মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ায় সরকার আল-জাজিরার উপর চটেছেন। আওয়ামী লীগ একে ষড়যন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন। প্রিন্ট মিডিয়াগুলি এবিষয়ে কোনো বিবরণ প্রকাশ না করলেও সরকার প্রতিক্রিয়া সম্বলিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছে মিডিয়া হাউজগুলিতে,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করা সে বিবরণ পত্রিকাগুলিতে প্রকাশ হয়। আল–জাজিরার প্রচারিত অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন তথ্যচিত্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে এটা ক্ষমতাসীনরাও মেনে নিয়েছেন অবলীলায়। সারা নেট দুনিয়ায় এনিয়ে চলছে প্রতিক্রিয়া। গোয়েন্দা সংস্থারও ঘুম নেই এই তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়ার পর থেকে।
এই তথ্যচিত্রও প্রচারিত হওয়ার আগ থেকেই ট্রেলার হিসেবে একটি ক্লিপ প্রচারিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে, আঁচ করা হয়েছিল তখন জাতি কি দেখতে পাবে ১ ফেব্রুয়ারিতে। ৩০ সেকেন্ডের সে ভিডিও বার্তা ভয়াবহতার নমুনা কিছুটা হলেও জাতিকে জানান দিয়েছিল। সরকার যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে প্রিন্ট মিডিয়াতে তাতে স্পষ্ট ছিল না তারা কোন বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এটি প্রকাশ করতে গিয়ে হাউজগুলো তাদের নীতি বিসর্জন দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম নিয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন তারা এবিষয়ে জানেন যে গণমাধ্যমের নীতি বলতে একটা বিষয় আছে। যদিও বাংলাদেশে এ নীতি এখন আর নেই বললে চলে। স্বাধীনতা বলতে আগে যা ছিল তা এখন গণমাধ্যমে আর নেই।
৩০ সেকেন্ডের ট্রেলার প্রচারে অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো অতীতের মতো সরকার সম্প্রচারে বাধা প্রয়োগ করবে। অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের তাই জানান দেয়। সরকার তা করেনি! এর নেপথ্যে অবশ্যই অনেক কারণ আছে। সরকার তার আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে যে এখন তথ্য চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব না। এতে সফলতা আসে না। দেশে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল নেই যাতে করে এই পরিস্থিতিকে আরও চাঙ্গা করে তুলবে সরকার পতনের ক্ষেত্রে। সাধারণ নাগরিক জানমালের ভয়ে আর রাস্তায় নামতে চায় না। জামায়াত আর এককভাবে তাদের শক্তি খোয়াতে চায় না। তাদের অনেক রক্ত ঝরেছে রাজপথে। কৌশলগত ভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে দলটি। তাদের আগের প্রকাশ্য কার্যক্রমে কিছুটা ভিন্নতা এনেছে।
কথিত সুশীল প্রথমশ্রেণীর নাগরিকেরা তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা সরকারের কাছে বেচে দিয়েছেন আগেই। তাদের বেশিরভাগ সরকারের অনুসারী কিংবা বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। দেশের স্থানীয় সরকারের প্রহসমূলক নির্বাচন নিয়ে তাদের কোন আফসোস নেই। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হয়তো ওনারা ভুলে গেছেন। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র উপস্থিতি যেমন নেই ঠিক সেরূপ এই ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষণ নেই। পরিবেশও নেই। ইচ্ছে করলে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারবে না। সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।
আল-জাজিরার তথ্যচিত্রও নিয়ে খোলাখুলি পত্রিকাওয়ালারা না লিখতে পারলেও বিদেশি গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছে। বিবিসি বাংলা ইসরাইল থেকে প্রযুক্তি আনা নিয়ে খবর ছেপেছে। দেশের পত্রিকাওয়ালারা তাদের সম্পাদকীয়তে এ বিষয়ে মতামত দিতে পারছে না। দেশের গণমাধ্যম নিয়ে অতি সাধারণ শ্রেণীর নাগরিকেরা সমালোচনায় মেতেছেন, তাদের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলছেন।
সরকারের সমর্থকেরা জোর গলায় বলছেন আল-জাজিরাতে প্রচারিত তথ্যচিত্রে অতিনাটকীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে। একধাপ এগিয়ে কেউকেউ বলে বেড়াচ্ছেন এসব তো সবাই জানে, নতুন কিছু না। দলীয় অতিরঞ্জিত আনুগত্য তাদের বেফাঁস কথা বলতে তাড়িত করে। সংবাদ সব জেনেও কেন প্রচার করে না? এমন প্রশ্নও কেউকেউ করছেন। সংবাদমাধ্যমে সবসময় ভীতির মধ্যে কাজ করে। যারা সরাসরি সম্পৃক্ত তারা এবিষয়ে জানেন।
ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ আমার দেশ পত্রিকার কথা ভুলে যাবার না নিশ্চয়ই। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাংলাদেশে ব্যপক বিপদজনক। সেবিষয়ে অন্যদিন না হয় বলা যাবে। যারা সাংবাদিকতার নিয়মগুলি মান্য করে চলতে চায় তাদের ওপর সরকার ভিন্ন পদক্ষেপ অবলম্বন করে থাকে। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ! সরকারি বিজ্ঞাপন শূন্যতা ও বেসরকারি বিজ্ঞাপনে অব্যহাহত নিয়ন্ত্রণ।
আল-জাজিরার তথ্যচিত্রের সাথে সম্পৃক্ততার কথা আবারও এসেছে সরকারের পক্ষ হতে দেশের ধর্মভিত্তিক বৃহৎ দল জামায়াতে ইসলামীর। এই তথ্যচিত্রে জামায়াতের ভূমিকাকে দায়ী করা হচ্ছে। সেনাসদর থেকে অবশ্য জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে কিছু আসেনি। জামায়াতকে সরকার আবারও ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে আসছে এটা জামায়াতের জন্য অবশ্য ভালো। এখানে বিএনপির সম্পৃক্ততা নিয়ে সরকার কিছু বলেনি।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ছিল অত্যান্ত দুর্বল ও নামকায়াস্তে বিবৃতি। ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে হবে তথ্যভিত্তিক ও শক্তভাবে। সেখানে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে আল-জাজিরার তথ্যভিত্তিক চিত্র সত্য? মজার বিষয় হচ্ছে ভিডিওর শেষে যাদের নাম এসেছে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কেউ সাড়া দেননি।
সরকারের পক্ষ হতে বলা হচ্ছে আল-জাজিরা গ্রহণযোগ্যতা রাখে না, বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক আগেই নাকি তারা হারিয়েছে তবে কেন? তার সদুত্তর মিলছে না। কেউকেউ কলাম লিখেছেন আল-জাজিরার সময় ও সম্প্রচার নাকি কেনা যায়! তাহলে আওয়ামী লীগ কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে জামায়াতের বিপক্ষে সম্প্রচার কিনল না? কেন খালেদা জিয়ার অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যচিত্র নিয়ে সম্প্রচার কিনল না?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৩