ক. এটা বিদ'আত। অর্থাৎ ধর্মে নতুন সৃষ্টি। এই আমল রাসুল সা. সাহাবা বা তাবেঈ-তাবে তাবেঈদের যুগে ছিলনা।
আল্লাহ বলেন, 'বলো হে নবী! আমলের দিক দিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কথা কি তোমাদের বলব? তারা হচ্ছে এমন লোক, যাদের যাবতীয় চেষ্টা সাধনায় দুনিয়ার জীবনে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে আর তারাই মনে মনে ধারণা করে যে, তারা খুবই ভালো কাজ করছে' [আল ক্বা'হাফ/১০৩-১০৪]
মুহাম্মাদ সা. বলে্ন 'তোমরা (দ্বীনে) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ'আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা' [আবু দাউদ, তিরমিযী] নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, 'আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)'।
'যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করল... যা তার মধ্যে (দ্বীনে) নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য' [বুখারী ও মুসলিম] মুসলিমের অন্য একটি বর্ণনায় আছে, 'যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়'।
ইমাম মালেক স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফেঈ -কে বলেন - 'রাসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবাদের সময়ে যেসব বিষয় 'দ্বীন' হিসেবে গৃহীত ছিলনা, বর্তমানকালেও তা দ্বীন হিসেবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভালো কাজ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসুল সা. স্বীয় রিসালাতে দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন' (নাউযুবিল্লাহ)। [আল-ইনসাফ, ৩২ পৃষ্ঠা / মিলাদ প্রসঙ্গ, ১৪ পৃষ্ঠা]
খ. অমুসলিমদের অনুসরন। আমাদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অমুসলিমদের অনুসরন করতে। বরং তাদের উলটো করতে বলা হয়েছে। অথচ আমরা হিন্দুদের জন্মাষ্টমি, ক্রিস্টানদের ক্রিসমাস এবং বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমার মতো রাসুল সা. এর জন্ম দিবস পালন করছি।
মহান আল্লাহ বলেন, 'সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় আমি সেই দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং দোযখে তাকে নিক্ষেপ করব আর তা কতই নিকৃষ্ট আবাস!' [সুরা নিসা/১১৫]
রাসুল সা. বলেন, 'যে ব্যক্তি যে জাতির অনুরুপ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত' [আহমাদ ২/৫০, আবু দাউদ/৪০৩১, সহীহুল জা'মে/৬০২৫]
'সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আমাদের ছেড়ে অন্যদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে' [তিরমিযী/২৬৯৫]
সাহাবী হুযাইফা বিন ইয়ামান রা. বলেন, 'তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মতো (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবেনা এবং তারাও তোমাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবেনা। এমনকি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে! [আল বিদাউ আননাহয়ু আনহা, ইবনে আযযাহ/৭১ পৃষ্ঠা]
গ. অতিরঞ্জন। ইসলামে অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি করা নিষেধ। আল্লাহ এবং রাসুল সা. যা বলেছেন তাই করতে হবে। অথচ মিলাদে রাসুল সা. কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়ে থাকে। যেমন তাঁর জন্য চেয়ার ছেড়ে দেওয়া হয়, তিনি উপস্থিত হয়েছেন এমন মনে করা হয়।
আল্লাহ বলেন, 'হে কিতাবীগণ! তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না...' [সুরা নিসা/১৭১]
'হে কিতাবীগণ! তোমরা তোমাদের ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না এবং যে সম্প্রদায় ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে ও অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না' [সুরা মাইদাহ/৭৭]
নবী সা. বলছেন, 'তোমরা আমাকে নিয়ে (আমার তা'যীমে) বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খৃষ্টানরা ঈসা বিন মারয়্যাম (যীষু) -কে নিয়ে করেছে। আমি তো আল্লাহর দাস মাত্র। অতএব তোমরা আমাকে আল্লাহর দাস ও তাঁর রাসুলই বলো' [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৪৮৯৭]