somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁতাত না মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: দশ বছর পর জামায়াতের সমাবেশ ও কিছু কথা

২৩ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেল ১০ জুন জামায়াত সরকারের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে। শর্তসাপেক্ষে ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে ঘরোয়া পরিবেশে তারা সমাবেশ করে। কোনো অপ্রীতিকর বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও দলটি সর্বদাই সুশৃঙ্খল ও নেতৃত্বে আনুগত্য বজায় রাখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইস্যুটি নিয়ে দিনভর ফ্রন্ট লাইনে ছিল। স্যাটেলাইট টেলিভিশন তাদের সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করেছে। সোজা কথা ৫ জুন অনুমতি না পাওয়ায় নানান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল গণমাধ্যম। পরে অনুমতি পায়। বয়সে তরুণদের সংখ্যা বেশি ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে- যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার হননি বা হলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি তাদের সংখ্যা বেশি দেখা গিয়াছিল।

তরুণদের আনাগোনা কেন বেশি? সরকার জামায়াতকে দমিয়ে রেখেছে রাজনৈতিক বলয়ে। ইসি তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে গঠনতন্ত্রের বৈপরীত্য দোহাই দিয়ে। প্রতীক কেড়ে নিয়েছে আদালত। টানা দশ বছর তারা মাঠে-ময়দানে সমাবেশ করতে পারেনি। প্রকাশ্যে ছাত্র আন্দোলন করতে পারেনি তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তারও আগে দমন পীড়নে দলটির অবস্থা ন্যুজ। তবুও তারা তরুণদের দলে ভিড়াতে পারছে! দলটি তাদের প্রবীণ নেতাদের হারিয়েছে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে। তবুও বিস্ময় জাগায় কী করে নতুন প্রজন্মকে বাগে আনতে পারল? বিষয়টি আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরনার রাজনীতির ঘরে চিন্তা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এবার প্রসঙ্গ নিয়ে বলি। এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। দশ বছর পর ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য সমাবেশ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন যে দলটিকে এত বছর কোনো সভা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, নিজেদের কার্যালয়ে সভা করতে গেলেও যাদের গ্রেপ্তার হতে হয়েছে, সেই দল হঠাৎ কীভাবে রাজধানীতে সমাবেশ করতে পারল? কেউ কেউ মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে 'পর্দার অন্তরালে' যেসব যোগাযোগ বা নানারকম হিসাবের চেষ্টা চলছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে জামায়াতের ইসলামীর সমাবেশের মাধ্যমে।

“জামায়াত মাঠে নামে নাই, তাদের মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা, তাদের আসল মুরব্বি বিএনপি।”আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন মন্তব্য করেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘’জামায়াতে ইসলামীর সভা থেকে যেভাবে আস্ফালন করা হয়েছে, এগুলো জামায়াতের বক্তব্য নয়, বিএনপির বক্তব্য। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হচ্ছে জামায়াত। বিএনপি জামায়াতকে দিয়ে এসব কথা বলিয়েছে।‘’

সমাবেশের সাথে কোনো রকম 'সম্পৃক্ততা' বা 'নমনীয়' হওয়ার বিষয়টি উভয় দলের নেতারাই নাকচ করে দিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আড়ালে যেসব 'হিসাব-নিকাশ' করা শুরু হয়েছে, তারই অংশ হিসাবে জামায়াতে ইসলামীকে অনেকটা হঠাৎ করে এভাবে প্রকাশ্যে বড় ধরনের সভা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই কারণেই তারা অনুমতি চাওয়ার পর রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রে সভা করতে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের চলাচলেও কোনো বাধা দেয়া হয়নি। ঢাকার এই সমাবেশের পেছনে যে কারণই খোঁজা হোক না কেন, এর মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে আসলে জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা আবার নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পারছে। জামায়াত এখন বাইরে বের হতে পারছে, আবার নিজেদের শক্তি জানান দিতে পারছে। আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন নির্বাচনের রাজনীতিতে তাদের সাথে একটা আলোচনায় আসতে হবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে।

জামায়াতের নতুন করে এই সক্রিয়তার পেছনে সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন ভিসা নীতিরও একটি প্রভাব দেখছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি জামায়াতে ইসলামীর জন্য নতুন অপরচুনিটি বা সুযোগ তৈরি করেছে। গত ১০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে জামায়াতে ইসলামী একটি অনুকূল পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই ভিসা নীতির ভাষ্যমতে, যেসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচালের আওতায় পড়বে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে - শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছেন না যে আমেরিকার ভিসা নীতি তাদেরকে উৎসাহিত করেছে।
যদি বলা হয় জামায়াতের প্রকাশ্যে রাজপথে আসার ফলে লাভটা কার? উত্তর যদিও সহজে দেওয়া যাবে না! হিসাব-নিকাশের অঙ্কটা বড়। জামায়াতের গুরুত্ব উড়িয়ে দিতে চান না বড় দুই দল। যদিও প্রকাশ্যে তারা এসব বলতে চান না। তাহলে ক্ষমতাসীন দল নমনীয় নীতি কেন অবলম্বন করল? দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাহলে জামায়াতের সমর্থন চায় আওয়ামী লীগ? ইসলামিস্ট যেসব শক্তি আছে, বরাবরই দেখো গেছে, তারা বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল। জামায়াত রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠলে কী ঘটবে, এখনি বলা কঠিন। তাদের প্রায় দুই কোটি ভোট ব্যাংক আছে! এই হিসাব একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের। গত পাঁচ বছরে তার সংখ্যাটা বেড়েছে।

আওয়ামী লীগ চায়, জামায়াত যেন বিএনপির সঙ্গে না যায়, তাদের সঙ্গে আসুক আর নাই আসুক। তারা জামায়াতকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। নির্বাচনের সমীকরণে আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছে বিএনপিকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করা। সেজন্য যেসব দল আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের শত্রু বলে মনে হয়, বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দরকার হলে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে নেবে। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে থাকার জন্য ভোটের ব্যবধানটা সবার নজরে পড়েছিল। ফলে নিজেদের সাথে না হলেও অন্তত বিএনপি থেকে দূরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ চাইছে বিএনপির বলয় থেকে জামায়াতে ইসলামীকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে আসতে।

জামায়াতের সাথে আমাদের জোটবদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই, সুযোগও নেই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল, জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দল। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠবে, এটা আমার মনে হয় না এমন সাক্ষাৎকার বিবিসি বাংলাকে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট এখন আর কার্যকর নেই। তবে আমরা তো সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছি। আর কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা বিএনপির সঙ্গে জোট না আলাদা নির্বাচন করবো সেটা তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। তবে জামায়াত ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দিতে সক্ষম বলে ডয়েচ ভেলেকে জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

জামায়াতকে চাপিয়ে হোক বা বাধ্য হয়ে হোক সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে সরকার কি পিছু হটল? সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এক্ষেত্রে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। শুধু ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি না, স্বাধীনতাকামী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষই জামায়াতকে শেষপর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি দেয়াটাকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি। বরং তারা মনে করছে এর ফলে সরকার আন্তর্জাতিক চাপের কাছে যে নতি স্বীকার করে তা স্বীকার করে নিল।
২০১৩ সালের পহেলা অগাস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের আটই ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নিবন্ধন না থাকায় সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি দলটি। তাদের দাবি, গত ১৪ বছরে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর দেড় লক্ষাধিক মামলা করা হয়েছে এবং প্রায় ১৪ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে।

জামায়াতের নেতারা সমাবেশে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারা যৌথ আন্দোলন শুরু করতে পারেন।
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিকভাবে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবার পর কোন নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেনি দলটি।
গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর অফিসগুলোও বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×