার।তাই চলে আসলাম বন্ধুর বাড়ি থেকে। আমার আসলে তেমন কোনো বন্ধুও নেই যে গিয়ে থাকব। মাস ছয় আগে এমএসসি পাশ করে তখনও চাকরী জোটাতে পারিনি। এমএসসি পাশ করা একটা ছেলে তো রিক্সা চালাতে পারেনা! তারপরেও কাজের আশায় ঘুরতে লাগলাম।
দুইদিন পর আমি আবার শিউলির কাছে গেলাম। সাথে করে নিয়ে গেলাম এক প্যাকেট পাউরুটি আর কলা। আমাকে দেখে ও একটু অবাক হল।
-আবার আসছেন কেন?
-এমনেই।
-এমনেই মানে কি? আজকে ভাত রান্ধি নাই।
-ভাত খাইতে আসি নাই। তোমার সাথে দেখা করতে আসছি।ঐদিন খুব ক্ষুধা ছিল। তার মধ্যে খাওয়াইলা,তাই দেখা করতে আসলাম।
-ভাল করছেন। কাজ না থাকলে এখন চইলা যান। আমার কাস্টোমার আসবে।ভাল কথা,কাজ কাম জুটছে?
-আজকে বালি টানছি।কিন্তু এই কাজ করা যাবে না।
-কেন?সমস্যা কি?
-আমার বন্ধু বান্ধব দেখলে হাসবে। বলবে,পড়া লেখা শিখ্যা বালি টানি!
-বন্ধুরা ভাত খাওয়াইবো?তা তো খাওয়াইবো না। তাইলে হাসলে হাসুক।
আমি কিছু বলি না। চাকরীর ইন্টারভিউ দিয়েছি কয়েকটাই। এপয়েন্টমেন্ট লেটার আসলে ভাইয়ের বাসাতেই আসবে। কিন্তু সেই খবর পাওয়ার কোনো সম্ভবনা আমার নাই।ঐ বাসায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না।সুতরাং গত কয়েক মাসে দেয়া ইন্টারভিউগুলো মাঠে মারা গেল।
-শিউলি তোমার বাড়ির ঠিকানাটা যদি আমি কোথাও দেই তোমার আপত্তি আছে?
-আমার এই রাজমহলের ঠিকানা আবার কারে দিবেন?
-চাকরী চিঠিতে তোমার বাসার ঠিকানা দেই? আমার আর কোন ঠিকানা এখন নাই।
-দেন। কিন্তু আমারে আবার ঝামেলায় ফালায়েন না।
এরপর মাঝে মাঝেই আমার শিউলির বাড়িতে যাতায়াত হয়। কখনও আমি হাতে করে এটা ওটা নিয়ে যাই,আবার কোনোদিন ও আমাকে ভাত খাওয়ায়। বলতে গেলে একটা আত্মীক বন্ধন তৈরী হয়ে গিয়েছে।
শিউলি যে পতিতা হিসাবে খুব নাম ডাকওয়ালা তা বলা যায় না। মাঝেমাঝেই সে কোনো কাস্টোমার পায়না। দালালকে টাকা দিতে সে ইচ্ছুক না। একদিন শিউলি আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে আমি তার দালাল হতে চাই কিনা।
প্রোস্টিটিউটের দালাল হওয়ার চাইতে বালি টানা ঢের ভালো।আমি তার প্রস্তাব নাকচ করে দিলাম। তাতে শিউলি বেশ রেগে গেল। গালি দিয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিল।
আমিও আর ওর বাসায় গেলাম না।মাঝে মাঝে পেপার ঘেটে ঘেটে দেখি কোথাও চাকরির ইন্টারভিউ দেয়া যায় কিনা। এরই ভিতর আমি একটা ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। ইন্টারভিউ দেয়ার সাথে সাথেই ফল জানিয়ে দেয়া হল। আমি পাশ করেছি। একজন মাত্র প্রার্থীকে নেয়া হয়েছে, সেখানে আমার পাশ করা রীতিমত অপ্রত্যাশিত। তারপরেও আমি পাশ করেছি। আমি এবার লন্ডন চলে যাব!

খবরটা শিউলিকে দেয়া দরকার।বিপদের দিনে এই মেয়েটা অনেক সাহায্য করেছে। তাকে খবরটা না দিলে অকৃতজ্ঞের মত কাজ হবে। এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে শিউলিকে দেখতে গেলাম।আমাকে দেখে শিউলি খুশি হয়ে গেল।
-কি খবর এতদিন পর? মিষ্টি কেন?চাকরিবাদা হইছে নাকি?
-ঠিক চাকরী না। তবে ঐরকমই আরকি?
-কিরকম?
-মানে বিয়া করতেছি।
-কারে?
-লন্ডনের এক মহিলারে বিয়া করতেছি। পাত্রীর বয়স একটু বেশী।স্বামী মারা গেছে, সন্তানাদি নাই। আমারে লন্ডন নিয়া যাবে।
কথাটা শুনে শিউলি চুপ হয়ে গেল।তারপর বলল- পাত্রীর চেহারা কেমন?আমার থেকে ভাল?
-আরে বয়স্ক মহিলা! চেহারা ভাল হবে কিভাবে?
-ওহ।
এরপর পুরোটা সময় শিউলি কোনো কথা বলেনি।আমি যখন ফিরে আসব তখন আমাকে জিজ্ঞেস করল, “আর কোনোদিন আসবেন না?”
-নাহ,মনে হয় না আর আসা হবে।
-আচ্ছা এক কাজ করা যায় না?
-কি?
-নাহ কিছু না।
-অর্ধেক কথা বল কেন? যা বলবা ডাইরেক্ট বলবা।
-আচ্ছা, আপনে এইখানে সারাজীবনের জন্য থাকতে পারেন না? আপনের কোনো কাজ করনের দরকার নাই।আমিই আপনারে খাওয়াইতাম।
আমি অবাক হয়ে শিউলির দিকে তাকিয়ে থাকি।মেয়েটা আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। আমি এর জবাব দিতে পারিনা।
-আমি যাই শিউলি।
-আচ্ছা যান। একটা কথা শুনেন, আমি জানতাম আপনে আমারে ভালবাসেন না।
-শিউলি পাগলের মত কথা বইল না।আমারে যেতে দাও।
-আহা,কিছু হবে না।কথাটা একটু শুনেন। আমার কথা শেষ হইলেই আপনে চইলা যাইয়েন।আটকামু না।
আমি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ওর কথা শুনি।
-কেমনে আমি বুঝলাম যে আপনে আমারে ভালবাসেন না শুনবেন? আমি দেখছি, আমার কাস্টোমার আসবে শুনার পরেও আপনে ব্যাজার হইতেন না। আমারে ভালবাসলে তো আর আপনে আমারে অন্য কারো কাছে যাইতে দিতেন না।আমার কথা শেষ।আপনে এখন যাইতে পারেন।
আমি শিউলির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। কাজল আর চোখের জল একত্রে মিশে একাকার অবস্থা। কিন্তু চোখের জলটা মুছে দেয়ার অবকাশ আমার নেই।

এরপর আমি লন্ডনে চলে আসলাম। আমার স্ত্রী আমার থেকে ২১ বছরের বড়। লন্ডনে তার অনেক সম্পত্তি। সেই সম্পত্তি সে খুব বেশী দিন ভোগ করতে পারল না। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে দশ বছরের মাথায় মারা গেল। আমাদের কোন সন্তান না হওয়ায় সব সম্পত্তি আমার মালিকানায় চলে আসল। একটা সময় যে আমি না খেয়ে থাকতাম,সেই আমার এখন কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি। আমার সব আছে,কিন্তু আমার আশে পাশে কোনো মানুষ নেই। চরম একাকীত্ব আমাকে কুড়ে খায়। মাঝেমাঝেই আমার শিউলির কথা মনে পরে। কই আছে এখন শিউলি? মাঝে মাঝে শিউলিকে খুজতে বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছা করে।কিন্তু ২৭ বছর পর ওকে খুজে বের করা অসম্ভব।

আজকাল রিটার ভিতর আমি শিউলির ছায়া খুজে পাই। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়- ওকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাই। ওকে এই পেশা থেকে ছাড়িয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই।

রিটাকে একটা বেশ ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম। রেস্টুরেন্ট আর খাবার দেখে ও অবাক।
-তোমার মা-বাবা কোথায় রিটা?
-আমার বাবা কখনই ছিল না। বছর খানেক আগে মা মারা গিয়েছে।
-এখন একাই থাক?
-হ্যা।
-তোমাকে একটা প্রস্তাব দেই।মনোযোগ দিয়ে শোন।
-কি প্রস্তাব?
-আমার তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। তোমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। কাগজে কলমে আমি তোমাকে সন্তান হিসাবে দত্তক নিতে চাই।কেন এটা করব জানো?কারণ, অনেক বছর আগে,আমি একজনার সাথে ভয়াবহ আবিচার করেছিলাম। সেও তোমার মত একই কাজ করত।আমি চাইলে তাকে সেই পেশা থেকে ছাড়িয়ে আনতে পারতাম। কিন্তু আমি করিনি। তাই,তোমাকে দত্তক নিয়ে সেই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে চাই।তুমি রাজী?

রিটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিস্ময়ে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

পরিশেষে,
রিটা আর আমি নদীর পাড়ে পাশাপাশি একটা বেঞ্চে বসে আছি। রিটা এখন আমার কন্যা। আমরা দুজন ব্যর্থ মানুষ মিলে আজ থেকে রঙ্গীন একটা পৃথিবী গড়ে তুলব। পিতা কন্যার ভুবনে আর কোনো ব্যর্থতা কিংবা হতাশার কাব্য রচিত হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫৫
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×