মার্চ মাস। বাঙ্গালী জাতীর স্বাধীনতার ডাক দেয়া হয়েছিল এ মাসেই। দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই দামাল ছেলেদের একজন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউম্দা গ্রামের ধনেশ্বর বিশ্বাস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই লড়াকু যুবকের বীরত্বের কথা এক সময় ছড়িয়ে পড়েছিল মুখে মুখে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মুক্তিযোদ্ধাই এখন তার গ্রামে একঘরে।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর বিশ্বাস ও তার পরিবারকে পূর্ব বিরোধের কারণে মামলা-মোকদ্দমায় হয়রানিসহ এবার একঘরে করে রাখা হয়েছে। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর কিংবা তার পরিবারের লোকদের সাথে কথা বললে প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার অলিখিত ফরমান জারি করেছেন স্থানীয় সমাজপতিরা। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর ও তার পরিবার নিজ বাড়িতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পানিউম্দা ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা ধনেশ্বর বিশ্বাস জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ৪-৫ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। ’৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর বিশ্বাস পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পৈতৃক জায়গা-জমি বিক্রি করে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। ৬ বছর পর দেশে ফেরেন। দেশে আসার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গ্রামের রমজান আলী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর হাজী রমজান আলীকে সমর্থন না করার কারণে তার ওপর নেমে আসে নানা ধরনের নির্যাতন। তাকে একঘরে করে রাখাসহ পূজা-পার্বনেও তাকে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না।
একাধিক মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর ও তার পুত্রকে। কিন্তু মামলা দিয়ে কাবু করতে না পেরে রমজান আলী ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা বিজনা নদীর পাড় দিয়ে চলমান পুরাতন একটি গোপাট থাকা সত্বেও মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর বিশ্বাসের জমির ওপর দিয়ে একটি গোপাট করে নেয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর বিশ্বাসের প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ক্ষতি হয়। স্থানীয় সমাজপতিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন বিচার পাননি মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর বিশ্বাস।
ধনেশ্বর বিশ্বাস অভিযোগ করেন, গত ২৫ জানুয়ারী রাতে একই গ্রামের জগীন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে ৯/১০ জন লোক তার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা তার স্ত্রী-পুত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এসময় তার ছেলে রতেœশ্বর বিশ্বাসের পকেটে থেকে জলমহালের ৫০ হাজার টাকা লুটে নেয়। আহত পুত্র রতেœশ্বর বিশ্বাস ও স্ত্রী সুশান্তি রানী বিশ্বাসকে গ্রামের কতিপয় লোকের সহায়তায় বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে তারা বাড়ি ফিরলে মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর ২৪ ফেব্র“য়ারি থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। পুলিশ অভিযোগটি গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রে পাঠালেও অদ্যাবদি আইনী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা ধনেশ্বর বিশ্বাস ক্ষোভের সাথে জানান, ২৫ জানুয়ারির সন্ত্রাসী হামলার পর তার স্ত্রী-পুত্রকে বাহুবল হাসপাতালে নেয়ার কারণে গ্রামের বিকেশ বিশ্বাস, মনোরঞ্জন সরকার, এমদাদুর রহমান ও ওলিদুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেয়ার পঞ্চায়েতি আদেশ দিয়েছেন গ্রামের মাতব্বর হাজী রমজান আলী গংরা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



