somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপির ঢাকার সমাবেশ জনদুর্ভোগ: আওয়ামী লীগের পরাজয় ও জেদের খেসারত

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনগণের কল্যাণ ও দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে সরকার ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করতে দেয়নি বিএনপিকে তাদের কার্যালয়ের সামনে। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থান নির্ধারণ করে অনুমতি চাওয়া হলেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আক্রোশে ক্ষমতাসীন দল পুলিশি শক্তি প্রয়োগ করে। সাত তারিখ কেন্দ্রীয় অফিসে কয়েকবার হানা দেয়, নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয় দফায় দফায়। খেটে খাওয়া ক্ষুদ্র এক ব্যবসায়ী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। আল্লাহ তাঁর স্বদিচ্ছাকে কবুল করে নিক, তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুক। জনদুর্ভোগের চিন্তা সরকারের নতুন নয়। তাদের নেতাদের কথাবার্তা প্রমাণ করে উমাইয়া খিলাফতের সময় সে সময়ের শাসকদের চরিত্রের সাথে আওয়ামী লীগের দারুণ মিল! কিন্তু বাস্তবে?

নানান নাটকীয়তা অবসান ঘটিয়ে নয় তারিখ সন্ধ্যায় সমাবেশের স্থান নির্ধারণ হয় গোলাপবাগ খেলার মাঠ। সাত থেকে নয় তারিখ টানা তিনদিন দ্বিধা ছিল ঢাকাতে বিএনপি সমাবেশ করতে পারবে কি-না? বিএনপি হাল ছাড়েনি, মাঠ দখল করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। পুলিশের মারমুখী আচরণ দেখেছে। নয় তারিখ জুমাবার ছিল নয়াপল্টনের মসজিদে পুলিশের সাথে মুসল্লিদের বাক বিতণ্ডা হয়। সাধারণ মানুষ নাজেহাল হয় পুলিশের হাতে। দৈনিক আজকের পত্রিকা একটি ফটো নিউজ ছাপে যা ছিল হৃদয় বিদারক। এক সাধারণ মধ্য বয়স্ক পথিককে ছাত্রলীগ মারছে! বিএনপির কর্মী মনে করে। দশ তারিখ আওয়ামী লীগ ঢাকায় পাল্টা দলীয় সমাবেশ ডাকে, হকিস্টিক নিয়ে পুলিশের সামনে রাস্তায় নামে। নেপথ্যে কারণ হিসেবে গণমাধ্যম কর্মীদের জানায় সাধারণ মানুষের জান-মাল নিরাপত্তা দিতে এই উদ্যোগ।

এবার আসি আসল কথায়, জয় আসলে কার হলো? এক প্রথম শ্রেণির পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক দশ তারিখ অনলাইন ভার্সনে আর্টিকেলে বলেন জেদের নাম রাজনীতি নয়। তিনি বলতে চেয়েছেন বিএনপি আপোষ হলে হতো। সোজাকথায় তিনি বলতে চেয়েছেন কম্প্রোমাইজ করতে। যদিও সামান্য সমালোচনা করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। যাই হোক, সরকারের চোখ রাঙ্গানি কিংবা পুলিশের রাজনৈতিক ভূমিকা সরকারের পক্ষ হয়ে সব ম্লান হয়ে গেছে গণ জোয়ারে। এমনটা বিশ্বাস করলে ভুল হবে এই সমাবেশ একক বিএনপির অর্জন বা সবাই বিএনপির কর্মী সমর্থক। এদের মাঝে ভিন্নমতের দলের ও সাধারণ মানুষ আছে। তারা অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এসেছেন। বিরিয়ানি আর পাঁচশ টাকার বিনিময়ে কেউ আসেনি। সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের কল্যাণে আম মানুষের মনের ক্ষোভ ও হতাশার কথা উঠে এসেছে। মেয়েরা ও মায়েরা বসে থাকেনি এদেরও আসতে দেখা গেছে। এটা নতুন দিগন্তের সূচনার পূর্বাভাস বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

একটি প্রতিবাদী জনসভা ঠেকাতে সরকার রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যদি প্রাণহানির ঘটনা ঘটায়, তাহলে বাধাহীন নির্বাচনের বেলায় কী করবে সরকার? এর উত্তর কী হবে? গণমাধ্যমের কল্যাণে জানা যায়-জেলখানায় জায়গা হচ্ছে না, বলেছেন জেলার। মজার বিষয় হচ্ছে- পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে জঙ্গিরা পালাতে পারে ঠিকই, কিন্তু পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলা করা সন্ত্রাসীটিকে পুলিশ দেখেও না, খুঁজেও পায় না। দশ ডিসেম্বরের আগেই সরকার পরাজয় বরণ করে বিএনপির জেদের কাছে।
বিএনপি বিশ্বগণমাধ্যমকে দেখিয়ে দিলো সরকারের অন্যায্য অন্যায় আচরণ ও প্রতিহিংসার চিত্র। শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো পৃথিবী দেখেছে এই দৃশ্য। বিএনপির জেদের কাছে সরকারের কৌশল হেরে গেছে। বিএনপি নৈতিক ভাবে বিজয়ী হয়েছে নয় তারিখের আগেই! মধ্যরাতে আটকের পর গ্রেপ্তার হন দলটির মহাসচিব। যদিও আগের দিন তিনি একা বিএনপির কার্যালয় একাই দখল করে নিয়ে প্রবেশ পথে বসে পড়েন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব চরম ‘অ্যাকশনের’ সমালোচনা করছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিএনপি যে মনোযোগ পাচ্ছে, তা নয়াপল্টনের সম্ভাব্য বিশাল জনসভা দিয়েও পেত কি না সন্দেহ। এই কৌশলের জন্য বিএনপি অবশ্যই বাহবা পাবার যোগ্যতা রাখে। খেলা হবে! এই শ্লোগানের আঙ্গিকে বলতে গেলে খেলায় জিতে গেল কে? আওয়ামী লীগ না বিএনপির ব্যানারে আম জনতা? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আটকে বিএনপির অর্জন আরও বেড়েছে হিসাবের খাতায়। প্লাবন কি আর থামানো যাবে? রুখে দেওয়া যাবে স্রোতের গতিপথ। বাংলাদেশের রাজনীতি খেলায় জিতে গেল বিএনপি আর ফেঁসে গেল ক্ষমতাসীনরা।

টানা এক যুগেরও বেশি ক্ষমতায় থাকা স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি দাবিদার আওয়ামী লীগ কেন নিজেদের দুর্বল ভাবছে? শঙ্কা কেন মনে? ডর কেন আঁকড়ে ধরে বুকে? নিজেদের তারা বিপন্ন ভাবছেন আর তাই এই হুলিয়া আর ফ্যাসিবাদ আচরণ। চেতনার বাণীর ধার ভোঁতা হয়ে গেছে এটাই আমরা ভেবে নিবো? গণ মানুষের জমায়েত দেখলেই সরকারের কাঁপন ধরে আমরা ধরে নিতে পারি। যদিও কাজ হচ্ছে না। বিএনপির এই সমাবেশকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন জামায়াতের আমীর, তারমানে জামায়াত-শিবির আছে এই আন্দলনে।
যখন লিখছি এই আর্টিকেল তখন দশ তারিখ আসরের পর বাংলাদেশ সময়। টিভির পর্দায় মানুষের স্রোত! অকল্পনীয় জসমাগম। বাধা-বিপত্তি আটকিয়ে রাখা যায়নি মানুষকে। আওয়ামী লীগের মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে। ভয় থেকেই এই মরিয়াপনা। নিরুপায় হয়ে ঘরে ও বাইরে মরণ কামড় দিতে হচ্ছে সরকারকে। কিন্তু কাজে আসছে না।

দেয়ালে পিঠ ঠেকলে নাকি মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ জেগেছে। নিদারুণ কষ্টে ক্লিষ্ট মানুষ জেগে গেছে। তারা ভাত-কাপড়ের অধিকার চায়। দাল-ভাত আর সবজি-মাছ খেতে চায় কিন্তু তা পারছে না। বাজার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি ঠিকমতো পাচ্ছে না আবার বাড়ছে দাম! সব মিলিয়ে ক্লান্ত মানুষগুলি নিরুপায় আর তাই এই আন্দোলনের সংগ্রামী সাথী। শহরে শহরে নতুন নতুন হাত–পাতা মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। মানুষের পক্ষে এভাবে যে আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আন্দোলন আর সংগ্রাম। দুঃশাসন শাসন ডেকে আনে বিরোধিতা। পুলিশ প্রহরায় ক্ষমতাচর্চা দলের সঙ্গে সমর্থকদের দূরত্ব তৈরি করে। আওয়ামী লীগে যেমন দেখা দিয়েছে বেশ আগেই। অপশাসন আর জনবিরোধী কাজ ক্ষমতাসীন দলের ধমনি শুকিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ দলের ও এর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে না, মূল আকর্ষণ ধনী হওয়া। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়াটাই এর বড় প্রমাণ।

রাজনৈতিক কর্মসূচির জায়গা নেয় হেলমেট, চাপাতি, শটগানের মহড়া, সোয়াট–র‌্যাব–পুলিশের সাঁজোয়া যান। যেটা বিগত কোনো সরকার দেখাতে সাহস পায়নি। নিজের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুরাহা তারা করতে ব্যর্থ! পদ-পদবির জন্য খুনাখুনি আছেই, দলীয় নেতৃত্ব বাগে আনতে চলে মারামারি ও কোটি টাকার দেন-দরবার। শুধু পুলিশ আর পেটোয়া গোষ্ঠী দিয়ে নিজেদের এ দুর্বলতা কীভাবে বা কতো দিন ঢেকে রাখা যাবে?

দশ তারিখের সমাবেশ থেকে বিএনপির সাংসদরা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকল শ্রেণির মানুষ। সঠিক মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে দলটি। আগে নিলে পরিবেশ হয়তো ভিন্নদিকে মোড় নিতো। সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে ১৩ ডিসেম্বর সারাদেশে গণমিছিল ও বিক্ষোভ করবে বিএনপি।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ঢাকায় নিহত ও আহতদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। ঢাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে। আইনের শাসনকে সম্মান জানাতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। সহিংসতার খবরগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত করতে, এবং মত প্রকাশ, সভা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে সরকারি কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×