somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান আল্লাহ বলেন, ‘সকল ঈমানদাররা তো পরস্পর ভাই ভাই’। [সুরা হুজুরাত/১০] অর্থাৎ সকল বিশ্বাসী মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই। সাদা ভালো, গরীব ধনী, ছোট বড়,ভারতীয় আমেরিকান, আরব অনারব সকল মুসলিমই ভাই ভাই। আর যেহেতু আমরা ভাই ভাই তাই পরস্পরের প্রতি কিছু অধিকার আছে, কিছু কর্তব্য আছে। ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদি স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলো আসার পর একটা সমস্যা অনেক বেড়েছে এবং দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেটা হল মুসলিম ভাইয়ের অধিকার খর্ব করা। আমরা অনেক কিছুকে সাধারণ ব্যাপার মনে করে শেয়ার করি, পোষ্ট করি,আড্ডায় আলোচনা করি, কমেন্ট করি যা ইসলামের দৃষ্টিতে খুব ভয়ানক। আর এই ব্যাপারটা এতটা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে যে ইসলাম নিয়ে লেখালেখি করা ভাইয়েরাও এর থেকে মুক্ত নন। এই পোষ্ট সকল মুসলিমদের ভাইদের এমনকি আমার নিজেরও নিজেকে স্বরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।

১.

আমাদের একটা অনেক বড় সমস্যা অন্যকে বিচার করার। আমরা মুসলিম ভাইয়ের একটু অধটু ভুল দেখেই তার সম্পর্কে অনেক অনেক ধারণা করে ফেলি। আমরা মন্তব্য করে, পোষ্ট দিয়ে তার ছোট ভুলটির সংশোধন করার চেষ্টা করি। যেন আমি শিক্ষক আর তুমি আমার ছাত্র! বিশ্বনবী (সা.) আমাদেরকেই বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের চোখে কুটা দেখতে পায়, কিন্তু নিজের চোখে গাছের গুঁড়ি দেখতে ভুলে যায়!’ (ইবনে হিব্বান/৫৭৬১;সহীহুল জামে/১৮৭১)। আর এভাবে প্রকাশ্যে কারও ভুল নিয়ে আলোচনা করা কোন ভালো কাজ নয়। বরং তার সভ্রম (মান-সন্মান) নষ্ট করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সাবধান করে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সভ্রম ও ধন সম্পদ অন্য মুসলিমের জন্য হারাম’। (মুসলিম/৬৭০৬)। আর একজন মুসলিমের কর্তব্য হল অপর মুসলিমের ভুল প্রকাশ্যে বলে না বেড়িয়ে তা গোপন করা। নবী (সা.) এব্যাপারে আমাদের খুব সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে দুনিয়াতে কোন বান্দার দোষ গোপন রাখে,আল্লাহ তা’আলা কিয়ামাতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন’। (মুসলিম/৬৭৫৯)।

২.

একজন মুসলিম সবসময় অন্য মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে সুধারণা রাখবে। এটা তার জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য। এই শিক্ষা আমাদের স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন কুর’আনে। আয়েষা (রা.) -এর উপর অপবাদ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,“তোমরা যখন একথা [‘আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা] শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” [সূরা আন-নূর, ২৪:১২]। নবী করীম (সা) বলেন: “অনুমান করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ অনুমান হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা। আর বেঁচে থাকো অন্যের দোষ খোঁজা থেকে, এবং অন্যের উপর গোয়েন্দাগিরি করা থেকে, বেঁচে থাকো (মন্দ কাজে) প্রতিযোগিতা করা থেকে, বেঁচে থাক অপরের হিংসা করা থেকে, অপরকে ঘৃণা করা থেকে এবং একে অপরকে পরিহার করা থেকে;এমনভাবে থাকো যেন তোমরা পরস্পর ভাই এবং আল্লাহ্‌র দাস”। [আল-বুখারী; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৩, হাদীস নং ৯২]। মুসলিম ভাইয়ের কথা ও কাজকে সর্বোত্তম্ভাবে নেওয়া বা ব্যাক্ষা করাটা মুমিনের একটা ভালো গুণ। উমার (রা) বলেন,“তোমার বিশ্বাসী ভাইয়ের কোনো কথা (বা কাজ)-কে খারাপ অর্থে গ্রহণ করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভালো অর্থে নেওয়ার সুযোগ থাকে।” ইবনে সিরিন (রহ) বলেন, “তুমি যদি জানতে পারো যে, কেউ তার কথা বা কাজের মাধ্যমে তোমার ক্ষতি করেছে, তাহলে তোমার উচিৎ সে কেন এমন করল তার উপযুক্ত কারণ খুঁজে বের করা; যদি কোনো কারণই খুঁজে না পাও, তবে তোমার বলা উচিৎ, ‘হয়তো এমন কোনো কারণ ছিল যা আমি জানি না।’

৩.

একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের জন্য আয়না স্বরুপ। তার ভুল নিয়ে আলোচনা করা একদমই উচিত নয়। ব্যক্তিগতভাবে ইসলাহ করতে হবে। তা সম্ভব না হলে দো’আ করতে হবে। মুসলিম সবসময় তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য কল্যান চাইবে।একজন মুসলিম সবসময় অন্য মুসলিমের ব্যাপারে কল্যানকামী হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) -এর হাতে শপথ (বাইআত) গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা,সকল মুসলমানের জন্য কল্যাণ কামনা (ও উপদেশ দেয়ার)। [বুখারী/৫৭; মুসলিম/২০৮]। আরো একটি হাদিস শুনুন। আবু রুক্বাইয়াহ তামীম বিন আওস দারী (রা) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘দ্বীন হল কল্যান কামনা করার নাম’। আমরা বললাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য,মুসলিম শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য’। (মুসলিম/২০৫)।

৪.

আমাদের আরেকটা গুরুতর সমস্যা হল আমরা নিজেদের জন্য এক রকম চাই আর পরের জন্য আরেক রকম। আমরা চাই আমি কোন ভুল করলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে লোকে বলুক। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে আমরা লোকেদের সামনে তা নিয়ে আলোচনা করি। এটা খুবই জঘন্য একটা ব্যাপার। বিশ্বনবী (সা) আমাদের কত সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবীজী বলেন, ‘ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে’। (বুখারী/১৩; মুসলিম/৪৫; ইবনে হিব্বান/২৩৫)। এটা বর্তমান মুসলিম সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা উপদেশ। সকল ক্ষেত্রেই আমাদের এই উপদেশ মেনে চলা উচিত। আমরা নিজেরা যেমন অন্যের কাছে সম্মান চাই,এটেনশান চাই, গুরুত্ব চাই ঠিক তেমনি আমাদের উচিত তাকেও তাই ফিরিয়ে দেওয়া। যেমন ব্যবহার আমরা নিজেদের ক্ষেত্রে চাই ঠিক তেমনি যাতে অন্যদের দেয়। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, সে দোযখ থেকে নিস্তার লাভ করে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে সে ব্যক্তির জন্য উচিত,যেন তার মৃত্যু তার কাছে সেই সময় আসে, যে সময় সে আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে। আর লোকেদের সাথে সেইরুপ ব্যবহার করে যেরুপ ব্যবহার সে নিজের জন্য পছন্দ করে’। (মুসলিম/৪৮৮২)।

আল্লাহ আমাদের ভুল গুলোকে ক্ষমা করুন এবং সঠিকভাবে ইসলাম পালন করার শক্তি দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×