ছোটবেলায় ক্লাস টু বা থ্রীর বাংলা বইতে একটা গল্প পড়েছিলাম। একটা ডোবায় অনেক ব্যাঙ ছিল। কিছু ছেলে পিলে তাদের পাথর চালিয়ে চালিয়ে মারছিল। এতে ব্যাঙ গুলোর শরীর ক্ষত বিক্ষত হচ্ছিল, অনেক ব্যাঙ মারা যাচ্ছিল। কিন্তু ছেলে পিলের এতে অনেক আনন্দ! তাড়া দেখে এতই আনন্দিত হচ্ছিল যে নতুন উদ্যমে আরো পাথর ছুড়ছিল। এটা তাদের কাছে একটা খেলা। মনোরঞ্জন। গল্পে একটা ব্যাঙ ছেলেদের উদ্দ্যেশ্যে বলছিল তোমাদের জন্য যা মজার খেলা আমাদের জন্য তা জীবন মৃত্যুর খেলা!
বাস্তবে কোন পশু তাদের কষ্টের কথা মানুষকে জানাতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে অনেক মানুষ পশুদের, বিশেষ করে রাস্তার পশুদের অনেক কষ্ট দিয়ে থাকে। রাস্তায় যত ল্যাংরা কুকুর দেখবেন তার বেশিরভাগই কোন মানুষের মজা করার ফল। গৃহপালিত পশুদের সাথেও অনেকে প্রচন্ড অত্যাচার করে থাকে।
এই পশুদের অধিকার নিয়ে ইসলাম অনেক নির্দেষ দিয়েছে। অনেক কড়া নির্দেষ দিয়েছে। দুইটি ঘটনা খুব জনপ্রিয়। আমরা সবাই প্রায় জানি। এক, একজন বেশ্যা রাস্তার তৃষ্ণার্ত কুকুরকে জল পান করানোর কারনে ক্ষমাপ্রাপ্ত হোন এবং জান্নাতে যান। দুই, একজন একটা বেড়ালকে বেঁধে রেখেছিলেন, যার ফলে সে না খেয়ে মারা যায়। ফলে সে জাহান্নামী হয়।
ইসলামে অকারনে পশুর অঙ্গহানী করা বা পশুকে কষ্ট দিয়ে মজা করা হারাম। খুব কঠোর ভাবে হারাম। এটা এমন একটা ব্যাপার যেটাতে আল্লাহ এবং নবী (সা.) অভিশাপ দেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ''আল্লাহর অভিশাপ সেই ব্যক্তির উপর, যে পশুর অঙ্গহানী ঘটায়''। [নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, বাইহ্বাকী/১৮৬০০] ইবনে উমার (রা.) বলেছেন, ''নবী (সা.) সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে পশুর অঙ্গহানি ঘটায়''। [বাইহ্বাকী, দারেমী, বুখারী/৫৫১৫]
প্রসঙ্গত; আল্লাহ পৃথিবীতে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্যই। সব কিছু মানুষের সেবার জন্যই। মানুষের কাজে যা যা লাগে তাদের সৃষ্টি সার্থক মানুষের উপকারে এসেই। কারন তাদের সেই জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। পশু পাখীর মানুষের উপর যা অধিকার আছে তার অন্যতম হল প্রাণ রক্ষার অধিকার। মানুষ অকারনে তার প্রাননাশ করবে না, তাকে কষ্ট দেবেনা, অধিক বোঝা চাপাবেনা, সীমার বাইরে কাজ করাবেনা, তার খাওয়ার দাওয়ার দায়িত্বশীল হলে সঠিকভাবে খাদ্যের ব্যবস্থা করবে, যবেহ করতে হলে ধারওয়ালা ছুরি দিয়ে করবে, অনান্য পশুদের সামনে যবেহ করবেনা ইত্যাদি হল পশুদের অধিকার। এসব মানতেই হবে। নাহলে এসব অত্যাচারের কারনেও জাহান্নাম যেতে হতে পারে! আমাদের নজরে সাধারন ব্যাপার হলেও আল্লাহর কাছে জাহান্নামী হওয়ার মতো অপরাধ।